তখন বসন্তদিন। ইট-কাঠের এই শহরেও হাওয়ায় গন্ধ ছিল। রোদ্দুরের রংও অন্যরকম। প্রায় সারাদিন ধরে কোথাও না কোথাও রেডিওতে শোনা যেত বেজে চলেছে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। সে যে কী মদিরতা, তা আজ আর বলে বোঝানো যাবে না। সন্ধ্যার বেতারে দেবদুলালের কণ্ঠস্বরে ঈষৎ কাঁপানো সুরে সংবাদ, সংবাদভাষ্য, কখনো-বা শামসুর রাহমানের 888sport app download apk। তাঁর বইয়ের নতুন সংস্করণ বেরোচ্ছে কলকাতা থেকে। বেরোচ্ছে আল মাহমুদ ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র নতুন বই। চারিদিকে খোলা হাওয়ার খুশি। স্বাধীন 888sport appsের বেতার কেন্দ্রও ধরতে পারছি আমরা মাঝে মাঝে। অবস্থা অস্থির। এতদূর যে, তাঁর মগ্নতা থেকে বেরিয়ে এসে বুদ্ধদেব বসুও 888sport app download for android করছেন নিজের ছাত্রজীবনের সেইসব দিনের কথা। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের কাপে তুফান তোলা।
অস্থিরতার প্রেক্ষাপট সংক্ষেপে এরকম। উনিশশো বাহান্নর ভাষা-আন্দোলনের পরে উনিশশো পঞ্চান্নতেই স্বায়ত্তশাসনের কথা ওঠে। সেই মর্মে 888sport cricket BPL rate দফা দাবিপত্র তৈরি হয়। ১৯৫৫-র অক্টোবরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’শব্দ বাদ যায়। সে সেক্যুলার বাঙালি সত্তার উন্মেষের এক প্রতীকী মুহূর্ত। 888sport appsের স্বাধীনতার পেছনে যে ছয় দফা দাবির কথা শোনা যায় তার সূত্রপাত ১৯৬৬-র ৫ ফেব্রুয়ারি। ওই তারিখে লাহোরে বিরোধীদলগুলির সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান ওই প্রস্তাব পেশ করেন। ওই ছয় দফা প্রস্তাবই এক অর্থে 888sport appsের স্বাধীনতার সনদ। এর সঙ্গে পরে যোগ হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগারো দফা দাবি।
ইতোমধ্যে ১৯৬৮-র ৩ জানুয়ারি মুজিবুর রহমানসমেত মোট পঁয়ত্রিশ জন বাঙালি সেনা ও অন্য অফিসারদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান বিভাজন ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলাই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। এই বছর ১৯ জুন ওই মামলার বিচার শুরু হয়। ১৯৬৯-এর ৫ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এগারো দফা দাবি আদায়ের জন্য। এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলন ক্রমে গণ-আন্দোলনের চেহারা নেয়। ঠিক তার আগের বছরে ফরাসি দেশের ছাত্র-গণ-আন্দোলনের 888sport sign up bonus জেগে ওঠে যেন। আন্দোলনের চাপে ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা হয় এবং সেইসঙ্গে মুজিবুর রহমানও মুক্তি পান। ২৩ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দশ লাখ মানুষের সমাবেশে তাঁর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু নামে পরিচিত হন।
বঙ্গবন্ধুর পেশ করা ছয় দফা দাবির মূল চিন্তা ছিল প্রকৃত অর্থে একটি ফেডারেল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সংক্ষেপে বলতে গেলে দাবিগুলি ছিল :
১. লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেল সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় পরিণত করতে হবে। কায়েদে আজম জিন্নাহসহ সমস্ত পাকিস্তানি নেতাই একদিন এই লাহোর প্রস্তাবের পক্ষে ছিলেন। ১৯৪৬-এর সাধারণ নির্বাচন এই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই হয়।
২. প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি ছাড়া আর সব বিষয় রাজ্যগুলির হাতে থাকবে।
৩. মুদ্রাব্যবস্থা সম্পর্কে দুটি বিকল্প প্রস্তাব ছিল। পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের জন্য দুটি আলাদা মুদ্রাব্যবস্থা। সে ক্ষেত্রে দুই অঞ্চলের জন্য দুটি আলাদা স্টেট ব্যাংক। অথবা, একই কারেন্সি, কিন্তু সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিধান চিন্তা করতে হবে যাতে পূর্বের মুদ্রা পশ্চিমে পাচার না হয়।
৪. কর ব্যবস্থা মূলত থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। আদায়ীকৃত রেভিনিউ পূর্বনির্ধারিত নীতি অনুসারে ফেডারেল খাতে জমা হবে।
৫. বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রস্তাব। দুই অঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পৃথক হিসাব এবং পৃথক এখতিয়ার থাকতে হবে। এছাড়াও কিছু কিছু বিস্তারিত প্রস্তাব ছিল।
৬. পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আলাদা সেনা বা প্যারামিলিটারি ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
পাকিস্তানের তদানীন্তন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বাস্তবতার কথা মাথায় রেখে রচিত এই দাবি-সনদে বাস্তববোধ ও ঋজু সাহসিকতার পরিচয় দুই-ই আছে। পরেও আন্দোলন ও সংগ্রামের নানা পর্বে নানা টানাপোড়েনের মধ্যেও মুজিবুর রহমান এই প্রস্তাবে স্থির দাঁড়িয়ে ছিলেন। বস্তুত এই ফেডারেল ধারণা আমাদের এই উপমহাদেশের পক্ষে যতটা জরুরি ছিল, ততটাই ছিল তা উপেক্ষিত। বৃহদাকার জাতি-রাষ্ট্রের ধারণা ক্রমে ক্রমে আমাদের পেয়ে বসল। এতদূর যে তার জন্য আজো আমাদের অনেক দাম দিতে হচ্ছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে মুজিবুর রহমান ছাত্রসমাজের এগারো দফা দাবির প্রতি তাঁর সমর্থন ঘোষণা করেন। এর পরে ওই ১৯৬৯-এর ১০ মার্চ আইয়ুব খান রাওয়ালপিন্ডিতে গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করেন। বঙ্গবন্ধু সেই বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে তিনি ছয় দফা ও এগারো দফা দাবির ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব তোলেন। সে-দাবি খারিজ হয়ে যায়। ১৩ মার্চ তিনি বৈঠক ছেড়ে ১৪ মার্চ 888sport appয় ফিরে আসেন। ২৫ মার্চ সামরিক শাসন জারি করে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতাসীন হন। আরো দু-বছর বাদে এই তারিখেই সামরিক দাপটের স্বাদ পাবে বাঙালি। এদিকে এই ১৯৬৯-এর ৫ ডিসেম্বর তারিখে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীর সভায় আওয়ামী লীগের তরফে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের নতুন নামকরণ করেন 888sport apps। এর এক বছর বাদে ১৯৭০-এর ৭ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ 888sport free betগরিষ্ঠতা লাভ করে। নির্বাচনের এই ফল ছিল রীতিমতো সাড়াজাগানো। জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ পায় পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭, আর প্রাদেশিক পরিষদে পায় ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টি।
নির্বাচনের এই ফলাফলের পরে ঘটনা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায় ২৫ মার্চের স্বাধীনতার দিকে। ১৯৭১-এর ৫ জানুয়ারি পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোয়ালিশন সরকার গঠনের কথা বলেন। ২৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনার জন্য ভুট্টো 888sport appয় আসেন। তিনদিন বৈঠকের পরে আলোচনা ব্যর্থ হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন যে, ৩ মার্চ 888sport appয় জাতীয় পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ১৫ ফেব্রুয়ারিতেই ভুট্টো এই বৈঠক বয়কটের ঘোষণা দেন এবং তার বদলে তিনি ‘দুই প্রদেশের 888sport free betগরিষ্ঠ দুই দলের প্রতি ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জানান’। পরের দিনই মুজিবুর রহমান এই দাবি খারিজ করেন। তাঁর দাবি ‘ক্ষমতা একমাত্র 888sport free betগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।‘ ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের বৈঠক অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেন। এই ঘোষণার বিরুদ্ধে বাংলা জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ৩ মার্চ সারা বাংলায় হরতাল পালিত হয়। এরপর ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে দাবি জানানো হয়। এই সেই চূড়ান্ত পর্ব। ৭ মার্চ মুজিবুর রহমান গোটা বাংলাকে ডেকে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ এই সেই উদাত্ত আহ্বান যা পশ্চিমবঙ্গের ঘরে ঘরে ধ্বনিত হলো তখন। এই ‘জয় বাংলা’ শব্দবন্ধ তখন উঠে এলো আমাদের মুখে মুখে। মুখে মুখে একটা চোখের অসুখের নামকরণ পর্যন্ত হয়ে গেল তখন এই শব্দবন্ধে।
কনজাংকটিভাইটিস রোগে চোখ লাল হয়ে যায়। রক্তচক্ষু ওই অসুখ তখন আমাদের এখানে ওই নামেই চিহ্নিত। আজো তার রেশ পাওয়া যায়।
বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি। এসব কথা তখন আমাদের এখানে মুখের লব্জ। মুজিবুর রহমানের গলায় তখন আমাদের বেতারে সকাল-সন্ধ্যা এই বাণী ধ্বনিত হচ্ছে : ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’ এই পর্বে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সর্বাত্মক অসহযোগ শুরু হলো। এই অসহযোগিতার মধ্যে ১৬ মার্চ 888sport appয় ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক বসল। ভুট্টোও সে-আলোচনায় উপস্থিত থাকেন। ২৫ মার্চ আলোচনা ব্যর্থ হয়। ওইদিনই ইয়াহিয়া খান 888sport app ছেড়ে চলে যান। ওই রাতেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ। মুক্তিযুদ্ধের শুরু।
২৫ মার্চ রাত্রি ১২টা ২০ মিনিটে মুজিবুর রহমান 888sport appsের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণায় তিনি বলেন, আজ থেকে 888sport apps স্বাধীন। যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই সর্বস্ব নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে যাতে করে দখলদার সৈন্যদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করা যায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এখন 888sport appsে দখলদার সৈন্য ছাড়া আর কিছু নয়। তাঁর এই ঘোষণা নানা মাধ্যমে দেশের সবদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই রাত্রেই পাকিস্তান সৈন্যবাহিনী 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়সমেত পিলখানা রাইফেলস সদর দপ্তর এবং রাজারবাগ পুলিশ ঘাঁটি আক্রমণ করে। যুদ্ধ এখন সরাসরি রাস্তায় নেমে আসে। এই অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক মহলের জন্যও একটি বার্তা প্রচার করেন। সে-বার্তা এই :
‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপোস নাই। জয় আমাদের হবেই। পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সকল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং 888sport app দেশপ্রেমিক প্রিয় লোকদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।’ (শেখ মুজিবুর রহমান, কারাগারের রোজনামচা, বাংলা একাডেমি, 888sport app, পৃ ২৭৬-৭৭।) ওইদিন রাত্রি দেড়টায় মুজিবুর রহমান ধানমন্ডির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন। পরদিনই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয় এবং মুজিবুর রহমানকে দেশদ্রোহী ঘোষণা করা হয়। এই ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের কাল। ইতোমধ্যে ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠন করা হয়েছে। ১৭ এপ্রিল এই স্বাধীন সরকার মুজিবনগরে (মেহেরপুর) শপথ গ্রহণ করে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম এই সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আর তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী।
একটি মানুষের জীবনে এই এক পর্ব। লড়াই আর সংগ্রাম। ব্রিটিশ ভারতের ঔপনিবেশিকতাবিরোধী আন্দোলন ও প্রতিরোধের সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু। এই জীবনের অন্য এক ছবি ফুটে ওঠে জেলখানার ডায়েরিতে। সেখানে আছে মায়া মমতা স্নিগ্ধতার ছবি। সেখানে আছে এক হলুদ পাখির কথা। সে ওঁর চেনা। জীবনে অনেকবার জেল খেটেছেন। একবার জেলে এসে সে-পাখিকে দেখতে পাচ্ছেন না। মন ব্যাকুল হচ্ছে তার জন্য। জেলখানায় নিজের কুঠুরির বাইরে আমের চারায় জল দিয়ে বড় করেছেন একটি গাছ। ভালো লাগে গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকতে। ভালো লাগে যে মুরগি ওঁর ঘরের সামনে দিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়, খুঁটে খুঁটে দানা খায় তার দিকে চেয়ে থাকতে। তার জন্যে যত্ন করে খাবার রাখেন নিজের সামান্য বরাদ্দ থেকে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খবর রাখেন অন্য বন্দিদের। তিনি নামি মানুষ। কিন্তু তারা তো তা নয়। তাদের মধ্যে সাধারণ অপরাধীও আছে কেউ কেউ। তাদেরও খবর রাখেন। শোনেন তাদের সুখ-দুঃখের কথা।
মাঝে মাঝে পিছনে তাকাতে হয়। সারাজীবনই কেটেছে রাজনীতিতে। সেই কবে পাকিস্তান আন্দোলনে নিজেকে শামিল করেছিলেন। আজ এই জেলে বসে মনে হয় দেশের এই চেহারা। এই কি চেয়েছিলেন শুরুর দিনে। আবার নতুন করে অনেক কিছুর কথা ভাবতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কাদের সঙ্গে কী করবেন আজ। নেই, অনেকেই নেই। কেউ দেশ ছেড়ে চলে গেছে, কেউ চলে গেছে আরো দূরে। এমনিই হয়। বিষাদের সুর লাগে।
স্বাধীনতার ওই জ্বলন্ত মুহূর্তের পরেই অন্য সুর বাজবে। বেজেছিল আমাদের এখানেও। ১৯৪৭-এর ১৫ আগস্টের পরে সাড়ে পাঁচ মাস না যেতেই গান্ধী হত্যা। 888sport appsের স্বাধীনতার পরেও এলো আর এক ১৫ আগস্ট। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলো ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর। তার পরে সাড়ে তিন বছরের মাথায় এলো
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট। বীভৎস খবর। সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের উপস্থিত সব সদস্যের হত্যালীলা। এখানে আমার আছে এক নিভৃত ব্যক্তিমুহূর্ত। 888sport appর ওই খবর আমি যখন পেলাম সন্ধ্যার দিকে তখন আমার বাড়িতে এক ছোট পারিবারিক আনন্দোৎসব। সকলের মুখ মলিন হলো। যাকে ঘিরে এই আনন্দ তার তখনো কিছু বোঝার বয়স হয়নি। আজো দিনটা ঘুরে ঘুরে আসে। আমার সে-আনন্দোৎসব থেমে গেছে। দিনটা আসে। কথাটা মনে হয়। স্বীকৃতি : এই লেখায় আমার সম্বল শেখ মুজিবুর রহমানের জেলখানার ডায়েরি।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.