হারিয়ে ফেলেছি পরশপাথর

ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথের ‘পরশপাথর’ 888sport app download apk পড়ে ক্ষ্যাপা লোকটির জন্যে বড় কষ্ট হয়েছিল। শুধু মনে হয়, আহা যদি একটু খেয়াল করত! ফেলে যাওয়া রাস্তায় আবার পরিক্রম করতে হতো না।

পৃথিবীতে এরকম অনেক ধরনের ক্ষ্যাপা আছে। কেউ 888sport live chatচর্চা করে, কেউ করে রাজনীতি … এমনি হাজার ধারা। এই বাংলায় তেমন ক্ষ্যপার অভাব নেই। রাজা রামমোহন থেকে শুরু করে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, হাজী মুহম্মদ মহসীন, বেগম রোকেয়া, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। শিক্ষা ক্ষেত্রে রবিক্ষ্যাপাও কম যান না। সহজপাঠ আ আ … ক খ দিয়ে শুরু। যার সঙ্গে নন্দলাল বসুর অপূর্ব উডকাট চিত্রায়ন। সহজপাঠ আসলেই অনেক সহজ হয়ে গেছে দুজনের যৌথ কাজে। এই বই কেউ হাতছাড়া হতে দেবে না। সেদিকে শীর্ণকায় বর্ণপরিচয় : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-প্রণীত আইসবার্গতুল্য। মাত্র ন-ভাগের এক ভাগ দৃষ্টিগোচরে। এর ভার বাঙালি জাতি দীর্ঘকাল বহন করেছে। আমার সৌভাগ্য দুটির রসাস্বাদনের সুযোগ। বর্ণপরিচয় কিন্তু সৌকর্যের কথা বিস্মরিত হয়নি। মলাট হালকা বেগুনি রঙের। চারদিকে হিজল ফুলের চৌকো জ্যামিতিক নকশা আবৃত। যে-যুগে যা ধর্ম। আজ এ-ধরনের বই চার রঙে রঙিন। কোনো কোনো পুস্তক আবার ল্যামিনেট করা। প্রতিযোগিতা।

বিংশ শতাব্দীর প্রথম পাঁচটি দশক ইতিহাসের পাতায় বড় উল্লেখযোগ্য কাল। দু-দুটি মহাযুদ্ধ। ভারতজুড়ে ব্রিটিশ বিতাড়ন আন্দোলন ও সশস্ত্র আক্রমণ। হিন্দু-মুসলিম দু সম্প্রদায়ের প্রচণ্ড হানাহানি। ফলে দেশ তিন খণ্ডে বিভক্ত। আমার জন্ম অবিভক্ত ভারত ও বাংলায়। তাই দেশ মানে আমার কাছে পুরো ভারত। সব রাজ্যই আমার দেশের অংশ। জাঠ, মারাঠি, তামিল, বিহারি সবাই আমার আত্মীয়। বিশাল হৃদয়ের অধিকারী আমরা। পরে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গোষ্ঠীস্বার্থ নিয়ে হানাহানি। বিপর্যয় ও দেশবিভাগ। ১৯৪৭ সাল তাই ইতিহাসের মাইলফলক এই ভারতীয় উপমহাদেশে। এতো বৈচিত্র্যের মধ্যে এমন ঐক্য বিশ্বে আর কোথাও নেই। আজ ভারত তিন ভাগ। পাকিস্তান দু-ভাগ। বাংলা দু-ভাগ। কাঁটাতারের বেড়া এর প্রতীক। কিশোরীর মৃতদেহ এই বেড়ায় ঝুলতে থাকে। মানবতা নির্বিকার। ঈশ্বরের মতো।

আমার বাংলা আর দেখা যাবে না। রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, নজরুল আজ খণ্ডিত। ক্ষুদিরাম বসু, সূর্য সেন আজ দুদেশের বীর। যদিও তাঁদের লক্ষ্য ছিল এক। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা। যুগান্তর-অনুশীলন দু-ধারার পার্টি – উদ্দেশ্য এক। দেশের স্বাধীনতা।

বিংশ শতকের তৃতীয় ও চতুর্থ দশক ভারতের ইতিহাসে এক অনলবর্ষী আন্দোলনের যুগ। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্যে এসে পড়ে পাকিস্তান আন্দোলন। ওদিকে বিশ্ব-মহাযুদ্ধ। তখন মহাত্মা গান্ধী ও নেতাজি সুভাষ দুই কর্ণধার। আছেন  মহম্মদ আলী জিন্নাহ, বল্লভ ভাই প্যাটেল ও পণ্ডিত নেniæ। গান্ধীর অহিংস আন্দোলন, সুভাষের সশস্ত্র বিপ্লব, এদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার্থে আর একটি প্ল্যাটফর্ম। জাতীয় কংগ্রেস স্থাপিত ১৮৮৬ সালে। মুসলিম লীগ গঠিত ১৯০৬ সালে 888sport appয়। সুতরাং বাংলায় কলকাতার মতো 888sport appও ইতিহাসে বেশকিছুটা স্থান দখল করে। মোগল আমলের পর অবিভক্ত ভারতে 888sport app এতো বড় গুরুত্ব আর কখনো লাভ করেনি। পরবর্তীকালে বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫) হবার কারণে 888sport appর গুরুত্ব নিয়মতান্ত্রিকভাবে বর্ধিত হয়। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ায় 888sport app আবার 888sport app পড়ে যায়, কিন্তু পূর্ববঙ্গবাসীর মনে একটা চাপা ক্ষোভ জমা হয়। পাকিস্তান আন্দোলনে পূর্ববঙ্গের গরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায় একাত্মতা জানায়। ইতিহাসে বাংলা ভাগের এইসব উপকরণ জড়ো করলে অনেক বিষয় স্বচ্ছ হয়ে আসে। ভবিষ্যৎ মঙ্গল-অমঙ্গল চিন্তা অনেক ক্ষেত্রে দূরবর্তী হয়ে দাঁড়ায়; বর্তমান সামনে এসে সবকিছুর সমাধান খোঁজে।

বাঙালি জাতি হিসেবে যথেষ্ট প্রাচীন। মহাভারতেও এর উল্লেখ আছে।

বাঙালির নিজের রাষ্ট্র গঠন আরম্ভ হয় সপ্তম শতাব্দীতে গুপ্তযুগের অবসানের পর। ইতিহাসে এই রাজার নাম পাচ্ছি শশাঙ্ক নামে। স্থান : কর্ণসুবর্ণ, মুর্শিদাবাদ। আমি গত বছর কর্ণসুবর্ণ গিয়ে কয়েকটি ফলক দেখি; পুরাতত্ত্ব বিভাগের। কাঁটাতার দিয়ে কিছু জায়গা ঘেরা। ইটগাঁথা স্থাপনা দুটি। পাশে পাতকুয়া। দুটির মধ্যে একটি চৌকো জায়গা দেয়াল অবশিষ্ট নেই, মৃত্তিকা সংলগ্ন। রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর কামরূপের রাজা ভাস্করবর্মণ কিছুদিন রাজত্ব করেন। এই অঞ্চলটিতে ১৯২৯-৩০ সালে খননকার্য চলে। পরবর্তী কাজ হয় ১৯৬২ সালে। আমরা জানি, রাজা শশাঙ্কের পর প্রায় শতাব্দীকাল ধরে বাংলায় চলে মাৎস্যন্যায় বা কোনো কেন্দ্রীয় রাজার আওতায় রাজ্য চলেনি। তারপর বাংলায় ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় পাল বংশ। রাজা গোপালের মাধ্যমে। সারা ভারতে পাল বংশের একটা বড় প্রভাব ছিল। ভারতীয় ধ্রুপদী সাম্রাজ্যের পর পাল রাজবংশ। শিক্ষা-888sport live chat-বাণিজ্য ও দৃঢ় শাসনের মাধ্যমে বাংলা ছাড়াও আশপাশের অনেক অঞ্চল ছিল তাদের রাজ্যের আওতায়। ৭৫০-১১৭৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ছিল তাদের রাজত্বকাল, যা বাংলার ইতিহাসে অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়কাল প্রায় চার শতাব্দীর অধিক। সুতরাং উন্নতির ছিল একটা ধারাবাহিকতা। এই সময় রাজধানী গড়ে ওঠে গৌড়ে। এদের প্রধান ধর্ম ছিল মহামান বৌদ্ধবাদ ও তান্ত্রিক বৌদ্ধবাদ। এছাড়া ছিল শৈবধর্ম। পাল বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন ধর্মপাল। প্রায় চল্লিশ বছর ছিল রাজত্বকাল। ধর্মপাল বাংলার বাইরেও বেশ কিছু অঞ্চল নিজ রাজ্যে সংযুক্ত করেন। তাঁকে তাই সম্রাটও বলা হতো। তিনিই পাল বংশকে শক্ত ভিত্তি দান করে যান। উত্তর-পূর্ব ভারতে তিনি ছিলেন সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব।

 যে-কোনো রাজত্ব বা কাল কখনো একটানা দৃঢ় ক্ষমতায় থাকে না। দুর্বল শাসকের কালে অন্য কেউ ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়। তা হতে পারে অভ্যন্তরের কোনো গোষ্ঠী বা বাইরের কোনো ক্ষমতা। এটাই ইতিহাসের ধারা। চতুর্দশ শতকে তিউনিসীয় ঐতিহাসিক ইবনে খলদুন তাঁর ইতিহাসের ভূমিকা পুস্তকে এই তত্ত্ব দান করে গেছেন। এই জন্যে অনেক পণ্ডিত তাঁকে শুধু ইতিহাসবিদ নন, সমাজতত্ত্বেরও প্রথম দার্শনিক হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। এমনকি ফাদার অব সোসিওলজি বলতে পিছপা নন।

বাংলায় পাল আমলের সমাপন ঘটে সামন্ত সেনের হাত ধরে। তাঁর পুত্র বিজয় সেন রাজ্যের পরিপূর্ণ রূপ দান করেন। এরপর বল্লাল সেন ও তাঁর পুত্র লক্ষ্মণ সেনের মাধ্যমে বখতিয়ার খলজির আগমনের পর (১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ) তাঁরা পূর্ববঙ্গে বিক্রমপুর কেন্দ্র করে আরো কিছুকাল রাজত্ব চালিয়ে যান। সব মিলিয়ে প্রায় দুশো বছর।

বখতিয়ার খিলজির বাংলার শাসনভার নেওয়ার পর ১২০৪ থেকে ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন মুসলিম শাসক একের পর এক বাংলা শাসন করেন, কিন্তু সুলতানি আমল আসার পর ১৩৩৮ থেকে ১৫৩৮ পর্যন্ত বাংলা একটা পরিপূর্ণ আস্থা লাভ করে এবং সমাজ সবদিক নিয়ে প্রভূত উন্নতির শিখরে ওঠে। এর মধ্যে একটা নতুন প্রয়াস নেন সামন্তরাজা গণেশ ১৪১৫ খ্রিষ্টাব্দে ইলিয়াসশাহী আমলকে পরাজিত করে বাংলাকে হিন্দু রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে। কিন্তু তাঁর পুত্র যদু জালালুদ্দিন নাম গ্রহণ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং এভাবে রাজত্ব বাঁচান। ১৪৩৫ পর্যন্ত তাঁদের বংশের রাজত্বকাল টিকে ছিল।

ইলিয়াসশাহী বংশের নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ গৌড় দখল করায় হিন্দুরাজ টিকে থাকার আর সুযোগ পায়নি। ব্রিটিশ আগমনের আগে হিন্দু রাজার অধীনে বাংলা অধিষ্ঠিত হয়নি। বরং মোগল আমলে মুর্শিদ কুলি খাঁ বাংলায় নওয়াব আমলের সূত্রপাত করেন। যদিও দীর্ঘকাল ধরে রাখা যায়নি। পলাশীর যুদ্ধের পর (১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দ) মীর জাফর ও 888sport app কয়েকজন শাসকের পর ১৭৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ কোম্পানি বাংলার পুরো শাসনভার গ্রহণ করে। ১৯৪৭-এর ভারত বিভাগের পূর্বে ভারতীয়গণ আর একবার প্রবল আক্রমণ চালান ব্রিটিশ শাসকের ওপর, যার নাম সিপাহি বিপ্লব (১৮৫৭)। এই আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় দিল্লিতে মোগল শাসনের অবসান ঘটে। সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে রেঙ্গুনে নির্বাসনের মাধ্যমে ভারতবর্ষে মোগল শাসনের ইতি। আর কোম্পানির শাসনেরও সমাপ্তি। ভারতবর্ষ সরাসরি কুইন ভিক্টোরিয়ার শাসনে চলে যায়। শুরু হয় ইম্পেরিয়াল রাজ।

ভারতবর্ষ বিভক্তির পূর্বে বাংলায় ১৯৩৬ থেকে মুসলিম লীগের শাসন। মুখ্যমন্ত্রী মুসলিম লীগের সদস্য, অর্থাৎ পুরো বাংলায় মুসলিম শাসনভার। এই ব্যবস্থা কেমন করে কলকাতাহীন পূর্ব বাংলায় রূপান্তরিত হলো তা একটা ঐতিহাসিক প্রশ্ন। বাংলা এক রাখার পক্ষে নেতাজি সুভাষের মধ্যম ভ্রাত শরৎ বসু, চিন্তাবিদ আবুল হাশিম, মুখ্যমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ প্রধান নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিত্ব। কিন্তু তা সফলতা পায়নি।

পাকিস্তান জন্মের পর পূর্ব বাংলার অধিবাসীগণ লক্ষ করেন যে, কেন্দ্রীয় পাকিস্তানি শাসকগণ পূর্ব বাংলাকে হেয় চোখে দেখছেন। যদিও জন888sport free betর হার ৫৬ ভাগ পূর্ববঙ্গবাসী (পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান)। রাষ্ট্রভাষা উর্দুকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলায় যে মহা-আন্দোলন ঘটে তার মধ্যে পাকিস্তান বিভাজনের বীজ ছিল লুকায়িত। পরবর্তী ইতিহাসের কৃতিত্ব একক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাপ্য। অবশ্য গুরুজন হিসেবে মওলানা ভাসানী তাঁকে সব সময় সহযোগিতা দিয়ে গেছেন।

ভারত বিভাগের সময়কালে বঙ্গবন্ধু ২৭ বছরের যুবক। গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। একজন যোগ্য গুরুর শিষ্য। পরবর্তীকালে সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন।

২১-এ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সর্বজনভাবে 888sport apps জন্মের বীজ হিসেবে বিবেচিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৫৪-এর নির্বাচনে  যুক্তফ্রন্টের বিজয় এবং ক্ষমতা কার্যকর না করার জন্যে ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের মার্শাল ল’ এবং ১৯৬৯-এর গণআন্দোলন সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায়। এর আগে ১৯৬৬ সালে লাহোরে শেখ মুজিবের ছয় দফা আন্দোলন ঘোষিত হয়েছে। তাতে তিনি পূর্ব বাংলাকে ভার্চুয়াল পৃথক করার আয়োজন করে ফেলেছেন। বিজ্ঞজনেরা বুঝেছিলেন শেখ সাহেব কোনদিকে অগ্রসর হচ্ছেন। বামপন্থী দলের চিন্তায় দুনিয়ার মজদুরের কথা ভেবে কিছুটা দ্বিধা ছিল। কিন্তু ১৯৭১-এর ২৫-এ মার্চ মধ্যরাতে অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকবাহিনী সরাসরি জনতার ওপর হত্যাযজ্ঞ চালালে এই দ্বিধা কেটে যায় এবং দেশে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঐক্য তৈরি হয়। জাতীয় মুক্তিকে অবহেলা করার আর সুযোগ অবশিষ্ট থাকে না।

পাকিস্তান আন্দোলনকারীরা যখন 888sport apps আন্দোলন শুরু করে তার নেতাকে কি ক্ষ্যাপা না বলে পারা যায়? বঙ্গবন্ধুর ক্ষ্যাপামি পরশপাথর হয়ে আসে পূর্ব বাংলা বা 888sport appsের জনগণের জন্যে। সেই ক্ষ্যাপার ডাকে ১৯৭১-এর ৭ই মার্চ প্রায় দশ লক্ষ মানুষ জড়ো হয় 888sport appর রেসকোর্স ময়দানে। তাঁর আহ্বানে সব সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে যায়। এক ক্ষ্যাপা গোটা দেশকে ক্ষেপিয়ে তোলে ‘জয় বাংলা …’ ধ্বনিতে।

জাতীয়তাবাদের জোয়ার সাম্যবাদী দলগুলোর ওপর প্রভাব ফেলে। এই বিপ্লব সফল না হলে যে পরবর্তী বিপ্লবে যাওয়া যাবে না, এটা অবধারিত সিদ্ধান্ত। সমস্ত প্রগতিবাদী পক্ষ বঙ্গবন্ধুর ডাকে পূর্ণ সাড়াদান করেন। গ্রামে গ্রামেও এর পরিপূর্ণ প্রভাব পড়ে। দেশটা যেন এক সদ্য জন্মলাভ করা গ্রেনেড।

এ কী ক্ষ্যাপামি! ইতিহাসে এমন ক্ষণ দেখা একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা। গ্রামে থাকায় ১৯৪৬-এর গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং – হিন্দু-মুসিলম দাঙ্গা ও ১৯৪৭-এর দেশ বিভাগের আনন্দ-বেদনার ভাগের বহিঃপ্রকাশ অবলোকন থেকে আমি বঞ্চিত। কিন্তু পরবর্তী 888sport appsের সব আন্দোলন আমার চোখের সামনে প্রস্ফুটিত। চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আমি মিছিলে মিছিলে শহর উত্তাল হতে দেখেছি ও অংশগ্রহণ করেছি। পরবর্তী ষাটের দশকে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে সমস্ত আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলাম।

১৯৭১ সালে 888sport app ও চট্টগ্রাম সমান তালে উত্তাল ছিল। পাকিস্তান থেকে আসা সমরাস্ত্র জাহাজ থেকে খালাসে বাধা, আর 888sport appয় তখন রাজনৈতিক আগুন জ্বলছে।

১৬ই ডিসেম্বর বাংলার মুক্তিদিবস। ১৯৭২ : বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন।

সে-এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। এয়ারপোর্টে সবাই কাঁদছেন। কী অমূল্য ধন আমরা ফেরত পেয়েছি। ক্ষ্যাপা ফিরেছে। আগেই আমরা 888sport apps নামক পরশপাথর প্রাপ্ত।

রাজা শশাঙ্ক ও কৈবর্তরাজ গণেশ ছাড়া বাংলার শাসনভার কোনো বাঙালি দ্বারা পরিচালিত হয়নি। একটি পরাশ্রয়ী জাতি হিসেবে ইতিহাসে বাঙালির অবস্থান। বুদ্ধিমত্তায় এতো উচ্চে যার আসন তার কেন নিজের শাসনক্ষমতায় না পৌঁছনো? এটা ইতিহাসের একটা ধাঁধা। অথচ একটি দ্বীপবাসী ব্রিটিশ জাতি সারা দুনিয়া শাসন করতে পেরেছে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় সর্বেসর্বা। উচ্চাভিলাষী জার্মান জাতি দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধ লড়েছে একচ্ছত্র রাজত্বের জন্যে। মধ্যযুগে রাখালরাজা দিলালের গল্প শুনেছি, যিনি সন্দ্বীপ অঞ্চলের অধীশ্বর ছিলেন। অথচ আমরা বাঙালি জাতি এতো মেধাবী হয়েও নিজেদের শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। এটা একটা ঐতিহাসিক প্রশ্ন। এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্যে ফরিদপুরের অখ্যাত এক গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান নামে এক মানবসত্তা। যাঁর নেতৃত্বে বিংশ শতাব্দীর শেষ অংশে জন্ম নেয় বাঙালির রাজ্য 888sport apps। তা-ও খণ্ডিত বাংলা। তাহলে বাঙালি জাতি কি জাতি হিসেবে এখনো অসম্পূর্ণ? অথচ ১৯৪৭-এর আগে সবসময় তো একসঙ্গে ছিল! মনে পড়ে না সে-সময় কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা। মুসলিম সম্প্রদায় তো বহিরাগত নয়। তারা বেশিরভাগ ধর্মান্তরিত সনাতন ও বৌদ্ধ ধর্মের নিম্নবর্ণের মানুষ। প্রথমে বৌদ্ধ ও কুলীন সনাতন ধর্মের মানুষের মধ্যে বেশ একটা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ আমরা লক্ষ করি বাংলায় সেন আমল স্থাপিত হওয়ার পর। ত্রয়োদশ শতকে বাংলায় মুসলিম শাসনামলে বাইরের মুসলিম মনীষীগণ এদেশে ধর্মপ্রচারের সুযোগ পান। তখন থেকে ধীরে ধীরে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের 888sport free bet বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৮৬১ সালে ব্রিটিশ শাসক উপ-মহাদেশে প্রথম আদমশুমারি করেন। এবং দেখা যায়, বাংলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের 888sport free betধিক্য। এতে ব্রিটিশরাও অবাক হয়ে যায়।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য ১৮৮৬ সালে জাতীয় কংগ্রেস গঠনের পর ১৯০৬ সালে 888sport appয় গঠিত হয় মুসলিম লীগ। তখন ব্রিটিশ ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পলিসি গ্রহণের সুযোগ গ্রহণ করে। কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তাদের প্রভূত ক্ষতির কারণে ভারতীয় উপমহাদেশ পরিচালনা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যাওয়ায় তারা ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু যাওয়ার আগে রেড ক্লিফকে দিয়ে যে মানচিত্র করে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানের, তাতে উপমহাদেশে একাধিক কার্বাঙ্কল তৈরি হয়। যেমন ত্রিপুরা 888sport appsে পড়েনি। কাশ্মির স্বাধীন রাষ্ট্র হয়নি। বাংলা ও পাঞ্জাব হয়েছে খণ্ডিত। এভাবে চিরস্থায়ী একটা কোন্দলের সৃষ্টি করে যান ব্রিটিশ শাসককুল।

হাজার মাইল দূরত্বে দুই পাকিস্তান। যতো সব আজগুবি কাণ্ড! বিংশ শতকে এই ধরনের কাণ্ড বিশেষ করে মুসলিম নেতৃত্বের দেউলিয়াপনা তুলে ধরে। পাকিস্তানের শতকরা ছাপান্ন ভাগ নাগরিক পূর্ব বাংলায় হলেও রাজধানী  হয় পশ্চিমে। পূর্বাঞ্চল একটি পশ্চাৎভূমি হয়ে দাঁড়ায়। রাজধানী উন্নয়নের নামে প্রধান খরচ হতে থাকে পশ্চিমে। বাঙালি মধ্যবিত্তের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের পতাকাতলে ক্রমে ক্রমে জনগণ একত্রিত হয় এবং ১৯৭০-এর নির্বাচনে ১৬৯টি জাতীয় আসনের ১৬৭টি জিতে নেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রিত্ব অর্জিত হয়নি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে। ইতিহাস তখন বঙ্গবন্ধুকে অপ্রতিরোধী নেতৃত্ব দান করে। তাঁর নামে 888sport apps যুদ্ধে অবতীর্ণ ও ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর জয়ী হয়। 

যে-কোনো বিপ্লবের পর একটি প্রতিবিপ্লব ঘটতে দেখা যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘটে সেই প্রতিবিপ্লবের সূচনা – বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে হত্যার মাধ্যমে। বাংলায় ঘটল একটি অসম্পূর্ণ বিপ্লব। বঙ্গবন্ধুকে সুযোগ দেওয়া হলো না বিধ্বস্ত দেশকে নিজ পায়ে দাঁড় করানোর। তলাহীন ঝুড়ি যাতে পরিপূর্ণ না হয় তার ব্যবস্থা করে প্রতিক্রিয়াশীল মহল।

বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দান করেন, যা আর কারো ভাগ্যে ঘটেনি। ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধুর সামনে বসে বললেন, ‘আমি হিমালয় দেখেনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি।’

বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ : ১৯৭১ দুনিয়া কাঁপানো ন-মাস। ইন্দিরা গান্ধীর সারা পৃথিবী পরিক্রমা। বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে হবে। তিনি সফল হন। আমরা ফিরে পাই বঙ্গবন্ধুকে। সবকিছুর পর আমার মনে পড়ে ছেলেবেলায় পড়া সেই ক্ষ্যাপার কথা, যে পরশপাথরের খোঁজে বেরিয়েছিল। বাঙালি জাতি সেই ক্ষ্যাপার মতো একজন ক্ষ্যাপা পেয়েছিল, যিনি আমাদের পরশপাথর এনেও দিয়েছিলেন; কিন্তু সে-পরশপাথর আমরা হারিয়ে ফেলেছি। শুরু হলো পেছনযাত্রা। সামনের যাত্রাপথ এখন বন্ধুর। নানা ফ্রন্টে লড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগ দল ও নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে। তাঁর সাহসী পদক্ষেপ এবং দরিদ্রপ্রীতি একদিন 888sport appsকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সুযোগ করে দেবে – এটা সমগ্র জাতির বিশ্বাস।