বাংলা কথা888sport live footballের ইতিহাসে ছোটগল্পকার হিসেবে হাসান আজিজুল হকের অবদান অসামান্য। তিনি আমাদের ছোটগল্পে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের অনন্য রূপকার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ‘তারাশঙ্কর দ্বিতীয়বার পড়তে চাই না, কিন্তু মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সারাজীবন বারবার পড়বো।’ কথাটি বলেছেন বর্তমান সময়ের খ্যাতনামা কথা888sport live footballিক হাসান আজিজুল হক (জন্ম ১৯৩৮, মৃত্যু ২০২১)। উক্তিটি থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, তাঁর আদর্শ ছিল মানিক, তারাশঙ্কর নয়। মানিক বন্দোপাধ্যায় (১৯০৮-৫৬) ছিলেন বাস্তববাদী ও সত্যসন্ধানী। লেখাকে তিনি নিছক শখ বা বিলাসিতা হিসেবে গ্রহণ করেননি। জীবনকে তিনি যেভাবে দেখেছেন, উপলব্ধি করেছেন দিব্যদৃষ্টিতে, তা-ই তাঁর 888sport live footballে প্রতিফলিত হয়েছে। মানিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন বলে ধনতন্ত্রের বিরোধিতা করেন আর তারাশঙ্কর সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বলে গান্ধীবাদী চিন্তার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। হাসান আজিজুল হক যেহেতু মানিকের আদর্শ ও সমাজতন্ত্রে আস্থাশীল সেহেতু তাঁকে আমরা মানিকের সার্থক অনুসারী বলতে পারি।
হাসান আজিজুল হক একজন শক্তিশালী ও সত্যনিষ্ঠ গল্পকার। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনবোধ, কল্পনাশক্তি, সংগ্রামী চেতনা ও মানবতাবোধ অত্যন্ত প্রখর। তিনি খুব সহজে খেটে খাওয়া, নিরন্ন, সাধারণ মানুষের অন্তরে পৌঁছে যান। তাঁর কুশীলবদের মুখ দিয়ে সমাজের শাসন-শোষণের ইতিহাস উঠে আসে অনায়াসে। দেশকালের প্রভাব হাসানের লেখার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দেশ-বিভাগ থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা-উত্তর সময়ের অভিজ্ঞতাও তাঁর লেখায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপস্থিত হয়। একাত্তরের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর নির্যাতিত মানুষ মনে করেছিল, স্বাধীনতা তাদের জন্য আনন্দ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে, অশিক্ষার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে, অবসান হবে জঠরযন্ত্রণার। স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরও বিত্তহীন মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হলো না। মুষ্টিমেয় সম্ভ্রান্ত লোকের শোষণ-দুর্নীতির আয়োজন ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি স্বাধীনতা। সাধারণ মানুষ আবারো মুখ থুবড়ে পড়লো নর্দমায়, হতাশায় দারিদ্র্যে জীবন হয়ে উঠলো দুর্বিষহ। সরাসরি দুশমনদের সঙ্গে যুদ্ধ করে সার্বিকভাবে সমাজকাঠামোকে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। 888sport live footballের মাধ্যমে মানুষ খুঁজে পেতে পারে আত্ম-আবিষ্কারের পথ, পেতে পারে নীতির স্বপক্ষে দাঁড়ানোর দৃঢ় বল। একদিকে মধ্যশ্রেণির অসহায়ত্ব, অন্যদিকে সমাজের মার খাওয়া সাধারণ মানুষের নিরন্তর সংগ্রামকে হাসান আজিজুল হক তুলে ধরেন তাঁর 888sport live footballে। একটি বিশেষ সময়কে কালো অক্ষরে মুদ্রিত করে হাসান আজিজুল হক আমাদের 888sport appsের স্বাধীনতার কথাই 888sport app download for android করিয়ে দেন। নামহীন গোত্রহীন (১৯৭৫) গ্রন্থের গল্পগুলো সেই বিশেষ সময়কে অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত। হাসানের নামহীন গোত্রহীন গ্রন্থে মোট সাতটি গল্প সংকলিত হয়েছে। গল্পগুলোর নাম হলো – ‘ভূষণের একদিন’, ‘নামহীন গোত্রহীন’, ‘কৃষ্ণপক্ষের দিন’, ‘আটক’, ‘ঘরগেরস্থি’, ‘কেউ আসেনি’ এবং ‘ফেরা’।
‘ভূষণের একদিন’ গল্পটিতে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর সঙ্গে বাঙালির যুদ্ধ বেধে যাওয়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ভূষণ একজন জাতচাষী। তার পঞ্চাশ বছর জীবনে চাষের কাজ ছাড়া আর কিছুই করেনি, মাটি ছাড়া ভূষণ আর কোথাও কাজ করেনি। অথচ তার বাপ, পিতামহ একসময় বড়লোক ছিল। বর্তমানে এই জাতচাষী ভূষণের ঘরে খাবার নেই, তাই সে সকালে একটা কাস্তে হাতে করে বেরিয়েছিল কাজের সন্ধানে। সময়টা ছিল এপ্রিল মাস। ভূষণ মল্লিক বাড়িতে বেড়া বাঁধার কাজ করছিল, এমন সময় তিনটি ছেলে বন্দুক হাতে তার সামনে এসে দাঁড়ালো। তাদের একজন বললো, ‘দেশ নিজের করে নাও ভূষণ, স্বাধীন করে নাও। পাকিস্তান আর রাখা যাচ্ছে না।’ আরেকটি ছেলে ভূষণকে উদ্দেশ করে বললো, ‘তোমরা ভয় পেলে কোনো কাজই হবে না – তোমাদের অস্ত্র ধরতে হবে – তোমরাই তো ছ’কোটি মানুষ আছো এদেশে – এই তোমরা যারা চাষী-জমিজমা চাষাবাদ করো। আমাদের দেশটা চুষে খেয়ে ফেললো শালারা। ভাল ভাল অস্ত্র দিয়ে 888sport appয় খুলনায় সব জায়গায় আমাদের মেরে শেষ করে দিলে। অস্ত্র না চালালে এখানেও আসবে ব্যাটারা। লুকিয়ে বাঁচবে ভেবেছ?’ (পৃ ১২) কিন্তু ভূষণ যুদ্ধের এই ব্যাপার-স্যাপার কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। বন্দুকের গুলির শব্দ শুনে সে ভয় পায়, অবাক হয়।
‘ভূষণের একদিন’ গল্পে হানাদার বাহিনীর গণহত্যার বীভৎস চিত্রের একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় এভাবে – ‘আবার একটানা শব্দ উঠলো কটকট কটকট – তখন ভূষণ দেখলো গোড়া ফেটে গেলে গাছ যেমন তাড়াহুড়ো না করে আস্তে আস্তে মাটিতে শুয়ে পড়ে, মানুষটি তেমনি করে মাটিতে পড়ছে। এর পরই সে রক্ত দেখতে পায় – কোন মানুষের মাথা থেকে, কারো পা থেকে, কারো কাঁধ, বুক বা পেট থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটতে থাকে – রক্ত ছোটার কলকল ঝরঝর শব্দটাই ভূষণ শুনতে পায় না – কিন্তু দলে দলে মানুষ মাটিতে শুয়ে পড়ছে এটা সে দেখতে পায়। … এককভাবে কটকট কটকট শব্দ চলতেই থাকে – এখন বস্তার ওপর বস্তার মতো মানুষের ওপর মানুষ স্তূপীকৃত হতে থাকে – কেউ প্রবল বেগে হাত-পা নাড়ে, কারো চোখের পাতাটি শুধু কাঁপতে কাঁপতে স্থির হয়ে যায়।’ (পৃ ১৭-১৮)
একদিন হাটে গিয়ে ভূষণ দেখলো কীভাবে পাকিস্তানি সেনারা এদেশের মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করছে। একপর্যায়ে ভূষণ তার ছেলে হরিদাশের হাত ধরে তেঁতুল গাছের আড়ালে গিয়ে দেখতে পায় – অজস্র মানুষ মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে – কেউ কেউ তখনো চিৎকার করছে, ভগবানকে ডাকছে, পানি চাইছে, হাত-পা ছুড়ছে। ভূষণ দেখলো এর মধ্যে চব্বিশ-পঁচিশ বছরের একটি মেয়ে তার কালো কুতকুতে বাচ্চা কোলে তেঁতুল গাছের দিকে এগিয়ে এলো। ঠাস করে একটি শব্দ হলো। মেয়েটি বাচ্চার মাথায় হাত রাখে। ভূষণ দেখে মেয়েটির হাত দিয়ে গলগল করে রক্ত আসছে। শেষে রক্তে মেশানো সাদা মগজ বাচ্চাটার ভাঙা মাথা থেকে এসে তার মায়ের হাত ভর্তি করে দিলো। মেয়েটি ফিরে দাঁড়ালো, বাচ্চাটা মুখের দিকে চাইলো, পাগলের ঝাঁকি দিলো কবার – তারপর অমানুষিক তীক্ষè চিৎকার করে ছুড়ে ফেলে দিলো বাচ্চাকে; দু-হাতে ফালা ফালা করে ছিঁড়ে ফেললো তার ময়লা ব্লাউজটাকে। তার দুধে ভরা ফুলে ওঠা স্তন দুটিকে দেখতে পেল ভূষণ। সে সেই বুক দেখিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো, ‘মার হারামির পুত, খানকির পুত – এইখানে মার।’ পরমুহূর্তেই পরিপক্ব শিমুল ফুলের মতো একটি স্তন ফেটে চৌচির হয়ে গেল। ছিটকে এসে পড়লো তেঁতুলতলায়। অসংখ্য মানুষকে যেভাবে পাকিস্তানিরা হত্যা করেছিল তেমনি ভূষণ ও তার ছেলে হরিদাশও নির্মমভাবে হত্যার শিকার হলো।
এই গল্পটিকে 888sport appsের যুদ্ধকালীন সময়ের একটি রিপোর্টধর্মী গল্প বলা যেতে পারে। কারণ এতে বর্ণনার বাহুল্য নেই। 888sport appsের একটি অঞ্চলে পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচারের করুণ বর্ণনা এ-গল্পে স্থান পেয়েছে।
আমাদের আলোচ্য গ্রন্থের নামগল্প নামহীন গোত্রহীন। গল্পের নায়কের নাম ‘সে’। সে একদিন বিকেলে ট্রেন থেকে নামলো একটি শহরে। প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকিয়ে সে কোনো লোকজন দেখতে পেল না। জনমানবশূন্য লোকালয় আর সড়ক দেখতে পেল সে। সে শহরের রাস্তায় রাস্তায় পাকিস্তানি সৈন্যদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের করুণ দৃশ্য, নির্জন রেস্তোরাঁ, বন্ধ দোকানপাট, জনশূন্য পথঘাট, নিস্তব্ধ শহরের অলিগলি ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করে মাতালের মতো দুলতে দুলতে অন্ধকার ঠেলে শেষ পর্যন্ত একটি একতলা বাড়ির ছোট মাঠে এসে দাঁড়ালো। সে তার স্ত্রী মমতার নাম ধরে কয়েকবার ডাক দিলো; কিন্তু কেউ সাড়া দিলো না। শেষে দরজায় হাত দিতেই দরজা খুলে গেল। আবার সে মমতার নাম ধরে ডাকলো। ছোট ছেলে শোভনের নাম ধরেও ডাকলো কয়েকবার; কিন্তু ঘরের ভেতরে ও বাইরে কেউ নেই। পায়চারি করার সময় সে হঠাৎ পুরনো জংধরা একটি কোদালে তার হাঁটুতে জোরে আঘাত পেল। তারপর সে তার জুতো জোড়া খুলে ফেললো, ছুড়ে ফেলে দিলো ফোলিও ব্যাগ, কোর্ট, টাই, শার্ট ইত্যাদি সে খুলে ফেললো একে একে এবং পরবর্তীকালে সে তার শিরাবহুল পেশল হাতে কোদাল নিয়ে মাটি কোপাতে লাগলো। তারপর তলোয়ারের মতো বাঁকা একটি পাঁজরের অস্থি পেল সে। একে একে মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে এলো ছোট হাতের অস্থি, একগুচ্ছ দীর্ঘ চুল, কোমল কণ্ঠাস্থি, ছোট ছোট পাঁজরের হাড়, প্রশস্ত নিতম্বের হাড় আর করোটি। সে নিশ্চিত হলো যে, এই করোটিটি তার স্ত্রী মমতার। অনেকক্ষণ মাথার খুলিটার দিকে চেয়ে থেকে তারপর পাশে নামিয়ে রাখলো। আবার দ্বিগুণ উৎসাহে মাটি খুঁড়তে আরম্ভ করলো সে, যেন ‘পৃথিবীর ভেতরটা নাড়িভুঁড়িসুদ্ধ সে বাইরে বের করে আনবে।’
‘কৃষ্ণপক্ষের দিন’ গল্পে জামিল, শহীদ, মতিয়ুর, রহমান ও একরাম – এই পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা – আগে কেউ ছিল ক্ষেতমজুর, কেউ স্কুলের ছাত্র আবার কেউ বা কলেজের ছাত্র। 888sport appsের অভ্যন্তরে একটা বিল অতিক্রম করার সময় তাদের নিজেদের বিচিত্র অনুভূতি 888sport appsের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিজীবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে থাকে। পাকিস্তানি সেনারা হিন্দু ও মুসলমান গ্রামবাসীকে কীভাবে নির্বিচারে নির্মমভাবে হত্যা আর ধর্ষণ করেছে – এসব দৃশ্য তারা অসহায়ের মতো দূর থেকে অবলোকন করেছে। একসময় তাদের সর্বকনিষ্ঠ সঙ্গী চৌদ্দ বছরের একরাম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়। বিল পেরিয়ে তারা মরা জ্যোৎস্নালোকে অত্যন্ত ক্ষুধার্ত অবস্থায় গঞ্জসংলগ্ন একটি ঝোপের পাশের এলাকায় জিরিয়ে নিচ্ছিলো। তখনই তারা ধরা পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে। সেখান থেকে নদীর কিনারায় নিয়ে যাওয়া হলো তাদের চারজনকে। ঘাতক বাহিনীর একজন সৈন্য মাত্র দু-হাত দূর থেকে প্রথমে গুলি করলো রহমানকে। তারপর শহীদ ও শেষে মতিয়ুরকে। জামিল ততক্ষণে দাঁড়িয়ে থেকে সবই দেখলো এবং তার দিকে রাইফেল তাক করার সঙ্গে সঙ্গে সে সৈন্যটির তলপেটে প্রচণ্ড একটা লাথি বসিয়ে দিয়ে বিদ্যুৎবেগে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শত্রুদের আট-দশটি রাইফেল জলের মধ্যে ক্রমাগত গুলি ছুড়েও জামিলকে হত্যা করতে ব্যর্থ হলো।
পরবর্তী গল্পের নাম ‘আটক’। গল্পটির বিষয়বস্তু পাকিস্তানি সেনাদের পিছু হটা। মিত্রপক্ষীয় প্লেনগুলো পাকিস্তানি শত্রু সৈন্যদের আস্তানা লক্ষ্য করে একের পর এক বোমা ফেলে যাচ্ছিলো। এতে পাকিস্তানি সৈন্যরা ভীত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অধ্যাপক নজমুল সৈন্যদের ওই অবস্থা দেখে বিস্মিত। একসময় মিত্রপক্ষীয় দুটি হান্টার প্লেনের বোমা নিক্ষেপে একটি পাটের গুদামে আগুন ধরে যায়। সেখানে কিছুসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা আশ্রয় নিয়েছিলো বেঁচে থাকার শেষ আশায়; কিন্তু বাঁচতে পারেনি। বিরাট দেয়ালের দু-একটি দেয়াল তখনো দাঁড়ায়েছিল। একটা দেয়াল প্রচণ্ড শব্দে ধসে যেতেই বিকট চিৎকার শোনা গেল। অধ্যাপক নজমুল দেখলেন, দুই দেয়ালের কোণে একটা লোক আটকা পড়েছে। তার আর্তচিৎকার শুনে কয়েকজন লোক তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়। সে নিজেকে বাঁচানোর জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিল; কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। হঠাৎ আরেকটি দেয়াল তার ওপর পড়তেই সে ভেঙেচুরে দুমড়ে-গুঁড়িয়ে গেল। লেখকের ভাষায় – ‘বুটপরা পায়ের নিচে যেমন কুড়মুড় শব্দে মরা শামুকের খোল গুঁড়িয়ে যায়, তেমনি করেই লোকটি গুঁড়িয়ে গেলো।’ মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্রপক্ষীয় সৈন্যদের আক্রমণে দিশেহারা পাকিস্তানি সৈন্যদের পলায়নের আরেকটি দৃশ্য – ‘সৈনিকরা পালাচ্ছে। অসম্ভব দ্রুতগতিতে জীপগুলো চলে যাচ্ছে। এক একটা চলন্ত জঙ্গলের মতো প্রত্যেকটি স্বয়ংক্রিয় যানের উপরে চাপানো রয়েছে খেজুর আর নারকেল পাতা। … সৈন্যরা বিষণ্ন আর সন্ত্রস্ত হয়ে বসে আছে। ভারি ভারি চেহারার অফিসাররা বিব্রত ও হতভম্ব।’ (পৃ ৬৫)
‘ঘরগেরস্থি’ গল্পের রামশরণ তার পরিবার নিয়ে ভারত থেকে 888sport appsে এসেছে। স্বাধীন 888sport appsে আবার নতুন সংসার গড়ার ইচ্ছা তাদের। রামশরণের ছেলেমেয়ে তিনজন। বারো বছরের একটি ছেলে, দশ ও তিন বছরের দুটি মেয়ে। সবচেয়ে ছোট মেয়ে অরু মায়ের শরীরের সঙ্গে টিউমারের মতো সবসময় লেগে থাকে। তালগাছের ছায়ায় বসে তাদের অতীত জীবনের কথা মনে পড়ে। রামশরণের এখন মনে পড়ে নয় মাস আগে যুদ্ধের সময় পাশের গ্রামের মুসলমান যুবক রশিদ ও অন্য ছেলেরা তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তাকে ভিটে থেকে উৎখাত করেছিল। তারপর আশ্রয়ের আশায় অন্যদের মতো সে-ও ভারতে চলে গিয়েছিল সপরিবারে। সেখানে কখনো অর্ধাহার আবার কখনো অনাহারে দিনাতিপাত করেছে তারা। রামশরণ স্বাধীনের পর দেশে ফিরে আসে। তারা একটি গ্রামে ঢুকে পড়ে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ার ফলে তারা নিজেদের বাস্তুভিটা চিনতে পারে না। নিজেদের ভিটে চিনতে না পেরে পছন্দমাফিক একটা জায়গা বেছে নিয়ে সেখানেই সঙ্গে আনা সংসারের মালপত্র সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখে। রিলিফে পাওয়া চালে আহারের ব্যবস্থা হয়। ভানুমতী সবার আগে তার কনিষ্ঠ কন্যাকে ভাত খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়; কিন্তু মেয়েটি রাতে একসময় ঘুমের মধ্যেই মারা যায়। কন্যার মৃত্যুর পর ভানুমতী একবার বুনো চোখে রামশরণের দিকে তাকায়, তারপর বুকভাঙা আর্তনাদে ভেঙে পড়ে। একসময় ভানুমতী ক্ষুধার্ত রামশরণের কথা 888sport app download for android করে শানকি থেকে কিছু ভাত রামশরণকে বেড়ে দেয় এবং নিজেও আরেক শানকিতে কিছু ভাত নেয়। রামশরণ রিলিফের চালের ভাতে নুন মাখিয়ে কাঁচামরিচ দিয়ে কোনোমতে খেয়ে ওঠে। রামশরণ ও ভানুমতী পাশাপাশি শুয়ে থাকে। ভানুমতী তার মেয়েটাকে দাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে রামশরণের কাছে। জবাবে রামশরণ বলে, ‘পুড়িয়ে আর কি সদগতি হবে নে? ভগোবান ফগোবান নাই বুঝলি। কাল সকালে এট্টু গর্ত করে পুঁতে দেবানে – শিয়েল টিয়েল যাতে না খাতি পারে। যাবে পঞ্চভূতে মিশে।’
এরপর রামশরণ যুদ্ধকালীন সময়ের কথা বর্ণনা করে। দীর্ঘ নয় মাস শিয়াল-কুকুরের মতো কাটিয়ে তাদের কোনো লাভ হয়নি। দেশে এসে তারা কিছুই পায়নি। স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তার অনুভূতি ভিন্নরকম – ‘স্বাধীনটা কি, আঁ? আমি খাতি পালাম না – ছাওয়াল নিয়ে শুকিয়ে মরে, স্বাধীনতা কোঁয়ানে?’
একপর্যায়ে কাঠপোড়া ছাইয়ের গন্ধ ও ভানুমতীর গায়ের আঁশটে গন্ধ মিশে রামশরণকে কেমন আশ্চর্যজনকভাবে মোহাবিষ্ট করে ফেলে। পাশেই আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে মৃত কন্যা অরুকে। কিন্তু রামশরণ যেন দারুণ নেশায় উন্মত্ত হয়ে ভানুমতীর গা ঘেঁষে এগিয়ে যায়, ভানুমতীর চোখে ক্রোধের অগ্নিশিখা, কিন্তু তবুও রামশরণ কামান্ধ ছিল বলেই ভানুমতীকে জড়িয়ে ধরে জোর করতে থাকে। শোকোন্মত্ত ভানুমতী ক্রুদ্ধ হয়ে রামশরণকে লাথি মেরে ছিটকে ফেলে দেয়। মুখে বলে, ‘লজ্জা করে না তোমার?’
রামশরণের মেয়েকে আর পোড়াতে হয়নি। কারণ রাতেই অরুকে শিয়ালে খেয়ে ফেলেছে। রামশরণ আবার বাঁকের ঝুড়ির মধ্যে তার সংসার গুছিয়ে নিয়ে অজানার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
‘কেউ আসেনি’ গল্পে সয়রাবাতের মুক্তিযোদ্ধা গফুর মুক্তিযুদ্ধ শেষ করে স্বাধীন 888sport appsে এসেছে। এসেছে হাসপাতালের একটি ভ্যানগাড়িতে করে কয়েকজন আহত ও নিহতসহ। আহতদের মধ্যে তার বন্ধু সহযোদ্ধা আসফ আলীও ছিল। তার বয়স কুড়ি-বাইশ বছর। মুক্তিযুদ্ধে সে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। গফুর ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারে, আসফের ক্ষতযুক্ত অবশিষ্ট পা কেটে ফেলতে হবে। গফুর আসফের জন্য চিন্তিত। আসফের খবর নিয়ে সে গাঁয়ে ফিরতে চায়। এর মধ্যে গফুরকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করেছে আসফ। জিজ্ঞেস করেছিল সে বাঁচবে কি না এবং তাকে দেখতে কেউ এসেছিল কি না। ঠিক সে-সময় শহরে মানুষের কোলাহলের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সে-হুল্লোড় মানুষের ঘরে ফেরার আনন্দকে কেন্দ্র করে ধ্বনিত হচ্ছিল। খুশির বন্যায় যেন শহর ভেসে যাচ্ছিল। কিন্তু কেউ আসফকে দেখতে এলো না। আসফ বিষণ্নকণ্ঠে গফুরকে জিজ্ঞেস করে, ‘দ্যাশ স্বাধীন হলি কি হয়?’ আসফ বললো, ‘কেউ তো আমাকে এসে কলো না যে দ্যাশ স্বাধীন হইছে।’ একসময় তার পা কেটে ফেলা হলো। আসফের বোধ ফিরে এলে গফুরকে বললো, ‘আমি বাড়ি যাবো। আমার ঠ্যাং নে বাড়ি যাবো। আমার মারে দেখাবো।’ আসফ আরো কিছুক্ষণ বেঁচে ছিল। গফুর গ্রামে ফেরার জন্য তৈরি হলো।
গ্রন্থের সব শেষ গল্প ‘ফেরা’। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া আলেফ 888sport appsকে খানসেনাদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। খানসেনাদের আত্মসমর্পণের পরপরই একসময় একটা গুলি তার পায়ে এসে লাগে। চিকিৎসার জন্য সে হাসপাতালে এসেছিল। সেখানে বেনেপুরের আমিন, একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সে উঠেছিল। মুক্তিযোদ্ধা আমিন তার পা কাটার তিনদিন পর মারা যায়। তার পা পচে গিয়েছিল। আলেফ তার গ্রামে ফিরে যায়। রাইফেলটি তার সঙ্গেই ছিল।
আলেফের স্ত্রী, যে একসময় আলেফের বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল, সে এবং তার বৃদ্ধ মা – তারা উভয়েই তাকে দেখে অবাক এবং যারপরনাই আনন্দিত হয়েছিল। আলেফ তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করে জানতে চায়, যুদ্ধ শেষ হয়েছে, এখন দেশের কী হল। তার স্ত্রী জানাল, এখন দেশের মানুষ ভাত-কাপড়ের সুখ পাবে। আলেফের বৃদ্ধ মায়ের আকাঙ্ক্ষা একটু বেশি। তিনি স্বপ্ন দেখছেন তার ছেলে যেহেতু দেশকে শত্রুমুক্ত করেছে, সেহেতু সরকার যথাযোগ্য মর্যাদায় তার ছেলেকে এবং 888sport app মুক্তিযোদ্ধাকে ডাকবে, আর যদি নাও ডাকে অন্ততপক্ষে তার ভাঙাচোরা ভিটেটার চেহারা পাল্টানোর, এক টুকরো জমি পাওয়ার এবং সেইসঙ্গে একটা গাই গরু, দুটো বলদ গরু ইত্যাদি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে; কিন্তু মায়ের সুখস্বপ্নের সেসব কথা শোনার পরপরই আমিনের পচা লাশটার দুর্গন্ধ আলেফের নাকে এসে লাগে। আলেফ কয়েকদিন গ্রামে ঘুরেই বুঝতে পারে যে, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ব্যর্থ হয়েছে। বেনেপুকুরের মুক্তিযোদ্ধা আমিনের মৃত্যুসংবাদটা তার মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে গিয়ে সেখানে আলেফ রেডিওর খবরে জানতে পারে, সরকার তিনদিনের মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে যার কাছে যত রাইফেল বা 888sport app যুদ্ধাস্ত্র আছে সেগুলো জমা দিতে বলেছে।
আলেফের রাইফেলটা এই কয়দিন ঘরের দেয়ালের এককোণে ঠেস দেওয়া ছিল। বেনেপুকুর থেকে ফিরে এসে আলেফ রাইফেলটাকে হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তার মাকে ও স্ত্রীকে দেখাল। কীভাবে রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ করতে হয় তাও দেখাল। তারপর রাইফেলটা হাতে নিয়ে বাড়ির পেছনে ডোবার ধারে গিয়ে দাঁড়াল। একসময় সে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে রাইফেলটাকে ডোবার মাঝখানে ছুড়ে ফেলে দিলো। বাড়ির দিকে ফিরে আসতে আসতে সে ভাবে, ‘ডোবাটা ছোটো – রাইফেলটা খুঁজে পেতে তেমন কষ্ট হবে না।’
888sport live chatগুণের দিক থেকে এ-গ্রন্থের গল্পগুলোর মধ্যে ‘ঘরগেরস্থি’ ও ‘কৃষ্ণপক্ষের দিন’ 888sport live chatসমৃদ্ধ গল্প। ‘নামহীন গোত্রহীন’কে একটি সার্থক গল্প হিসেবে সফল বলা যেত যদি লেখক অতিকথনে আক্রান্ত না হতেন।
‘কৃষ্ণপক্ষের দিন’ গল্পটিতে প্রতিহননের দুর্জয় শপথ নিয়ে পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধার কার্যক্রম অদ্ভুত নৈপুণ্যে বিধৃত হয়েছে। ‘ঘরগেরস্থি’ গল্পের রামশরণ ও ভানুমতী 888sport appsের সর্বহারা মানুষের প্রতিনিধিস্থানীয় দুটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র। স্বাধীনতালাভের আগে রামশরণের অবস্থা খারাপ ছিল না। তখন তার একটা কাঁচা ভিটে ছিলে, একটা দুধেল গাই গরু ও কাঁসার থালা ছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময় সবকিছু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে। নয় মাস তারা ইন্ডিয়ার পথে পথে কুকুরের মতো ঘুরে বেরিয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। একবুক প্রত্যাশা নিয়ে রামশরণ 888sport appsের মাটিতে ফিরেছে পরিবারসমেত; কিন্তু দেখা গেল রামশরণ ও ভানুমতীর জীবনে স্বাধীনতা নির্মম পরিহাস এবং তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশ থেকে এক শোষকের উৎখাত হয়েছে আর জন্ম নিয়েছে নতুন আরেক শোষক। শোষকের প্রতারণায় সর্বহারা মানুষের শোচনীয় পরাজয় দেখে রামশরণ আর্তনাদ করে বলে উঠেছিল – ‘স্বাধীন হইছি তাতে আমার বাপের কি? আমি তো এই দেহি, গত বছর পরাণের ভয়ে পালালাম ইন্ডেয় – নটা মাস শ্যাল কুকুরের মতো কাটিয়ে ফিরে এলাম স্বাধীন দ্যাশে। আবার সেই শ্যাল কুকুরের ব্যাপার।’
হাসান আজিজুল হক নামহীন গোত্রহীন গ্রন্থের সাতটি গল্পের মধ্যে যেসব বাস্তব ঘটনার অবতারণা করেছেন সেগুলোর কোনোটাতেই কাল্পনিকতার তেমন প্রশ্রয় নেই। একটি নির্দিষ্ট ঘটনা ও বাস্তবতার আলোকে রচিত বলে এই গ্রন্থের গল্পগুলোর ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। এখানে ইতিহাস এসেছে। এ-ইতিহাস বাঙালির ওপর পাকিস্তান সরকারের অত্যাচার আর বর্বরোচিত হামলার ইতিহাস। এতে যেমন আছে স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস, তেমনি আছে ব্যর্থ-স্বাধীনতার তিক্ততম উপলব্ধি। গ্রন্থটির ঘটনাকাল ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস থেকে ডিসেম্বর বা তার কিছু পর পর্যন্ত, অর্থাৎ নয় মাসের যুদ্ধকালীন 888sport appsের অবস্থা বিধৃত হয়েছে নিপুণভাবে।
হাসান আজিজুল হকের নামহীন গোত্রহীন গল্পগ্রন্থের গল্পগুলো ছাড়াও আরো কিছু মুক্তিযুদ্ধের গল্প ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাদের মধ্যে ‘রফি’, ‘মাটির তলার মাটি’, ‘আমরা অপেক্ষা করছি; ও ‘বিধবাদের কথা’ উল্লেখযোগ্য।
হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা মিলে নয় মাসে সারাদেশে গড়ে তুলেছিল অসংখ্য কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। মুক্তিকামী মানুষকে ধরে এনে এসব ক্যাম্পে অমানবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো। হাসান আজিজুল হকের ‘রফি’ গল্পে এরকম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের চিত্র বিম্বিত হয়েছে। সৎ, পরিশ্রমী ও নামকরা শ্রমিক নেতা রফি গ্রামের কৃষকদের মাঝে কাজ করার সময় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। বেশকিছু সফল গেরিলা অপারেশনের পর হানাদার-সহযোগীদের হাতে ধরা পড়ে রফি। টর্চার ক্যাম্পে তার ওপর চলে নির্মম অত্যাচার। যেমন – ‘রফির মাথাটা বস্তা দিয়ে বেঁধে চারজন লোক তার মাথার ওপর বসেছে আর দু’জন রাইফেলের কুঁদো দিয়ে ধীরে সুস্থে তার দু’হাত আর দু’পা ভেঙ্গে গুঁড়ো করেছে। হাড় ভাঙ্গার সেই রক্ত জমানো আওয়াজে অন্ধকার ঘর শিউরে শিউরে উঠেছে। রফি মৃত্যু যন্ত্রণায় চিৎকার করার সুযোগটাও পায়নি।’ (‘রফি’, হাসান আজিজুল হক, মুক্তিযুদ্ধ : নির্বাচিত গল্প, হারুন হাবীব-সম্পাদিত)।
নির্যাতনের পর হানাদার-সহযোগীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য রফিকে তার নিজ এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রোববারের হাটের দিন ফুলতলা বাজারে যখন চারপাশের গ্রাম থেকে হাজার হাজার চাষী-মজুর এসে জমতে থাকে, তখন হানাদার-দোসররা জিপে করে রফিকে নিয়ে আসে। সন্ধ্যায় বাজারের পাশের নদীতীরে নির্জন জায়গায় রফিকে পিছমোড়া করে হাত বেঁধে উবু করে বসিয়ে হত্যা করে। অতঃপর একজন কসাই রফির মাথা কেটে নেয় এবং আধো-অন্ধকারে হাটের বিমূঢ় জনতাকে দেখাতে দেখাতে বাজারের চৌরাস্তার মোড়ে নিয়ে আসে। সেখানে খোলা চত্বরে 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারিতে পতাকা তোলার উদ্দেশ্যে পোতা সুপারি গাছে রফির মাথা দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
হাসান আজিজুল হকের ‘মাটির তলার মাটি’ গল্পে এক বৃদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্যে আত্মত্যাগের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বড় ছেলের মৃত্যুকে বৃদ্ধ বাবা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছেন। কেননা, তাঁর মতে, সবারই কিছু না কিছু দেওয়া উচিত। (‘মাটির তলার মাটি’, হাসান আজিজুল হক, আমরা অপেক্ষা করছি, 888sport live football প্রকাশ, 888sport app, দ্বিতীয় প্রকাশ, ১৯৯৫, পৃ ৫০)
বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর শোষণমুক্তির আশায় 888sport appsের অনেক শিক্ষিত তরুণ বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেছিলেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে রাজনীতির কারণে সাধারণ মানুষের বঞ্চনায় তাঁরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। হাসানের ‘আমরা অপেক্ষা করছি’ গল্পে দুজন বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্নভঙ্গের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। সশস্ত্র বামপন্থী বিপ্লবী দলের সদস্য তারেক ও রুনু অন্ধকারে একটা গাছের নিচে অপেক্ষা করছে। রুনুর পা বুলেটবিদ্ধ। তাই অপেক্ষা না করে উপায় নেই। এখানে দাঁড়িয়ে আট বছর আগের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের 888sport sign up bonusচারণ করে তারেক। তারা দুজন বুর্জোয়া দলের নেতা মুকুলের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে সীমান্তের ওপারে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল। নৌকাযোগে যাওয়ার পথে নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে তারা সে-কঠিন দায়িত্ব পালন করেছিল। মুক্তিযোদ্ধা তারেক ও রুনু আজ হতাশায় নিমজ্জিত। তাদের বিপ্লবী দল বহুধাবিভক্ত হয়ে শোষণমুক্তির স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। গত আট বছরে স্বাধীনতার সুফল কোন শ্রেণির মানুষ চেটেপুটে খেয়েছে, তারা তা প্রত্যক্ষ করেছে। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। হতাশাগ্রস্ত আহত রুনু এবং তারেক গাছতলায় দাঁড়িয়ে অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। (‘আমরা অপেক্ষা করছি’, হাসান আজিজুল হক, আমরা অপেক্ষা করছি, 888sport live football প্রকাশ, 888sport app, দ্বিতীয় প্রকাশ, ১৯৯৫, পৃ ৯)
‘আমরা অপেক্ষা করছি’ গল্পে বিপ্লবী তারেক বুর্জোয়া নেতৃবৃন্দের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন করে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেছেন সুবিধাবাদী বুর্জোয়া নেতা মুকুলকে।
‘…আপনারা দেশের যদি এতই কল্যাণ চান তাহলে সমস্ত জনসাধারণকে ফেলে পালাচ্ছিলেন কেন? আপনাদের রাজনীতিতে কখনো কি অস্ত্র হাতে তুলে নেবার কথা আছে? কোনোদিন কি ছিল? মার্চ মাসের পঁচিশ তারিখ পর্যন্ত, পাকিস্তানিরা যে রাতে এদেশের মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো, সে রাতের আগে পর্যন্ত ইয়াহিয়া আর ভুট্টোর সঙ্গে আপনারা কি করছিলেন? কোন খবর পাননি, না, খবর জেনেও চুপ করে ছিলেন? এদেশের মানুষের ওপর জেঁকে বসার জন্যে দরকষাকষি চালাচ্ছিলেন? না কি? বলুন, আপনাদের রাজনীতিতে অস্ত্র হাতে তুলে নেবার কোন কথা কোথাও আছে কি? একে কি বিপ্লবী যুদ্ধ বলে? ভোটের বুর্জোয়া রাজনীতি চিরদিন করে এসেছেন – নেহাৎ শুয়োরের বাচ্চারা আপনাদের ছিঁটেফোঁটা দামটুকু দিতে চায় না বলেই বিপ্লবী সেজেছেন।’ (পৃ ১৫-১৬)
রোদে যাব গল্পগ্রন্থে ‘নিশীথ ঘোটকী’, ‘ঝড়’ ও ‘নবজাতক’ গল্পগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ অনুষঙ্গ এসেছে সুনিপুণভাবে। ‘নিশীথ ঘোটকী’ গল্পে দেখা যায় মুক্তিযোদ্ধা পুত্র না পেরে পিতাকে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করে। যুদ্ধের শুরুর দিকের ঘটনা চিত্রিত হয়েছে ‘ঝড়’ গল্পে আর যুদ্ধের শেষের দিকের ঘটনা স্থান পেয়েছে ‘নবজাতক’ গল্পে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী শহরে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও আগুন জ্বালিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। সাধারণ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে শহর থেকে গ্রাম অভিমুখে পালাতে থাকে। পালানোর মিছিলে লেখক নিজেও ছিলেন। নদী পার হয়ে রিকশা দিয়ে গ্রামের দিকে আশ্রয় নেন। প্রায় এত ঘণ্টা ঝড়-বৃষ্টির পর আকাশে রোদ ওঠে। কবাটবিহীন দরজা আর পাল্লাহীন জানালা দিয়ে ঘরে রোদ প্রবেশ করলে লেখক পাশে আরেকটি ঘর দেখতে পান। কোথাও কেউ নেই। পাশের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলেন, বিবস্ত্র ধর্ষিত এক তরুণী মাতার মৃতদেহের স্তন চুষে দুধ পানের চেষ্টা করছে এক শিশু। গল্পকার এই দৃশ্যটি এঁকেছেন এভাবে – ‘মেয়েটির করুণ শরীরে কোথাও কোন খুঁত দেখতে পেলাম না। তার সারা শরীরে রোদ। শুধু একটিমাত্র খুঁত। মেয়েটির যোনি নাই। যোনির জায়গায় বিরাট একটি গহ্বর। জায়গাটিতে রোদ যেতে পারেনি। কালো, ঘন কালো বিরাট গর্ত। অনেক গোলাপ বা অনেক পাথর চাপা দিয়েও গহ্বরটি বোজানো যাবে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু এটা কোন কথাই নয়। সেই মেয়ের পুষ্ট স্তন দুটির একটি ছোট হাতে মুঠো দিয়ে টিপে ধরে অন্যটি চুষছে বছরখানেক বয়সের হৃষ্টপুষ্ট একটি মিশু। ছোট ছোট হাত দিয়ে থাবড়া মারছে, মুখ ঘষছে, গরুর বাছুরের মতো ঢুঁ মারছে মাঝে মাঝে।’ (পৃ ৮৪)
‘নবজাতক’ গল্পটিকে একটি প্রতীকী গল্প বলা যায়। 888sport promo codeর সন্তান প্রসবের যন্ত্রণার উপমায় একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাস যে-মসৃণ নয়, সেটা বোঝাতে চেয়েছেন লেখক প্রতীকীভাবে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে তাড়া করে খুঁজছে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যুদ্ধবিমান। বিমানের প্রকম্পিত শব্দে আতঙ্কিত হয়ে নদী পার হয়ে গ্রামের দিকে ছুটছে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। সেই দলের যাত্রী লেখকও। নদীর পাশের ঝোপ থেকে একটি বিকট চিৎকার ভেসে আসে। লেখক দেখলেন, বস্ত্রহীন এক গর্ভবতী 888sport promo code প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে তার শরীর। বলছে – ‘বাবা, আমার সন্তান হবে – আমাকে বাঁচাও।’ একদিকে আকাশ থেকে বোমা ফেলছে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যুদ্ধবিমান, তা দেখে প্রাণভয়ে পালাচ্ছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, আর অন্যদিকে একজন গর্ভবতী 888sport promo code প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছে। একই সময়ে ঘটিত এই তিনটি ঘটনাকে লেখক দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন, যা যুদ্ধজীবনের বাস্তবতাই আমাদের 888sport app download for android করিয়ে দেয়।
হাসান আজিজুল হক বিধবাদের কথা ও 888sport app গল্পগ্রন্থের ‘বিধবাদের কথা’ গল্পটিতে মুক্তিযুদ্ধকে আরেকবার পেছন ফিরে দেখেন। দুই বোনের জীবনকাহিনি লিখতে বসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি ছক আঁকেন, যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। গল্পটি নিছক দুই বোনের জীবনকাহিনি নয়, এতে আছে স্বামী-সন্তান হারিয়ে নিঃস্ব ও বিধবা হওয়ার কাহিনি। গল্পটি সম্পর্কে দেবেশ রায় বলেন, ‘আমাদের এই বাংলা ভাষায় মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার শব্দে আধুনিক এক এপিক লিখেছেন – এপিকের সমস্ত উভবলিতা, এপিকের সমস্ত সম্ভাব্যতা, অলৌকিকতা, অপরিবর্তনসহ। এই বিস্ময় আমার কাটবে না। আমাদের এক সমকালের মানুষ, সমকালের লেখক এই এপিক লিখেছেন – এই অতুলনীয়কে বন্দনা করতে চাই।’ (‘হাসান ভাই : আমার যে ডাকতে ভাল লাগে’, দেবেশ রায়, গল্পকথা, হাসান আজিজুল হক 888sport free bet, ২০১৫, পৃ ৮৬)।
গল্পের শুরুতে দুই বোনের শৈশব থেকে জীবনের পরিণতি পর্যন্ত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন লেখক। নিঝুমপুর গ্রামের একটি বাড়িতে বৈশাখের শেষবেলায় দুই 888sport promo code মাথা নিচু করে কাঁথা সেলাইয়ে নিমগ্ন। কালবৈশাখের প্রচণ্ড দাপটে তারা কাঁথা ও পাটি গুটিয়ে ঘরে ফিরে আসে। এই দুই 888sport promo codeর জীবনে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে এমনই এক কালবৈশাখ যা তাদের জীবনকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। দুই বোনের একজনের নাম রাহেলা, অন্যজন সালেহা। বড় বোন রাহেলার চেয়ে ছোট বোন সালেহা দুই বছরের ছোট। দুই বোনের বিয়ে হয় এক গৃহস্থ পরিবারের সহোদর দুই ভাইয়ের সঙ্গে। ফর্সা ও হিংস্র স্বভাবের বড় ভাই জবরের সঙ্গে বিয়ে হয় কালো ভেজা চাহনির স্বল্পভাষী ছোট বোন সালেহার আর কালো শান্ত স্বভাবের ছোট ভাই সবরের সঙ্গে বিয়ে হয় ফর্সা কটা চাহনির কড়াভাষী বড় বোন রাহেলার। দুই বোনের দুই ছেলে বাবার নয়, মায়ের স্বভাব পেয়েছে। বড় বোন রাহেলার ছেলে রাহেলিল্লাহ মায়ের মতোই বেড়ালচোখা, অন্যদিকে ছোট বোন সালেহার ছেলে সাহেবালি মায়ের মতোই কালো, শান্ত ও কোমল প্রকৃতির। দুই সন্তানের বেড়ে ওঠার কাহিনিও বিপরীত। সাহেবালি দুধ গলার ভেতরে চালান করেই মায়ের দিকে প্যাটপ্যাট করে তাকিয়ে থাকে আর রাহেলিল্লার গলায় দুধ আটকে যায় যেন দাঁত দিয়ে কামড়ে খাবে দুধ। তারপর কৈশোরে পিতা সবর ছেলে রাহেলিল্লাহকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে চেয়েছিল; কিন্তু স্কুলে হিন্দু ছেলে পড়ে বলে সে ভর্তি হতে চায় না। সে মক্তবে ভর্তি হয়। অন্যদিকে সাহেবালির পিতা জবর ছেলেকে মক্তবে পড়িয়ে মসজিদের ইমাম বানানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সাহেবালি স্কুলে ভর্তি হয়। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে অভিভূত সাহেবালি স্কুল পালিয়ে মাথায় আমপাতার মুকুট বেঁধে মাঠে-প্রান্তরে রাখালের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। আর রাহেলিল্লাহ মক্তব থেকে পালিয়ে মাথায় হামছা বেঁধে খেঁকশিয়াল তাড়া করে গর্তে ঢোকায়। খেঁকশিয়ালের কচি বাচ্চা নৃশংসভাবে হত্যা করে কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফেরে। বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত যখন তুঙ্গে, যুদ্ধ অনিবার্য, তখন দুই ভাই দুই পক্ষ অবলম্বন করে। বড় ভাই জবর পশ্চিম পাকিস্তান আর ছোট ভাই সবর পূর্ব পাকিস্তানের সমর্থনে বাহাসে জড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানের 888sport free betগরিষ্ঠ মানুষের বসবাস পূর্ব পাকিস্তানে। সত্তরের নির্বাচনে ভোটে জিতেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। স্বাভাবিকভাবে মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের কথা; কিন্তু ইয়াহিয়া ও ভুট্টো এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
পিতা-পুত্র-ভাইয়ের তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে লেখক বাঙালির গণজাগরণের ইতিহাস তুলে ধরেছেন।
এই আল্লাহর দ্যাশ, পাক মুসলমানের দ্যাশে ষড়যন্ত্র চলবি না। ষড়যন্ত্র মামলার কি হলো কতি পারো। তামাম দ্যাশের লোক শ্যাকের সাথে আছে, জেল ভাঙ্গি শ্যাকরে বাইরে আনিচে, কই, তাকে আটকায়ে রাখতে পারিছে! ছয়দফাগুলো কি তা জানো? খামোকা তক্কো করো।
ছয়দফা ইবলিশে বানায়া দেছে। হর কারবালার ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায়।
ইসলাম ঠিক আছে, ইদিকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা আঝোরা বাঁশ ঢুকায়ে দেছে তোমাদের গোয়ায় তা তো টের পাতিছ না!
খবরদার, আর কথা কবি না পাকিস্তান নিয়া – কথা কবি না ইসলাম নিয়া – কথা কবি না, খুন কর্যা ফেলাব তোরে।
সে তুমি বারবার পার, তবে শ্যাক মুজিব এখন থেকে যা বলবি, তাই হবি। সে-ই দ্যাশ চালাবি। (পৃ ৭৯)
এই সংলাপে আমরা বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের ইঙ্গিত পাই। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। নিরীহ 888sport promo code-পুরুষকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাকিস্তানিদের দমন-নিপীড়ন। যুদ্ধ শহর থেকে সারাদেশের গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বাঙালি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে মোকাবিলার জন্য মুক্তিবাহিনী গঠন করে। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে একশ্রেণির মানুষ ইসলাম ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। জবর যোগদান করে রাজাকার বাহিনীতে আর সবর মুক্তিবাহিনীতে। বিপরীতে রাজাকার জবরের ছেলে সাহেবালি যোগ দেয় মুক্তিবাহিনীতে, মুক্তিযোদ্ধা সবরের ছেলে রাহেলিল্লাহ রাজাকার বাহিনীতে। যুদ্ধের সময় পিতা-পুত্র চারজনই ঘরবাড়ি ছাড়ে এবং একে অপরকে হত্যা করার হুমকি দেয়। পিতা পুত্রকে, পুত্র পিতাকে আর ভাই ভাইকে হত্যার মুহূর্তে দুই 888sport promo code শুধু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পুরুষের মতো তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এমনকি নিজের সন্তান হলেও।
ঘটনাগুলো সব যখন ঘটে যাবে, তোর ছেলে যখন আমার ছেলেকে সরিয়ে দেবে দুনিয়া থেকে, আমার ছেলে যখন তোর সোয়ামির কলজেটা ছিঁড়ে নেবে – যখন স্বামীরা নেই, ছেলেরা নেই, তখন আমরা কি একজন আরেকজনকে খুন করব, একে অপরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ব, নখ দিয়ে ছিঁড়ে নেব গলার নালি, উপড়ে নেব চোখ! আমরা কী করব? আমার স্বামী মেরেছে তোর স্বামীকে, আমার ছেলে মেরেছে তোর ছেলেকে, আমরা দুই বোন, সালেহা বুন আমার, রাহেলা বুবু আমার, এই পেয়ারা আদ্দেক আমি খাইছি, বাকি আদ্দেক তুই খা, আমি বাবার বাঁ কোলে চড়িম তুই ওঠ ডান কোলে, দুধ নেই, তবু আয়, মায়ের এক বুকের দুধ তুই খা, আর এক বুকের দুধ আমি খাই। (পৃ ৮৫-৮৬)
স্বামী-সন্তানরা যখন এক অপরকে নিধনে বদ্ধপরিকর তখনো দুই বোন নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকে। নীরবতাই তাদের প্রধান যুদ্ধাস্ত্র। সালেহা রাজাকার স্বামীর মৃতদেহের কাছে আসেনি, মাফ চায়নি বা শেষ বিদায় জানায়নি। অন্যদিকে রাহেলার সামনেই রাজাকার রাহেলিল্লাহ স্বামীকে হত্যা করে। এক হিন্দু বাড়ি পুড়িয়ে দুই ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। জনসমক্ষে মাকে বস্ত্রহীন করে শ্লীলতাহানি করে তার কুমারী মেয়েকে বাড়িতে ধরে এনে বিয়ে করে এবং সবান্ধবে ধর্ষণ করে হত্যা করে। অসহায় রাহেলা তলপেট খামচে ধরে, ঊরুসন্ধি দিয়ে যদি কোনো বিষ উগরে আসে, যে রাস্তা দিয়ে রাহেলিল্লাহর মতো হিংস্র মানবশিশুর জন্ম। সকালে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা কুমারীর মৃতদেহের ঊরুসন্ধিতে রক্তের প্লাবন দেখে রাহেলা নিজের শরীর থেকে একটানে কাপড় ফেলে দিয়ে খোলা বুকের দিকে চেয়ে হিংস্র চোখে বলে, ‘এত বিষ ছিল এই দুই মাংসপিণ্ডে? এত বিষ এত বিষ খেয়েছে এখান থেকে তার ছেলে! এত রক্ত ঝরছে যেখান থেকে এই মেয়ের, তার ঠিক সেই জায়গা থেকেই একদিন রাহেলিল্লাহ নামের এক দানব বেরিয়ে এসেছিল!’ (পৃ ৮৫)
সন্তানের এই পাশবিক রূপ দেখে রাহেলা নিজের মাথার চুল ছিঁড়ে তার অসহ্য বেদনার প্রকাশ ঘটায়, নিজের অক্ষমতাকে ধিক্কার জানানোর সাহসও তার নেই। ধর্ষিত মেয়েটি অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মুক্তি পায়; কিন্তু দুই বোনের এই মুক্তিটুকু পর্যন্ত মেলে না। ছয়জন রাজাকার দ্বারা তারা পালাক্রমে ধর্ষিত হয়। ধর্ষকদের মধ্যে রাহেলিল্লাহর বন্ধুরাও ছিল। তাদের নিরাপত্তার জন্য দূরে রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে ছিল ছেলে রাহেলিল্লাহ। মা রাহেলা যখন জানতে পারে, তখন থেকেই সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানে। এমনকি রাহেলিল্লাহর মৃতদেহ যেদিন ভাঙা সেতুর ওপর পড়ে ছিল সেদিনও সন্তানকে শেষ বিদায় জানাতে যায় না। সফোক্লিসের ইডিপাসের মতো মাতৃগর্ভে সরাসরি বীর্যদানের অপরাধ করেনি রাহেলিল্লাহ; কিন্তু সে যা করেছে তা তার চেয়েও জঘন্য ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। তবে ইডিপাসের মতো পিতৃহত্যার নিষ্ঠুর অপরাধে সে অপরাধী। ইডিপাস পিতাকে হত্যা করে অজ্ঞাতে আর রাহেলিল্লাহ করে সজ্ঞানে। ইডিপাসের মতো রাহেলিল্লাহকে অন্ধ হয়ে নির্বাসনে যেতে হয়নি। মেহেরপুরের ভাঙা সেতুর ওপর তার লাশ পড়েছিল, সৎকার হয়নি। মা হিসেবে রাহেলার বেদনার ভার রানি জোকাস্টার চেয়েও কম স্পর্শ করেনি তাকে। অপরদিকে আরেক মা সালেহা মেহেরপুর হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা ছেলে সাহেবালির মৃতদেহের কাছে বসে রাত পার করে নীরবে; কিন্তু একবারের জন্যও ছেলের মরামুখ দেখেনি। ভোরের আলোয় মুখের চাদর সরিয়ে শুধু একবার ছেলের লাশ দেখে। তারপর মুখ ঢেকে দিয়ে হাসপাতালে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে আসে। এমনকি ছেলের কবর কোথায় হবে সে-ব্যাপারেও জানতে চায়নি। এ-রকম নির্মম কাহিনির কোনো গল্প বাংলা 888sport live footballে আছে কি না আমার সন্দেহ। এ-গল্প সম্পর্কে অশ্রুকুমার সিকদারের মন্তব্য 888sport app download for androidীয় :
এইভাবে হয়তো শুরু হবে 888sport apps নামক সবুজ শস্যক্ষেত্র বিছানো এক নকশিকাঁথা রচনার কাজ। দুই ভিন্ন পন্থার অনুগামীদের মধ্যে অনেক রক্তক্ষয়, মারামারি কাটাকাটি খুনোখুনি হয়েছে। ইসলামি মৌলবাদ আর অসাম্প্রদায়িক বাঙালি মানসিকতার মধ্যে লড়াই চলছেই চলছে 888sport appsে। এই লড়াই বন্ধ হোক, সুস্থ মানবিকতাবোধের উদ্বোধন ঘটুক, এবার শুরু হোক স্বদেশ নামের কাঁথা তৈরির কাজ। সে কাজ কি মেয়েদের হাতেই শুরু হবে? 888sport appsের রাজনীতিতে অগ্রণী ভূমিকায় দুই 888sport promo code আছে – একজন পিতৃহীন, অন্যজন স্বামীহারা – দুজনেই হিংসার শিকার। এই দুই 888sport promo codeর চারটি হাত মিলিত হোক 888sport apps নামক কাঁথা রচনার কাজে – এমন আশাময় ইঙ্গিত হয়তো নিহিত থাকে, হয়তো না-ও থাকে, হাসানের এই অসামান্য উপাখ্যানের অন্তিমে। না থাকলে কিছু আসে যায় না। গল্পের শেষে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকি, চার মিলিত হাতে ছন্দোময় রূপময় বোনা শুরু হোক।
হাসান আজিজুল হক ‘বিধবাদের কথা’ গল্পে মানবিকতা ও ন্যায়পরায়ণতাকে সত্যের আলোকে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেন 888sport live chatিতভাবে। হাসানের গল্পবিশ্বে এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী গল্প। বাংলা 888sport live footballে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তির এ-ধরনের গল্পের জন্য হাসান আজিজুল হক 888sport app download for androidীয় হয়ে থাকবেন।
সহায়ক গ্রন্থ ও পত্রিকা
১. সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য, লেখক সংঘ প্রকাশনী, 888sport app, ১৯৬৪।
২. আত্মজা ও একটি করবী গাছ, মুক্তধারা, 888sport app, ১৯৬৭।
৩. জীবন ঘষে আগুন, খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানী, 888sport app, ১৯৭৩।
৪. নামহীন গ্রোত্রহীন, 888sport live football প্রকাশ, 888sport app, ১৯৭৫।
৫. রোদে যাবো, জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন, 888sport app, ১৯৯৫।
৬. বিধবাদের কথা ও 888sport app গল্প, সময়, 888sport app, ২০০৭।
৭. ‘888sport appsের ছোটগল্পে মুক্তিযুদ্ধ’, মাহবুবুল হক, কালি ও কলম, মার্চ ২০১৬, 888sport app।
৮. ‘স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা 888sport live footballের রূপান্তর : বিষয় ও প্রকরণ, প্রসঙ্গ ছোটগল্প’, আহমদ কবির, 888sport cricket BPL rateের 888sport live-৮৮, বাংলা একাডেমি, 888sport app।
৯. ‘হাসান আজিজুল হকের গল্প : মুক্তিযুদ্ধ ও মানুষ’, সরিফা সালোয়া ডিনা, উত্তরাধিকার, বাংলা একাডেমি, জানুয়ারি-মার্চ 888sport free bet, ১৯৯৯, 888sport app।
১০.‘হাসান আজিজুল হক : ফিরে দেখা’, সনৎকুমার সাহা, বিজ্ঞাপন পর্ব, হাসান আজিজুল হক 888sport free bet, শ্রাবণ ১৩৯৫, কলকাতা।
১১. ‘ছোটগল্পের 888sport live chatরূপ : হাসানের আত্মজা …’, বিশ্বজিৎ ঘোষ, গল্পকথা, হাসান আজিজুল হক 888sport free bet, ফেব্রুয়ারি ২০১২, রাজশাহী।
১২. ‘হাসান ভাই : আমার যে ডাকতে ভাল লাগে’, দেবেশ রায়, গল্পকথা, হাসান আজিজুল হক 888sport free bet, ফেব্রুয়ারি ২০১২, রাজশাহী।
১৩. ‘হাসান আজিজুল হকের গল্প : নির্মিত জীবনের কলকব্জা’, চঞ্চল কুমার বোস, গল্পকথা, হাসান আজিজুল হক 888sport free bet, ফেব্রুয়ারি ২০১২, রাজশাহী।
১৪. ‘মা-মেয়ের সংসার’, ইরাবান বসুরায়, গল্পকথা, হাসান আজিজুল হক 888sport free bet, ফেব্রুয়ারি ২০১২, রাজশাহী।
১৫. গল্পকার হাসান আজিজুল হক, আবু জাফর, ললিত প্রিন্টার্স, জানুয়ারি ১৯৮৮, 888sport app।
১৬. ‘হাসান আজিজুল হক : রাঢ় বঙ্গের উত্তরাধিকার’, মহীবুল আজিজ, অচিরা, আশ্বিন ১৩৯৫, চট্টগ্রাম।
১৭. হাসান আজিজুল হকের কথা888sport live football : বিষয়বিন্যাস ও নির্মাণকৌশল, চন্দন আনোয়ার, ২০১৫, বাংলা একাডেমি, 888sport app।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.