ঈহার অন্দরে
জীবনের সত্তর বসন্ত অতিক্রম করে একাত্তরে এসে বাংলা 888sport app download apkমালঞ্চে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর উপহার-কুসুম ঈহা (২০১৯)।
প্রারম্ভ 888sport app download apk ‘কুয়ো’, সমাপ্তি এবং নাম888sport app download apk ‘ঈহা’।
১৯৭৫-এ দাও বৃক্ষ দাও দিন দিয়ে যে-কাব্যিক অভিযাত্রাবিন্দুর অবতরণিকা, ২০১৯-এ ঈহায় এসে তা নবমাত্রাগামী। না হলে পুস্তকের সূচনাতে কী করে কবি উচ্চারণক্ষম –
আমি 888sport app download apk পাঠ করি না
অশ্রু পড়ি অতল কুয়োয়।
(‘কুয়ো’, পৃ ৯)
ষাটটি 888sport app download apkর গুচ্ছ ঈহা, যেখানে খণ্ড খণ্ড হয়ে ছড়িয়ে আছি আমি, আছে আমরা –
পুরা ও সমকাল
অন্ধকার ও অনন্ত আগামী
মৃত্যু ও জয়ন্তী
সার্বভৌম ধ্বংসের রজনী,
আর
মুহুর্মুহু গোলাপ জাগরণ।
এই কাব্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী কবির অধিক চিত্রী –
চিত্রীর অধিক সুর888sport live chatী
সুর888sport live chatীর অধিক নিমগ্ন ধ্যানী।
রণরোলের উপাদান ছিটানো-ছড়ানো এখানে তবু 888sport app download apk-পাঠান্তে জাগরূক নিরুচ্চারের বোধ যা গহন-গোপন এক অন্তর্গূঢ় জগতের ইশারা দিয়ে চলে অবিরত। জনারণ্যে মরচেপড়া সম্পন্নতায় বসত করে কী করে নির্জন-স্বর্ণালি ভিখিরি হওয়ার দুরূহ জীবনকর্ম সাধন হয়, তার সাক্ষ্য ধরা রইল এই বইয়ের দুই মলাটের ভেতরে, বাহাত্তর পৃষ্ঠা-পরিসরে।
দুই
ঈহা ব্যক্তি কবির সৃজন-প্রসূন,
ঈহা নয় কি সমষ্টিমানুষেরও যূথ বয়ান?
পাঠিকা ও পাঠক, জীবনযাপনের প্লেট থেকে হৃৎদৃষ্টি নিবদ্ধ করুন ঈহা-ভুক্ত ‘সালাদ’-এর দিকে। দেখুন খাদ্যের রূপকে আপনি এবং আমরা সকলে কি ধরা নেই এখানে, দুঃখের তিথিডোরে –
চিত হ’য়ে আছে এক পৃথিবীর দেহ
ঘন নীল কাচের টেবিলে
ছুরি দিয়ে ছাঁটা শেষে ঊর্ধ্ব আর অধ
খণ্ড করে রাখা হলো টমেটোর পেট
এশিয়া আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া আমেরিকা ইউরোপ
যত্ন আর ধৈর্য নিয়ে গাজরের ফালি
থিতু হয় প্রশান্ত অতলান্তিক শেষে
ভারত মহাসাগর
ভিসুভিয়াস জানান দিলে
শসা তার বুক খুলে দেয়
লেবু ও নুনের ছিটা হিমালয় ছুঁয়ে
আন্দিস আল্প্সে নামে
চিরে ফেলা ঝাললংকা
সাহারা সাইবেরিয়া মেখে
আঙুলে-আঙুলে ধরে সৌরীয় সমন
যত শান্তি হাপুস-হুপুস
যত যুদ্ধ মচামচ
জিহ্বার ডগায় ঝরে জল
ক্ষুধা ঝমাঝম
সালাদে প্রস্তুত হচ্ছে পৃথিবীর স্বাদ
(‘সালাদ’, পৃ ১৩)
নিরীহ সালাদের ঝকমারিতে সাম্প্রতিক-আবহমান দুনিয়ায় এভাবে চলে আসে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর 888sport app download apkর অভিরূপ ডালিতে। জীবনানন্দ দাশ তাঁর 888sport liveপুস্তক 888sport app download apkর কথায় ইতিহাস-সময়-মহাপৃথিবীর প্রেক্ষায় ব্যক্তির আর্ত-অবস্থানে 888sport app download apk খুঁজে পাওয়ার কথা বলেছেন। ঈহার অন্দরে দেখি ভারতীয় পুরাণ-চরিত্র থেকে মধ্য এশিয়ান বীরের কাতর প্রতিমাকল্পে সন্ধান করেন নতুন 888sport app download apkর সম্ভাবনা –
সর্ব শর্তে নিত্য শর্ত প্রেম লখিন্দর
বিষের ভাসানে সত্য বেহুলা-বাসর।
(‘বেহুলা’, পৃ ৪৫)
কিংবা –
খঞ্জ যে তৃতীয় মানে
কোন্ ক্ষেতে কাঁচা ঝাঁজে
ঘানিভাঙা রাই
খঞ্জ কি কখনো জানে
তৈমুরের নতুন লড়াই
(‘খঞ্জ’, পৃ ৩৩)
888sport app download apkয় সকলই পাচ্য, সকলই 888sport app download apk; যদি তাকে 888sport app download apk করে তোলার আলকেমি কবির করতলে মহাদেশ আকারে গুপ্ত থাকে। রত্ন থেকে কর্দম – 888sport app download apkর কারখানায় শোধিত হয়ে আমাদের উপনীত করে অভিনতুন অভিজ্ঞানে। কবি তাই তার প্রাপ্য মেডেলও নিয়ে আসেন পদাবলির ঘরানা-বাহিরানা ব্যঞ্জনায় –
আমার মেডেলে থাকে সময়ের দাগ
আমার মেডেলে আছে শ্রম-কারুকাজ
আমার মেডেলে পায় মেধার উত্তাপ
আমার মেডেল জানে রাষ্ট্রের সীমানা
সবুজ ফিতেয় ঝোলা লাল অহংকারে
আমার মেডেলে আমি 888sport apps নাম।
আমার মেডেলগুলো জনপথ ছেড়ে
আমার দেহের সঙ্গে মানুষের মাপে
একদিন ফের মেশে জলে ও কাদায়।
(‘আমার মেডেলগুলো’, পৃ ১৫)
কবির মেডেল এভাবে শোকেসের কাচ-নিয়তি ভেদ করে চলে আসে পাঠিকা ও পাঠকের বোধিবৃক্ষতলে। তখন বলতে ইচ্ছে জাগে, ‘হয় হয়, সবই 888sport app download apk হয়।’
তিন
কবি এবং 888sport app download apkও ঈহা-কারের ভাবনার বিষয়। জর্জ সেফেরিস যে বলেছিলেন, কবিকে প্রতিসকালে তার কলমটি ঝর্ণায় ধুয়ে লিখতে বসতে হয়, তারই যেন একটি রূপ ধরা রইল ‘নতুন কবি’ 888sport app download apkতে –
নতুন ক্ষরণ কী দেবে গো কবি?
বাল্যসই যে মিলনপ্রভাত রবি
গঠনমন্ত্রে লীলার অষ্টচালা
গোলাপবালা? দ্বন্দ্বনালা? পালা?
(‘নতুন কবি’, পৃ ৬৩)
বোঝা যাচ্ছে তবে বিরূপ বিশ্বে কবির নিরুপায় নিয়তি কতটা 888sport app download apkনুকূল সে-সম্পর্কে ভীষণ ভাবনাশীল আমাদের আলোচ্য কবি।
কাল, সময়, টাইম – ঈহার কাঠামো-গঠয়িতা অনেকটা যেমন তারা গঠন করে চলে মানুষ, জীবন ও জগৎ কাঠামোও।
‘জাদুঘর-সময়’, ‘সতেরো আঠারো’, ‘১৬ নভেম্বর ২০১৭’ 888sport app download apkগুচ্ছ দ্রষ্টব্য –
একটি জাদুঘর
পাকা ঘুম আর
মৃতের দুয়ার
সময় কি তবে খুবই অহংকার?
(‘জাদুঘর-সময়’, পৃ ১০)
সতেরো অতিক্রম করা মানেই যে
আঠারোয় পৌঁছানো যাবে
এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই
(‘সতেরো আঠারো’, পৃ ২২)
কী ছিলো, কিছু কি থাকে নভেম্বরে
স্নিগ্ধ ধীরে, অথবা তুমুল স্বরে?
বয়স হে, হেমন্ত তো নয় এক
জীবনের আয়ু
দুয়ের গহন অসমাপ্ত ধারা
বিন্দু বৃত্তহারা!
(‘১৬ নভেম্বর ২০১৭’, পৃ ৪৯)
সময় বড় বলবান। কবির নিয়ন্তা যেমন সময় তেমনি কবি নিজেও সময়ের নির্মাতা কারণ সময়কে সময় দিতে জানে যে সে তো আর কেউ না, সে কেবল কবি। হাবীবুল্লাহ সিরাজীর ভাষায় গ্রীষ্মেও যে পার হতে জানে –
শীতের ভীতু নদী
এভাবে ঈহায় এসে কবির যুগপৎ কাতর ও বলবন্ত রূপের আবিষ্কার ঘটে।
চার
বলেছি নিরুচ্চারের বোধ মুদ্রিত ঈহার অবয়বে। তাই বলে জীবনের অনিবার্য গুরুভার বিষয়াশয় অনুক্ত থাকে না এখানে, বরং কবি তাঁর নীল দিগন্ত ভরা ম্যাজিকে কত অনায়াসে, সুদক্ষতায় তোয়ালে থেকে হাঙর, সুন্দরবন থেকে সাঁড়াশি, কার্টুন থেকে বিড়াল-কুকুর, চতুর্মাত্রা থেকে জয়বাংলা, আকাশ কুসুম থেকে বাস্তবিক আকাশের আলো, রোদ কিংবা ছায়া – সব 888sport app download apkর বোধ ও শব্দের সরাইখানায়
জড়ো করেন। আর তারা শুধু প্রস্তরবৎ
জড়ো হয়েই থাকে না, বরং ঈহায় এসে প্রাণপ্রাপ্ত হয়ে তৈরি করি অভিনতুন বোধভাষ্য। ফলত ‘শুক্রবারকে ধানমন্ডি বলো’ –
সময়ের ভাঁজ বদলিয়ে
বিকেলগুলো নদীর নামে ডাকলে
আড়িয়াল খাঁ মানে তিনটে
চারটেকে বলো মধুমতি
কুমারকে পাঁচ এবং পদ্মাকে সাড়ে পাঁচ!
সন্ধ্যের ভিড়ে আটকে পড়লে নাখালপাড়া
তাকে বলি ছয়
দম ফুরোতে না ফুরোতে
সোনারগাঁ তো সাত
ফিনকি দেয়া আলো মানে
হাতিরঝিলে মামলা
তাকে আটটায় সেঁটে দিলে
নয়ের ঢেউয়ে চলনবিল নড়ে
হাকালুকু হাঁক দেয় – হেই দশ!
মহাস্থানগড়, নয়তো পর
তা তো রজনীর দ্বিপ্রহর!
উদলা হ’লে সকাল
মোরগের বাগে পাঁচ
ছয় সাত আট নিয়ে চাহিদা খুব
পার্ক ফেরত, বাজার, বিদ্যালয়, অফিস..
ক্যালেন্ডার বদলিয়ে
শুক্রবারকে ধানমন্ডি বলো।
(পৃ ৪৭)
পূর্বালোচিত সময়ের কথাই ফিরে ফিরে আসে। কবি এভাবেই তো, এভাবেই তো সময়ের নবীন নির্মাতা, শব্দেরও।
ঈহা অনু888sport app download apkর আকাশে ডানা মেলে দেখতে চেয়েছে 888sport app download apkর বিস্তার-সম্ভাবনা। যেমন – ‘সম্পর্কসূত্র’, ‘বৈশাখ : নববর্ষ’ কিংবা নাম888sport app download apk ‘ঈহা’। দশটি ‘ঈহা’র গুচ্ছ যখন শেষত বলে ওঠে –
ঈহা লইয়া এখন আমি কী করিব?
(‘ঈহা’, পৃ ৭১)
তখন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো বলতে হয় –
‘এ জীবন লইয়া কী করিব? এ জীবন লইয়া কী করিতে হয়?
উত্তর পাওয়া জরুরি নয় তখন, প্রশ্নের অভিঘাত যখন রক্তিম করে রাখে আমাদের।
সম্পর্ক হ’চ্ছে বরফখণ্ড
তলে আগুন
আরও নিচে ভ্রূণ
সৃষ্টির পরই তো
নতুন খুন!
(‘সম্পর্কসূত্র’, পৃ ৪৬)
বিন্দুতে সিন্ধু ধারণের এমতো অভিজ্ঞতা, আবার অনু888sport app download apkর আরেক উদাহরণে দেখব উলটো সিন্ধুতে বিন্দুবৎ অভিজ্ঞানসময় –
আকাশ যদি মাটির কাছে
বজ্র তখন হর্ষে
একক যখন দোসর ভরা
বৃষ্টি নববর্ষে
(‘বৈশাখ : নববর্ষ’, পৃ ৫০)
কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী সময়ের চিৎকারকে ধারণ করেন, তবে 888sport app download apkয় অহেতুক চিৎকৃত কণ্ঠস্বর জাহিরে বিশ্বাসী নন, তাই ‘জয় বাংলা’ 888sport app download apkয় দেখে উঠি শান্ত-সমাহিত উচ্চারণে গোটা জাতির জয় বাংলা – গন্তব্য, পরিণাম ও ভবিষ্যৎকে অমোঘ করে তোলেন এমন আলতো রণনে –
আর, আয়োজন আমাকে তাড়া ক’রলো
অন্ধকার এবং বায়ুচলাচল উস্কে দিলে
খুঁজতে চেষ্টা ক’রলাম নির্গমন পথ
দুর্গের দেয়ালে তখন রক্তের ধারা
…
আর, স্বাধীন সার্বভৌম মানচিত্র
শীর্ষে জয় বাংলা লিখে
তখন আমাকে স্বাক্ষর ক’রতে ব’ললো
(‘জয় বাংলা’, পৃ ৫৬)
পাঁচ
উত্তর-সত্তরে যখন পুনরাবৃত্তি প্রিয় ও অনিবার্য মুদ্রা হয়ে ওঠে তখন এই 888sport app download apkগ্রন্থে আলোচ্য কবি আশ্চর্যরকম সংহত, পরিমিত এবং নবমেঘ ও রৌদ্রস্নাত।
সংবৎসর পত্রিকা কিংবা সাময়িকপত্রে প্রকাশিত পদাবলি সংকলন নয় মোটেও; বরং জীবনসামগ্র্যের লবণ ও লাবণ্যযুক্ত এই পুস্তক খণ্ড-বিখণ্ড অনুভাবন থেকে পাঠককে নিয়ে চলে অখণ্ড বোধের দিকে, অক্ষরের সীমা ভেঙে অসীমের স্পন্দে।
কবি উষর সময়ের ছবি আঁকেন দারুণ পলিময় ভঙ্গিতে-বিন্যাসে। তবে তাই বলে তাঁর উদ্দিষ্ট কখনো লক্ষ্যচ্যুত হয়ে পড়ে না। কালের করালকে ফুটিয়ে তোলেন অভিনব কুসুমাকারে, ফলত তিতের আস্বাদ অর্জন হয় সুগার স্ট্রিটের পথরেখা ধরে।
এই যেমন –
প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুর দিক থেকে ফিরে
আসা মানে
বাঁচা নয়
আরো একটি খুনের সঙ্গী হ’য়ে
যাওয়া …
(‘জোড়া খুন’, পৃ ৩৯)
এভাবে ঈহা সমালোচনার শুষ্ক পরিধি ছেড়ে পুনঃ পুনঃ পাঠের দাবি জানাতে থাকে বারংবার। কারণ নিবিড় পাঠেই অধিগম্যের প্রকাশ্য ও অতল, শক্তি ও মোচড়, প্রকৃতি ও প্রযুক্তি।
888sport app download for androidীয় আপ্তবাক্যে এসে সমাপনের সমূহ সম্ভাবনা ঈহা-ভুক্ত 888sport app download apkবলিতে বিদ্যমান, যদিও কবি সে-পথ মাড়াননি, বরং অন্তর্ভাবের স্বাদু 888sport live chatবয়ানে রেখে গেছেন নতুন কাব্য-উদ্গমের বীজতলা।
পাঠিকা ও পাঠক, স্বাগত আপনাদের সবাইকে ঈহার এমনামন কুদরতি রঙ্গি-বিরঙ্গিতে –
অপেক্ষার টিপ জ্বেলে রাখা শোভা
পেঁচা ও পক্ষপাতিত্ব রজনীকে নাভি দেখালে
জোড় লাগে মন্দাক্রান্তা চালে
দূরে এক শাসনের অবাধ লাল
জন্মবধি রঙের রাখাল
(‘ঈহা’, পৃ ৭০)
কবি ও কুমার
বলা হয়, কবির গদ্য প্রায়শই ভাবালুতাপূর্ণ এবং অযথা কাব্যাক্রান্ত। তবে উদ্দিষ্ট বিষয়ে যথাব্যাখ্যা প্রদান করতে সমর্থ হলে গদ্যে 888sport app download apkর গন্ধ লেগেও কবির গদ্য হয়ে ওঠে যেন খটখটে ডাঙায় নিরুপম নির্ঝর।
হাবীবুল্লাহ সিরাজীর প্রথম গদ্যগ্রন্থ দ্বিতীয় পাঠ প্রথম প্রকাশ পায় জুন ২০১০-এ। অন্তর্বর্তী পর্বের প্রসূন – মিশ্রমিল (২০১২) আর গদ্যের গন্ধগোকুল (২০১৭), পায়ে উর্বর পলি। সমান্তরালে ফিকশনাল-কনফেশনাল আমার কুমার (২০১০) এবং আয়রে আমার গোলাপজাম (২০১৭) প্রকাশ হতে দেখি।
এইসব মিলেমিশে তাঁর গদ্যের গহন অরণ্য।
দুই
আমাদের আলোচ্য তাঁর আমার কুমার (২০১০)।
আমার কুমার ধারণ করেছে ‘কুমার ও আমি’, ‘ইক্ষুরস অতি মিষ্ট’, ‘জ্যোৎস্নামাখা ঘড়ি’, ‘বাড়ি কতো দূর, বাবা যতো দূর’, ‘পাখি ওড়ে, ঘুড়ি ওড়ায়’, ‘জলমোটর না পাঠঠাকুর’, ‘কলে গান, গয়নায় পান’, ‘বাইচ এবং বুড়াইচ’, ‘পাকা ফলের মধুর রস’, ‘নড়ে টুল, স্কুল’, ‘মাছ বারোমাস’, ‘ধুলোখেলা, খেলাধুলো’, ‘মূলে ও কাণ্ডে’, ‘ডালে ও পাতায়’, ‘ছায়াগুলো মায়ায় ভেজে’, ‘কেউ সহচর কেউ সখা’।
আমার কুমারের প্রস্তাবনা অংশে উঁকি দিলেই স্পষ্ট হবে তার ইঙ্গিত –
গ্রামের এক বালক হাফ-প্যান্টের পকেটে মার্বেলগুলো ঝাঁকিয়ে-ঝাঁকিয়ে কৌটায় লুকোয়, আম চুষতে-চুষতে আঁটিতে পৌঁছুলে পুঁতে দেয় নরম মাটিতে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৮ যেন খেজুর গাছের রসের নালীতে পাতা মাটির হাঁড়ি, ভোর-সকালে নামিয়ে যায় গাছি। অপেক্ষায় আছি।
এ-বইয়ে ধরা আছে তাঁর আত্মজৈবনিক উন্মোচন। এসব শিরোনামের গদ্যগুচ্ছ নদীনির্ভর জনপদের এক ধুলোবালকের সজীব-সজল বেড়ে ওঠার স্বাদু বয়ান যেন। শুধু বালকের তো নয়, বালকের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমঅগ্রসরমান সময়েরও আখ্যান। নদীকে কেন্দ্র করে আখ্যান বা 888sport sign up bonusবয়ানের রেওয়াজ নতুন নয়, তবে এমতো মাত্রায় উপস্থাপন অভিনতুন বটে।
তিন
নদ ও নদীর দ্বন্দ্বে লেখক রক্তাক্ত হন না, ফোটাতে চান কুসুম। কুমারের পাড়ে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর অস্তিত্ব ঘোষণা করেন, যেহেতু তিনি ও কুমার অদ্বৈতপ্রায় –
নদী ও আমি, কুমার ও হাবীবুল্লাহ সিরাজী – তাদের বোঝা না বোঝার সময়গুলো একসঙ্গে জমিয়েছিলো জল-পানিতে। ভেতর মহলে ছিলো নানান সুগন্ধ, বিচিত্র রং এবং চমৎকার আলো-বাতাস। শহরে-শহরে হয়তো সে সুগন্ধ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, রং ফিকে হয়েছে, টান লেগেছে জলবায়ুতে। তারপরও কুমার এখনও বইছে।
বইছেন তিনিও; 888sport app download apkয়, 888sport live chatে। জলপ্রবল কুমার ও কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী এভাবে একাকার, বহতা। আনন্দের মতো বেদনাধারাও বহে যায় নিরন্তর। ঘোষ সম্প্রদায়ের সম্পন্ন শিক্ষক পরিবারের দেশান্তরের গল্প যেন বিদ্ধ করে যায় আমাদের কথক-বালক ও পাঠক উভয়কেই। বর্ষাকালের ঈদ 888sport sign up bonusর ভেতরে ঘাই মারে। যেন জীবন থেকে সব রঙিনের অবসানের বেলা সমাগত –
একসময় বেলা ডোবে। ফুরিয়ে আসে ঈদ। নতুন কাপড়-চোপড় ফিরে যায় তোরঙে। 888sport sign up bonusর ভেতর মিহিদানার মতো মজে দ্বিতীয়ার চাঁদ।
অতঃপর লেখক আমাদের এই অভিজ্ঞানের মুখোমুখি করান যে, ‘বাড়ি কতো দূর, বাবা যতো দূর’। দূর পৃথিবীর গন্ধমাখা বাবা যেন মেপে দেন সন্তানের সীমারেখা। শিকারের গল্প যেন রক্তমাখা অতীতের উন্মীলন ঘটায় চকিতে, জীবনানন্দের 888sport app download apk 888sport app download for androidে ভাসে, আর মুহূর্তেই আমাদের মনের মাঠ রঞ্জিত করে চলে আলোচ্য কবি-লেখকের এমতো পদাবলি –
এক শিকারির নতুন টোটায়
বারুদ মাখা মশলা
হরেক-পাখি এক কাতারে
ঝরলো কয়েক পশলা!
তারপর হাটবাজার, মেলা, লঞ্চঘাট – সবকিছু কবি বালকের ভেতরে বইয়ে দিয়ে যায় পানি ও পলি।
‘কে যায় রে ভাটির গাঙ বাইয়া’, ‘পুবের হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে’ কিংবা ‘নিশীথে যাইও ফুল বনে রে …’ দোলা দিয়ে যায় এসব কলের গান। অসুর আবহাওয়া ভরে তোলে সুরের উজানে। আকাশ আমার ভরল আলোয়, আকাশ আমি ভরব গানে। কুমারপাড়ে বালকের সুরেলা জাগরণ লেখা হতে থাকে।
‘বাইচ এবং বুড়াইচ’ বালকের মতো কুমারও থাকে না তরঙ্গহীন। নতুন নৌকার স্পর্শ লেগে যেন তার কুমারতা ভাঙে। বালকও বেড়ে ওঠে পাকা কুলের মধুর রসে। হারিকেনের সলতে বাড়িয়ে ঝড়ের রাতে মানসাঙ্কে মন দেয় সে। মানসাঙ্কের আড়ালে মন কি অভিসার খোঁজেনি সেই ঝড়ের রাতে, যদিও একলা একা
তবে হৃদয়ের জাগরণ তো প্রকৃতির
এমন উন্মাতালে কাক্সিক্ষত ভাষা খুঁজে
পায় বটে।
মাছের সঙ্গে বেড়ে না উঠলে সে আবার বাঙালি বালক-কিশোর নাকি?
– কে বড়ো, চিতল না আমি?
না, কোনো অলীক বড়ত্বের হামবড়াপনাতে না ভুগে, মৎস্যের সমান্তরালে আঁশটে ঘ্রাণে আরো বেড়ে ওঠে বালক। অতঃপর মারবেলের মতো গড়ায় বয়স –
শীত-বসন্তের বিকেলগুলো ধুলোবালির ভেতর দিয়ে টুপ করে ফুরিয়ে যায়।
আর তারপর –
আর কুমারের স্রোত ও ঢেউয়ের মধ্যে সহজেই ধরা পড়ছে পালাবদল। এক বালকের চোখে মাঘের হিম এবং চৈত্রের জ্যোৎস্না চিলিক দিয়ে-দিয়ে এগোয়!
বালক দূরে যায়। মাঠের পাড়ের দূরের দেশে।
তার অভিজ্ঞতায় যুক্ত হয় নতুন নদী; চন্দনা।
ছায়াগুলো শুরু হয় মায়ায় ভাজার পালা। বালক দার্শনিক উপলব্ধির সামনে দাঁড়ায় :
কেউ সহচর, আর কেউ বা সখা …
কুমারের জল সামনের সুন্দর পৃথিবীকে বালকের সামনে বিস্তার করে, বিশদ করে –
প্রতিটি ফোঁটায় ছিলো
ফোটায় ছিলো প্রথম বকুলে
শামুকে লুকিয়ে ছিলো
লুকোচুরি দিনমান টুলে –
যদি ছিলো, তবু নেই
ভেজে খই দুধ-বাতাসায়
তারাদের বন্ধু খুঁজে
সূর্য মজে তপ্ত তামাশায়!
চার
হাবীবুল্লাহ সিরাজী আমার কুমার বইয়ে নিজেকে লেখেননি শুধু, তাঁর অন্তরের অবন ঠাকুর বেরিয়ে এসেছে এখানে। যেন তিনি অক্ষরে অক্ষরে লিখেছেন ছবি; সেই ছবি যা আমরা আমাদের ঊষর চোখে প্রায়শই দেখি না। জটিল জটিলেশ্বর জীবনে, হৃদয়ের যে-নিবিড় নদী আমরা নির্বাসন দিয়ে এসেছি আমাদের অমল শৈশব-কৈশোরের সঙ্গে সঙ্গে, তাকে যেন নতুন করে জাগিয়ে দিলেন তিনি।
আমার কুমার হাবীবুল্লাহ সিরাজীর ব্যক্তি নদী-আখ্যান হয়েও বৃহদার্থে হয়ে ওঠে আমাদের সকলের অনিবার্য পাঠ্য নদীগাথা। পাঠিকা ও পাঠক, ডুব দিই আসুন।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.