নানা কারণেই নিশ্চয় – হামীম কামরুল হক আমাকে হায়াৎ মামুদ সম্পর্কে তাঁর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে বললেন যে, হায়াৎ মামুদ ছাত্রছাত্রীকে ব্যতিক্রমহীনভাবে যে-কথাটি বলতেন তা হচ্ছে, বাংলা গদ্য এবং পদ্য শেখার জন্য তারা যেন বঙ্কিম এবং মধুসূদন পড়ে, জানে। সম্প্রতি আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু তুলনামূল্য 888sport live football ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটে অনিয়মিতভাবে দুটো কোর্স পড়াই। সেখানে হামীম কামরুল হক নিয়মিত অধ্যাপক। খুব বেশি সময়-সুযোগ না হলেও তাঁর সঙ্গে গালগল্পের মাঝে একাধিক দিন হায়াৎ মামুদের গল্প হয়েছে, তা হয়তো এ-কারণেও যে, আমরা দুজনই তাঁর ছাত্র এবং অনুজপ্রতিম। ইদানীংকার পরিস্থিতিও হায়াৎ মামুদদের অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ ধারণার অধিকারী বুদ্ধিজীবী হিসেবে চিহ্নিত করছে। বঙ্কিম এবং মধুসূদনের গুরুত্ব সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীকে হায়াৎ ভাইয়ের বলা গল্প আমি আর এক প্রথিতযশা জাহাঙ্গীরনগরিয়ানের কাছ থেকে শুনেছি। তিনি সরকার আবদুল মান্নান এবং ইতোমধ্যেই শব্দের কারিগর হায়াৎ মামুদ শিরোনামে স্মারকগ্রন্থটি সম্পাদনার কাজ পর্যাপ্ত সার্থকতার সঙ্গে সম্পন্ন করে অনেক সুনাম ও পরিচিতি অর্জন করেছেন।
হায়াৎ মামুদ সম্পর্কে লিখতে বসে তাঁর একাধিক ছাত্রের ভাষ্যে তাঁর বঙ্কিম এবং মধুসূদন প্রশস্তির কথা কেন লিখলাম? লিখলাম এ-কারণে যে, শুধু পাকিস্তান আমলে নয়, এখনো আমাদের সমাজে বঙ্কিম এবং মধুসূদন সম্পর্কে ব্যাপক এবং প্রায় নির্বিকার অপছন্দ এবং অস্বস্তি রয়েছে। এরূপ একটি পরিবেশে বাস এবং অধ্যাপনা করে হায়াৎ মামুদ যে এঁদের কাছেই ছাত্রছাত্রীকে যেতে বলতেন, তা অনেক কিছুই প্রমাণ করে। যাঁরা – শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী – এসব অতিক্রম করতে ছাত্র-ছাত্রী-শ্রোতাকে বলতেন, হায়াৎ মামুদ তাঁদের অন্যতম। স্নেহাস্পদ মান্নান সরকার-সম্পাদিত স্মারকগ্রন্থ শব্দের কারিগর হায়াৎ মামুদ (এরপর থেকে ‘শ কা হা মা’) বইয়ে আবুল কাসেম ফজলুল হক তাঁর 888sport liveে বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকের পূর্ব পাকিস্তানে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্বাধীনচেতা ছাত্রদের মধ্যে হায়াৎ মামুদের নাম উল্লেখ করেছেন। ওই বিভাগের ‘হরপ্রসাদ শাস্ত্রী থেকে মুনীর চৌধুরী’ পর্যন্ত যে শিক্ষকগণ ‘প্রগতিশীল’ দৃষ্টিভঙ্গি এবং গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে … পরিচ্ছন্ন মত প্রকাশ করতেন’, হায়াৎ মামুদ ছিলেন তাঁদেরই উত্তরসূরি। আ. কা. ফজলুল হক আরো লিখেছেন – ‘হায়াৎ মামুদ শিক্ষা লাভ করেন সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল, নটর ডেম কলেজ এবং 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। বাংলা বিভাগ থেকে যে সংস্কৃতিচেতনা তিনি লাভ করেন, আজীবন তাই তাঁর চিন্তা ও কর্মের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে।’ (শ কা হা মা, পৃ ৭৬)
অধ্যাপক আ. কা. ফজলুল হক তাঁর উল্লিখিত 888sport liveে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ তুলেছেন – ‘নটর ডেম কলেজের বাংলার অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ আবদুল মিয়া নাইন-টেন ও ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসের বাংলার চমৎকার নোট বই লিখতেন।’ তার কারণ ‘এর প্রভাব হায়াৎ মামুদের মধ্যে আছে। আজীবন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নেও তিনি সময় ব্যয় করেছেন।’ (পৃ ৭৬, শ কা হা মা)। এর পরে আ. কা. ফজলুল হক গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু কথা লিখেছেন : ‘ব্রিটিশশাসিত বাংলায় বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমার দত্তের পাঠ্যপুস্তক রচনা ছিল তাঁদের সমাজসংস্কার আন্দোলনেরই অংশ। পাকিস্তানকালেও অধিকাংশ পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা পাঠ্যপুস্তক রচনাকে সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের কাজের অংশ বলে মনে করতেন। বাঙালি চেতনা ছিল একটি অংশে।’ ইত্যাদি। ঔপনিবেশিক শাসনের সময় নানা বিভাজন দূর করা এবং জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে স্বাধীন রাষ্ট্রসত্তা নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্যের প্রসঙ্গই নিশ্চয় এখানে এসেছে। অন্য কতিপয় বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে একযোগে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে হায়াৎ মামুদ অংশ নিয়েছিলেন যে-দুটো অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং আলোচিত বই লিখে সে-দুটো হচ্ছে – ছোটদের রবীন্দ্রনাথ এবং ছোটদের নজরুল। এ-দুটো প্রায় পাঠ্যপুস্তক এবং এই জীবনীগ্রন্থ দুটোর বিষয় হিসেবে তিনি যে রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলকে বেছে নিয়েছিলেন, তা রাষ্ট্রসত্তা গঠনে
রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের সমধিক গুরুত্ব সম্পর্কে হায়াৎ মামুদের স্পষ্ট উপলব্ধিকেই প্রমাণ করে।
হায়াৎ মামুদের লেখা কিশোরজীবনী দুটো কোন দিক থেকে আলাদা ছিল? মানুষ গড়ে তোলার বই ছিল? রবীন্দ্রনাথদের জমিদারি ছিল, কলকাতায় ছিল জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। হায়াৎ মামুদ এই বাড়ির ইতিহাস এবং বিভিন্ন অংশের অনুপুঙ্খ ইতিহাস জানিয়েছেন কিশোর পাঠক-পাঠিকার জন্য, যা আমরা বড়রাও জানি না, জেনে খুশি হবো :
সাবেক কালের পুরনো বিরাট প্রাসাদ, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের। দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের ৫ নম্বর আর ৬ নম্বর – মোট দুটো বাড়ি মিলিয়ে এই পরিবারের বাসস্থান। ৫ নং বাড়িটি ছিল বৈঠকখানা। এ জায়গায় বাড়ির পত্তন কিন্তু প্রিন্স দ্বারকানাথের আমলে হয়নি, হয়েছিল তাঁর ঠাকুরদা নীলমনি ঠাকুরের আমলে – রবীন্দ্রনাথের জন্মেরও প্রায় পঁচাত্তর বছর পূর্বে। সেটাই হলো গোড়াপত্তন। তারপর ক্রমে ক্রমে পুরনো বসতবাড়ি প্রয়োজনের তাগিদে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে নানা মহলে। ঘর অসংখ্য। বহু তলায় ও বহু ছাদে ওঠানামার জন্যে নানা রকম সিঁড়ি
এখানে-ওখানে। যেন এক গোলকধাঁধা সারাটা বাড়ি। প্রিন্সের ঐশ্বর্য তখন আর কিছুই নেই তাঁর পুত্রের আমলে; ছেলে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তো প্রিন্স নন, ঋষি। কিন্তু তখন সেই বিরাট প্রাসাদের বড় বড় দেউড়িতে প্রাচীনকালের 888sport sign up bonus – ভাঙা ঢাল, বর্শা, মরচে-পড়া তলোয়ার – ঝুলছে; উঠোনই তো
তিন-চারটে, বাগান বড়ো বড়ো – সদর-অন্দরের আলাদা আলাদা। বাড়িভরা লোক, অগুনতি দাসদাসী, সব সময় হৈহৈ – গম্গম্ করছে। তখন গ্যাসবাতি ছিল না, বিজলিবাতি আসেনি, কেরোসিনের তেলের আলোও তখন জ¦ালত না কেউ। সন্ধেবেলায় ঘরে ঘরে ফরাস এসে রেড়ির তেলের আলো জ¦ালিয়ে দিয়ে যেত। তখন পানির কল বসেনি – আজকাল শহরে যেমন ট্যাপ-ওয়াটার, তেমন সেদিন ছিল না, টিউবওয়েলও লোকে জানত না তখন। দুজন বেহারা বাঁকে করে কলসি ভরে মাঘ-ফাগুনের গঙ্গা থেকে পানি তুলে আনত। একতলার অন্ধকার ঘরে সারি সারি ভরা থাকত বড়ো বড়ো জালায় সারা বছরের খাবার জল। দেউড়িতে ঘণ্টা বাজত ঢং ঢং ঢং। (পৃ ১১)
তখনকার অর্থশালীদের বাসস্থানের এবং তার নানা ব্যবস্থাপনার দৃশ্য আমাদের অনেকেরই হয়তো জানা নেই। এ থেকে সে ভাবনা আর অনুভ‚তিতে চলে যেতে পারি আমরা। হায়াৎ মামুদ কিন্তু তাঁর এই বিবরণের পরে কিশোর পাঠক-পাঠিকার জন্য অন্যরূপ লিখেছেন :
সে এক অন্য যুগ। ঐ রকম আলো-আঁধার-ঘেরা বিরাট প্রাসাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ জন্মেছিলেন, বড় হচ্ছিলেন। কিন্তু, আশ্চর্য কী জান? প্রিন্স দ্বারকানাথের পৌত্র হয়েও রাজার হালে মানুষ হন নি তিনি। শৈশবে ও বাল্যে যেভাবে তাঁর দিন কেটেছে, তার তুলনায় এখন রাজপুত্রের মতো আছ তোমরা। (পৃ ১১, রবীন্দ্রনাথ : কিশোর জীবনী)
তারপরে লিখেছেন হায়াদ মামুদ :
বহু পরে (রবীন্দ্রনাথ) দুঃখ করে লিখেছিলেন : ‘আমি ছিলুম সংসার – পদ্মার বালুচরের দিকে, অনাদরের কূলে …।’ আসলেই তো তাই। ছেলেবেলায় বাবা-মা ভাই-বোনদের স্নেহ-আদর যত্নই আমাদের একমাত্র সম্বল, সবচেয়ে কাম্য; অথচ এই বালক তার কিছুই পাননি। রুগ্না মা ছেলের কোনো খোঁজখবরই রাখতে পারেন না। আর বাবা সর্বদাই বাইরে ঘুরে বেড়ান স্থান থেকে স্থানান্তরে, বাড়িতে আসেন যেন দু’দিনের মুসাফির। বয়োজ্যেষ্ঠ ভাই-বোনেরাও যে যার খেয়ালে, অথচ চৌদ্দজন ভাইবোনের মধ্যে তিনিই তো কনিষ্ঠ। তা হলে কে আছে এই শিশুর? আছে বাড়ির পুরাতন দাসদাসী।
আছে তিনকড়ি দাই, কিংবা শঙ্করী, কিংবা প্যারী। তাদের পায়ে-পায়ে ঘুরে, স্নেহ-তিরস্কারে দিন চলে যায়। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, ফিকে জ্যোৎস্নার আলো এসে পড়ে বিরাট টানা বারান্দায়। সেই স্বল্পালোকে বারান্দায় পা মেলে দিয়ে বসে ঊরুর উপর প্রদীপের সলতে পাকাচ্ছে তারা আর নিজেদের মধ্যে গুনগুন করে যে যার দেশের কথা বলাবলি করছে। তাদেরই পাশে এক কোণে চুপচাপ সুবোধ ছেলে রবীন্দ্রনাথ বসে আছেন হয়তো। রাত্রে মশারির ভিতরে শুয়ে ঘুম আসে না। … (পৃ ১২, রবীন্দ্রনাথ : কিশোর জীবনী)।
দেবেন্দ্রনাথের বালকপুত্রের জীবনের এই বিবরণ কি কারো ধারণা কিংবা প্রত্যাশার সঙ্গে মেলে? নানা সূত্র থেকে উপকরণ নিয়ে হায়াৎ মামুদ আরো যা লিখেছেন, তা পাঠকদের সব ধারণাকে পাল্টে দিতে পারে :
বয়স একটু বাড়তেই, পাঁচ-ছ’ বৎসরের বালককে অন্তঃপুর ছেড়ে চলে আসতে হল বারবাড়িতে। এখন মানুষ হতে লাগলেন চাকরবাকরদের তত্ত্বাবধানে। কী কঠোর সে জীবনযাত্রা। বড়লোকির ধারে-কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হতো না তাঁকে। একান্ত গরিবি হালে বাল্যকাল কেটেছে। গায়ে খুব অল্প কাপড় থাকত – সুতির একটি জামা, আর একটি পায়জামা। প্রচণ্ড শীতে হয়তো আরেকটি সুতির জামা যোগ হয়েছে, তার বেশি আর কিছু নয়। … (পৃ ১২, রবীন্দ্রনাথ : কিশোর জীবনী)।
রবীন্দ্রনাথের নিজের লেখা নিশ্চয় অনন্য কিন্তু, সেই বিশিষ্ট এবং 888sport app সূত্র থেকে তথ্য, উপাত্ত ইত্যাদি নিয়ে হায়াৎ মামুদ রবীন্দ্রনাথের যে সুখপাঠ্য এবং কিশোর-উপযোগী জীবনীগ্রন্থটি লিখেছেন, তাও এমন বইগুলোর মধ্যে অনন্য। পশ্চিমবঙ্গের জন্ম শুধু নয়, গোটা জীবনবোধ এই কাজকে তাঁর জন্য সহজ করে দিয়েছিল কি-না, আমি নিশ্চিত নই। তবে পুত্র সৌম্য মামুদের কাছ থেকে শুনে এবং অন্য নানাভাবে যা জানি, তা হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথের আনন্দের জীবনদর্শন, হায়াৎ মামুদেরও; এবং তা হয়তো এই কিশোরজীবনী প্রণয়নে শুধু নয়, জীবনের 888sport app কাজেও তাঁকে সমর্থন দিয়ে গিয়েছে।
পরিপক্ব এক সমাজচেতনা নিয়ে হায়াৎ মামুদ লিখেছেন বাংলাভাষার অপর গুরুত্বপূর্ণ কবি নজরুলের জীবনীও, এক পাঠকগোষ্ঠীর জন্যেই, নজরুল ইসলাম : কিশোরী জীবনী। আমি নিজে তো সমাজে, আড্ডায়, বিশেষত শ্রেণিকক্ষে নজরুলকে লক্ষবার উল্লেখ করি। এ যে খুব শ্লাঘার ব্যাপার, তা হয়তো নয়। সমাজ আমাদের যে একই ঘূর্ণাবর্তে থেকে যাচ্ছে, তা-ই হয়তো প্রমাণ হচ্ছে! নজরুল ইসলামের কিশোরজীবনী হায়াৎ মামুদও হয়তো বা কমবেশি একই তাগিদ থেকে লিখে থাকবেন। কিশোর পাঠকদের জন্য কী সযত্নে যে হায়াৎ মামুদ লিখেছেন – যেমন, ‘স্বদেশী’ আন্দোলন সম্পর্কে, ইংরেজরা কাদেরকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলতো :
সময়টা তখন আকাশ-বাতাস তোলপাড় করা। সময় মানে – এই শতাব্দীর প্রথম চল্লিশ বছর। তারই মধ্যে আবার সবচেয়ে বিক্ষুব্ধ রাগী লাল গনগনে চেহারা প্রথম কিছু বছরের। 888sport appsে তখন সন্ত্রাসবাদের যুগ, স্বদেশী আন্দোলনের যুগ। স্বদেশী, সন্ত্রাসবাদ – এসব কথার অর্থ কী? এদেশের মাটিতে জন্মেছি, এই তো আমার স্বদেশ, নিজের দেশ, ঠিক তাই। সে জন্যেই তুমি স্বদেশী – মানে, তোমার নিজের দেশকে যারা নিজের বলতে দিতে চায় না তাদের বিরুদ্ধে তোমার লড়াই। স্বদেশের জন্যে তোমার সংগ্রাম বলেই তুমি ‘স্বদেশী’। ইত্যাদি।
হায়াৎ মামুদের বইয়ের একই অনুচ্ছেদ থেকে বোঝা যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাস কিংবা সন্ত্রাসবাদীর মধ্যে। হায়াৎ মামুদ লিখেছেন :
আর সন্ত্রাসবাদ? ও তো ইংরেজদেরই বুলি – টেররিস্ট, টেররিজম। ওরা সন্ত্রস্ত হচ্ছে, এদেশের ছেলেরা ওদের মনে সন্ত্রাসের সৃষ্টি করছে, তাই সন্ত্রাসবাদ। তা কি দরকার বাপু কালো আদমিদের ভয়ে জুজু হয়ে থাকবার? দেশ ছেড়ে চলে গেলেই তো পার – আমরাও বাঁচি, তোমরাও বাঁচ। ইত্যাদি।
এখন তো সন্ত্রাসবাদ আরো ভিন্ন এক অর্থ বা তাৎপর্য পেয়েছে, যার গুরুত্বও কম নয় এতটুকু। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিভেদাত্মক এবং নেতিবাচক।
এরপর ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে বল প্রয়োগের প্রশ্ন। এই লক্ষ্য নিয়েই জন্ম নিয়েছিল অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর দলের মতো সংগঠন। ১৯০২ সালে বলপ্রয়োগের আদি সংগঠন অনুশীলন সমিতির গোড়াপত্তন হয়।
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে এই অনুশীলন সমিতি অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। হায়াৎ মামুদ বঙ্গভঙ্গকে গুরুত্ব না দিয়ে একে রদ করার প্রচেষ্টায় স্বদেশি বিপ্লবীদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সবিস্তারে লিখেছেন। নজরুল ইসলামের কিশোরজীবনীর ২৬ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, ‘অনুশীলন সমিতির শাখা-প্রশাখা সারা দেশে ছেয়ে গিয়েছিল, এক পূর্ববঙ্গেই শাখা ছিল পাঁচশো। পশ্চিম বাংলাতেও এই জোয়ার একই রকম প্রবল ছিল। ব্রিটিশ সরকার বিপদ উপলব্ধি করে এ-জাতীয় যাবতীয় প্রতিষ্ঠান বেআইনি বলে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।’ (পৃ ২৬, নজরুল ইসলাম : কিশোর জীবনী)।
দেশব্যাপী তখনকার ব্রিটিশবিরোধী ‘জাগরণে’র ফল-পরিস্থিতি সম্পর্কে হায়াৎ মামুদ এক ওজস্বী ভাষায় লিখেছেন কিশোরদের উদ্যোগ। এবং গভীর দুঃখ করেছেন দেশপ্রেম, তারুণ্য ইত্যাদি যে দ্রæতই হারিয়ে যায়। তরুণদের সন্ত্রাসবাদী স্বদেশি আন্দোলনের এমন পরিণতি সম্পর্কে উপসংহারে হায়াৎ মামুদ লিখেছেন :
… অসংখ্য ক্ষুদিরাম-প্রফুল্ল চাকী বাংলা মায়ের কোল আলো করে আছে সেদিন। … সে যুগের কথা পড়তে-পড়তে আজও আমাদের প্রতি রোমকূপ শিউরে ওঠে, আবেগে, উত্তেজনায়, গর্বে। হায়, আমরাও তো সেই একই বাঙালি। অথচ কী অক্ষম, ভীরু, স্বার্থপর, দেশপ্রেমহীন। আজ এতটুকুও কি বোঝার উপায় আছে, আজকের এইসব শৃগালের পূর্বপুরুষ ছিলেন ঐ সিংহের দল। (পৃ ২৭, নজরুল ইসলাম : কিশোর জীবনী)।
শিয়াড়শোল স্কুলে নজরুল ছাত্র থাকাকালে উপরোল্লিখিত দেশের ‘হাওয়া’ স্কুলটিকেও প্রায় জড়িয়ে নিচ্ছিল। চারদিকে গুপ্ত সমিতির অসংখ্য সদস্য। স্কুলের অনুজ্জ্বল শিক্ষক নিবারণচন্দ্র ঘটকের চোখে পড়ে গিয়েছিলেন ‘বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ দরিদ্র ছাত্রটি, যার নাম কাজী নজরুল ইসলাম।’ হায়াৎ মামুদ লিখেছেন, ‘রাজনীতি, বিপ্লব, পরাধীনতা, দেশের জন্যে যুদ্ধ – এই সমস্ত চিন্তা ও বোধ ধীরে ধীরে ছাত্রটির মনে এই মাস্টারমশাই ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। বন্ধু শৈল বা শৈলেন কাউকেই নূরু এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি।’ (পৃ ২৭, নজরুল ইসলাম : কিশোর জীবনী) (নজরুলের ডাকনাম ছিল নূরু) যুদ্ধে যাওয়ার সময় তবু নজরুল বলেছিলেন – তাঁর উদ্দেশ্য যুদ্ধবিদ্যা শেখা, সে-উদ্দেশ্যেই তিনি যুদ্ধে যাচ্ছেন, ফিরে এসে সেনাবাহিনী গঠন করে ইংরেজদের সঙ্গে লড়াই করে তাদের দেশছাড়া করবেন। হায়াৎ মামুদের মন্তব্য : ‘পেঁপে তাক করে গুলি ছুঁড়ে ছুঁড়ে হাতের তিক বাগানো, সে কি অমনি অমনি।’ (পৃ ২৭, নজরুল ইসলাম : কিশোর জীবনী)। বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে উদারচেতা এবং সংগ্রামী ‘মানুষ’ নজরুল কীভাবে গড়ে উঠলেন, কিশোর পাঠককে হায়াৎ মামুদের শুধু তারই তথ্য-সন্ধান দেওয়া, গল্প বলা।
শিয়াড়শোল স্কুলের আরো দুজন শিক্ষকের ভূমিকা হায়াৎ মামুদ পাঠককে জানিয়েছেন। সতীশচন্দ্র কাঞ্জিলাল নামে ওই ‘গান পাগল’ শিক্ষক নজরুলের জীবনে গানের অবস্থানকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। আর ফার্সির শিক্ষক হাফিজ নূরুন্নবী ফার্সি শেখার দিকে নজরুলকে টেনে আনেন। এই ঘটনাটিরও বড় ফল থাকে বাঙালিদের জন্যে – তবে হায়াৎ মামুদের বিবরণে তখনকার মানুষের চিন্তাকাঠামোর যে-ছবি পাওয়া যায়, তার পরিবর্তন বুঝি এখনো হয়নি। বাংলা 888sport live footballে আরবি এবং ফার্সি শব্দের ব্যবহারকে নজরুল তাঁর পরবর্তী জীবনে অনেকখানি শক্তিশালী করেন। তবে একটি সম্প্রদায়ভিত্তিক বিচার-বিবেচনার উপস্থিতি তখনো যে সমাজের একটি অংশে অল্প-বিস্তর ক্রিয়াশীল ছিল, তা স্পষ্ট বোঝা যায়। হায়াৎ মামুদ সেদিকে চোখ খোলা রেখেই নিম্নরূপ লিখেছেন :
ইংরেজি-বাংলা ছাড়া আরো একটি ভাষা তখন ছাত্রদের শিখতে হত – হয় সংস্কৃত, নয় আরবি-ফার্সি। নজরুলের ছিল সংস্কৃত। সে কি রে, তুই মুসলমানের ছেলে, তায় আবার কাজী বংশ, খান্দানি ঘর থেকে এসেছিস, তুই পড়বি সংস্কৃত। আচ্ছা বোকা তো! ওসব করো না, এবার থেকে আমার ক্লাসে এসে বসা চাই। মৌলভী সাহেব কি সত্যিই বকাবকি করেছিলেন নজরুলকে? আমরা জানি না। তবে একথা ঠিক যে, সংস্কৃত ছেড়ে ফার্সি নেওয়ার পিছনে এই শিক্ষকই ছিলেন।
এই আলোচনায় হায়াৎ মামুদ আরো যা যোগ করেন, তার স্বাতন্ত্র্য এবং বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য তাকেও লক্ষ করা প্রয়োজন। বোঝা প্রয়োজন যে, হায়াৎ মামুদ একাধিক বিবেচনা এবং দৃষ্টিকোণ নিয়ে চলতেন। মাপকাঠির বহুত্বে বিশ^াস করতেন। এটা প্রমাণ হয়, যখন এরপরে তিনি নিম্নরূপ লেখেন :
আসল কারণ অন্য। হিন্দু-মুসলমান, সংস্কৃত-ফার্সি – কোনো ব্যাপার নয়। হাফিজ নুরুন্নবী সাহেব ছিলেন উর্দু 888sport live footballিক, রুচিমান, পরিশীলিত, মার্জিত স্বভাবের মানুষ। নজরুল যেমন আকর্ষিত হয়েছিলেন এঁর নম্র ব্যক্তিত্বের দিকে, তেমনি তিনিও সম্ভবত তাঁর সৃষ্টিশীল মেধার জন্য লক্ষ্য করে থাকবেন ছাত্রের মধ্যে কোনো প্রতিভার দ্যুতি। দীর্ঘকাল পরে, নজরুল কবি হিসেবে তখন সুপ্রতিষ্ঠিত, তাঁর সামনেই কমরেড মুজফ্ফর আহমদকে তিনি
হাসতে-হাসতে বলেছিলেন, ‘বেত হাতে তাড়া করে আমি আমার পারসীর ক্লাসে ধরে এনেছিলাম।’ যে-ভাষার অক্ষরজ্ঞান হয়েছিল মক্তবে, চাচাজান বজলে করিমের কাছে, যা হয়তো সে এতদিন ভুলেও গিয়েছিল, এতদিন পরে সেটাই আবার মাজাঘষা করার সুযোগ পেল নজরুল এই ফার্সি পণ্ডিত ও উর্দু 888sport live footballিকের কাছে। (পৃ ২৭-২৮, নজরুল ইসলাম : কিশোর জীবনী)।
গোটা বাংলা ভাষা ও 888sport live footballের জন্য নজরুলের এই ফার্সি-শেখা যে অনেক সুফল বয়ে এনেছিল, হায়াৎ মামুদ নিশ্চয় তা-ই বলেছেন। আমারও সেটাই মত।
রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের কিশোরজীবনী রচনায় হায়াৎ মামুদের ব্যতিক্রমী মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে আরো অনেক কথা বলা যায়, দীর্ঘ আলোচনা করা যায়। ব্যক্তিজীবনে আমি এতটা সুস্থিত নই যে, তা করতে পারছি। পাঠকের কাছে সেজন্যে মার্জনা চাই। হায়াৎ মামুদের লেখা বাঙালির শ্রেষ্ঠ দুই মনীষীর কিশোরজীবনী সম্পর্কে হাউস মিটিয়ে লিখতে পারলাম না। পাঠককে তাঁর কাছে-পরের মানুষ, বিশেষত কিশোর-কিশোরীদের হাতে এ-বই দুটো তুলে দিতে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি কি না, সে-সম্পর্কেও আমি নিশ্চিত নই। সকলের কাছেই তাই মার্জনা চাই।
ঘটনাক্রমে আমার এক প্রিয় ছাত্র, যে কি না নিজেই এখন যথেষ্ট জনপ্রিয় লেখক, সরকার আবদুল মান্নান, ছিল হায়াৎ মামুদের আশি বছর বয়সে পৌঁছানো উপলক্ষে প্রকাশিত সম্মাননা বইয়ের সম্পাদক। বইটির শিরোনাম শব্দের কারিগর হায়াৎ মামুদ। আমি জানি না এই শিরোনাম কার কিংবা কার-কার মস্তিষ্কপ্রসূত। তবে শিরোনামে আমি অর্ধেকটা মাত্র সন্তুষ্ট। কিন্তু তা বিন্দুমাত্র এ-কারণে নয় যে, হায়াৎ মামুদ অত্যন্ত সুলেখক নন। বরং, তাঁর লেখার, বিশেষত গদ্যের দিকেই, পাঠকমাত্রেরই চোখ যায়, মন যায়। আমার অসন্তোষ এ-কারণে যে, এই শিরোনাম কাউকে এমন ভাবনায় নিয়ে যেতে পারে যে, হায়াৎ মামুদ বর্তমানকালে 888sport apps চরাচরের একজন বড় বুদ্ধিজীবী কিংবা চিন্তক নন – তাঁর লেখা শুধু সুখপাঠ্য, ভাষা শক্তিশালী, কিন্তু লেখায় তার বিষয়বস্তু দুর্বল, অগভীর কিংবা কম মূল্যবান। বিষয়বস্তুতেও তাঁর বইয়ের পরে বই সমান কিংবা অধিকতর ধনী, চিন্তার সম্পদ সেখানে বিপুল এবং অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক।
যেমন, এখন সর্বশেষ 888sport appsে আবার যখন দেশ এবং দেশবাসীর পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খুব জোরেশোরে, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রায় সম্পূর্ণ মীমাংসিত অনেক যে-প্রশ্ন 888sport appsের বাহাত্তরের সংবিধানে স্থান পেয়েছে, তারই অন্যতম হলো জাতিসত্তার বা জাতীয় পরিচয়ের। এই প্রশ্নের পৌনঃপুণিক উত্থাপনের সংকটকে হায়াৎ মামুদ কখনোই এড়িয়ে যাননি। আলোচ্য স্মারকগ্রন্থে প্রদত্ত তাঁর গ্রন্থপঞ্জির 888sport live অংশে বরং প্রথমে উল্লিখিত বই, বাঙালি বলিয়া লজ্জা নাই-ই এসব প্রশ্নের পর্যালোচনা এবং হায়াৎ মামুদের নিজের অবস্থানটির ঘোষণা। গ্রন্থপঞ্জির এই উপবিভাগের তালিকাটির সব বই এখানে উল্লেখ করা যায় : পাঠক অন্তত আঁচ অনুমান করতে পারবেন কোন সব মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও ভাবনায় হায়াৎ মামুদ ফিরে ফিরে এসেছেন – নিজস্ব তাগিদে, পরিস্থিতির দাবিতে এবং কখনো হয়তো প্রকাশকদের আবদারে। এসব কখনো হয়তো একত্রে কাজ করেছে। তালিকাটা হলো :
১. বাঙালি বলিয়া লজ্জা নাই, 888sport live football সমবায়, ১৯৮৪।
২. অমর 888sport cricket BPL rateে, বাংলা একাডেমি, ১৯৮৬।
৩. প্রতিভার খেলা নজরুল, অবসর প্রকাশনী, ১৯৮৮।
৪. সংস্কৃতি ও প্রসঙ্গান্তর, চেতনা, ১৯৮৮।
৫. নষ্ট বঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্রের প্রবজ্যা, 888sport live football প্রকাশ, ১৯৯৪।
৬. 888sport live-সংগ্রহ, নবযুগ প্রকাশনা, ২০০৮।
৭. উৎসে ফেরার ছলচাতুরী (প্রথম প্রকাশ ১৯৯৬), অনিন্দ্য
প্রকাশ।
৮. ভ্রমি বিস্ময়ে, বাংলা একাডেমি, ১৯৮৯।
৯. দিনযাপনের ভ‚গোলে রবীন্দ্রনাথ, অবসর প্রকাশনা,
১৯৯৮।
১০. 888sport live footballে কালের মাত্রা, দিব্য প্রকাশ, ২০০৩।
১১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : হুমায়ুন কবীর (888sport app download apk latest version), 888sport cricket BPL rateে
পাবলিকেশন্স লি., ২০০০।
১২. সুস্থিরতার খোঁজে, আফসার ব্রাদার্স, ২০০০।
১৩. অসম্ভবের দেশ, চারুলিপি, ২০০৬।
১৪. সময়ের খণ্ডচিত্রে রুশ 888sport live football, অবসর প্রকাশনা,
২০০৬।
১৫. বেঈমান তর্জমা, চারুলিপি, ২০০৭।
১৬. অবহেলিত ধ্রুপদ ও কিন্নরদল, অনুপম প্রকাশনী।
১৭. রবীন্দ্রনাথ – অধরা মাধুরী, শুদ্ধস্বর, ২০০৯।
১৮. মৃত্যুচিন্তা রবীন্দ্রনাথ ও 888sport app জটিলতা (প্রথম প্রকাশ
১৯৫৮), ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ২০০৯।
১৯. সময়ের সঙ্গে বোঝাপড়া, রূপ প্রকাশন, ২০১০।
২০. সময়ের জবানবন্দী, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ২০১০।
২১. শ্রেষ্ঠ 888sport live, গদ্যপদ্য, ২০১৩।
২২. শাশ্বত ও ঐকাহিক 888sport live সমুচ্চয়, অনিন্দ্য প্রকাশ,
২০১৪।
২৩. 888sport apps – সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়, চন্দ্রাবতী
একাডেমি, ২০১৫।
২৪. শিশু ও শিশু 888sport live football (প্রথম প্রকাশ, ২০০৬),
পুথিনিলয়, ২০১৮।
সুস্থিরতার খোঁজে যে-888sport apps, আমার ধারণা, সেখানে হায়াৎ মামুদের 888sport live এবং গদ্যের এই সমৃদ্ধ বইগুলোই তাঁর জন্যে একটি শীর্ষ অবস্থান নির্মাণ করে, একদম শীর্ষ চিন্তকের অবস্থান, উদার চিন্তাভাবনার ধারকের স্পষ্ট অবস্থান, এখানে যার খুবই অভাব এবং সে-কারণেই বারবার তৈরি হচ্ছে আদর্শিক সংকট, পশ্চাৎবাধাও।
তরুণ-কিশোর পাঠকের চোখে তাঁর এই পরিচয়, তাঁর এই বইগুলোর খোঁজ উপস্থিত করে দেওয়াটা তাই জরুরি প্রয়োজন। একই কারণে তাঁর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের গুচ্ছ হচ্ছে ভাষা-ভাবনার – একগুচ্ছ বইয়ের এমন নামকরণই করেছেন শব্দের কারিগর হায়াৎ মামুদের – বইয়ের সম্পাদক সরকার আবদুল মান্নান। এই বইগুলোর তালিকাও উপস্থিত করতে চাই। ভাষাভিত্তিক সংগ্রামের রাষ্ট্র যে 888sport apps, সেই সংগ্রাম এবং ভাষাটির নানা দিক নিয়ে আটটি বই লিখেছেন হায়াৎ মামুদ :
১. ব্যবহারিক বাংলা ও বানান-বিধি (সম্পাদনা), 888sport live football
সমবায়, ১৯৮৭।
২. কিশোর বাংলা অভিধান (সংকলন ও সম্পাদনা),
আহমদ পাবলিশিং, ১৯৮৮।
৩. বাংলা মেম্বার নিয়মকানুন, প্রতীক প্রকাশনা, ১৯৯২।
৪. বাঙালির বাংলা ভাষা ইদানীং, চারুলিপি, ২০০২।
৫. বাঙালির বাংলা ভাষা ইদানীং (পরিবর্তিত সংস্করণ),
চারুলিপি, ২০০৯।
৬. শব্দ কল্পদ্রæম, চারুলিপি, ২০০৯।
৭. 888sport appsে বাংলা ভাষার অধিকার, (প্রথম প্রকাশ,
১৯৮৬), পুথিনিলয়, ২০১৫।
৮. ছোটদের বাংলা শব্দার্থকোষ (সংকলন ও সম্পাদনা),
চারুলিপি, ২০১৬।
দুটো তালিকার এসব বইয়ের কারণেই আমি ভেবেছি সম্মাননা বইটির শিরোনামের ‘শব্দের কারিগর’ শব্দবন্ধ
যথাযথ হয়নি। ভিন্ন, উচ্চতর পরিচয় প্রাপ্য হায়াৎ মামুদের।
শিশু-888sport live footballের বই রয়েছে তাঁর, দেখা যাচ্ছে, তেইশটি। 888sport app download apk latest version, অধিকাংশ মস্কোর প্রগতি প্রকাশের, উনিশটি। পিএইচ.ডি গবেষণার বইটির নাম : পেরাসিম স্তেপানভিচ লিয়েবেদফ্, প্রকাশ করেছেন বাংলা একাডেমি ১৯৮৫ সালে। নানা ধরনের সম্পাদনার কাজ ২৯টি। জীবনীগ্রন্থের 888sport free bet সাত। তাঁর 888sport app download apkর বইয়ের 888sport free betও নয়-নয় করে পাঁচ, তার মধ্যে দুটি অবশ্য 888sport app download apk latest version। সাকল্যে এই হচ্ছে তাঁর লেখালেখির কাজের বহর।
এছাড়া তাঁর 888sport live footballিক-সাংস্কৃতিক সক্রিয়তারও তো কোনো শেষ নেই। 888sport live football-আদর্শের সঙ্গে মিলিয়ে অনেক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সভাপতি ছিলেন 888sport apps উদীচী 888sport live chatী গোষ্ঠীর। বাংলা একাডেমির সঙ্গে নানা কাজে যুক্ত ছিলেন, সে আমি নিজেই জানি।
888sport apps এবং পশ্চিমবঙ্গে হায়াৎ মামুদের পরিচিতি একটি বড় ভিত্তি প্রগতি প্রকাশনে 888sport app download apk latest versionকের চাকরি নিয়ে তাঁর মস্কো গমন এবং রুশ 888sport live footballের ইতিহাসের ১৬টি বইয়ের বাংলা 888sport app download apk latest version করেছেন, পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বাস্তব জনজীবন পর্যবেক্ষণের সুযোগও তেমনি পেয়েছেন বেশ কয়েক বছর। সম্মাননা বইটিতে এ-ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিয়ে এ-সূত্র মূল্যায়ন, 888sport sign up bonusচারণ ইত্যাদির একটি পৃথক অংশভাগ বরাদ্দ করা হয়েছে। আর এ-অংশের প্রথম লেখাটিতে সাদ কামালীর কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পটভ‚মিকে তথ্য যেমন দিয়েছেন, তেমনি দড়ো পর্যবেক্ষণ উপস্থিত করেছেন উল্লেখযোগ্য। জানতে পারি যে, ব্রিটিশ রাজত্বের ভারত ভ‚মি হুগলিতে পরাধীনতার ভিতরে হায়াৎ মামুদের জন্ম (পৃ ১৯৮) কখন, কোন সনে? ২ রা জুলাই ১৯৩৯ অন্য কিছু তথ্য এরূপ :
সোভিয়েত বৃত্তিটা কিছুটা হঠাৎ করে হয়ে গেলে ’৬৯-এ প্রথম মস্কো যান হায়াৎ মামুদ। ফিরেও আসেন যথাসময়ে। … এরপর ’৭৩-এর শেষে প্রগতি প্রকাশনায় 888sport app download apk latest versionকের চাকরি নিয়ে মস্কোয় গেলেন, ফিরলেন চার বছর পর; ৭৭-এর শেষে। নীতি-আদর্শ-নৈতিকতায় এবং দেশের প্রতি ভালোবাসায় অপরিবর্তিত হায়াৎ মামুদই ফিরলেন।
এই অনুচ্ছেদেই সাদ কামালী এর পরের একটি বাক্য লেখেন নিম্নরূপ : ‘জীবনদর্শন, মূল্যবোধ আর ভালো-মন্দের বিবেচনায় মঙ্গলব্রতী – হায়াৎ মামুদ এই বাংলায় রবীন্দ্রনাথের বিরল অনুগামী।
(পৃ ১৯০)। হায়াৎ মামুদের প্রতি ইতিবাচক হলেও এটি কি 888sport appsের পক্ষে যায়? বিভিন্ন সময়ে, এমনকি অতিসম্প্রতিও রবীন্দ্রনাথের লেখা আমাদের জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের যে দাবি উঠেছে তাতে তো সাদ কামালীর বক্তব্যই সঠিক মনে হয়। রবীন্দ্র-অনুরাগী হায়াৎ মামুদরাই কি 888sport appsে রবীন্দ্রনাথকে টিকে থাকার শক্তি জুগিয়ে চলেছেন?
সে যা-ই হোক। সাদ কামালীর মতে, 888sport app download apk latest versionের মাধ্যমে রুশ 888sport live footballের একাংশকে বাঙালি পাঠকের কাছে পরিবেশনে হায়াৎ মামুদ অনেকখানিই সফল, রাশিয়ার সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের প্রকৃতি, ভিন্ন গোত্রের মানুষ, তার ভাষা ও 888sport live football জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়েছে, আগ্রহ তৈরি হয়েছে মূল ভাষায় 888sport live football ও 888sport live footballিকদের অনুধাবনে। … হায়াৎ মামুদের নিজস্ব ভাষাশৈলীর, বাক্য ও শব্দ তৈরির ক্ষমতা মিলে কৃত 888sport app download apk latest version রবীন্দ্রনাথ কথিত খড়ের তৈরি কৃত্রিম বাছুরের ছলনা নয়, মূল 888sport live footballের রস ও আনন্দ পাঠক অনুভব করেন, সম্পূর্ণ রসবঞ্চিত হন না। (পৃ ১৯০, শ কা হা মা)
হায়াৎ মামুদের বদৌলতে বাঙালি পাঠক রুশ 888sport live footballের 888sport app download apk latest version এবং বিচার-বিশ্লেষণ-পাঠের যে সুযোগ পেয়েছেন, তা অত্যন্ত মূল্যবান। রুশ 888sport live footballের সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ-প্রভাবিত পর্যায় সম্পর্কে সাদ কামালীর মনোভাব উষ্ণ নয় বলেই মনে হয়, কিন্তু রুশ 888sport live footballের একটি সময়াংশের যে-পর্যালোচনা হায়াৎ মামুদ তাঁর ‘সময়ের খণ্ডচিত্রে রুশ 888sport live football’ 888sport liveে লিখেছেন, সে-সম্পর্কে সাদ কামালী লিখেছেন, ‘রুশ 888sport live footballের এমন নির্মেদ, ইতিহাস-আশ্রয়ী গভীর পাঠ বাংলাভাষায় সম্ভবত এই প্রথম।’ (পৃ ১৯৫, শ কা হা মা)
হায়াৎ মামুদ 888sport app download apkও লিখেছেন। তবে এই শাখায় তাঁর লেখালেখি এগোয়নি। 888sport appয় 888sport live footballের বিভিন্ন শাখায় তাঁর বন্ধুজনেরা ছিলেন। প্রবল আড্ডাবাজ ছিলেন। আদর্শিক সক্রিয়তা ছিল। বলা হয়, বসলেই অন্য অনেক কিছু লেখা যায়, কিন্তু 888sport app download apk ঠিক তেমন নয়। এ এক সার্বক্ষণিক সক্রিয়তার ব্যাপার – দিনরাত, ভেতরে, সারাক্ষণ লিখতে হয়। এসব কারণে নিমিষেই হয়তো হায়াৎ মামুদের 888sport app download apk লেখা এগোয়নি। তবু, তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ প্রেম-অপ্রেম নিয়ে বেঁচে আছি, দেখেছি বেশ প্রচারিত, আলোচিত। কিন্তু অপর দুটো বই, স্বগত সংলাপ 888sport live football 888sport live chat (১৯৬৭) এবং দূষিত প্ররোচনা (খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানি, 888sport app-১, ১৯৭৪) অনেকটাই অপরিচিত।
দেখতে পাচ্ছি যে, দূষিত প্ররোচনা বইটি যে অনূদিত 888sport app download apkর শুরুতে কোথাও তার উল্লেখ নেই। ভেতরে গেলেই বোঝা যায় যে, এটি বিশে^র শ্রেষ্ঠ কবিদের কয়েকটি করে 888sport app download apkর বাংলায়ন। এ-মুহূর্তে মনে হচ্ছে, এই কবিদের কাউকে-কাউকে হয়তো আর কেউই বাংলা ভাষায় আনেননি। যেমন, জার্মানির ক্রিস্টিয়ান মোর্গেসটেন, ইতালির জুসেপ্পে উন্গারেত্তি, রাশিয়ার কোস্তিয়া বারান্নিকফ প্রমুখ। তাহলে? এও কি কম কিছু কথা, এসব কবির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি হায়াত মামুদ দিয়েছেন। তিন-চার-পাঁচখানা 888sport app download apkর বাংলায়নও। 888sport app download apkর আরো একটি বইয়েও সম্ভবত ভিনদেশি 888sport app download apk রয়েছে, বইটির নাম : বও হাওয়া দেশান্তরী, অবসর প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশনা, ২০০৬ সালের। যে-888sport apps ক্রমশই একমুখী হতে চাচ্ছে, অধোমুখী, সেখানে বাইরের যে-কোনো হাওয়া একাধিক কিছুকে উপস্থিত করাই এক মূল্যবান কৃতি। হায়াৎ মামুদ নিয়ে এসেছেন মহৎ প্যালেস্টাইনি কবি মাহমুদ দারবিশকেও, তাঁর নির্বাচিত মাহমুদ দারবিশ বইয়ে, প্রকাশক ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ২০১০। কিন্তু দারবিশকে আমরা নানা জনের 888sport app download apk latest versionে অনেক পেয়েছি। হায়াৎ মামুদের 888sport app download apk latest versionে বিরল-প্রাপ্ত ইতালির কবি জুসেপ্পে উন্গারেত্তিকে বরং নিই দূষিত প্ররোচনা থেকে :
আমি তো আহত লোক
হয়তো যেতে পারি চলে
নয়তো ফিরে আসতে শেষে
করুণা, যেখানে কোনো লোক
দাঁড়িয়ে একা নিজের কাছে
আমার আছে অহং শুধু আর সততা
মনে হচ্ছে জনারণ্যে আমিই শুধু নির্বাসিত। (পৃ ৮৫)
সম্মাননা বইয়ে জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের 888sport sign up bonusচারণ ‘যদ্যপি পণ্ডিত তবু বন্ধু সে আমার’ – হায়াৎ মামুদের 888sport live footballিক হয়ে ওঠার বিবরণের প্রশ্নে বোধ করি সর্বাধিক সমৃদ্ধ লেখা, যদিও ব্যক্তিগত সম্পর্কের একটি আবহ তাতে আছে, এবং তা আরো বিশ্বাসযোগ্যতা দিয়েছে। একটি অসামান্য 888sport sign up bonusচারণ এটি। হায়াৎ মামুদ সম্পর্কে ব্যক্তিগত অনেক তথ্যও সরসভাবে এখানে পাওয়া যাবে।
সম্মাননা বইটির ‘হে বন্ধু, হে প্রিয়’ অংশের প্রায় সব লেখাতেই আরো বেশি পাওয়া যাবে এমন, এসব তথ্য, বিবিধ বিবরণ। তাতে প্রমাণ হয়, এক বিশাল পরিধির পাণ্ডিত্য-সৃজনশীলতা। যাকে একত্রিত করে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত লিখেছেন যে, জীবনভর কাজ, চর্চা, সাধনার পরিণতিতে ‘এক কবি ক্রমে প্রথিতযশা গদ্য888sport live chatী, জীবনীকার, 888sport app download apk latest versionক, প্রাবন্ধিক, বৈয়াকরণে পরিণত হন। এমন খুব একটা দেখা যায় না।’ (পৃ ২৭-২২, শ কা হা মা)। কিন্তু সদাহাস্য এবং সরল-নির্মল অবয়বের জন্যেই, ছবির অ্যালবাম অংশে গেলেই, বঙ্গ সৃষ্টিধারার এবং জ্ঞানচর্চার হায়াৎ মামুদ আর গুরুগম্ভীর বুদ্ধিজীবী হিসেবে ধরা দেন না আমাদের কাছে। থেকে যান হায়াৎ ভাই, বড়জোর ড. হায়াৎ মামুদ। এ এক অনন্য মানুষ, সদাপ্রাপ্তব্য ব্যক্তিত্ব। ৎ
হায়াৎ মামুদ
কবি, 888sport liveকার, 888sport app download apk latest versionক ও 888sport live footballের অধ্যাপক। ১৯৩৯ সালের ২রা জুলাই পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার মৌড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মুহম্মদ শমসের আলী এবং মা আমিনা খাতুন। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও 888sport live football বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্নের পর পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক 888sport live football বিষয়ে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে যোগ দেন বাংলা একাডেমিতে। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও 888sport live football বিভাগে অধ্যাপনা করেন। সম্মাননা : 888sport cricket BPL rateে পদক, বাংলা একাডেমি 888sport live football 888sport app download bd, শিশু একাডেমি 888sport live football 888sport app download bd প্রভৃতি। উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা – 888sport app download apk latest version : পঞ্চাশজন সোভিয়েত কবি, ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন নাদেঝ্দা ক্রুপ্স্কায়া, ছবিতে ভ‚গোল গালিনা গানেইজের, লালমাটিয়া পাহাড় ভিতালি বিয়ানকি; 888sport app download apk : প্রেম অপ্রেম নিয়ে বেঁচে আছি; 888sport app : স্বগত সংলাপ, প্রতিভার খেলা, বাঙালি বলিয়া লজ্জা নাই, অমর 888sport cricket BPL rateে ইত্যাদি।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.