হলুদ কুকুর

উর্দু থেকে 888sport app download apk latest version : সালেহ ফুয়াদ

শেয়ালছানার মতো একটি বস্তু তার মুখ থেকে পড়ে যায়। সে সেটির দিকে তাকায়। এরপর পায়ের নিচে ফেলে মর্দন করতে থাকে। কিন্তু যতই মর্দন করে বস্তুটি ততই বড় হতে থাকে।
যখন শায়খ এ-ঘটনা বর্ণনা করা শেষ করলেন আমি জিজ্ঞেস করলাম, শায়খ, শেয়ালের বাচ্চার রহস্যটা কী, মর্দন করায় বড় হওয়ার মধ্যে কী ভেদ লুকিয়ে আছে?
শায়খ উসমান কবুতর উত্তরে বললেন, শেয়ালছানা হলো তোমার ‘নফসে আম্মারা’। নফসে আম্মারাকে যতই মর্দন করা হবে তা ততই মোটা হবে।
আমি আরজ করলাম, শায়খ অনুমতি দিন …।
বললেন, অনুমতি দেওয়া হলো। উড়ে গিয়ে তিনি তেঁতুলগাছটায় বসলেন। আমি অজু করে কাগজ-কলম নিয়ে বসলাম।
পাঠক, এই আখ্যান আমি বাঁহাতে লিখছি, আমার ডান হাত দুশমনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে এবং যা থেকে আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি সে তা-ই লিখতে চায়। শায়খ সে-হাত থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে থাকেন, যে-হাত মানুষের বন্ধু এবং সাহায্যকারী; তাকে তিনি দুশমন বলছিলেন। তার এই বয়ান শুনে একদিন তার কাছে আরজ করলাম, শায়খ বিষয়টার তফসির করুন।
তিনি তখন শায়খ আবু সাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহির গল্প শোনালেন, যা নিচে উল্লেখ করছি :
শায়খ আবু সাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহির ঘরে তৃতীয় দিনের মতো উপোস চলছিল। স্ত্রীর পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব না হলে তিনি অভিযোগ করেন। সব শুনে শায়খ আবু সাইদ বাইরে বের হয়ে হাত পাতলেন। হাত পেতে যা পেয়েছিলেন তা নিয়ে ফিরতে যাবেন ঠিক তখনই কোতোয়াল তাকে পকেট মারার অভিযোগে পাকড়াও করে। শাস্তিস্বরূপ একটা হাত কেটে দেয়। সেই কাটা হাতটা নিয়ে তিনি ঘরে ফেরেন। সেটা সামনে নিয়ে বিলাপ করেন Ñ হে হাত, তুমি লোভ করেছ; তুমি ভিক্ষা চেয়েছ, আর এখন তুমি এর পরিণাম পেলে।
এ-কেচ্ছা শুনে আমি আরজ করলাম, শায়খ আমাকে অনুমতি দিন। তিনি নীরব থাকলেন। এরপর বললেন, হে আবু কাসিম খিজরি, শব্দ হলো নিজের বিশ্বাসের স্বীকৃতি আর লেখা হলো ইবাদত। সুতরাং অজু করে দুই জানু পেতে বসো এবং যেভাবে শুনছো ঠিক সেভাবে লিপিবদ্ধ করো।
তারপর শায়খ কালামে পাক থেকে পাঠ করলেন, আফসোস তাদের জন্য যারা হাত দিয়ে লিখে বুদ্ধি বেচে খায়। এ কালাম পাঠের পর তিনি বিষণœ হয়ে পড়েন।
আমি জানতে চাই, শায়খ, এ-কালামই বা কেন পড়লেন, আর পড়ে বিষণœই বা হলেন কেন?
এ-প্রশ্নের উত্তরে শায়খ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আহমদ হুজরির গল্প বলতে শুরু করলেন, যা পুঙ্খানুপুঙ্খ আমি তুলে ধরছি :
আহমদ হুজরি ছিলেন তার সময়ের একজন প্রবীণ কবি। কিন্তু একবার হলো কী, শহরে কবির 888sport free bet বেড়ে গেল। 888sport app download apk আর অ888sport app download apkর পার্থক্য রইল না। প্রত্যেকেই একেকজন খাকানি ও আনওয়ারি বনে যেতে লাগল। প্রত্যেকেই তোষামোদকাব্য লিখতে লাগল। এসব দেখে আহমদ হুজরি 888sport app download apk ছেড়ে মদের ব্যবসা ধরলেন। একটা গাধা কিনলেন। মদের হাঁড়ি গাধায় চড়িয়ে শুরু করলেন বাজারে মদ বিক্রি। মানুষ অনেক আঙুল তুলল Ñ আহমদ পুরোই বিপথগামী হয়ে গেছে। পবিত্র কালাম ছেড়ে মদের ব্যবসায়ী হয়েছে। কিন্তু আহমদ লোকের কথায় মোটেও কান দিলেন না। নিজের মতো কাজ করে যেতে লাগলেন। একদিন পথ চলতে চলতে একটি মোড়ে এসে গাধা আর নড়ে না। চাবকাতে লাগলে গাধাটা ঘাড় ঘুরিয়ে আহমদকে দেখে নিয়ে একটি 888sport app download apk আবৃত্তি করে। 888sport app download apkয় সে দ্ব্যর্থক ক্রিয়ার ব্যবহার করে। 888sport app download apkর বক্তব্যটা ছিল এরকম Ñ ‘আমি দু-রাস্তার মাঝে এসে দাঁড়িয়েছি, আহমদ বলে, চলো, কিন্তু অন্যজন বলে, এক পা-ও নড়ো না।’ আহমদ হুজরি গাধার 888sport app download apk শুনে নিজের জামার কলার টান মেরে ছিঁড়ে ফেলেন। তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘সর্বনাশ হোক সে সময়ের, যেখানে গাধা কবি হয়ে উঠেছে আর আহমদ হুজরির মুখে তালা লেগেছে।’ এরপর গাধাকে মুক্ত করে শহরের দিকে হাঁকিয়ে দিয়ে নিজেকে পাহাড়ের ভেতর নিয়ে যান। সেখানে বিকারগ্রস্ত হয়ে গাছেদের সম্বোধন করে 888sport app download apkর পর 888sport app download apk আবৃত্তি করতে থাকেন আর নখ দিয়ে পাথরের গায়ে আঁকিবুকি করেন।
এ-ঘটনা শুনিয়ে শায়খ নিশ্চুপ হয়ে যান। দীর্ঘ সময় ধরে মাথা নিচু করে বসে থাকেন। আমি বিনীতভাবে জিজ্ঞেস করি, আচ্ছা শায়খ, গাছেরা কি কথা শুনতে পায়, অথচ গাছেরা তো নির্জীব? তিনি মাথা তুলে আমাকে দেখেন। তারপর বলেন, জিহ্বা কথা ছাড়া থাকতে পারে না। কথা শ্রোতা ছাড়া থাকতে পারে না। কথার শ্রোতা মানুষ। কিন্তু মানুষের শ্রবণশক্তি ক্রমাগত ব্যর্থ হলে শ্রবণশক্তিহীনরাও শ্রবণশক্তি পেয়ে যায়। তাই কথা শ্রোতা ছাড়া থাকতে পারে না।
এরপর শায়খ সাইয়িদ আলি আল-জাযায়িরির একটি গল্প বলেন। গল্পটা এই ফাঁকে শুনুন :
সাইয়িদ আলি আল-জাযায়িরি ছিলেন তার সময়ের একজন বিখ্যাত অনলবর্ষী বক্তা। কিন্তু একটা সময় এলো তিনি বক্তৃতা করা ছেড়ে দিয়ে মুখে একেবারে কুলুপ এঁটে দিলেন। মানুষের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিলো। মানুষের উদ্বেগ যখন বাড়ল, তখন তারা তার কাছে অনুরোধ করল যে, মহাশয় দয়া করে আমাদের ধর্মোপদেশ দিন। তিনি বললেন, ঠিক কাছে, আমার বক্তৃতামঞ্চ কবরস্থানে নিয়ে রাখো। তার এই অদ্ভুত নির্দেশে সবাই তো অবাক। যাই হোক, বক্তৃতামঞ্চ কবরস্থানে নিয়ে রাখা হলো। তিনি কবরস্থানে গিয়ে মঞ্চে উঠে অসাধারণ অলংকারপূর্ণ একটি বক্তৃতা করলেন। এর আজব প্রভাব পড়ল, কবর থেকে হৃদয়বিদারক প্রার্থনার সুর উঠল। এরপর সাইয়িদ আলি আল-জাযায়িরি বসতির দিকে ফিরে গলা ছেড়ে ডেকে বললেন, আরে ও-শহর, তোর ওপর খোদার আশীর্বাদ হোক, তোর জীবিত বাসিন্দারা বধির হয়ে গেছে; তোর মৃত নাগরিকরা শ্রবণশক্তি ফিরে পেয়েছে। এ-কথা বলে তিনি এতটাই কাঁদতে লাগলেন যে, চোখের জলে তার দাড়ি ভিজে যায়। এরপর থেকে তিনি বসতি ছেড়ে কবরস্থানে থাকা শুরু করেন, যেখানে তিনি মুর্দাদের ধর্মোপদেশ দিতেন।
এ-গল্প শোনার পর আমি বিস্তারিত জানতে জিজ্ঞেস করি, শায়খ Ñ জীবিতদের শ্রবণশক্তি কখন লোপ পায় এবং মৃতরা কখন শ্রবণশক্তি ফিরে পায়? আমার প্রশ্ন শুনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, এ হলো খোদায়ি রহস্য, কোনো মানুষের জন্য এ-ভেদ ফাঁস করা অনুচিত। এরপর তিনি ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে গিয়ে তেঁতুলগাছে বসেন। জেনে রাখা ভালো, শায়খ উসমান কবুতর পাখিদের মতো উড়তে পারেন। তার বাড়িতে একটি তেঁতুল বৃক্ষ রয়েছে। শীত, গ্রীষ্ম অথবা বর্ষাকালে এর নিচেই তিনি জিকিরের মাহফিল বসাতেন। ছাদের নিচে বসতে তিনি অস্বস্তি বোধ করতেন। বলতেন, এক ছাদের নিচে দম বন্ধ হয়ে আসে। দ্বিতীয় ছাদ বহনের ধৈর্য আমি কোথায় পাই? তার এ-কথা শুনে সাইয়িদ রাজির মধ্যে প্রবল উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। ঘরদোর সমূলে ধ্বংস করে দেন। চট গায়ে জড়িয়ে তেঁতুলগাছটার নিচে গিয়ে দাঁড়ান। সাইয়িদ রাজি, আবু মুসলিম বাগদাদি, শায়খ হামজা, আবু জাফর সিরাজি, হাবিব বিন ইয়াহইয়া তিরমিজি এবং আমি Ñ এই নাদান বান্দাসহ শায়খের মুরিদানরা ছিল। আমি ছাড়া বাকি পাঁচজন ছিলেন পবিত্র পুুরুষ। সন্ন্যাস ও আধ্যাত্মিকতা তাদের পরমব্রত ছিল। শায়খ হামজা চিরকুমার জীবন যাপন করছিলেন। ছাদহীন বাসস্থানে থাকতেন। তিনি শায়খের শিক্ষায় প্রভাবিত ছিলেন। বলতেন, ছাদের নিচে বাস করা শিরিক। ছাদ তো একটাই, যা অদ্বিতীয় সত্তা, যার কোনো অংশীদার নেই Ñ শুধু তিনিই সে ছাদের অধিকারী। আল্লাহর বান্দাদের সে-ছাদ ভিন্ন অন্য ছাদের আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়। আবু মুসলিম বাগদাদি ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত পিতার সন্তান। বাড়িঘর ছেড়ে পিতার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে এখানে এসে জীবনযাপন শুরু করেন। তিনি বলতেন, মর্যাদা সত্যের ঘোমটা মাত্র। আবু জাফর সিরাজি একদিন জিকিরের মধ্যে নিজের জামাকাপড় ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেন। নামাজের চাটাইকে জ্বালিয়ে দেন। তিনি বলেন, চাটাই দূরে সরিয়ে দেয় মাটিকে, মাটি থেকে এবং পোশাক মাটিকে মাটির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়। সেদিন থেকে তিনি মাটির ওপর দিগম্বর জীবনযাপন করে আসছেন। আর মাটি হলো আমাদের শায়খের মসনদ, ইট তার তাকিয়া। তেঁতুল গাছের উঁচু ডালে বসে থাকতেন। তিনি এই নিচু জগতের ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন। জিকির করতে করতে তিনি উড়তে থাকেন। কখনো অবতরণ করতেন কোনো দেয়ালে, কখনো তেঁতুলগাছের শাখায়। কখনো অনেক ওপরে উঠতে উঠতে আকাশে হারিয়ে যেতেন।
একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, শায়খ, এই ওড়ার শক্তি আপনি কীভাবে হাসিল করলেন?
তিনি উত্তর দিলেন, উসমান জাগতিক মোহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এবং কদর্যতার ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন।
বললাম, শায়খ Ñ জাগতিক মোহ কী?
বললেন, জাগতিক মোহ তোমার নফস।
জিজ্ঞেস করলাম, নফস কী জিনিস?
এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ-গল্পটি শোনালেন, শায়খ আবুল আব্বাস আশকানি একদিন ঘরে ঢুকে দেখেন একটি হলুদ কুকুর তার বিছানায় শুয়ে আছে। ভাবলেন, প্রতিবেশীর কোনো কুকুর হয়তো ভেতরে ঢুকে গেছে। সেটিকে তাড়িয়ে দেবেন ভাবলেন, অমনি সেটি তার জামার নিচ দিয়ে ভেতর ঢুকে হাওয়া হয়ে গেল।
গল্পটা শুনে আমি জানতে চাইলাম, শায়খ, হলুদ কুকুরটা কী?
বললেন, হলুদ কুকুর হলো তোমার নফস।
নফস কী শায়খ?
দুনিয়ার মোহই নফস।
দুনিয়ার মোহ কী জিনিস শায়খ?
নীচতা হলো দুনিয়ার মোহ।
নীচতা কী?
নীচতা হলো জ্ঞানহীনতা।
জ্ঞানহীনতার মানে কী শায়খ?
বুদ্ধিজীবীদের আধিক্য।
ব্যাখ্যা করুন, শায়খ।
তিনি গল্পের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করলেন। অনেক আগেকার এক বাদশাহ, দান-দক্ষিণায় যার অনেক সুনাম। একদিন তার দরবারে বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত একজন ব্যক্তির আগমন ঘটল। দরবারে হাজির হয়ে লোকটা বলল, বুদ্ধিজীবীদেরও উপযুক্ত মূল্যায়ন চাই জাঁহাপনা। বাদশাহ তাকে দামি পোশাক ও ষাটটি স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে সম্মানিত করলেন। এ-খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। খবর শুনে নিজেকে জ্ঞানী মনে করা দ্বিতীয় আরেক ব্যক্তি দরবারমুখো হয়ে নিজের দাবি পূরণ করে ফেরে। নিজেকে প-িতদের মধ্যে গণ্য করা তৃতীয় আরেক ব্যক্তিও দরবারে হাজিরা দিয়ে মূল্যবান পোশাক নিয়ে ফেরে। এরপর দরবারে লাইন পড়ে যায়, নিজেদের শিক্ষিত-বুদ্ধিমান বলে মনে করা প্রত্যেকেই দলে দলে দরবারে হাজিরা দিয়ে ইনাম নিয়ে ফিরতেন।
উজির ছিলেন একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি। বুদ্ধিজীবীদের আধিক্য দেখে একদিন ভরা দরবারে বাদশাহকে শুনিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বাদশাহ উজিরকে লক্ষ করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, আপনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন কেন? উজির জোড়হাতে বললেন, জাঁহাপনা জীবনের নিশ্চয়তা পেলে বলতে পারি।
বাদশাহ বললেন, নিশ্চয়তা দেওয়া হলো।
উজির বিনীত ভঙ্গিতে বললেন, আপনার রাজ্য আসলে জ্ঞানীলোকশূন্য।
বাদশাহ : বড় আজব কথা! রোজই দেখছ কত জ্ঞানী-গুণিজন দরবারে আসছেন এবং ইনাম নিয়ে ফিরছেন, তবু তুমি এ-কথা বলছ।
বুদ্ধিমান উজির তখন বললেন, ওহে দয়ালু প্রভু, জ্ঞানী ও গাধাদের ব্যাপারে বলা হয় যে, যেখানে সবাই গাধা হয়ে যায় সেখানে আসলে প্রকৃত গাধা থাকে না; যেখানে সবাই বুদ্ধিজীবী বনে যায় সেখানে আসলে কেউই বুদ্ধিজীবী রয় না।
এ-কাহিনি শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম, এমনটা আসলে কখন হয়, যখন সবাই বুদ্ধিজীবী বনে গেলে কেউই বুদ্ধিজীবী থাকে না?
বললেন, যখন জ্ঞানী তার জ্ঞান লুকিয়ে ফেলে।
জ্ঞানী কখন তার জ্ঞান লুকিয়ে ফেলে?
যখন মূর্খ জ্ঞানী এবং জ্ঞানী মূর্খ বলে আদৃত হয়।
মূর্খ কখন জ্ঞানী বলে আদৃত হয়?
উত্তরে একটি কিচ্ছা বলতে লাগলেন, একজন বিখ্যাত প-িত অর্থকষ্টে ভুগে নিজের শহর ছেড়ে অন্য শহরে হিজরত করলেন। সে-শহরে একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় জ্ঞানী ব্যক্তি বাস করতেন। তিনি শহরের বিশিষ্টজনদের বললেন, অমুক দিন অমুক সময় শহরে একজন প-িত আগমন করবেন। তার যথাযথ সম্মান করা চাই। এ-কথা বলে তিনি নিজে সফরে বেরিয়ে পড়লেন। শহরের বিশিষ্টজনরা নির্ধারিত দিনের নির্ধারিত লগ্নে বন্দরে গিয়ে উপস্থিত হলেন। ঠিক তখনই একটি জাহাজ এসে তীরে ভেড়ে। এই জাহাজেই সেই প-িত ব্যক্তিটি ছিলেন। একজন মুচিও তার সহযাত্রী হয়েছিল। সেই মুচি ছিল কুঁড়ে ও দুষ্ট প্রকৃতির। সে ওই প-িতকে সহজ-সরল পেয়ে নিজের সমস্ত জিনিসপত্তর তার কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে ঝাড়া হাত-পা হয়ে যায়। জাহাজ থেকে যখন দুজনই নামলেন তখন একজনকে দেখা গেল চটের জামা গায়ে জুতো সেলাইয়ের উপকরণের বোঝার ভারে টালমাটাল। তাকে কেউ পাত্তাই দিলো না। দ্বিতীয়জনকে 888sport apk download apk latest version ও সম্মানের সঙ্গে নামিয়ে শহরে নিয়ে গেল।
সেই জ্ঞানী ব্যক্তি সফর থেকে ফিরে দেখেন রাস্তার পাশে চোখেমুখে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আভা জ্বলজ্বল করা এক লোক জুতো সেলাই করছে। আরো সামনে গিয়ে দেখেন শহরের উচ্চপদস্থ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি মজলিস চলছে। সেখানে এক নির্বোধ নানান বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। এসব দেখে সেই জ্ঞানী ব্যক্তির আপাদমস্তক কেঁপে ওঠে। তিনি বললেন, হে শহর, তোর সর্বনাশ হোক, তুই জ্ঞানীদের মুচি বানিয়ে দিয়েছিস, মুচিদের দিয়েছিস জ্ঞানীর আসন। এরপর মুচির সরঞ্জামাদি কিনে সেই প-িতের একপাশে রাস্তায় বসে নিজেও জুতো সেলাইয়ে লেগে যান।
পুরো ঘটনাটা শুনে আমি শায়খের কাছে জানতে চাইলাম, শায়খ সত্যিকার জ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবী চেনার উপায় কী?
তার কোনো লোভ থাকে না।
দুনিয়ার প্রতি লোভ কখন সৃষ্টি হয়?
যখন জ্ঞান নেমে যায়।
জ্ঞান কখন নেমে যায়?
যখন দরবেশ হাত পাতে, যখন কবি মতলবি হয়, পাগল সেয়ানা হয়ে ওঠে, প-িত ব্যবসায়ী বনে যায় এবং যখন বুদ্ধিজীবী মুনাফা অর্জন শুরু করে। ঠিক সে-সময় এক ব্যক্তি এই ফার্সি গীত গুনগুনিয়ে গাইতে গাইতে চলে যায় :
দামেস্কে হায় কী আকাল পড়েছে আজ/ বন্ধুরাও ভুলে গেছে তাদের গভীর প্রণয়!
শায়খ লোকটাকে ডেকে বলেন, তোমার গীতটা আরেকবার আবৃত্তি করো। লোকটা আবার আবৃত্তি করে। শায়খ মুরাকাবার অবস্থায় চলে যান। মাথা যখন তুললেন তখন নিচের ঘটনাটি বললেন Ñ
কোন এক শহরে একজন দানবীর ছিল। তার দানশীলতার কথা মানুষের মুখে মুখে ছিল। সে-শহরে একজন দরবেশ, একজন কবি, একজন প-িত ও একজন বুদ্ধিজীবী বাস করতেন। দরবেশের এমন আকাল দেখা দিলো যে, তিনদিন তার উপোসে কেটে গেল। দরবেশ সেই দানবীরের কাছে হাত পাতলে দানবীর তার জামার আঁচল ভরে দিলেন। প-িতের বউ দরবেশকে সুখী দেখে স্বামীকে বিদ্রƒপ করে বলে, তোমার বিদ্যার কী দাম? তোমার চেয়ে ওই দরবেশ ঢের ভালো, দানবীর তাকে আঁচল ভরে ধন-দৌলত দিয়েছেন। ঠেলায় পড়ে প-িত দানবীরের কাছে হাত পাতেন। দানবীর তাকেও অনেক ইনাম ও সম্মান দেন। বুদ্ধিজীবী তখন ঋণভারে জর্জরিত। দরবেশ এবং প-িতকে দানবীরের দরজা থেকে দুহাত ভরে বেরোতে দেখে সে-ও সেখানে হাজির হয়ে প্রয়োজনের কথা বর্ণনা করে। দানবীর তাকে সম্পদ ও সম্মান দিয়ে বিদায় করেন। এসব শুনে কবি যুগের প্রতি অভিযোগ তোলেন, 888sport live chatের মর্যাদা আজকাল দুনিয়া থেকে উঠে গেছে। সে-ও দানবীরের কাছে গিয়ে তার 888sport app download apk শুনিয়ে বখশিশের আবেদন করে। দানবীর তার 888sport app download apk শুনে খুশি হয়ে মণিমুক্তা দিয়ে তার মুখ ভরে দেয়।
যাতে আবারো উপোস করতে না হয় সেজন্য দরবেশ যা পেয়েছিল তা আঁকড়ে ধরে কৃপণতা শুরু করল। প-িত সে-সম্পদ থেকেই কিছুটা বাঁচিয়ে কয়েকটি উট এবং কিছু ব্যবসায়িক পণ্য খরিদ করে। সওদাগরদের সঙ্গে সেও ব্যবসার উদ্দেশ্যে ইস্পাহান যাত্রা করে। এ-যাত্রায় তার ভালোই মুনাফা হয়। এরপর সে আরো বেশি উট ও পণ্য নিয়ে খোরাসান যাত্রা করে। বুদ্ধিজীবী ঋণ লেনদেনের ক্ষেত্রে ভালোই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিল। এবার এ- লাইনে সেও নিজের পয়সা খাটাতে শুরু করে। কবি বড় অলস। তবু আরো কয়েকটা 888sport app download apk লিখলেন। কিছু লিখলেন কটাক্ষ করে আর কিছু অভিযোগমূলক। তার আরো কিছু ইনাম জুটে গেল। দরবেশ, প-িত, বুদ্ধিজীবী এবং কবি চারজনেরই ভালো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হলো কিন্তু এরপর দরবেশের আধ্যাত্মিক গৌরব, প-িতের পা-িত্য, বুদ্ধিজীবীর তীক্ষè জ্ঞান এবং কবির কাব্য Ñ সবই ভোঁতা হয়ে যেতে লাগল।
এ-কাহিনি বলার পর শায়খ কিছুটা থামলেন। তারপর বললেন, মহাত্মা শেখ সাদিও ঠিক বলেছেন, আর আমি শায়খ উসমান কবুতরও বলি Ñ দামেস্কে প্রেম বিস্মৃত হয়ে গেছে; উভয়ভাবেই হয়েছে। তারপর দীর্ঘ সময় ধরে ওই 888sport app download apkটাই গুনগুন করে আবৃত্তি করতে থাকেন। সেদিন এরপর আর কোনো কথা বলেননি। জেনে রাখা ভালো, আমাদের শায়খ নরম প্রকৃতির, তার হৃদয় বেদনায় ভরা। 888sport app download apk শুনলে পরমানন্দিত হতেন। খুব বেশি প্রভাবিত হলে উন্মাদ হয়ে যেতেন। টেনে শার্টের কলার ছিঁড়ে ফেলতেন। শেষ যে- 888sport app download apkটি তিনি শ্রবণ করেছিলেন এবার আমি সেটি লিখছি।
সেদিন রাত থেকেই তিনি অস্থির ছিলেন। রাতজাগাটা তার অভ্যাস ছিল। সে-রাতে একটুও বিশ্রাম নেননি। আমি অনুরোধ করলে বলেন, মুসাফিরদের ঘুমানোর সময় কোথায়? এরপর তসবিহ-তাহলিলে ডুবে যান। তখনো অন্ধকার কাটেনি, শায়খ সবেমাত্র ফজরের ফরজ আদায় করেছেন, একজন ফকির গুনগুনিয়ে এ-888sport app download apk আবৃত্তি করতে করতে চলে যায় :
আশার হাত কেন বাড়াব কারো সামনে ভিক্ষা চেয়ে
সে-হাত তো একটু একটু করে ঘুমিয়ে গেছে শিথানে …
তার ওপর পাগলমি চেপে বসে। বলেন, আরে অমুক! এ-888sport app download apk আবার আবৃত্তি করো। সে ফের আবৃত্তি করে। তিনি শার্টের কলার ছিঁড়ে ফেলেন। ফের বলেন, আরে অমুক! এ 888sport app download apk আবারো আবৃত্তি করো। ফকির একই 888sport app download apk আবারো আবৃত্তি করে। তার হৃদয় ভরে যায়। বিষাদভরা কণ্ঠে বলেন, সে হাতগুলোর জন্য আফসোস; আফসোস হাতগুলো যা ভিক্ষা চেয়েছে তার জন্য। আমার সে- হাতগুলোর জন্য আফসোস হয়, আমার আফসোস হয় হাতগুলো ভিক্ষা চেয়ে যা পেয়েছে তার জন্য। তিনি নিজের হাতকে সম্বোধন করে বলেন, আমার প্রিয় হাতেরা সাক্ষী থেকো শায়খ উসমান কবুতর তোমাদের কলঙ্কিত হতে দেয়নি।
সে-ফকির যাকে আগে কোনোদিন দেখিনি শুনিনি, ভেতরে ঢুকে শায়খকে বলল, হে উসমান, তোমার এবার মরা উচিত। তোমার হাত ভিক্ষুকের হাতে পরিণত হয়েছে।
শায়খ তার কথা শুনে কাঁদতে লাগলেন। বললেন, আমি মরে গেছি। এরপর ইটের ওপর মাথা রেখে গায়ে চাদর টেনে নিশ্চুপ হয়ে গেলেন।
শায়খ ইটের ওপর মাথা রেখে গায়ে চাদর টেনে নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। আর সেই ফকির যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকেই চলে গেল। আমি দীর্ঘ সময় শায়খের শিথানে বসে রই। মনে হলো, চাদরের নিচে কিছু একটা ডানা ঝাপটাচ্ছে যেন। আমি চাদরের একটা কোনা তুলে ধরলাম। আকস্মিক একটি সাদা কবুতর বেরিয়ে এলো। সঙ্গে সঙ্গে উড়াল মেরে সেটি আকাশে হারিয়ে যায়। আমি চাদরের কোনা সরিয়ে শায়খের চেহারা মুবারকের দিকে তাকাই। চেহারায় সে কি আজব ঔজ্জ্বল্য। মনে হচ্ছিল যেন তিনি স্বপ্নজগতে আছেন। আমি প্রবল বেদনায় ডুবে যাই। কাঁদতে কাঁদতে অচেতন হয়ে পড়ি।
শায়খের পবিত্র সাহচর্যে আমার ওপর আশ্চর্য প্রভাব পড়ে। আমি ঘরে বন্দি হয়ে বসে থাকি। দুনিয়া থেকে মন উঠে যায়। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ পাই না। না জানি এভাবে কতদিন ঘরবন্দি হয়ে ছিলাম। এক রাতে শায়খ স্বপ্নে দেখা দেন Ñ আল্লাহ শায়খের কবরে নুর বর্ষণ করুন Ñ স্বপ্নে তিনি আমার ঘরের ওপরের দিকে তাকান, সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ছাদ খুলে যায়। আকাশ দেখা যায়। এ-স্বপ্নকে আমি তার পথনির্দেশ বলে ধরে নিই। দ্বিতীয় দিন ঘর থেকে বাইরে বেরোই।
না জানি কত দিন ঘরবন্দি হয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিল পুরো পৃথিবীটাই বদলে গেছে। বাজার এতটা পরিপাটি করে সাজানো ও জমজমাট যে এমনটা আগে কখনো দেখিনি। প্রতিটি দোকান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ব্যাংকের সামনে কাস্টমারের লাইন, মুহূর্তের মধ্যে হাজার হাজার লেনদেন হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সম্পদ গঙ্গার জলের মতো বাড়ছে। চোখ কচলে আবার দেখি, হায় খোদা! আমি জেগে আছি নাকি স্বপ্ন দেখছি, এ আমি কোন শহরে এসে পড়লাম। সব দেখে ভাবলাম, ভাই-বেরাদরের সঙ্গে একবার দেখা করা দরকার। প্রকৃত অবস্থা জানতে হবে। প্রথমেই স্বগৃহ ধ্বংস করা সাইয়িদ রাজির খোঁজ নিই। খুঁজতে খুঁজতে শহরের এক সুভাসিত গলিতে গিয়ে পৌঁছি। দেখি, একটি বিরাট অট্টালিকা দাঁড়িয়ে। লোকেরা বলল, এটিই সাইয়িদ রাজির মহল। আমি অট্টালিকার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলি, খোদার কসম! তোমরা আমার সঙ্গে মিথ্যে বলছ। সাইয়িদ রাজি কোনো বাড়ি বানাতে পারে না। আমি আরো সামনে বেড়ে আবু মুসলিম বাগদাদির খোঁজ নিই। এক ব্যক্তি আমাকে শহরের বিচারপতির বিরাট মহলের সামনে নিয়ে গিয়ে বলল, এটিই আবু মুসলিম বাগদাদির বাসস্থান। বিরাট প্রাসাদটাকে দেখলাম। আবু মুসলিম বাগদাদি পদোন্নতি মেনে নিয়েছেন ভেবে অবাক হলাম। সামনে বেড়ে শেখ হামজার খোঁজ নিই। শেখ হামজার খোঁজ নিতে নিতে একপর্যায়ে নিজেকে একটি বিরাট প্রাসাদের সামনে আবিষ্কার করি। বললাম, খোদার কসম, শেখ হামজা ছাদের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন; তিনি আমাকে ছেড়ে দূরে চলে গেছেন। সামনে বেড়ে আবু জাফর সিরাজির খোঁজ নিই। কেউ একজন আমাকে একটি স্বর্ণের দোকানের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে রেশমি পোশাক পরা আবু জাফর সিরাজি তাকিয়ায় হেলান দিয়ে দামি কার্পেটে বসে ছিলেন। একটি ছেলে যতেœর সঙ্গে তাকে পাখা দিয়ে বাতাস করে যাচ্ছে। চিৎকার করে বলি, ওহে আবু জাফর মাটি কি আজ মাটি থেকে মূল্যবান হয়ে গেছে? তারপর উত্তরের অপেক্ষা না করেই ওখান থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে আসি। পথে দেখি রেশমি পোশাকপরা সাইয়িদ রাজি চাকর-নোকর পরিবেষ্টিত হয়ে রাজকীয় ভঙ্গিতে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না। সামনে বেড়ে তার দীর্ঘ আচকানের ভারী আঁচল টেনে ধরে বললাম, আরে ও সম্মানী বংশের প্রতীক, নবি বংশের নেতা; চটের পোশাক ছেড়ে রেশমের পোশাক পরেছ! এ- কথায় সে কিছুটা লজ্জিত হয়। আমি কাঁদতে কাঁদতে আমার ঘরের দিকে চলে আসি। ঘরে ফিরেও আমি দীর্ঘ সময় কান্নাকাটি করি এবং বলি, খোদার কসম আমি এখন একা হয়ে গেছি!
পরদিন শায়খের মাজারে হাজিরা দিই। ওখানে পশমি জামাপরা হাবিব বিন ইয়াহইয়া তিরমিজিকে মাদুরে বসা অবস্থায় পাই। পাশে বসে বলি, দেখলে হাবিব দুনিয়াটা কেমন পালটে গেছে? আমাদের সহচর বন্ধুরা শায়খের শিক্ষাকে ভুলে কীভাবে স্বধর্ম ত্যাগ করেছে দেখেছ? আমার কথা শুনে চেহারায় দুঃখ ফুটিয়ে সে বলে, নিঃসন্দেহে পৃথিবীটা বদলে গেছে, বন্ধুরাও শায়খের শিক্ষাকে ভুলে গেছে এবং স্বধর্ম ছেড়ে দিয়েছে। আমি বলি, ধ্বংস হোক দিনারের দাসরা, ধ্বংস হোক দিরহামের পূজারিরা।
সেদিনই সন্ধ্যায় আবু মুসলিম বাগদাদির দূত আমাকে ডাকতে এসে বলল, আপনার পুরনো বন্ধু আপনাকে ডেকেছেন। ওখানে গিয়ে দেখি হাবিব বিন ইয়াহইয়া তার সান্নিধ্যে বসে আছে। আবু মুসলিম বাগদাদি কপাল কুঞ্চিত করে বললেন, হে আবু কাসিম খিজরি তুমি নাকি আমাদের শায়খের শিক্ষা ত্যাগকারী বলে বেড়াচ্ছ এবং ধ্বংস হোক ধ্বংস হোক বলে মিছিল করছ? আমি হাবিব বিন ইয়াহইয়ার দিকে ক্রুদ্ধ চোখে তাকালাম। তারপর আবু মুসলিম বাগদাদির চোখে চোখ রেখে বললাম, আবু মুসলিম রসুল যা বলেছেন এবং শায়খ যা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে গেছেন আপনি কি আমাকে তা বলতে মানা করছেন?
তারপর আমি পুরো হাদিসটি পড়লাম, ধ্বংস হোক দিনার-দিরহামের পূজারিদের। ধ্বংস হোক কালো পশমি পোশাকের দাসের, ধ্বংস হোক অভিশপ্ত পোশাকিদের।
এ-সময় দস্তরখানে নানারকমের খাবার-দাবার পরিবেশন করা হলো। আবু মুসলিম বাগদাদি বললেন, বন্ধু আহার করো।
আমি ঠান্ডা পানি পান করা থেকে বিরত থাকলাম। বললাম, হে আবু মুসলিম বাগদাদি, এ-পৃথিবীটা একটি দিনের মতো, আমরা এর রোজাদার।
এ-কথা শুনে আবু মুসলিম বাগদাদি কেঁদে ফেলেন। বলেন, ঠিক বলেছ আবু কাসিম। তারপর তিনি খেতে শুরু করেন। আমার কথা শুনে হাবিব বিন ইয়াহইয়া তিরমিজিও কাঁদেন। তারপর তিনিও পেটপুরে খাওয়া-দাওয়া করেন। দস্তরখানা খালি হলে বাঁদি পরিবেষ্টিত হয়ে একজন নর্তকী এলো। তাকে দেখে আমি উঠে দাঁড়াই। আবু মুসলিম বাগদাদি জোরাজুরি করে বললেন, বসো বন্ধু। আমি আবারো বললাম, আবু মুসলিম বাগদাদি, পৃথিবীটা একটি দিনের মতো, আর আমরা এর রোজাদার। এ-কথা বলে আমি চলে আসি। সেই বেশ্যার পায়ের আওয়াজ, ঘুঙুরের ঝনঝনানি আমাকে তাড়া করে। আমি কানে আঙুল দিয়ে হাঁটতে থাকি।
ঘরে পা রাখতেই আচমকা গলা বেয়ে একটি নরম ও আঠালো বস্তু আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। বাতি জ্বালিয়ে ঘরের প্রতিটি কোনা খোঁজাখুঁজি করেও কিছু পেলাম না। ভাবলাম, এটা আমার ভ্রম হবে হয়তো। চাটাই বিছিয়ে শুয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে হাবিব বিন ইয়াহইয়া তিরমিজির কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি তার মাদুরে একটি হলুদ কুকুর শুয়ে আছে। তাকে সম্বোধন করে বলি, হে ইয়াহইয়ার পুত্র, তুমি নিজেকে জাগতিক আত্মার কাছে সঁপে দিয়ে মুনাফিক হয়ে গেছ। এ-কথা শুনে সে কেঁদে বলল, খোদার কসম আমি তোমার বন্ধু। আমাদের সতীর্থদের কাছে গিয়েছিলাম শুধু শায়খের পথ সম্পর্কে তাদের সতর্ক করার জন্য।
তখন শায়খের কবরে (আল্লাহ তাকে নুরে পরিপূর্ণ করে দিন) ভক্তবৃন্দকে সোনা-রুপা ছড়িয়ে দিতে দেখি। তাকে বললাম, হে ইয়াহইয়ার পুত্র, তোমার অমঙ্গল হোক, শায়খের দেহদানের পর তুমি তাকে স্বর্ণের বিনিময়ে বিকিয়ে দিয়েছ। এসব সোনা-রুপা তুমি কী করো?
হাবিব বিন ইয়াহইয়া তিরমিজি আবার কাঁদতে থাকে। খোদার কসম খেয়ে বলে, এসব সোনা-রুপা সাইয়িদ রাজি, আবু জাফর সিরাজি, আবু মুসলিম বাগদাদি, শেখ হামজা এবং আমার মধ্যে সমান সমান ভাগাভাগি হয়। আমার অংশ আমি গরিব-মিসকিনদের মাঝে বণ্টন করে দিই এবং এই মাদুরই আমার ভাগ্য মনে করি।
সেখান থেকে উঠে চলে আসি। সাইয়িদ রাজির অট্টালিকার সামনে দিয়ে যেতে যেতে দেখি তার গেটে একটি বিরাট হলুদ কুকুর দাঁড়িয়ে আছে। এই হলুদ কুকুরটিকেই আমি শেখ হামজার প্রাসাদের সামনে দাঁড়ানো, আবু জাফর সিরাজির মসনদের ওপর ঘুমন্ত এবং আবু মুসলিম বাগদাদির মহলের সামনে লেজ তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি।
এসব দেখে মনে মনে বললাম, আহা শায়খ! আপনার মুরিদরা সব হলুদ কুকুরের আশ্রিতে পরিণত হয়েছে। সে-রাতেই আমি আবারো আবু মুসলিম বাগদাদির মহলের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। তারপর নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করি, আবু কাসিম, তুমি এখানে কেন এসেছ? আবু কাসিম আমাকে উত্তরে বলল, আবু মুসলিম বাগদাদিকে শায়খের পথে ফিরে আসার আহ্বান করতে এসেছি।
সে-রাতেও হাবিব বিন ইয়াহইয়াকে আবু মুসলিম বাগদাদির খাবার টেবিলে দেখলাম। আবু মুসলিম বাগদাদি আমাকে ডেকে বললেন, এসো বন্ধু আহার করো। আমি ঠান্ডা পানি পান করা থেকে বিরত থেকে বলি, হে আবু মুসলিম বাগদাদি, এ-পৃথিবীটা একটি দিনের মতো, আমরা এর রোজাদার। এ-কথা শুনে আবু মুসলিম বাগদাদি কেঁদে ফেলে বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ বন্ধু। এরপর তিনি তার রাতের খাবার শেষ করলেন। হাবিব বিন ইয়াহইয়া তিরমিজিও কাঁদলেন এবং পেটপুরে খাওয়া-দাওয়া করলেন। এরপর নর্তকী এলে আবারো একই কথার পুনরাবৃত্তি করে হাঁটা শুরু করি। নর্তকীর পায়ের আওয়াজ, নূপুরের তাল অনেকটা পথ আমার পিছু নেয়। কিন্তু আমি কানে আঙুল গুঁজে সামনে এগিয়ে যেতে থাকি।
তৃতীয় দিন ফের শহরটাকে ঘুরে দেখি। গত দুদিন যা যা দেখেছিলাম আজো সবকিছু একইরকম। সামান্যও পরিবর্তন নেই। রাতে আবারো নিজেকে আবু মুসলিম বাগদাদির দরজার সামনে আবিষ্কার করি। আমার জানাই ছিল যে, আমি আবু মুসলিমকে শায়খের পথে ফিরে আসার আহ্বান করতে এসেছি। তাই আজ আর নিজেকে কোনো প্রশ্ন না করেই অন্দরে ঢুকে যাই। আজো হাবিব বিন ইয়াহইয়া খাবার টেবিলে হাজির রয়েছে। আবু মুসলিম বাগদাদি আমাকে দেখে আহ্বান করে, এসো বন্ধু, খাবার গ্রহণ করো। আজ ছিল আমার উপোসের তৃতীয় দিন। দস্তরখানে হরেকরকম খাবার ছাড়াও সাজানো ছিল আমার এক সময়কার খুব প্রিয় খাবার জাফরান-পোলাও। এক লোকমা জাফরান-পোলাও মুখে দিয়ে খাবার থেকে হাত তুলে নিই। এক ঢোক ঠান্ডা পানি পান করে বলি, এ-দুনিয়াটা একটা দিন আমরা এর রোজাদার।
আজ এ-কথা শোনার পর আবু মুসলিম বাগদাদি কান্নার বদলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, বন্ধু তুমি সত্য বলেছ। তারপর সেই নর্তকী বেরিয়ে এলে একবার চোখ ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখি তার রাঙা রাঙা চেহারা, লাল ওয়াইনের মতো চোখ, শক্ত স্তনবোঁটা এবং ভরাট ঊরু। পেট ছিল তার চন্দন মহল, নাভি যেন গোল পেয়ালা। পরনে তার এতটাই পাতলা পোশাক ছিল যে, চন্দন মহল, গোল পেয়ালা এবং রুপালি ঊরু সবই ছিল খোলামেলা। মনে হচ্ছিল আমি আরো এক লোকমা সুরভিত মিষ্টি জাফরান-পোলাও মুখে পুরে দিয়েছি। আমার শরীরের জোড়ায় জোড়ায় ঝংকার উঠছে। আমার হাত আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। হাতের ব্যাপারে শায়খ যা বলেছিলেন আমার তা মনে পড়ে যায়। আমি ঘাবড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়াই। আবু মুসলিম বাগদাদি আজ খাবার খাওয়ার জন্য জোরাজুরি করেননি। আজ বেশ্যার পায়ের আওয়াজ এবং নূপুরের তাল এক মাদকতার সঙ্গে অনেকদূর পর্যন্ত আমার পিছু নিয়েছে।
ঘরে ফিরে দেখি আমার মাদুরে শুয়ে আছে একটি হলুদ কুকুর! এ-দৃশ্য দেখে আমি তো একেবারে থ বনে যাই। আমার গা বেয়ে ঠান্ডা ঘাম নামতে থাকে। আমি কুকুরটিকে আঘাত করলে ওটা না পালিয়ে উলটো আমার জামার নিচ দিয়ে ভেতরে ঢুকে হাওয়া হয়ে যায়। দুশ্চিন্তা আর সংশয় চারপাশ থেকে আমাকে ঘিরে ধরে। আমার চোখের ঘুম এবং মনের শান্তি উবে যায়। প্রচ- অনুশোচনায় রোদন করতে থাকি, মাবুদ আমার ওপর রহম করো, আমার হৃদয় অপবিত্রতার মধ্যে ডুবে গেছে, আমার ভেতর হলুদ কুকুর ঢুকে গেছে। রোনাজারি করি; মোনাজাত করি; তবু হৃদয়ে আমার শান্তি আসে না। হঠাৎ করে আবু আলি রোদবারি রাজি আল্লাহু আনহুর কথা মনে পড়ে। তিনিও একটা সময় এ-রোগে আক্রান্ত ছিলেন। একদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই সে নদীতে গিয়ে পৌঁছে এবং সূর্য ওঠা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করে। এ সময় তার হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়। সে প্রার্থনা করে, হে খোদা শান্তি দিন। নদী থেকে অদৃশ্য আওয়াজ আসে, শান্তি জ্ঞানের মধ্যে। আমি নিজেকে বললাম, আবু কাসিম খিজরি এ জায়গা ত্যাগ করো। এখানে তোমার ভেতর-বাইরে হলুদ কুকুরের জন্ম হয়েছে। তোমার শান্তি উধাও হয়ে গেছে।
শেষবারের মতো আমার ঘরটাকে দেখে নিই। বহু বছরের প্রচেষ্টায় সংগ্রহ করা মানতিক এবং ফিকহ শাস্ত্রের দুষ্প্রাপ্য কেতাবাদি ছেড়ে শুধু শায়খের বাণীসংকলন বগলে নিয়ে শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি। শহর থেকে বেরুনোর পথে পথে মাটি আমার পা আঁকড়ে ধরে। শায়খের সুরভিত মজলিসগুলোর কথা বড্ড বেশি মনে পড়ে। এই মাটি যাকে আমি পূত-পবিত্র জেনেছিলাম আমাকে খুব করে আঁকড়ে ধরে। এইসব গলি যা শায়খের পায়ে চুমু খেয়েছিল আমাকে ভীষণভাবে ডাকে। ওদের ডাক শুনে কাঁদি। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলি, হা শায়খ, আপনার শহর ছাদে ছেয়ে গেছে। আকাশ দূরে চলে গেছে। আপনার দোস্ত ও শাগরেদরা আপনাকে ছেড়ে পালিয়েছে। তারা লা-শারিক ছাদের মোকাবেলায় স্ব-স্ব ছাদ খাড়া করেছে। মাটির সঙ্গে মাটির দূরত্ব তৈরি করেছে। হলুদ কুকুর হয়েছে সম্মানিত আর আশরাফুল মাখলুকাত পরিণত হয়েছে কাদামাটিতে। আমার জন্য এ-শহর সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। আমি আপনার শহর ত্যাগ করেছি Ñ এ-কথা বলে নিজের হৃদয়কে কঠিন করে হাঁটতে থাকি।
হাঁটতে হাঁটতে বহুদূর চলে এসেছি। অবিরাম হাঁটার কারণে হাঁপিয়ে গেছি, পায়ে ফোসকা পড়ে গেছে। কিন্তু এরপর আচমকা কিছু একটা জোর করে গলার ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আমার পায়ের পর গিয়ে পড়ল। পায়ের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে গেলাম, এ তো দেখছি একটি শেয়ালছানা আমার পায়ের ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। ছানাটিকে পায়ের নিচে ফেলে পিষে মথিত করে দিতে চাইলাম। কিন্তু কী আশ্চর্য, শেয়ালের এই ছানা তো ফুলে ইয়া মোটা হয়ে গেছে! আমি পায়ের নিচে ফেলে আবারো মর্দন করতে থাকলাম। ছানাটিও ক্রমশ মোটা হতে লাগল। মোটা হতে হতে হলুদ কুকুরে পরিণত হলো! তারপর পায়ের নিচে ফেলে পিষতে পিষতে পুরো শক্তি দিয়ে ওটাকে লাত্থি মেরে সামনে এগিয়ে যাই। আমি বলি, খোদার কসম, আমি আমার হলুদ কুকুরকে পিষে ফেলেছি। আমি সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, আমার পায়ের ফোস্কাগুলো ফোঁড়ায় রূপান্তরিত হয়। পায়ের আঙুলগুলো ফেটে যায়। পায়ের তলা হয়ে যায় একেবারে রক্তাক্ত। কিন্তু এরপর যে হলুদ কুকুরটাকে আমি পায়ের নিচে ফেলে পিষ্ট করে পেছনে ফেলে এসেছি বলে জানতাম সেটি কোথা থেকে যেন এসে আমার পথ আগলে দাঁড়িয়েছে। আমি কুকুরটার সঙ্গে আচ্ছামতো লড়লাম। পথ থেকে সরানোর সমস্ত চেষ্টাই করলাম কিন্তু সেটি পথ থেকে মোটেও সরল না। এমনকি আমিই ক্লান্ত হয়ে ছোট হয়ে গেলাম আর ওই হলুদ কুকুর ফুলেফেঁপে আরো বড় হয়ে গেল। আমি তখন রাব্বুল ইজ্জতের দরবারে ফরিয়াদ করি, হে পালনকর্তা প্রভু, মানুষ ছোট হয়ে গেছে আর কুকুর বড় হয়ে গেছে।
আমি তাকে পায়ে পিষতে চেয়েছি আর সে আমার জামার আঁচলে ঢুকে গায়েব হয়ে গেছে। আমি আমার ফাটা আঙুল, রক্তাক্ত পায়ের পাতা আর ফোঁড়ার দিকে তাকিয়ে নিজের দুর্গতির জন্য কান্নাকাটি করি আর বলি, হায় আমাকে যদি শায়খের শহর ছাড়তে না হতো! তখন আমার চিন্তা অন্যদিকে গেল। কল্পনায় সুগন্ধি জাফরান-পোলাও দেখতে পাই। কল্পনায় দেখি চন্দন মহল, গোল পেয়ালাওয়ালিকে। শায়খের মাজারে সোনা-রুপার বৃষ্টি ঝরার বিষয়টাও অনুমান করি। এও ভাবি, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, শায়খের শাগরেদ-মুরিদরা মাজারে ঝরা সোনা-রুপায় তার শিক্ষা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। হাবিব বিন ইয়াহইয়া তিরমিজি মুনাফেকির পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু শায়খের বাণীসংকলন তো এখনো আমার কাছে রয়েছে। এটিই হবে আমার শহরে ফেরার সঠিক ও উপযুক্ত মাধ্যম। অবশ্যই আমি শায়খের বাণীসংকলনটা আরেকবার ভালো করে দেখে নেব। এটিকে সবার কাছে 888sport apk download apk latest versionর এবং ভালোবাসার বস্তু বানিয়ে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব এবং এমনভাবে শায়খের জীবনকথা লিখব যে, বন্ধুরা খুশি হয়ে উঠবে, কেউই আমার ওপর ক্ষুব্ধ হবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ আমার শায়খের একটা কথাৃও মনে পড়ে যায় Ñ হাত মানুষের দুশমন। আমার মনে হয়, আমার হাতও আমার সঙ্গে দুশমনি করবে। সে-রাতেই যখন ঘুমাব ভাবছি, দেখি Ñ হলুদ কুকুর আবারো এসে হাজির, আমার চাটাইয়ে শুয়ে আছে। আমি কুকুরটাকে আঘাত করলাম। চাটাই থেকে তাড়াতে লড়াই শুরু করি। আমি আর হলুদ কুকুর রাতভর লড়াই করতে থাকি। কখনো আমি তাকে পায়ের নিচে ফেলে পিষে দিই এবং সে ছোট হয়ে যায় আর আমি হই বড়, আবার কখনো সে উঠে দাঁড়ায় এবং আমি ছোট হয়ে যাই আর সে হয়ে যায় বড়। শেষ পর্যন্ত রাত ভোর হলে তার তেজ কমে আসে। তারপর আমার আঁচলের ভেতর ঢুকে গায়েব হয়ে যায়।
তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আমার আর হলুদ কুকুরের লড়াই চলে আসছে। লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে বলে এ-সংগ্রামের বহু ডালপালা এবং বেশুমার সূক্ষ্ম বিষয়াবলি না লিখে এড়িয়ে যাচ্ছি। কখনো হলুদ কুকুর আমার ওপর আবার কখনো আমি হলুদ কুকুরের ওপর জয়ী হচ্ছিলাম। কখনো আমি বড় হই এবং সে আমার পায়ের কাছে শেয়ালছানার মতো গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকে। কখনো সে বড় হয়ে যায় আর আমি সংকুচিত হয়ে পড়ি। আমাকে তখন সুগন্ধি জাফরান-পোলাও, চন্দন মহল এবং গোল পেয়ালা পীড়া দিতে থাকে। হলুদ কুকুর বলে, সবাই যখন হলুদ কুকুর হয়ে যায়, তখনো মানুষ সেজে থাকা কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট কাজ। আমি প্রার্থনা করি, হে পালনকর্তা আর কত গাছতলায় মানুষের থেকে দূরে দূরে পালিয়ে বেড়াব। কাঁচাপাকা ফল, মোটা চটের ছিন্নবস্ত্রে আর কত দিন কাটাব। আমার পা শহরমুখী হয়ে যায়। কিন্তু আমার শায়খের বাণী মনে পড়ে Ñ উলটোমুখী পা পথিকের শত্রু। আমি আবার আমার পা-কে শাস্তি দিই। শহরকে পেছনে রেখে এতটা হাঁটি যে, পায়ের পাতা রক্তাক্ত হয়ে যায়। রাস্তা থেকে পাথর সরিয়ে সরিয়ে হাতকেও শাস্তি দিই। হে রাব্বুল ইজ্জত, আমি আমার শত্রুদের এতটাই শাস্তি দিয়েছি যে, পায়ের পাতা রক্তাক্ত হয়ে গেছে, পাথর তুলতে তুলতে হাতে ঘা হয়ে গেছে। রোদে পুড়ে আমার চামড়া কালো হয়ে গেছে। আমার হাড়-হাড্ডি গলে যাচ্ছে। হে রাব্বুল ইজ্জত, আমার রাতগুলো পুড়ে গেছে, দিনগুলো ধুলোয় ডুবে গেছে। দুনিয়াটা আমার জন্য একটি জ্বলন্ত দিনে পরিণত হয়েছে, আর আমি সে দিনে রোজা রাখছি, রোজা দিনকে দিন দীর্ঘই হয়ে যাচ্ছে। রোজায় আমি আরো বেশি শুকিয়ে যাচ্ছি কিন্তু হলুদ কুকুর আরো শক্তিশালী হচ্ছে। রোজ রাতে আমার চাটাইয়ে শুয়েবসে আরাম করে যাচ্ছে। আমার আরাম ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। আমার চাটাই অন্যের কব্জায় চলে গেছে। হলুদ কুকুর আরো বড় হয়ে গেছে এবং মানুষ হয়ে গেছে আরো ক্ষুদ্র।
তারপর আবু আলি রোদবারিকে আবার 888sport app download for android করি এবং হাঁটু ভেঙে নদীর পাড়ে বসে পড়ি। আমার হৃদয় দুঃখে ভরা ছিল। কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করি, হে এলাহি, শান্তি দিন শান্তি দিন শান্তি দিন। নদীর দিকে তাকিয়ে রাতভর কান্নাকাটি করি। পুরোটা রাত ধুলোর সঙ্গে তীব্র বাতাস বয়ে গেছে। গাছ থেকে শুকনো পাতা ঝরে পড়েছে। নদী থেকে চোখ ফিরিয়ে ধুলোয় 888sport app নিজের শরীরটার দিকে তাকাই। আমার চারপাশে হলুদ পাতার সমাহার দেখে বললাম, এ হলো আমার আশা-আকাক্সক্ষা। খোদার কসম আমি পবিত্রতা থেকে মুক্ত হয়ে গেছি। আমি পাতাহীন বিবস্ত্র বৃক্ষে পরিণত হয়েছি। ভোরে আমার শরীরের প্রতিটি জোড়া থেকে মিঠা মিঠা রস বেরুচ্ছে বলে মনে হতে লাগল। যেন দেহ আমার চন্দন মহলের স্পর্শ পেয়েছে। প্রতিটি দেহ-জোড়া যেন সোনালি গোল পেয়ালা এবং তুলতুলে রুপালি গোড়ালির ছোঁয়া পেয়েছে। যেন আঙুলেরা সোনা-রুপার মধ্যে খেলে চলেছে, দিরহাম-দিনার যেন ঝনঝনিয়ে উঠছে। তারপর চোখ মেলে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের আলোয় ভয়ানক দৃশ্যটা দেখলাম। হলুদ কুকুরটা পেছনের পা শহরে এবং সামনের পা আমার চাটাইয়ের ওপর রেখে লেজ উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার ভেজা উষ্ণ নাসারন্ধ্র আমার ডান হাতের আঙুল স্পর্শ করছে। আমার ডান হাতের আঙুলগুলোর দিকে এমনভাবে তাকালাম যেন তা আবু সাইদ রহমতুল্লাহ আলাইহির হাতের মতো কর্তিত হয়ে আমার থেকে পৃথক হয়ে পড়ে আছে। আমি ওটাকে সম্বোধন করে বলি, হে আমার হাত, হে বন্ধু আমার, তুমি দুশমনের সঙ্গে আঁতাত করেছ। চোখ বন্ধ করে ফেলি। বিলাপ করতে করতে আবারো প্রার্থনা করি, ইয়া এলাহি, শান্তি দিন শান্তি দিন শান্তি দিন।

ইনতেজার হুসেইন
কথা888sport live footballিক ইনতেজার হুসেইনকে তুলনা করা হয় প্রখ্যাত উর্দু ছোটগল্পকার সা’দত হাসান মান্টোর সঙ্গে। কেউ কেউ তাকে মান্টোর চেয়েও শক্তিশালী গল্পকার বলে দাবি করেন। মান্টো-পরবর্তী উর্দু ছোটগল্পের সবচেয়ে শক্তিমান স্রষ্টা ইনতেজার হুসেইন তাঁর বিখ্যাত 888sport alternative link বাস্তির জন্য ২০১৩ সালে ম্যানবুকার সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন। পৌরাণিক আখ্যান, অ্যারাবিয়ান নাইটস ও কাফকাকে ছেনে সৃষ্টি করেছেন ছোটগল্পের নিজস্ব স্টাইল। তাঁর গল্পের প্লট, চরিত্র কিংবা ভাষা সবই প্রতীকী। এছাড়া দেশভাগের সময় ভারত ছেড়ে আসা এই লেখকের লেখায় বারবার ঘুরেফিরে এসেছে নস্টালজিয়া।
ইনতেজার হুসেইন উর্দু ছাড়াও ইংরেজিতে লেখালেখি করেছেন। পেশাজীবনে পাকিস্তানের বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিক ডনে কাজ করেছেন। 888sport app download apk latest version করেছেন চেখভসহ বিশ্ব888sport live footballের গুরুত্বপূর্ণ নানা লেখাজোখা। 888sport appsের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষের এই কথা888sport live footballিক আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও লিখেছেন একাধিক অসাধারণ ছোটগল্প। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর বিখ্যাত দুটি ছোটগল্প হচ্ছে, সিøপ এবং সিটি অব সরো। এছাড়া তাঁর বিখ্যাত 888sport alternative link বাস্তির একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে সাতচল্লিশ, ঊনসত্তর এবং একাত্তরের দিল্লি, 888sport app ও লাহোর। ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি উর্দু888sport live footballের এই শক্তিমান লেখক মারা যান।