কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অর্থনীতি ও সমাজতত্ত্বে এম এ, ভারত সরকারের অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কিন্তু তাঁর এক পরিচয় স্বনামধন্য ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পুত্র বলে, অপর পরিচয় উঁচুদরের সংগীতজ্ঞ হিসেবে। তিনি একাধারে সংগীত888sport live chatী, সংগীতশিক্ষক, সংগীতসমালোচক এবং উত্তর-ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতসম্পর্কিত মূল্যবান গ্রন্থপ্রণেতা। তাঁর কুদ্রত্ রঙ্গিবিরঙ্গি যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা মজলিশি ঢঙে লেখা সাংগীতিক ঘরানার চমৎকার ইতিবৃত্ত পেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন। কুমারপ্রসাদের ম্যহ্ফিল, মজলিশ, দিশি গান ও বিলিতি খেলা এবং খেয়াল ও হিন্দুস্থানি সংগীতের অবক্ষয় সমাদৃত রচনা। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম ও 888sport app সফরে এসেছিলেন। সে-সময়ে এই সাক্ষাৎকারটি গৃহীত হয়। গোলাম মুস্তাফার সঙ্গে কিছুক্ষণ ছিলেন আবুল মোমেন। ৭৭ বছর বয়সী কুমারপ্রসাদের অসাধারণ বাচনভঙ্গি, পরিশীলিত রুচিবোধ এবং অকুণ্ঠ স্পষ্টভাষণে সমৃদ্ধ এই আলাপন।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : গোলাম মুস্তাফাগো
লাম মুস্তাফা : আপনি আপনার বাবার সূত্রে সংগীতের পরিবেশ এবং ভারতীয় বিদ্বৎসমাজের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। সংগীতে আপনার ঝোঁকটা তো উত্তরাধিকার সূত্রেই?
কুমারপ্রসাদ : সংগীতে ঝোঁকটা আমার এমনিতে ছোটবেলায় ছিল না। আট বছর বয়সে মালবিকা কাননের বাবা রবীন্দ্রলাল রায়ের কাছে আমার প্রথম হাতেখড়ি হয়। সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি-সা, দুটো লক্ষণ-গীত, একটা ধামার – এসব আর কি! তখন আমার ওসব তেমন ভালো লাগত না। আট-নয় বছর বয়সে – চতুর্দিকে তখন কে এল সায়গল, কাননবালা, পঙ্কজ মল্লিক এঁদের গান বাজত – গানগুলো তখন ভালো লাগত, গলাও এঁদের ভালো ছিল। তখন তো প্লেব্যাকের ব্যবস্থা ছিল না। যাঁরা গান করতেন তাঁরাই অভিনয় করতেন। ষোলো বছর বয়স অবধি উচ্চাঙ্গ সংগীতে আমার কোনো আগ্রহ ছিল না। আমি খুব তাড়াতাড়ি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিই – তেরো বছর বয়সে। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে লখনউ চলে যাই। বাবা আমাকে কলকাতা পাঠিয়েছিলেন বাংলা আর সংস্কৃত ভালো করে শেখার জন্যে। লখনউয়ে ফিরে গিয়ে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময়ে কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়। তাদের গান-বাজনার শখ ছিল। তাদের পাল্লায় পড়ে আবার কিছুটা আগ্রহ হলো। এসময়ে রবীন্দ্রলাল রায়ের একখানা বই হাতে এলো। রাগনির্ণয় – সেটা ভাতখাণ্ডেজীর সধফব বধংু। আমার বিদ্যা হচ্ছে তখন সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি-সা। দেখলাম সা-রে-গা – মা বাদ দিয়ে পা-তে গেলে – সা-রে-গা-পা-ধা-সা – সা-ধা-পা-গা-রে-সা … বাহ, এটা
তো ভূপালি হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে কী – বাবা তো সবসময়ে গান, সারাক্ষণ রেকর্ড বাজাতেন, চারপাশে ছবির বই ছড়িয়ে রাখতেন – এগুলো চেতনামূলে ঢুকে hzbernate করছিল, এতদিনে চাড়া দিতে শুরু করল। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, বছরখানেকের মধ্যে আমি অন্তত পঞ্চাশটা রাগের সঙ্গে পরিচিত হয়ে গেলাম। নিজে নিজেই গান বানাতাম। তার অনেক কথারই মানে হতো না। যেগুলোর মানে হতো সেগুলো ছিল দুর্বল, হয়ত হাস্যকরও। কিন্তু তাতে কিছু আসত-যেত না, সেগুলোর একটা বাঁধুনি ছিল। এই সময়ে মওলানা আবদুর রহমান আখতার বলে একজন গাইয়ে – বেশ ভালো গাইয়ে – বাবার কাছে এসেছিলেন। তিনি আমাকে শেখাতে চাইলেন। ছমাস তিনি শিখিয়েছিলেন। তখন আমার মনে হয়েছিল যে, আমি তাঁর চেয়ে খারাপ গাই না। তবে স্বভাবতই তাঁর গলা অনেক সাধা-গলা ছিল। সেই সময়ে আমি গান-পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। কলকাতায় বেতার জগৎ নামে একটা কাগজ ছিল। তার ইংরেজি সংস্করণ ছিল Indian Listener, লখনউয়ে Indian Listener নিয়ে একেবারে টিক মার্ক করে করে আমি যত গায়ক ছিলেন – প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণির – সবারই গান শুনতাম। তারপরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার বন্ধু জুটল – মোহাম্মদ হুসেন । ওর সংগীতে বেশ আগ্রহ ছিল।
গোলাম মুস্তাফা : লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে?
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে। মোহাম্মদ হুসেনের ওখানে যাওয়া, মুশতাক হুসেন খাঁর সঙ্গে পরিচিত হওয়া, তাঁর কাছে গাণ্ডা বেঁধে গান শুরু করা – এসব হলো। এর মধ্যে একদিন বাবা ডেকে বললেন, দেখো, তুমি এত গান-বাজনা নিয়ে জড়িয়ে পড়ছ, সামনে তোমার এম.এ. পরীক্ষা…।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার বিষয় কী ছিল?
কুমারপ্রসাদ : Economics,, আমি চঁৎব Economics,-এর তবে বি.এ. পাস কোর্স অবধি আমার সংস্কৃত ছিল, ইংরেজি তো ছিলই। আমাদের সময়ে বি.এ. অনার্স ছিল তিন বছরের। ঊপড়হড়সরপং-এ প্রথমে, তারপর ঝড়পরড়ষড়মু-তে দ্বিতীয় এম.এ. করলাম। লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সে যাবার কথা ছিল, কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায়, জাহাজের টিকেট পাওয়া গেল না।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি পরে ওস্তাদ আতা খাঁ এবং ওস্তাদ লতাফৎ হোসেন খাঁর কাছে তালিম নিয়েছেন?
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ।
গোলাম মুস্তাফা : ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁর কাছেও তো আপনার তালিম হয়েছে?
কুমারপ্রসাদ : ওঁর কাছে সরাসরি তালিমের সুযোগ আমি তেমন পাইনি।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার মজলিশ বইতে আছে – লখনউর রিফাই আম ক্লাবের আড্ডায় আপনার একজন সুহৃদ আপনার সম্পর্কে বলেছেন যে, আপনি ফৈয়াজ খাঁর পদধূলি ছেঁকেছেন দশ বছর ধরে। তাতে মনে হচ্ছিল ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁর কাছেও আপনার শিক্ষালাভ হয়েছিল। ওঁর সঙ্গে কি আপনার দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি?
কুমারপ্রসাদ : দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছিল, ছোটবেলায়। ওঁর কাছে আমি একটা রাগের তালিম পেয়েছিলাম – জয়-জয়ন্তী।
গোলাম মুস্তাফা : লখনউতে থাকার ফলে উচ্চাঙ্গ সংগীতের সঙ্গে আপনার পরিচিতি কি সহজতর হয়েছিল?
কুমারপ্রসাদ : শুধু ওখানে থাকার কারণে নয়, আমার বাড়ির পরিবেশ – আমাদের বাড়িতে বড় বড় ওস্তাদদের যাতায়াত – এসবও আমাকে সাহায্য করেছে। শুধু গানের ওস্তাদ তো নন, আমার বাবার বন্ধুরাও অনেকে আসতেন। তাঁর কারণে অনেক নামি-দামি মানুষের সংসর্গ আমি পেয়েছি। পরিচয়ের লেখকরা, প্রমথ চৌধুরী, সত্যেন বোস আরো অনেকের সাহচর্য আমি পেয়েছি। তাছাড়া আমার কাকাও 888sport live footballিক ছিলেন।
গোলাম মুস্তাফা : বিমলাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়…
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, বিমলাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। সাধারণ বাড়ির তুলনায় আমাদের বাড়ির আবহাওয়াটা একটু অন্যরকম ছিল। সেটা খানিকটা আমার মধ্যে ঢোকে। আমাদের বাড়িতে সবাই অ্যাকাডেমিক প্রফেশনে গেছেন। আমি ছাড়া। আমিই একমাত্র attitude । উচ্চাঙ্গ সংগীতের সঙ্গে আমার যোগসূত্র অবশ্য সেই অর্থে কোনোদিনই ছিন্ন হয়নি। শুধু আমার আগ্রহ ছিল না – আট থেকে ষোলো বছর বয়স অবধি। বাড়িতে রেকর্ড বাজত। সেগুলো শুনেছি। বাবার সঙ্গে জলসায় গেছি। কলকাতায় গিয়ে সত্যজিৎ রায়কে বন্ধু হিসেবে পেলাম। ওঁর কারণে পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে আমার যোগাযোগটা বেশ ভালো হয়।
গোলাম মুস্তাফা : দায়িত্বপূর্ণ চাকরি করতেন বলে সংগীত নিয়ে সর্বক্ষণ মেতে থাকা হয়ত আপনার পক্ষে সবসময়ে সম্ভব হয়নি।
কুমারপ্রসাদ : না, সেটা হয়নি। হয়ত অফিসে গিয়ে শুনলাম মন্ত্রী ডেকে পাঠিয়েছেন। তড়িঘড়ি বাড়ি এলাম। আমার স্ত্রী ব্যাগ গুছিয়ে দিলেন। পরের দিনই দিল্লি থেকে ফিরে, বাড়িতে এসে কাপড়টা পালটেই, গাইতে চলে গেলাম। এরকমও হয়েছে।
গোলাম মুস্তাফা : একটা ধারণা তো আছে যে, উচ্চাঙ্গ সংগীতের জন্যে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে ওস্তাদের কাছে বছরের পর বছর তালিম নিতে হবে। আপনি নিজের মেধা ও বাড়ির পরিবেশকে কাজে লাগিয়েছেন। এ দুটোর মধ্যে একটা পার্থক্য নিশ্চয়ই আছে?
কুমারপ্রসাদ : পার্থক্য তো আছেই। তবে সকলের ক্ষেত্রে সব জিনিস তো প্রযোজ্য নয়। এ এমনই জিনিস যে এর পেছনে লেগে থাকতে হয় এবং Ges to the exclusion of everzthing else এটা করতে হয়। আমাদের classical music is a verz jealous mistress । অন্যকিছুর মধ্যে যদি আপনি যান, যেমন এখন দেখছি media publicitz -র মধ্যে যাচ্ছেন – তাঁদের তো তেমন উন্নতি হচ্ছে না। লক্ষ্মী-সরস্বতীর মধ্যে বিবাদ সবসময়েই আছে।
গোলাম মুস্তাফা : ইদানীং উচ্চাঙ্গ সংগীত 888sport live chatীদের মধ্যে কেউ কেউ পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে ভঁংরড়হ-এর কথা বলছেন, করছেনও। এটা কি আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়?
কুমারপ্রসাদ : না, আমার কাছে এটা গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। পাউরুটি দিয়ে শুক্ত খেতে ভালো লাগে না। এক-আধটা শুনেছি। ভালো লাগেনি। যাদের হাতে হচ্ছে তারা কেউ জিনিয়াস নন। রবিশঙ্কর একটা সময়ে খানিকটা চেষ্টা করেছিলেন। তিনিই যখন ফলপ্রসূ হননি, তখন এ নিয়ে আর ভাববার কী আছে? একদিকে তবলা বাজছে, একদিকে জ্যাজ হচ্ছে – এগুলো হুজুগ। এ সমস্ত ব্যাপারে আমার attitude অত্যন্ত conservative । আমাদের সংগীতের অধিকাংশই বিদ্যা। মাল-মশলা না থাকলে সেটা হয় না। সেটা অর্জন করতে একটা জীবন কেটে যায়। আর যখন ভালো গান কাকে বলে তা বোঝার সময় হয়, তখন গলা চলে যায়, শরীর কাজ করে না। তাঁরা অত্যন্ত ভাগ্যবান, যাঁরা অনেক আগে এটা বুঝতে পারেন। আমি তো সে-অর্থে প্রফেশনাল গাইয়ে নই। প্রফেশনাল অর্থ এই নয় যে টাকা নিয়ে গাওয়া…
গোলাম মুস্তাফা : আপনি excellence -এর কথা বোঝাতে চাইছেন তো?
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ। সবকিছু ছেড়ে ধ্যান-জ্ঞান তো করিনি। তবে ওটা করা উচিত। বিশেষ করে গোড়ার দিকে। না খেটে তো কিছু হয় না। ভালো ব্যারিস্টার-উকিল হতে হলে আপনাকে ল’ পাশ করতে হবে, জুনিয়র হিসেবে থাকতে হবে, ব্রিফ তৈরি করতে হবে, রাত জেগে ব্রিফ পড়তে হবে। যেখানে কথা বেচে লোকে খায়, সেই প্রফেশনও ওইরকম। ডাক্তারিতে বলুন, সবখানেতেই তাই। শুধু গানের ব্যাপারে উড়িয়ে নিয়ে যাবো, এতো হয় না।
গোলাম মুস্তাফা : ওকালতির ব্যাপারটা একটা প্রশিক্ষণের ব্যাপার। কিন্তু গানের ব্যাপারে তো ফবফরপধঃরড়হ দরকার, রেয়াজ করতে হয় নিয়মিত।
কুমারপ্রসাদ : অনেক প্রফেশনেই তাই। dedication ছাড়া তো বড় ডাক্তার হয় না। এগুলো হয়ত identical নয়, কিন্তু comparable ।
গোলাম মুস্তাফা : এক্ষেত্রে বোধহয় শুধু প্রশিক্ষণে কাজ হয় না, খানিকটা intuitive হতে হয়।
কুমারপ্রসাদ : এখানে আমার ব্যাপারটা বলতে চাই না। যে-কোনো কারণেই হোক, উত্তরাধিকারের কারণেই হোক বা অন্য কোনো কারণে, আমার পধংব-টা একটু out of the order। এ কারণেই আমি একটা পর্যায় পর্যন্ত উঠতে পেরেছি, ধরুন national level অবধি। কিন্তু একেবারেই top -এ গিয়ে তো বসতে পারিনি। সেটা পারিনি কেন? এই পাঁচরকম কারণেই পারিনি। ওটা সবকিছু ছেড়ে করতে হয়।
আবুল মোমেন : শ্রোতার ক্ষেত্রে এটা কীভাবে হবে? গাইয়ে না হয় সবকিছু ছেড়ে দিয়ে করবেন। শ্রোতারা কীভাবে নিজেদের তৈরি করবেন?
কুমারপ্রসাদ : শ্রোতাদের দোষ দেওয়ার আগে আমি সংগঠকদের দোষ দেবো, 888sport live chatীদের দোষ দেবো। আমাদের সংগীতের ব্যাপারটা কিরকম জানেন? ভেতরে না ঢুকলে এর রস গ্রহণ করা যায় না। ভেতরে প্রবেশ করে যে-রসগ্রহণ করা যায়, superficially সেটা করা যায় না। ক্রিকেটের ব্যাপারেই ধরুন না। ব্যাট-বল হাতে মাঠে না নামলে এর সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলো ধরা যায় না।
আবুল মোমেন : conceptual idea দিয়ে তো এটা হবে না।
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ। এটা তো একটা performing art
গোলাম মুস্তাফা : এক আলোচনায় আপনি বলেছেন, আমাদের শাস্ত্রীয় সংগীতটা elitist।
কুমারপ্রসাদ : সেটা স্বীকার করে নিতে বাধা কী?
গোলাম মুস্তাফা : কিন্তু শ্রোতা তৈরি করা তো একটা কঠিন কাজ। শ্রোতাদের ভূমিকা তো এই ব্যাপারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এমন তো নয় যে শুধু 888sport live chatী বা সংগঠকরা এটা করতে পারেন। শ্রোতার দায়িত্বও তো বিরাট।
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, বিরাট ব্যাপার।
গোলাম মুস্তাফা : শ্রোতাদের কাছে এই সংগীতকে সুলভ করাও তো জরুরি। এক সময়ে আকাশবাণী সেটা করেছিল।
কুমারপ্রসাদ : এই ব্যাপারে All India Radio এক সময়ে বড় সার্ভিস দিয়েছে। সেটা তো non profit-making bodz ছিল। এখন আর সেসব নেই।
গোলাম মুস্তাফা : ওদের ধৎপযরবাবং থেকে তো কিছু পুরানো সংগীত তারা বের করছে।
কুমারপ্রসাদ : করেছে। এই government -এসে m privatisation -এর ধুয়া তুলে দূরদর্শন আর আকাশবাণীর গলায় দুটো বকল্স্ পরিয়ে দিয়ে বলছে, যাও তোমরা চরে খাও। এইজন্যে তারা এখন sponsor ধরছে। সেরকম গান-বাজনাই তারা প্রাধান্য দিচ্ছেন যাতে sponsor -রা টাকা দিচ্ছে। ইংরেজ আমলে তারা talents spotter দিয়ে খুঁজে খুঁজে 888sport live chatীদের বের করতেন। এই যে গাঙ্গুবাই হঙ্গল, মল্লিকার্জুন মনসুর – এঁদের তো এইচ.এম.ভির talents spotter -রা খুঁজে বের করেছেন।
গোলাম মুস্তাফা : এখন উচ্চাঙ্গ সংগীত 888sport live chatীদেরও নানা ধরনের প্রলোভন তাড়া করছে। অনেক প্রতিকূলতা আছে তাঁদের। এইসব সত্ত্বেও আপনার বিবেচনায় কারা এখনো এই সংগীতের শুদ্ধতা বজায় রেখে চলেছেন?
কুমারপ্রসাদ : দেখুন, সবার আগে পুরানোদের নাম করতে হয়। গাঙ্গুবাই হঙ্গল, ভীমসেন যোশী – এঁরা যে তালিমটা পেয়েছেন সেটাকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। তার সঙ্গে individual talent -এর ব্যাপার তো আছেই। কিন্তু ঃৎধফরঃরড়হধষ সঁংরপ-টাকে তাঁরা দুমড়ে মুচড়ে অন্য কিছু-একটা দাঁড় করাবার চেষ্টা করেননি। আর ইদানীংকালের মধ্যে আমার সবচেয়ে ভালো লাগছে উল্লাস কশাঙ্করের গান। তাঁর কাছে তালিম আছে, ভালো তালিম আছে। কুদরতি প্রতিভা ও গলা আছে। সে মেহনত করে, মনটা উদার এবং সবচেয়ে বড় কথা সে মানুষটা খুব ভালো।
গোলাম মুস্তাফা : ইদানীং যাঁরা কলকাতায় আছেন তাঁদের মধ্যে ?
কুমারপ্রসাদ : রাশিদ আছে। রাশিদের স্বরপ্রয়োগ এবং গলা খুবই ভালো। স্বরপ্রয়োগ অসাধারণ। কিন্তু রাশিদের তালিম আধা-খ্যাঁচড়া রয়ে গেছে। পরে ও আর কার কাছে শিখেছে? তবে ওর এই দুটো জিনিস আমি স্বীকার করব যে আমার খুবই ভালো লাগে।
গোলাম মুস্তাফা : অজয় চক্রবর্তী?
কুমারপ্রসাদ : নাম করে বললে কী বলব? অজয় চক্রবর্তী খুব মেহনত
করেছে এককালে। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে মুনাওয়ার আলী খাঁর কাছে কিছুদিন গিয়েছিল। কিন্তু যদি কোনো 888sport live chatী মনে করে যে তার শেখা শেষ হয়ে গেছে – কোনো বিষয়েই যদি কেউ মনে করে যে শেখার আর কিছু নেই, তাহলে পরে তা certainlz access a barrier to further progress তবে অজয় চক্রবর্তী বাঙালিদের মধ্যে অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী সে-বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
গোলাম মুস্তাফা : মহিলাদের মধ্যে?
কুমারপ্রসাদ : সত্যি কথা বলতে কী এমন কিছু কেউ করে দেখাচ্ছে না। কিশোরী আননকরের গান খুব ভালো লাগত একসময়ে। কিন্তু সে তো পাগল। সে ফিল্মি বেহাগ গাইছে, ফিল্মি কেদারা গাইছে, ফিল্মি ইমন গাইছে।
গোলাম মুস্তাফা : জনপ্রিয়তার জন্যে?
কুমারপ্রসাদ : না, জনপ্রিয়তার জন্যে ও এটা করছে না। ওর কীরকম যেন একটা অদ্ভুত bollzwood szndrome আছে। ওর তালিম ছিল, ঠিক রাস্তায় চললে ওর তুলনা হয় না।
আমার বক্তব্য হচ্ছে তালিম জিনিসটা একদিনে শেষ হয়ে যায় না। ওস্তাদের কাছে বসে শুধু শোনা বা শেখাই তালিম নয়। ভালো গান শোনা, পুরানো গান শোনা, এ নিয়ে বিশ্লেষণ করা, সৎসঙ্গ করা – এসবই তালিমের অন্তর্গত। তবে e analztical power থাকলে শেখাটা তাড়াতাড়ি হয়।
গোলাম মুস্তাফা : আমাদের এখানে শোনার সুযোগ খুবই কম। বছরে একটা জলসা করাও কঠিন। ওখানেও কি শোনার সুযোগ আগের চেয়ে কমে যাচ্ছে না?
কুমারপ্রসাদ : কলকাতায় বড় ধরনের জলসা হয় বছরে তিনটা। একটা করে আই.টি.সি, একটা ডোভার লেইন কনফারেন্স, আর আমি যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছি সেই রাজ্য সংগীত একাডেমী – তারা একটা করে। কিন্তু আমাদের ফান্ডস খুবই কম। সরকার পয়সা দিতে পারে না, বা পারলেও দেয় না। যা দেয় তাতে মোটামুটি একটা অনুষ্ঠান করা যায়। যারা একটু uncommon, উঠতি artiste -দের মধ্যে যারা ভালো, আমরা তাদের উপস্থাপন করার চেষ্টা করি।
গোলাম মুস্তাফা : আগে যাঁরা সংগীতের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, রাজা-মহারাজারা ওঁদের এক ধরনের আন্তরিকতা ছিল, কিন্তু এখনকার পৃষ্ঠপোষকরা…
কুমারপ্রসাদ : এঁরা সবাই commercial ।
গোলাম মুস্তাফা : এই কারণে উচ্চাঙ্গ সংগীতের প্রসার ও মানোন্নয়ন – এই ঢ়ঁৎঢ়ড়ংব তো ফবভবধঃবফ হয়ে যাচ্ছে।
কুমারপ্রসাদ : alreadz হয়ে গেছে। প্রসার হয়েছে quantitz হচ্ছে at the cost of qualitz । আর আজকাল তথাকথিত ডিপ্লোমা-ডিগ্রি নিয়ে জেলায় জেলায় যাঁরা সংগীত শেখাচ্ছেন তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে আমার কেন, প্রায় সকলেরই সন্দেহ আছে। তার ফলে j blind leading the blind হচ্ছে।
আবুল মোমেন : এখন বিশ্ববিদ্যালয়-পর্যায়ে সংগীতশিক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে, তাতে কি কোনো ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে?
কুমারপ্রসাদ : দেখুন পশ্চিমবঙ্গে তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সঁংরপ পড়ানো হয়। রবীন্দ্রভারতী, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বভারতীতে সংগীতে মাস্টার্স করা যায়। আজকে চল্লিশ বছরে একজনও 888sport live chatী সেখান থেকে বেরিয়েছে কি? একজনও সংগীতবিদ বেরিয়েছে? আপনি ভাবুন দেখি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চল্লিশ বছরে একজনও scholar বেরুল না, প্রেসিডেন্সি থেকে কোনো পণ্ডিত বেরুল না – এ রকম অবস্থা ভাবতে পারেন? 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও যদি কেউ না বেরোয়…
গোলাম মুস্তাফা : এর কারণটা কী? সংগীত একটা জীবনব্যাপী সাধনার ব্যাপার। কোনোভাবে পরীক্ষা পাশ করার ব্যাপার নয়। শিক্ষাদানের পদ্ধতিগত ত্রুটিই কি কারণ?
কুমারপ্রসাদ : তাতো বটেই। রবীন্দ্রভারতীর ব্যাপারে আমি যা জানি সে তো হাস্যকর। ষাট মিনিটের একটা ক্লাসে হয়ত কুড়ি মিনিট ক্লাস হলো। সবাই মিলে কোরাসে একটা বন্দিশ করল, পরীক্ষাতে তাত্ত্বিক বিষয়ের ওপরে জোর দেওয়া হলো। এটা যে একটা performing art সে-বিষয়ে কারো কোনো জ্ঞান নেই। যাঁরা শেখাচ্ছেন, তাঁদেরও জানা ওই রকম। ওটা একটা উচ্চাঙ্গ সংগীতের গোরস্তান।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি বলছেন তত্ত্বের উপর জোর বেশি।
কুমারপ্রসাদ : এসব থিওরির কোনো মানে হয় না। আমি কালকেই বলছিলাম ভরতমুণি, শার্ঙ্গদেব পড়ে কী হবে যদি এটা পারফর্মিং আর্ট হয়। খানিকটা মুখস্থ করানো হচ্ছে – অংশ কাকে বলে, গ্রহ কাকে বলে, ন্যাস স্বর কাকে বলে।
গোলাম মুস্তাফা : ভালো করে থিওরি শিখতে পারলেও তো কিছুটা কাজের কাজ হয়।
কুমারপ্রসাদ : দেখুন, performance আগে এসেছে, শাস্ত্র পরে। শাস্ত্র যদি totallz unrelated to the performance হয়, তাহলে তো সেই শাস্ত্রের কোনো মানে হয় না। আজ থেকে পাঁচশ বছর আগে ভূপালির নাম ডম্বক্রি ছিল কী ছিল না জেনে কী হবে?
আবুল মোমেন : যদি কথাটা এভাবে বলি, সংগীতরা তিন বোন গীত, বাদ্য এবং নৃত্য – এর মধ্যে কোনটার গুরুত্ব বেশি?
কুমারপ্রসাদ : কোনোটারই গুরুত্ব কম নয়। ভালোই হয়েছে, কথাটা মনে করিয়ে দিয়েছেন। সেদিন লয় নিয়ে বলছিলাম। কথাটা কী ছিল? নৃত্য, বাদ্য, গীত – এই তিনে মিলে সংগীত। নৃত্যের মানে হচ্ছে ছন্দ। ছন্দের ব্যাপারে পণ্ডিতরা কেন এত জোর দিতেন? লয় এবং ছন্দ হলো গান-বাজনার প্রাণ। কারণ সবকিছু লয়ে বদ্ধ। শিথিল কাঠামো দিয়ে গান-বাজনা হয় না। এখন যেটা হচ্ছে – কেউ হয়ত ভাতখাণ্ডেজীর বই খুলে একটা আরোহ-অবরোহ দেখে নিল, তারপর অ্যা অ্যা করে তান করল, বন্দিশটা কোনো রকমে দায়সারা গোছের করল। অন্তরা অনেকে করে না। বললে বলে আমীর খাঁ সাহেব গাইতেন না। তার মানে, তান না করলে তুমিও আমীর খাঁ সাহেব হয়ে গেলে?
সংগীতে ঁহরঃু-র একটা ভূমিকা আছে। রবীন্দ্রনাথ একবার আমার বাবাকে চিঠিতে বলেছিলেন, দেখো এই যে ঁহরঃু-র ব্যাপারটা আমরা সবখানেতে পাই। ধ্রুপদে পাই, কীর্তনে পাই। খেয়ালে এটা নেই। অবশ্য তখনকার জন্যে কথাটা লাগসই ছিল না। কারণ অনেক বড় বড় ওস্তাদ তখন খেয়ালে এসে গেছেন। খেয়ালে এই structural unitz গড়ে ওঠে বন্দিশকে কেন্দ্র করে। ক্রিকেটের ভাষায় এই বন্দিশকে ঘিরেই একটা ইনিংস build up করা যায়।
গোলাম মুস্তাফা : ওস্তাদ হাফিজ আলী খাঁকে নিয়ে একটা গল্প আছে। তিনি ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদের সঙ্গে একবার দেখা করেছিলেন। রাজেন্দ্রপ্রসাদ খুব বিনয়ের সঙ্গে ওস্তাদ হাফিজ আলী খাঁর কাছে জানতে চাইলেন, ‘ওস্তাদজী, ম্যায় আপকা লিয়ে কিয়া কর সেকতা
হুঁ?’
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, ব্যাপারটা আমিও লিখেছিলাম।
গোলাম মুস্তাফা : ওস্তাদ হাফিজ আলী খাঁ বলেছিলেন, ‘সদর, এই যে দরবারি রাগটা লোকে ভুল গাইছে আপনি এটা বন্ধ করে দিন।’ দরবারি নিয়েই তো বলেছিলেন তিনি?
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, দরবারি। তিনি বলেছিলেন, ‘সদর, আপনি একটা ফরমান জারি করে দিন। দরবারিতে নানাজন ভিন্ন ভিন্নভাবে গান্ধার লাগাচ্ছে। আপনি শাহি ফরমান জারি করে এটা বন্ধ করে দিন। কী করে গান্ধার ঠিকমতো লাগাতে হয় সেটা আমি দেখিয়ে দেবো।’ দেখুন, তিনি নিজের জন্য কিন্তু কিছুই চাইলেন না। তখন ছিল age of innocence, এই যে কথাটা বলতে পারলেন, তার মানে তিনি সংগীতে একবারেই নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন।
গোলাম মুস্তাফা : এরকম অনেক রাগেরই তো শুদ্ধরূপ আজকাল হারিয়ে যাচ্ছে।
কুমারপ্রসাদ : দেখুন, রাগের কিছু anatomz আছে, কিছু subsidiarz phrase আছে। সেগুলো না জানলে পরে তো কোনো রাগের Mi anatomz -টা বোঝা যায় না। এতো তালিমের ব্যাপার। এবং বিশ্লেষণের ক্ষমতাও থাকা চাই। এসব না জানা থাকলে তো রাগের রূপ বিকৃত হবেই।
গোলাম মুস্তাফা : রাগের শুদ্ধ রূপ ধরে রাখা এবং শ্রোতাদের সেগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়ার কাজটা কি জরুরি নয়?
কুমারপ্রসাদ : নিশ্চয়ই, কিন্তু কে করবে? যে করবে বা শেখাবে তার যদি তালিম না থাকে, তাহলে তো হবে না। কে আছে এখানে? ওস্তাদরা তো সব পরপারে চলে গেছেন। এখানে তো আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। পাকিস্তানে তো উচ্চাঙ্গ সংগীতের দাফন হয়ে গেছে।
গোলাম মুস্তাফা : তাহলে উচ্চাঙ্গ সংগীতের ভবিষ্যৎ কী?
কুমারপ্রসাদ : খুবই pessimistic, পঞ্চাশ বছর পরে হয়ত আমেরিকায় গিয়ে আবার নতুন করে শিখতে হবে।
গোলাম মুস্তাফা : অনেক সময়ে তো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবনও হয়?
কুমারপ্রসাদ : culture এর যে t rditional stream তার রূপ বদলায়, স্তর বদলায়, এটা একটা অবিচ্ছিন্ন ধারা, এটা মৃত্যুহীন। তবে এটা কী রূপ নেবে, কোন level – settle করবে, সেটা একটা constant issue সমাজ888sport apkীরা সেভাবে দেখবেন। কিন্তু সংগীতের উৎসাহী ছাত্র হিসেবে আমার তো খুব একটা ভালো-লাগার কথা নয়।
গোলাম মুস্তাফা : অনেকে হয়ত মূল কাঠামো থেকে একটু সরে গিয়ে খানিকটা বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু শুদ্ধ রূপটাও তো বজায় রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্যে হলেও তো এটা প্রয়োজন?
কুমারপ্রসাদ : কিন্তু কীভাবে হবে? কে করবে? কোনো institution তো নেই। রবীন্দ্রভারতীতে সংগীত পড়ানো হয়। আমাকে সেখানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাখা হয়েছে, কোন বিষয়ের জন্যে জানেন ? Instrumental music -এর জন্যে। আমি বলছি না যে, আমি একটা পাঁড়-পণ্ডিত। কিন্তু অন্য দশজন লোকের চাইতে তো আমি এই বিষয়ে একটু বেশি জানার চেষ্টা করেছি। আমি আর কী করব? আমার ছাত্র-ছাত্রীদের শেখাচ্ছি। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রতিবছর গড্ডলিকার মতো অনেকে বেরুচ্ছে। কিন্তু সে তো আর…
গোলাম মুস্তাফা : আপনার কি মনে হয়নি, উচ্চাঙ্গ সংগীতের ক্ষেত্রে যন্ত্র-বাদনের গ্রহণযোগ্যতা সাধারণ শ্রোতাদের কাছে একটু বেশি?
কুমারপ্রসাদ : একসময়ে আমাদের দেশে যন্ত্রসংগীতের একটা ঁঢ়ংঁৎমব হয়েছিল। আলাউদ্দীন খাঁ, হাফিজ আলী খাঁ, ইমরাত খাঁ, ইমদাদ খাঁ – এঁদের কল্যাণে কিছু 888sport live chatীর জন্ম হয়েছিল। কিন্তু এরপরে তো ডলার সবাইকে টেনে নিয়ে গেল। এখন তো কেউ আর সাগরেদ তৈরি করছেন না। আলী আকবর খাঁ এই বুড়ো বয়সে – শরীরটা ওঁর ভেঙে গেছে – ছেলে আলমকে শেখানোর চেষ্টা করছেন।
গোলাম মুস্তাফা : আজকাল অনেক বড় ওস্তাদের সন্তানরাও তো জনপ্রিয় সংগীতের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আমজাদ আলী খাঁর ছেলেরা টেলিভিশনে জনপ্রিয় সংগীত উপস্থাপনের দায়িত্ব নিয়েছে। পপ-সংস্কৃতি তাদেরও গ্রাস করছে।
কুমারপ্রসাদ : জনপ্রিয়তার মোহ তো সকলেরই থাকে। কেউ সৎপথে থেকে এটা করতে পারে। কেউ বিচ্যুত হয়। আমজাদ আলী খাঁর ছেলেদের ব্যাপারে আমি তেমন বলতে পারব না। তবে এইটুকু বলতে পারি, আমজাদের অল্প বয়সে ওর বাজনা শুনে আমি যতটা চমৎকৃত হয়েছিলাম, ছেলেদের ব্যাপারে তেমন হতে পারিনি। পপ-সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকছে বলব না, তবে একবার এক সাহেবকে দেখেছি, তাদের মাঝখানে বসে চেলো বাজাচ্ছে।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি মোহের কথা বলছিলেন। আপনার কি মনে হয়নি, এই ব্যাপারে বিলায়েত খাঁ অনেক নির্মোহ, রবিশঙ্করের চাইতে?
কুমারপ্রসাদ : বিলায়েত Luv compromise করেননি। আর রবিশঙ্করও সেই অর্থে compromise করেননি। মাঝখানে ওঁর যে নিন্দে জুটেছিল – ওই কী যেন বলে, ‘বিটলে’রা ওঁর কাছে যাতায়াত করত, জর্জ হ্যারিসন ওঁর কাছে সেতার শিখত, আর উনি আমেরিকায় থাকেন – এই কারণেই। কিন্তু উনি যেটা বাজান তাতে compromise করেন না।
গোলাম মুস্তাফা : দুজনের মধ্যে বিলায়েত খাঁ কি অধিকতর নির্মোহ নন?
কুমারপ্রসাদ : অবশ্যই। যে-বাজনাটা বিলায়েত খাঁ শিখেছেন, যে-বাজনাটা উনি তৈরি করেছেন, যে-বাজনায় ওঁর ব্যক্তিগত অবদান আছে, সেটা একেবারেই traditional; সেই অর্থে রবিশঙ্করও। রবিশঙ্কর ও আলী আকবর খাঁ অনেক বেশি পরীক্ষণশীল হলেও তাঁরা ঐতিহ্য থেকে
দূরে সরে যাননি। রবিশঙ্কর যে impression নিজের সম্পর্কে তৈরি করেছেন, তার কারণ হলো ওঁদের পরিবারের মধ্যেই একটা showmanship আছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে গেলে ওরকম হয়ে যায়। আলাউদ্দীন খাঁর যাঁরা শিষ্য-শিষ্যা ছিলেন – নিখিল ব্যানার্জি, বাঁশিতে পান্নালাল ঘোষ – এঁরা সবাই খুব ভালো বাজাতেন। কিন্তু instrumntal music -এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই, কারণ এঁরা কোনো সাগরেদ তৈরি করছেন না।
গোলাম মুস্তাফা : বড় বড় ওস্তাদদের কারণে যন্ত্রসংগীতের প্রসারের কথা আপনি বললেন। কিন্তু সাধারণ শ্রোতাদের কাছে কণ্ঠসংগীতের চেয়ে যন্ত্রসংগীত বেশি গ্রহণযোগ্য – এটাও একটা কারণ নয়?
কুমারপ্রসাদ : অনেক বেশি কঠিন যন্ত্রসংগীত বাজানো এবং অনেক কঠিন তার রসগ্রহণ করা। এটা বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে পাশ্চাত্যে। কারণ ওরা আমাদের কণ্ঠসংগীতকে গ্রহণ করতে পারে না। Voice culture–এর ওপর ওরা খুব জোর দেয়। কাজেই তেমনটা নাহলে কণ্ঠসংগীতকে ওরা গ্রহণ করে না। আজকে I am ending with a pessimistic note, simple reason is this আমি কোনো আশা দেখতে পাচ্ছি না। চতুর্দিকে অবক্ষয় দেখেছি, দেখছি। আমি আমার সর্বশেষ বইতে এই কথাটাই বলতে চেয়েছি। জানি, কেউ পড়বে না। কিন্তু এই বয়সে এসে মনে হয়েছে যে, কিছু কথা বলা দরকার।
গোলাম মুস্তাফা : যাঁরা নিজ ঘরানার বাইরে অন্য ঘরানার নানা বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করেন, তাঁদের ব্যাপারে আপনার বক্তব্য ছিল এতে আপত্তির কিছু নেই। অন্য ঘরানার ভালো কিছু থাকলে নেবে না কেন?
কুমারপ্রসাদ : সে-কথা বলিনি। আমি বলেছিলাম, এ নিয়ে প্রতিবাদ করাটা হবে অসমাজতাত্ত্বিক। এটা inevitable । কারণ, এখন সমস্ত দুনিয়াটা খুব ছোট হয়ে যাচ্ছে। সংগীতের দুনিয়াও খুব ছোট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যখন সেরকম ওস্তাদরা নেই, তখন একটা sznthetic গায়কী তৈরি হতে বাধ্য। একটা ঘরানার কিছুটা অংশের সঙ্গে অন্য ঘরানার কিছুটা যোগ করে একটা নতুন গায়কী বেরিয়ে আসবে। আমি বোধহয় বলেছিলাম যে কলকাতাটা ছিল একটা বাজার। কলকাতায় ওস্তাদরা এসে তাঁদের মাল বিক্রি করে চলে যেতেন। তাঁরা এখানে বসবাস করতেন না। ব্যতিক্রম ছিলেন ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁ। তিনি তাঁর শেষ বয়সটা কলকাতায় কাটিয়েছেন। আর আমীর খাঁ সাহেব কলকাতায় যাতায়াত করতেন এবং কখনো কখনো একাদিক্রমে দুই-তিন মাস অবধি কাটাতেন। ফলে বাঙালিদের ওপরে এই দুইজন ওস্তাদের প্রভাব খুব পড়েছিল। প্রত্যক্ষ তালিম হয়ত তাঁরা পাননি, কিন্তু প্রভাব পড়েছে। ফলে একটা ংুহঃযবঃরপ গায়কী তৈরি হয়েছে। যেমন আমীর খাঁর বিস্তার এবং বড়ে গোলাম আলী খাঁর তানের কিছু ব্যর্থ, কিছু আংশিক সফল অনুকরণ হয়েছে।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি বলছেন সমাজতাত্ত্বিক কারণে এটা inevitable…
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ inevitable তো বটেই।
গোলাম মুস্তাফা : কিন্তু desireable কিনা?
কুমারপ্রসাদ : desireable কিনা সেটা time alone can tell, আমি কী করে বলবো? তবে শুনতে ভালো লাগে কিনা সেটা যদি জানতে চান তো বলব, না, ভালো লাগে না। এগুলো ওড়ানো গান, এগুলো তালিমের ব্যাপার। তালিমের গান মানেই যে একটা বিশেষ stzle follow করতে হবে, তা নয়। খেয়ালের আটটা অঙ্গ আছে। আমি এখন আর একটা যোগ করছি – নয়টা অঙ্গ আছে। এই অঙ্গগুলো প্রত্যেকটা খেয়ালে থাকা উচিত। তার মানে এই নয় যে প্রত্যেকটা recital–এ, প্রত্যেকটা রাগেই এটা দেখাতে হবে। কিন্তু এইগুলো খেয়ালের বিশিষ্ট অঙ্গ। এককালে সব ঘরানাতেই এই অঙ্গগুলো ছিল। কেউ কোনো অঙ্গ একটু বাড়িয়েছেন, কেউ কোনোটা কমিয়েছেন, কেউ কোনোটা পরিহার করেছেন। কিন্তু সব ঘরানাতেই অঙ্গগুলো ছিল। সব ঘরানারই মূলতত্ত্ব এক – যেমন সব ধর্মের মূলতত্ত্ব এক। ঘরানা তো একটা stzlisation । কোনো একজন ওস্তাদের stzle ev mannerism নিয়ে ঘরানা গড়ে ওঠে। কিন্তু stzle -এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ontent। সেই পড়হঃবহঃ তালিমের জিনিস। সেটা ওড়ানো যায় না, অসাধারণ প্রতিভা থাকলে হয়ত যায়। যেমন ময়জুদ্দিন খাঁ সাহেব শ্রুতিধর ছিলেন। শুনেই গেয়ে দিতে পারতেন। সেরকম লোক তো কালে-ভদ্রে পাওয়া যায়। এখন গায়ক যাঁরা উঠছেন, বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলে, তাঁরা যে-গানটা গাইছেন সেটাকে আমি বলি ওড়ানো গান। যেটা desireable নয় সেটা হলো ওড়ানো গান। সেটা ঘরানার ব্যাপারে নয়, ontent-এর দিক দিয়ে।
গোলাম মুস্তাফা : তাহলে cross-fertilisation যদি সফল হয় তবে সেটা গ্রহণযোগ্য?
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, যেমন রাশিদ করছে। ওর বিস্তারটা খানিকটা আমীর খাঁ-প্রভাবিত। সে নিজের ঘরানার গায়কী থেকে অনেকটা হটে এসেছে।
গোলাম মুস্তাফা : তাহলে cross-fertilisation থেকে একটা নতুন যুনৎরফ ঘরানা তৈরি হচ্ছে এটা কি বলা যাবে?
কুমারপ্রসাদ : একটা তো হচ্ছে না। কিছু কিছু হচ্ছে। পরীক্ষা চলছে, চলুক।
গোলাম মুস্তাফা : সেটা ঠিক আছে, কিন্তু নতুন ঘরানা তৈরি হচ্ছে, এটা বোধ হয় বলা যাবে না। কারণ এটা সব জায়গায় হচ্ছে না, সবসময়ে হচ্ছে না, ঁহরভড়ৎসষু হচ্ছে না। কাজেই এর ফলে নতুন ঘরানা গড়ে উঠছে তা বোধহয় বলা যাবে না।
কুমারপ্রসাদ : না, এটা এই অঞ্চলে হচ্ছে। মহারাষ্ট্রে হচ্ছে, তবে এক-আধটা ঘরানা হয়েছে। তারা জোর করে ঘরানা বলছে। যেমন যশরাজের মেওয়া ঘরানা। এটা ঘরানা নয়, ওটা একটা particular stzle of singing সেটা শুনে বড় ওস্তাদরা যে খুব অভিভূত হন, তা মনে হয় না।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি পাঁচটি ঘরানা নিয়ে বক্তৃতার ক্যাসেট করেছেন। সহসওয়ানকে আপনি ঘরানা বলছেন না। খান্দান বলছেন। বিষ্ণুপুরকে আপনি কী বলবেন?
কুমারপ্রসাদ : বিষ্ণুপুর তো ধ্রুপদের, খেয়ালের নয়। বিষ্ণুপুরে এখন যাঁরা গাইছেন, তাঁরা অবশ্য ধ্রুপদ আর গান না। খেয়ালই গান। এবং সে খেয়ালের distinctive stzle নেই যে তাদের ঘরানা বলা যাবে।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির জন্য হিন্দুস্থানি সংগীতের ঘরানা নিয়ে কাজ করছেন এবং ঘরানাগুলোর ইতিহাস, পরিচয় ও নমুনা উদ্ধারের ও সেগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন।
কুমারপ্রসাদ : করেছি।
গোলাম মুস্তাফা : আগ্রা, জয়পুর, কিরানা, গোয়ালিয়র, পাতিয়ালা – এই পাঁচটি ঘরানার বাইরে অন্য কোনো ঘরানা কি আপনি শনাক্ত করেছেন?
কুমারপ্রসাদ : অল্পবিস্তর আছে। যেমন হিন্দি বাজার ঘরানা। কিন্তু এগুলো thriving ঘরানা নয়। এমন ঘরানা নেই যেটা dznamic, thrive করছে। Major ঘরানা নেই। আমি পাঁচটাকে সধলড়ৎ ঘরানা বলেছি। Minor ঘরানা কিছু কিছু ছিল, কিন্তু তাদের এমন বিশেষত্ব নেই যে এগুলোকে ঘরানা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। যেমন খুর্জার ঘরানা ছিল। এদের বড় সাগরেদ আজমত হেসেন খাঁ – তিনি তো আল্লাদিয়া খাঁর শিষ্য হয়ে গেলেন। অন্যদিকে তিনি আবার আগ্রার বিলায়েত হোসেন খাঁ সাহেবের শালা ছিলেন। তিনি খুর্জার হতে পারেন। ঘরানা বলতে ওঁরা কি বোঝান জানেন? ওঁরা বোঝান খান্দান। ঘরানা হচ্ছে একটা particular stzle, যেটা কয়েক পিঁড়ি ধরে অনুসরণ করা হয়।
গোলাম মুস্তাফা : এগুলোকে আমরা ংপযড়ড়ষ বলতে পারি কিনা, একেকটা school of performance?
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, তা বলা যায়।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার লেখায় একটা আক্ষেপ আছে। আজকাল তারকা-888sport live chatীদের প্রাধান্যের ফলে প্রকৃত তালিমপ্রাপ্ত 888sport live chatীরা কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের গান আর কেউ শুনছে না। এর একটা বড় কারণ কি এই নয় যে, শ্রোতারা আর আগের মতো সংগীতবোদ্ধা নন? শ্রোতারা তালিমপ্রাপ্ত 888sport live chatীদের শনাক্ত করতে পারছেন না। তারকাদের গান শুনতে ছুটছেন, কারণ তারকা-888sport live chatীদের তারা ভালো গাইয়ে হিসেবে ধরে নিচ্ছেন।
কুমারপ্রসাদ : এটা ঠিক। তবে বড় 888sport live chatীরা যে তালিমপ্রাপ্ত নন, সেটাও
ঠিক নয়। ব্যাপারটা হচ্ছে কী, আগে কী ছিল? আগে যাঁরা conference attend করত – তাঁরা নিজেরাও ছিল properlz initiated এখন হচ্ছে গোলালুকদের ভিড়। এখন যাঁরা করছেন তাঁদের মধ্যে দু-চারজন যে গান-বাজনা জানেন না তা তো নয়! কিন্তু গান-বাজনা জানলেই যে রুচি গড়ে ওঠে তা-ও সত্যি নয়। আপনি তো অধ্যাপক মানুষ, বুঝতেই পারছেন, আমি কী বোঝাচ্ছি। সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রেও যাঁরা কলেজে যাচ্ছেন তাঁদের মধ্যে সবার যে রুচি গড়ে ওঠে – তা তো সব ক্ষেত্রে হয় না।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি চট্টগ্রাম ও 888sport appয় উদাহরণসহ শাস্ত্রীয় সংগীত সম্পর্কে বক্তৃতা করেছেন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায়ও করছেন। এর পেছনে নিশ্চয় আপনার একটা পরিকল্পনা কাজ করছে। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী আপনি মানুষকে সংগীত সম্পর্কে জানাতে চান, তাঁদের মধ্যে সংগীত-বোধ গড়ে তুলতে চান।
কুমারপ্রসাদ : আমার সে-রকম কোনো missionarz zeal নেই। আমার চেষ্টা হচ্ছে আজকের 888sport live chatীদের মনে করিয়ে দেওয়া যে, আজকে ওঁরা যে গানটা করেন সেটাই শেষ কথা নয়। অন্তত আমাদের চোখে তো নয়ই। আগেকার ওস্তাদরা কী করে গেছেন, কোন অঙ্গটাকে ওঁরা বাড়িয়েছেন, কোনটাকে ওঁরা কমিয়েছেন, তার রূপটা কীরকম ছিল এটা দেখানোর একটা চেষ্টা করেছি।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি কেমন সাড়া পেয়েছেন?
কুমারপ্রসাদ : আমি তো খুব ভালোই সাড়া পেয়েছি। এধরনের বক্তৃতা ইদানীংকালে আমি বর্ধমানে করেছি, রবীন্দ্রভারতীতে করেছি। সেখানে কিছু ফল হয়নি। বন্ধ্যা রমণীগমনের ফল হয়েছে। আর সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমিতে করেছি। বিশ্বভারতীতে করেছি। টএঈ-তে সারা ভারতবর্ষের সংগীত888sport live chatীদের refresher’s course হয় – তাদের সামনে করেছি। অপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে ব্যারাকপুরে করেছি। সেখানে বসবার জায়গা ছিল না। শ্রোতারা তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে শুনেছেন। তারপর আমি দূরদর্শনে চর্চা সিরিজ করেছি। প্রথমটা করেছিলাম উল্লাস কশালকরকে নিয়ে – গোয়ালিয়রের জয়পুর ঘরানার। আমার আলোচনার সঙ্গে উল্লাস কশালকর demonstrate করল, তারপর বিরতির পর ও গান করল। দ্বিতীয়টা করেছিলাম কিরানা ঘরানার ফিরোজ দস্তুর এবং ভীমসেন যোশীকে নিয়ে। পুরানো রেকর্ড বাজিয়ে রহমত খাঁ থেকে কিরানা ঘরানার ধারাটা আলোচনা করেছিলাম। এরপরে করেছি রাশিদ খাঁ আর আফজল হোসেন খাঁকে নিয়ে। ওরা সহসওয়ান। সেখানে দেখাই গেল, সহসওয়ানে আমার ওস্তাদ মুশতাক হোসেন খাঁ যে-গায়কীতে গাইতেন তার সঙ্গে রাশিদ খাঁ বর্তমানে যা গাইছেন তার কোনো মিল নেই। রাশিদ অনেক সরে গেছে। এই জন্যে আমি সহসওয়ানকে খান্দান বলেছি, ঘরানা নয়। এই তিনটাই খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারে একশ টাকা করে টিকেট ছিল। একটাও সিট খালি ছিল না। আশাতীত সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। কাজেই বোঝা যাচ্ছে যে, মানুষের জানার আগ্রহ কম নয়। তারা properlz initiated নয়, সেই দোষ তো তাদের নয়। শ্রোতা তৈরি করতে হয়। আগের দিনে শ্রোতা তৈরি করতে হতো না, এখন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
গোলাম মুস্তাফা : এতে শ্রোতাদের মধ্যে কিছুটা আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে হয়ত। কিন্তু মাসখানেকের একটা ধঢ়ঢ়ৎবপরধঃরড়হ পড়ঁৎংব করা গেলে সেটা কি আরো ফলপ্রসূ হতো না? আরেকটু পরিকল্পিতভাবে, কিছু course material দিয়ে?
কুমারপ্রসাদ : এটা করা যেতে পারে। সেজন্যে আমার মতো ব্যক্তির প্রয়োজন না-ও হতে পারে। আমি হয়ত মাঝে-মধ্যে বললাম, বসলাম।
গোলাম মুস্তাফা : সেটার জন্যে আপনার অতটা সময় না-ও হতে পারে। তবে আপনার পরিকল্পনায় এবং তত্ত্বাবধানে যদি হয়। আপনার মনোনীত কেউ বাকিটা চালালেন।
কুমারপ্রসাদ : সেটা হওয়া উচিত। তবে সব কিছুরই একটা starting point আছে। সংগীত সম্পর্কে একেবারে কিছুই যারা জানে না তাদের নিয়ে তো করা যাবে না। অন্তত সা-রে-গা-মা-টা বুঝতে হবে।
গোলাম মুস্তাফা : তা তো বটেই। যাঁরা খানিকটা শিক্ষা পেয়েছেন তাঁদের আরেকটু পরিশীলিত করা, আরেকটু গভীরে নিয়ে যাওয়া। এটা করা গেলে হয়ত কাজটা ভালোই হতো।
ভাতখাণ্ডেজীর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আপনি বলেছেন যে, সময়ের সঙ্গে রাগকে সম্পর্কিত করা তাঁর একটা বড় ধরনের অবদান।
কুমারপ্রসাদ : এটা আমার সর্বশেষ বইতে বলেছি। বইটা এরই মধ্যে আপনি পড়ে ফেলেছেন?
গোলাম মুস্তাফা : হ্যাঁ। আপনি বোধহয় বলতে চেয়েছেন যে, প্রতিটি সময়ের একটা নিজস্ব চরিত্র আছে এবং এই সময়-চরিত্রের সঙ্গে রাগের সমন্বয় দরকার।
কুমারপ্রসাদ : আমি তো বলেছি, ব্যাপারটা কি শুধুই association -এর ব্যাপার, শুধুই ভাবসঙ্গ, না এর মধ্যে একটা কিছু আছে? আমার তো মনে হয় কিছু আছে। ভাতখাণ্ডেজী কী করেছেন? সকালবেলায় কোমল রেখাব, শুদ্ধ মধ্যম। তারপরে যখন ধীরে ধীরে বেলা বাড়ছে তখন কোমল রেখাবের জায়গায় শুদ্ধ রেখাব আসছে, কোমল ধৈবত আসছে। তারপরে সারঙআসছে, কোমল ধৈবত আসছে। তারপরে সারঙ যখন এলো তখন কোমল নিখাদ এলো, কিন্তু বাকি সব স্বর শুদ্ধ হয়ে গেল। বিকেলবেলায় তীব্র মধ্যম, কোমল রেখাব দিয়ে সন্ধিপ্রকাশ – যাতে একটা বৈরাগ্যভাব আসে। আবার সন্ধ্যাবেলায় শৃঙ্গাররস যেখানে, সেখানে শুদ্ধ স্বর আসছে। কানাড়া যেখানে সেখানে, কোমল গান্ধার কোমল নিখাদ আসছে। এভাবে তিনি ভাগ করেছেন। মোটামুটি বিষয়টা গ্রাহ্য। এতে কোনো সন্দেহ নেই †h association -এর একটা ব্যাপার আছে।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি বলেছেন, সন্ধ্যাবেলায় শৃঙ্গাররসের আবহ তৈরি হয়। একটা উদাহরণ দেবেন?
কুমারপ্রসাদ : কল্যাণ ঠাটের রাগ – শুদ্ধ কল্যাণ, ইমন কল্যাণ, ছায়ানট, কেদারা। বিলাওয়াল ঘরানার বেহাগ, নট বেহাগ, ছায়া বেহাগ – এই রকম শুদ্ধ স্বর রাগগুলোর মধ্যে খানিকটা শৃঙ্গাররস পাওয়া যায়।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার এই উপলব্ধি কি অন্য কারো সঙ্গে মেলে?
কুমারপ্রসাদ : মেলে। যেমন রাত্রির অনেক রাগের মধ্যে তামসিক ভাব আছে।
গোলাম মুস্তাফা : ভাতখাণ্ডেজীর আরেকটা অবদানের কথা আপনি বলেছেন যে, তিনি সংগীতকে মধ্যবিত্তের জন্যে মুক্ত করে দিয়েছেন। কিন্তু এই সংগীত মধ্যবিত্তের কাছে কতটা পৌঁছেছে?
কুমারপ্রসাদ : এখন তো মধ্যবিত্তরাই শ্রোতা। আমার মতে এর ফলে অবক্ষয়ের তৃতীয় ধাপ শুরু হয়েছে। মধ্যবিত্তের কাছে গেলে সবকিছুই মধ্যমানের হতে বাধ্য।
গোলাম মুস্তাফা : ধ্রুপদ-ধামার প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে বলে আপনার আক্ষেপ আছে। আপনার ভাষায় এটা এখন বিলীয়মান প্রজাতি। যুগের চাহিদার কাছে হয়ত এর গুরুত্ব পরাস্ত হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় সংগীতের এই ঐতিহ্যকে তো বাঁচিয়ে রাখা দরকার। আপনি হয়ত বলবেন সমাজতাত্ত্বিক কারণেই এর বিলুপ্তি ঘটছে। কিন্তু এর পুনরুজ্জীবনের তো চেষ্টা করা দরকার।
কুমারপ্রসাদ : পুনরুজ্জীবনের জন্যে সে-রকম গায়কের প্রয়োজন। গায়ক যদি গানটাকে ভালোভাবে গাইতে পারেন, লোকজনকে আকর্ষণ করতে পারেন তবেই সেটা বাঁচবে। আমাদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যাদের প্রতিভা আছে তাদের তালিম নেই, যাদের তালিম আছে তাদের সে-রকম প্রতিভা ও আকর্ষণ করার ক্ষমতা নেই। দুটোই চাই। তালিম চাই, প্রতিভা চাই এবং পযধৎরংসধ চাই। তবেই লোকে তাকে অনুসরণ করে।
গোলাম মুস্তাফা : খেয়ালের উৎপত্তি সম্পর্কে মতপার্থক্য আছে। এটা কি আমীর খুসরোর সময়েই প্রচলিত হয়েছিল?
কুমারপ্রাদ : আমার বইতে এ নিয়ে আলোচনা করেছি।
গোলাম মুস্তাফা : হ্যাঁ, আমি সেই সূত্রেই বলছি। মুহম্মদ হাবিব বলছেন যে, তিনি এরকম কোনো রেফারেন্স পাননি।
কুমারপ্রসাদ : তিনি রেফারেন্স পেয়েছেন। তবে, আমীর খুসরো নিজেই গান করতেন এরকম কোনো তথ্য পাননি। আমার বইতে বিভিন্ন উৎস থেকে আমি দেখিয়েছি যে খেয়ালটা আমীর খুসরোর সৃষ্টি নয় – যেটা প্রচলিত ধারণা এবং বেশির ভাগ পাঠ্য বইতে লেখা আছে।
গোলাম মুস্তাফা : তবে তাঁর সময়ে এটার প্রচলন বোধহয় বেশ হয়েছিল।
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, প্রচলন হয়েছিল।
গোলাম মুস্তাফা : খেয়ালের স্রষ্টা হিসেবে তাহলে কাকে শনাক্ত করা যায়?
কুমারপ্রসাদ : সেই রকম কাউকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। আমীর খুসরোর সময় সাধারণী গীতটা বেশ সমৃদ্ধ ছিল। আমীর খুসরো যখন ওটা শোনেন তখন তিনি ওতে প্রভাবিত হয়েছিলেন বলব না, তবে বেশ impressed হয়েছিলেন। তিনি ওটার নাম দিয়েছিলেন খেয়াল। তবে খেয়ালের রূপ যে ধীরে ধীরে পালটালো তার কারণ কাওয়ালি। কাওয়ালি তো লোদীদের সময় থেকেই প্রচলিত ছিল। এই কাওয়ালি ও সাধারণী গীতের মিশ্রণে খেয়ালের একটা রূপ গড়ে উঠল।
গোলাম মুস্তাফা : সংগীত একটা composite culture -এর ব্যাপার। আমাদের এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে harmonz সৃষ্টির ক্ষেত্রে সংগীত যতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে…
কুমারপ্রসাদ : Harmonz -র ব্যাপার তো ছিল না; Harmonz -র প্রয়োজন তো এখন দেখা দিয়েছে। Keepers of Indian classical music কারা? সে তো মুসলমান। সুফীরা। যে-রকম বৈষ্ণবরা কীর্তনের রাগসংগীতকে রেখেছে। ধর্ম তো সবক্ষেত্রেই সে-রকম প্রেরণা যুগিয়েছে। তবে হিন্দু-মুসলমানের সম্পূর্ণ একীকরণ সংগীতের ক্ষেত্রে যতটা হয়েছে, অন্যক্ষেত্রে ততটা হয়নি। আমি শুরু করলাম ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ দিয়ে। আমার ওস্তাদের ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ সাহেব ‘হরি ওম অনন্ত নারায়ণ’ বলে আলাপ শুরু করতেন।
গোলাম মুস্তাফা : কিন্তু এখন সেই composite culture -এর ভধনৎরপ-টা তো একেবারেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেমন গুজরাটে ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁর কবরের চাতাল নষ্ট করে দেওয়া হলো। আপনি এ নিয়ে আক্ষেপ করে আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেছিলেন। এবং মনে হয় এটা deliberatelz নষ্ট করা হচ্ছে।
কুমারপ্রসাদ : deliberatelz তো বটেই। যারা করছে তাদের তো সংস্কৃৃতিমান বলা যাবে না। সংস্কৃতির সঙ্গে, ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে এঁদের সামান্যতম যোগ নেই। ভারতীয় সংস্কৃতি বলতে আমি বোঝাচ্ছি উপমহাদেশের সংস্কৃতিকে।
গোলাম মুস্তাফা : আগে যাঁরা সংগীতের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তাঁদের তো এক ধরনের সাংস্কৃতিক মান ছিল।
কুমারপ্রসাদ : সবার ছিল না। তবে ছিল। সর্বাগ্রে ছিলেন বরোদার স্যার গায়কোয়ার। তিনি নিজে দত্তক ছিলেন। কিন্তু তিনি ভারতবর্ষে প্রথম স্কুল অব আর্টস প্রতিষ্ঠা করেন। রমেশচন্দ্র দত্ত – যাঁর মহারাষ্ট্র জীবনপ্রভাত – তাঁকে তিনি নিয়ে এসেছিলেন। অরবিন্দ ঘোষ, সৈয়দ মুজতবা আলী এঁদের তিনি নিয়ে এসেছিলেন। ফৈয়াজ খাঁ সাহেব ওখানে ছিলেন। এই যে ¯মাটির সঙ্গে ওঁর গানের যোগ ছিল না, আকাশচারী ছিলেন।
কুমারপ্রসাদ : দেখুন, সত্যি কথা বলতে কী, উনি তো বড্ড বেশি ঢ়ষধুরহম ঃড় ঃযব মধষষবৎু ছিলেন; ভববঃ ড়হ ঃযব মৎড়ঁহফ হলে তো এটা হয় না।
গোলাম মুস্তাফা : এটা আপনার মনে হয়েছে?
কুমারপ্রসাদ : মনে হয়েছে নয় শুধু, আমি এই বিষয়ে নিশ্চিত।
গোলাম মুস্তাফা : ওঙ্কারনাথ ঠাকুর সম্পর্কে কী বলবেন?
কুমারপ্রসাদ : কিছুই বলব না। ওঁর অসাধারণ গলা ছিল। কিন্তু উনি যে stzle develop করেছিলেন, সেটা ধোপেও টেকেনি, আর সেটা কান্না কান্না শোনাত। অনেক ঢং-ঢাংও ছিল। আমাদের পষধংংরপধষ সঁংরপ-এর সঙ্গে ওটা মেলে না। অত ভক্তিরসে চুবিয়ে জবজবে করার চেষ্টা – আমরা সৌভাগ্যবশত মুসলমান ওস্তাদের তালিম পেয়েছি, ভালো ঘরানার তালিম পেয়েছি – ওসব গান আমাদের কাছে হাস্যকর মনে হয়। তাছাড়া ওই ভদ্রলোক হিন্দুত্ব করতেন। আজকের দিনে বেঁচে থাকলে উনি শিরোপা পেতেন।
গোলাম মুস্তাফা : সংগীতের সঙ্গে ধর্মের যোগ তো বরাবরই ছিল। যেমন চর্যাপদ, বৈষ্ণব পদ, ভজন, কাওয়ালি। কিন্তু ধর্মের যোগ থাকা সত্ত্বেও সংগীতের আবেদন ধর্মের গণ্ডিকে ছাড়িয়ে গেছে। এর ব্যাখ্যা কী?
কুমারপ্রসাদ : যতদিন জনগণের কাছে ছিল ততদিন পর্যন্ত gods prevailed; আর দরবারে যখন উঠল তখন Kings replaced the gods এই হয়েছিল ব্যাপারটা। দরবারে আবদ্ধ হওয়ার ফলে এটা ফুহধসরংস হারাল বটে, তবে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নানা অলঙ্করণ করার ফলে বিভিন্ন ঘরানার সৃষ্টি হলো।
গোলাম মুস্তাফা : বেশ উৎকর্ষও হলো।
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, উৎকর্ষ দেখা দিল। কিন্তু অহং-চেতনাও দেখা দিল। যেটা আমাদের ধর্মের বিরোধী। ইসলাম বলুন, হিন্দুত্ব বলুন, তাতে আমার কোনো স্থান নেই। আমি যখন ঈশ্বরকে 888sport app download for android করছি, আল্লাহ্র নাম নিয়ে গান করছি, তখন সেটা আমার তরফ থেকে নৈবেদ্য। এই জায়গায় যদি আমার অহং-চেতনার উন্মেষ হয় – দেখো কী রকম অলঙ্করণ করছি, কী রকম গলা ঘোরাচ্ছি – তাহলে আমি সামনের সমঝদারদের বাহবা কুড়ানোর চেষ্টা করছি। মুখে বলছি হুজুরের বন্দা নেওয়াজি, আমি কিছুই নই, সবই আল্লাহর ফজল ও করম। কিন্তু আমিত্ব দেখা দিচ্ছে। ‘আমি’ ব্যাপারটা আমাদের ethos -এ নেই।
গোলাম মুস্তাফা : মাস কয়েক আগে আমজাদ আলী খাঁর সঙ্গে বিসমিল্লাহ খাঁ সাহেবের একটা অপ্রীতিকর ব্যাপার ঘটে গেল। আমজাদ আলী খাঁ এমন কী বিসমিল্লাহ খাঁ সাহেবের ভারত-রত্ন খেতাব প্রত্যাহার নিয়েও কথাও বললেন। একজন বড়মাপের 888sport live chatীর কাছ থেকে এই ধরনের মন্তব্য কি প্রত্যাশিত?
কুমারপ্রসাদ : ব্যাপারটা আমি পুরো জানি না। তবে ওই ঘটনার একমাসের মধ্যেই বিসমিল্লাহ খাঁ সাহেবের সঙ্গে বিলায়েত খাঁ সাহেব বাজিয়েছিলেন – ওই সায়েন্স সিটিতেই। সেদিনের বাজনা ভালো হয়েছিল। বিলায়েত আমাকে নিজে বলেছে যে, ওঁর মেজাজ আনবার একটা প্রক্রিয়া আছে। সেখানে আমি কী করছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি বিসমিল্লাহ খাঁ সাহেবকে জাগিয়ে দিচ্ছিলাম। উনি যে-ধরনের জিনিস আগে করতেন সেগুলো আমি সেতার দিয়ে বের করছিলাম। খানিকক্ষণ পরে ওঁর মেজাজ এসে গেল এবং উনি বেশ ভালো বাজালেন। একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে যে ওঁর নব্বইয়ের কাছাকাছি বয়স। কোনো senior musician সম্পর্কে comparativelz কোনো junior musician যদি এরকম বলে থাকেন, তবে সেটা উচিত হয়নি।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি কি এই অংশটা ড়ভভ ঃযব ৎবপড়ৎফ রাখতে চান? আপনি না চাইলে এই অংশটা আমি লিখব না।
কুমারপ্রসাদ : না, আমার কিছু বলার নেই। আমি বলেছি যদি তিনি বলে থাকেন তাহলে কাজটা বোধহয় ঠিক হয়নি। আর এই বয়সে আমি কার জন্য রেখেঢেকে কথা বলব?
গোলাম মুস্তাফা : পরে অবশ্য আমজাদ খাঁ সাহেব এজন্যে দুঃখপ্রকাশ করেছেন।
কুমারপ্রসাদ : বলাই বা কেন, আর দুঃখপ্রকাশ করাই বা কেন?
গোলাম মুস্তাফা : আপনি সংগীতের ইতিহাস নিয়ে কাজ করেছেন। সংগীতের তত্ত্ব নিয়েও কাজ করেছেন, আপনি নিজে গান করছেন, আপনি শিক্ষকও, সংগীতসম্মেলন আয়োজনও করেছেন।
কুমারপ্রসাদ : আমি সংগীত-সমালোচনাও করেছি দীর্ঘদিন Statesman -এ।
গোলাম মুস্তাফা : তার মানে আপনার ছয়টা সত্তা দাঁড়াচ্ছে। এর মধ্যে কোনটার প্রতি আপনার নিজের পক্ষপাতিত্ব বেশি? আপনাকে একটা বেছে নিতে বললে কোনটা গ্রহণ করবেন?
কুমারপ্রসাদ : দেখুন, আমার উদ্দেশ্য তো একটাই। উদ্দেশ্য হচ্ছে সিলসিলার, পরম্পরার গান লোকে শুনুক। সেটা আমি গেয়ে শোনাবার চেষ্টা করেছি, লিখে বোঝাবার চেষ্টা করেছি। যারা এটা মানে না তাদের সমালোচনা করেছি। সংগীত-সম্মেলন আয়োজন করেছি। বিভিন্ন ঘরানার আলাদা আলাদা সম্মেলন করেছি। বই লিখে বোঝাবার চেষ্টা করেছি যে, এর একটা সিলসিলা আছে, পরম্পরা আছে। বলবার চেষ্টা করেছি যে, বাছারা তোমরা এগুলোর সঙ্গে পরিচিত হবার চেষ্টা করো। যেটুকু রেকর্ডে আছে সেটা শোনো। উদ্দেশ্য not that different six hats I wore । উদ্দেশ্য একটাই, প্রেরণা একটাই ছিল – আমাদের এই যে ঐতিহ্য সেটা যেন শেষ না হয়ে যায়। তারপরে দেখলাম যে, for different sociological reasons আমার এই চেষ্টা ভস্মে ঘি ঢালা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও অভ্যাসবশত করে যাচ্ছি।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি ফোর্ড ফাউন্ডেশনের আনুকূল্যে হিন্দুস্থানি সংগীতের ঘরানা নিয়ে যে কাজ করছেন…
কুমারপ্রসাদ : করেছি। ওটা হয়ে গেছে।
গোলাম মুস্তাফা : এর লক্ষ্য কী ছিল?
কুমারপ্রসাদ : লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন ঘরানার গানগুলো ধরে রাখা এবং ঘরানাগুলোর বিশ্লেষণ। এই কাজটা আমি করে দিয়েছি। বিভিন্ন ঘরানার যেসব 888sport live chatী আছেন তাঁদের হাজারখানেক ঘণ্টার রেকর্ড করেছি। কিন্তু ওখানেই ওগুলো পড়ে আছে। ইন্টারনেটে আনতে কারো সাহস হচ্ছে না। কারণ কপিরাইটের প্রশ্ন আছে। যিনি মারা গেছেন, তাঁর বংশধর এসে যদি পয়সা দাবি করে! এর মধ্যে তো আই.টি.সি আছে। ওরা ব্যাপারটা নেড়ে-চেড়ে দেখছে। সেই নেড়ে-চেড়ে দেখতে দেখতে আমার জীবদ্দশা পার হয়ে যাবে।
গোলাম মুস্তাফা : এগুলো ক্যাসেটে বা সিডিতে বের করা যায় কি-না?
কুমারপ্রসাদ : ক্যাসেটে করেছি। সিডিতেও হয়েছে। কিন্তু এখনো তো বাজারে বের হয়নি। আর ওখানে যাঁরা আছেন তাঁরা কেউ শুনেছেন বলে তো আমার মনে হয় না। দেখুন কোনো সিরিয়াস কাজকর্ম এখন আর আমাদের দেশে সম্ভব নয়। আপনি যা-ই বলুন। 888sport apps সম্পর্কে আমি কোনো উক্তি করব না। কারণ সত্যি সত্যি 888sport appsের এই দিকটা আমি এখনো দেখিনি, বুঝিনি এবং খুব ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হইনি। এটুকু বলতে পারি যে এখানকার লোকেদের মধ্যে আগ্রহের কিছুটা অভাব আছে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে আমি বলেছি যে আগে go for to train the trainers । তাঁদের বোঝাতে হবে কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে। তাঁদের মধ্যে শিক্ষার প্রচার হবে, তবে তো তাঁরা শিক্ষাদান করবেন। আর দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে একটা ক্যাসেটের লাইব্রেরি থাকা দরকার। যেখানে পুরানো দিনের গায়কদের গান সংরক্ষিত থাকবে এবং সেগুলো শিক্ষার্থীরা অবাধে ব্যবহার করতে পারবে। চট্টগ্রামের সংগীত-ভবনও কিছু করতে পারে। কিন্তু ওদের তো আর্থিক অবস্থা তেমন নয়।
গোলাম মুস্তাফা : এখানে একটা সমস্যা আছে। সমগ্র 888sport appsে মাত্র দুটো জায়গাতে এই ধরনের গানের ক্যাসেট, সিডি কিনতে পাওয়া যায়। তারাও যেসব ক্যাসেট আনে সেগুলো সেই তারকা 888sport live chatীদেরই।
কুমারপ্রসাদ : আজকে যাঁরা তারকা-888sport live chatী, তাঁদের।
গোলাম মুস্তাফা : যেমন আজ একজন সমঝদার আপনাকে বলছিলেন, তিনি ওয়াহিদ খাঁ সাহেবের কোনো গান শোনেননি। ওয়াহিদ খাঁ সাহেবের একটা ক্যাসেট পাওয়া যাচ্ছিল বছর কয়েক আগে। দ্বিতীয়বার সেটি আর আসেনি। এখানে এই সমস্যাটা প্রকট।
কুমারপ্রসাদ : এইচ.এম.ভি. চেয়ারম্যান চয়েস বলে কিছু বের করেছিল। সেটা একটা মহৎ কাজ। সব পুরানো ওস্তাদদের যেসব কাজ ৭৮ আর.পি.এম-এর রেকর্ডে ছিল সেগুলো সাফ-সুতরো করে বের করছিল। ঘরানা অনুসারে তারা কাজটা করছিল। তাছাড়া ময়জুদ্দিন খাঁ, গওহরজান এবং আরো অনেকের গান বের করেছিল। সেগুলো তো বিক্রি হলো না। সে-রকম প্রচারও ওরা করেনি। সেজন্যে আমি হতাশ বলব না, তবে নিরাসক্ত হয়ে পড়েছি। আমার চেষ্টা তাই ছিল যাতে আমার কথা সহজবোধ্য হয়। লেখাটা পড়ে সাধারণ লোকেরা আগ্রহী হয়, আবার যাঁরা সাধারণের গণ্ডিতে পড়েন না তাঁদেরও যেন ভালো লাগে। মনে হয় যে, হ্যাঁ এটা করা উচিত। আমার প্রথম বই কুদরত রঙ্গিবিরঙ্গী তো ঘরানার ইতিহাস নয়, এটা ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঈৎবধঃরারঃু, সৃজনশীলতার ইতিহাস। কোন জায়গা থেকে কোন প্রভাবটা এলো, কীভাবে একজন সেটা সমৃদ্ধ করল, সেটাই দেখানোর চেষ্টা করেছি।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি বোধহয় ইচ্ছে করেই লেখার ভঙ্গিটা বৈঠকি ঢংয়ে করেছেন।
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ। প্রথমত ওটাই আমার ভাষা। আর দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল কঠিন বিষয়কে সহজ করে বলা।
গোলাম মুস্তাফা : তাছাড়া সংগীতও একটা বৈঠকি ব্যাপার। আপনি বোধহয় সেই মেজাজটা বজায় রাখতে চেয়েছেন।
কুমারপ্রসাদ : সেটা আমার বইতেই বলা আছে : ‘It will be a serious book in a lighter vein’
গোলাম মুস্তাফা : এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। কেউ কেউ কড়া সমালোচনাও করেছেন।
কুমারপ্রসাদ : কড়া ঠিক করেনি, তবে অনেকে সমালোচনা করেছেন। একজন আমাকে বাইশ পাতার একটা চিঠি লিখে জানতে চেয়েছেন আমি বইতে হিন্দি ভাষা কেন ব্যবহার করেছি। তিনি উর্দু বলেননি, হিন্দি বলেছেন। তাঁর অভিযোগ, আমি কেন বাংলা ভাষার সঙ্গে হিন্দি ব্যবহার করেছি। তার জবাব হচ্ছে, বেশ করেছি। যে-সময়ের কথা লিখছি, সেই দুনিয়ার ভষধাড়ঁৎ পড়হাবু করতে হলে বাংলার সঙ্গে হিন্দি মেশাতে হবে। আর দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে অনেকেই আমাকে বলেছেন যে, আমি নাকি শুধু মুসলমান ওস্তাদদের সম্পর্কে লিখেছি, হিন্দুদের সম্পর্কে লিখিনি। আমি তারও জবাব দিয়েছি যে, আজকের দিনে এ ধরনের উক্তি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত নয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমার কুদরত রঙ্গিবিরঙ্গীতে যেসব ওস্তাদের কথা বলেছি, পাঠকরা তার আগে তাদের নামও শোনেনি। ভাস্কর বুয়ার কথা কেউ জানতেন না। দিলীপচন্দ্র বেদীকে কটা লোক জানতেন, আমি জানি না। পরবর্তীকালে সিদ্ধেশ্বরী বাঈ থেকে শুরু করে বহু মারাঠি ওস্তাদের কথা লিখেছি। তৃতীয় কথা হলো সংগীতে আবার হিন্দু-মুসলমান কী? মুসলমান ওস্তাদরা না থাকলে কি আজকে হিন্দুস্থানি সংগীত থাকত? তবে এধরনের কথা যারা বলে সৌভাগ্যবশত আমাদের দেশে তার 888sport free bet কম। আপনাদের এখানে কীরকম জানি না।
গোলাম মুস্তাফা : আমাদের এখানে ব্যাপারটা অন্যরকম। সবকিছুই মুসলমানরা করেছে – এরকম একটা গৌরববোধ কাজ করে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ভাবটা আছে।
কুমারপ্রসাদ : কথাটা ঠিকই বলছে। কিন্তু composite culture -এর ব্যাপারটা না হিন্দুর, না মুসলমানের, না বৌদ্ধের, না খ্রিষ্টানের।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি বলছেন যে, ওরা ঠিকই বলছে। কিন্তু এই বলার উদ্দেশ্যটা কী? বক্তব্যের সত্যতা হয়ত আছে কিন্তু এটা বলার মধ্যে একটা উদ্দেশ্য কাজ করে।
ঘরানার ব্যাপারে আপনি বলেছেন যে, ঘরানা প্রতিবন্ধক হিসেবেও কাজ করে।
কুমারপ্রসাদ : প্রতিবন্ধক বলেছি এই অর্থে যে এর মধ্যে একটা গোঁড়ামি কাজ করে। আমার ঘরানার বাইরে কোনো গান শুনবে না – এই ধরনের বিধিনিষেধ ছিল। তখন শোনার সুযোগও কম ছিল। ওস্তাদরা শুনতেন, শুনে মুখে তারিফ করতেন। কিন্তু নিজের ঘরানার বাইরে কোনো কিছু শেখায় বাধা ছিল। আর অসম্ভব কৃপণতাও ছিল – আমি যাকে-তাকে দেবো না। এই করে যে কত ভালো ভালো জিনিস গোরস্তানে চলে গেছে তার ঠিক-ঠিকানা নেই।
গোলাম মুস্তাফা : আবার তালিমের জন্যে ঘরানার প্রয়োজনের কথাও তো বলেছেন।
কুমারপ্রসাদ : সেটা ঠিক। কারণ ঘরানাদার ওস্তাদের কাছে না গেলে তালিম হবে না। তাঁদের তালিম দেওয়ার প্রক্রিয়াটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
গোলাম মুস্তাফা : ঘরানার অনুদারতার ব্যাপারটা যদি আমরা স্বীকারও করে নিই, তবু সব ওস্তাদই নিজ নিজ ঘরানায় উৎকর্ষ আনার চেষ্টা করেছেন। এটা তো ইতিবাচক দিক।
কুমারপ্রসাদ : সে তো হবেই।
গোলাম মুস্তাফা : কাজেই এটাকে একেবারে নাকচও করা যাবে না, আবার হুবহু…
কুমারপ্রসাদ : ব্যাপার হচ্ছে কি জানেন, শিক্ষিত লোকজন liberal background আছে – এরকম তো ভাতখাণ্ডেজীর আগে সংগীতে বড় একটা কেউ আসেননি। যাঁরা এসেছিলেন – যেমন বাঙালিদের মধ্যে রাজা শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর, কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায় – তাঁরা তো practising artist ছিলেন না। তাঁরা ওটা প্রসার করার চেষ্টা করেছেন। যাঁরা শিক্ষা-দীক্ষা পেয়েছেন, বোঝেন, যাঁদের বিশ্লেষণী শক্তি আছে তাঁদের মধ্যে ঔদার্য আসার কথা। তাঁরা ওই কথা বলবেন যে, তালিমের জন্যে ঘরানাদার ওস্তাদের কাছে যাওয়া উচিত। তবে তিনি যা বলবেন তা-ই বেদবাক্যের মতো মানতে হবে, এর কোনো মানে নেই।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি যেগুলোকে প্রধান ঘরানা হিসেবে অভিহিত করেছেন, বর্তমানে সেই ঘরানাগুলোর প্রধান প্রতিনিধি কারা?
কুমারপ্রসাদ : গোয়ালিয়র, জয়পুর এখনো বেঁচে আছে। গোয়ালিয়রে উল্লাস কশালকর আছেন, লক্ষ্মণ পণ্ডিত আছেন। জয়পুরের অনেকেই গাইছেন। শ্রুতি সাদালিকর আছেন, অশ্বিনী ভিদে আছেন। আগ্রা বর্তমানে শ্মশান। কিরানায় ভীমসেন যোশী আছেন। পাতিয়ালায় অজয় চক্রবর্তী আছেন, তবে ওঁর গানটা ধীরে ধীরে পালটে যাচ্ছে।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি হারমোনিয়ামকে বলেন…
কুমারপ্রসাদ : একটা বেজন্মা যন্ত্র।
গোলাম মুস্তাফা : কিন্তু জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ খুব ভালো হারমোনিয়াম বাজাতেন এবং আপনার গানের সঙ্গে বাজিয়েছেনও।
কুমারপ্রসাদ : অজয় চক্রবর্তী হয়ত ওঁর চেয়ে ভালো হারমোনিয়াম বাজান। আমার সঙ্গেও একবার সংগত করেছিলেন। আমার বক্তব্য হচ্ছে কিছু না থাকলে হারমোনিয়াম নিতে হয়। কিন্তু হারমোনিয়ামে তো শ্রুতি নেই, মীড় নেই, গমক নেই। এই তিনটা পিলারের ওপর আমাদের হিন্দুস্থানি সংগীত দাঁড়িয়ে। যে-যন্ত্রে এগুলো নেই, সেই যন্ত্র আমার নেওয়ার দরকার কী? রবীন্দ্রনাথ তো হারমোনিয়াম নিতেন না। উনি সঙ্গে এস্রাজ নিতেন।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার বাবা ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কি কখনো গান করেছেন?
কুমারপ্রসাদ : না, তিনি গান করেননি। মানে b perform করেননি।
গোলাম মুস্তাফা : কিন্তু ওঁর তো সংগীতে তালিম ছিল?
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, উনি রাধিকা গোস্বামীর কাছে, পরে তাঁর শিষ্য মহিম মুখুয্যের কাছে ধ্রুপদের তালিম নিয়েছিলেন। পরে লখনউয়ে যখন ভাতখাণ্ডেজীর কলেজ চালু হয়, তাতে ওঁর রোল নম্বর এক ছিল। উনি আমাকে বলেছিলেন যে শুধু কল্যাণ ঠাটের ওপরে ভাতখাণ্ডেজী আটখানা বক্তৃতা করেছিলেন। সেগুলোর নোট নিয়েছিলেন, হারিয়ে গেছে। উনি বলেছিলেন, ‘ভাতখাণ্ডেজীর সান্নিধ্যে আসার পর সংগীত সম্পর্কে কোনো তর্ক করা আমি ছেড়ে দিয়েছি। বিদ্যা কাকে বলে? যে ভাতখাণ্ডেজী এবং শ্রীকৃষ্ণ রতন্জন্করের সান্নিধ্যে এসেছে সে আর কখনো মুখ খুলবে না।’ এটা আমারও বিশ্বাস। তাঁদের বিশ্লেষণের পেছনে লজিক ছিল। কেন এটা হবে? এই যে complimentarz phrase করলাম এটার পড়সঢ়ষরসবহঃধৎু ঢ়যৎধংব হবে এই। এবং এটাকে ব্যবহার করা হবে না কেন? নিশ্চয়ই করতে হবে, না হলে রাগ খুলবে না। অনেক রাগই তো অঙ্ক। এটা যদি হয় তো ওটা হবে। ডান হাত থাকলে বাঁ হাত থাকবে। তাঁরা অনেক খেটে-খুটে অনেক ঘরানার বহু বন্দিশ, বহু ধ্রুপদ-ধামার, খেয়াল শুনে-পড়ে বিশ্লেষণ করে অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি বলছিলেন রাগ একটা অঙ্ক। রাগ তো permutation-combination -এর নিয়ম মেনে তৈরি হচ্ছে।
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, permutation-combinat তবে প্রত্যেক রাগের একটা নিজস্ব personalitz আছে; সধলড়ৎ রাগগুলোর। তা না হলে thez would not have stood the test of time | Major রাগগুলো যখন গাওয়া হবে তখন সেগুলো কীভাবে গাইতে হবে? আমি ছাত্র-ছাত্রীদের শেখানোর সময় রাগের যে মূল phrase Ges subsidiarz phrase আছে সেগুলো বোঝাই এবং বলি যে এভাবে গাইলে রাগটা খুলবে। তারপরে সেগুলোকে কীভাবে অলঙ্করণ করতে হবে, ঢ়যৎধংব-গুলোকে নানা দিক থেকে কীভাবে approach করতে হবে সেইটা তোমরা শেখো। আমার বিচারে আমি যা বুঝি সেটাই আমি তাদের বোঝাই, শেখাই। কারণ আমি তো শুধু গান শিখিনি, আমি বহু সৎসঙ্গ করেছি। বহু বুদ্ধিমান লোকের সান্নিধ্যে এসেছি। রবীন্দ্রলাল রায়, শ্রীকৃষ্ণ রতন্জন্কর, আমার বাবা, শ্রীকৃষ্ণ রতন্জন্করের অনেক শিষ্য- তার মধ্যে দিনকর কাইকিনির সঙ্গে আমি এক সময়ে যুগলবন্দি গাইতাম। কাজেই আমার জ্ঞানটা শুধু ওস্তাদের শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমি আহরণ করেছি।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার স্ত্রী তো গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর কাছে শিখেছিলেন?
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, বেশ কিছুকাল শিখেছিলেন।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার মায়ের কি সংগীতে কোনো শিক্ষা ছিল?
কুমারপ্রসাদ : না, আমার মা গান শুনতেন। তবে তিনি কিছু বুঝতেন বলে মনে হয় না। অন্যদিকে তাঁর আগ্রহ ছিল। তিনি 888sport app download apk লিখতেন। বুদ্ধদেব বসুর 888sport app download apk পত্রিকায় তাঁর 888sport app download apk ছাপা হতো। রবীন্দ্রনাথ-সংকলিত একটি বইতেও তাঁর 888sport app download apk ছাপা হয়েছিল। আমার মা ছায়া দেবী নামে লিখতেন।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার মা সম্পর্কে অশোক মিত্রের একটা লেখা আছে – ছায়া মাসী। লেখাটা বেশ ভালো।
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, লেখাটা বেশ ভালো।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার বাবা ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে আমরা একভাবে জানি। আপনি তাঁকে দেখেছেন খুব কাছ থেকে। ওঁকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
কুমারপ্রসাদ : দেখুন উনি ছিলেন elite intellectual, উনি সাধারণ লোকের জন্যে নন। ওঁর লেখা, ওঁর লেখাপড়া, ওঁর ভাষা, চিন্তাধারা, অধ্যাপনা – এসব আমাদের তুলনায় অনেক উঁচুমানের। ওঁর মূল্যায়ন করার যোগ্য আমি নই। ওঁর মূল্যায়ন বিভিন্ন লোকে করবেন। কারণ 888sport live footballিক হিসেবে ওঁর একরকম মূল্যায়ন, সমাজতাত্ত্বিক হিসেবে অন্য প্রকারের মূল্যায়ন, সংগীতজ্ঞ হিসেবে আরেকভাবে মানুষ ওঁকে জানবে। তবে এটুকু বলতে পারি, ছাত্র-ছাত্রীরা ওঁর দ্বারা খুব প্রভাবিত হয়েছেন। তাঁদের 888sport free bet অগুনতি। তাঁদের অনেকেই জীবনে একটা কিছু করে দেখিয়েছেন; এবং ওঁদের গুরুকে ওঁরা ভোলেননি। এখন ওঁর বইগুলো পুনর্মুদ্রণ করানোর চেষ্টা করছি। Modern Indian Culture, Indian Music : An Introduction, Basic Concepts of Sociologz – এই তিনটে বই রূপা থেকে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। | Personalitz and Social Sciences সেটাও বের করবে। তবে আমার কাকা বিমলাপ্রসাদ না থাকলে ওঁর বাংলা রচনাবলি বের করা সম্ভব হতো না।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার উত্তর-পুরুষদের মধ্যে কেউ কি উঠে আসছেন?
কুমারপ্রসাদ : আমার উত্তর-পুরুষদের ব্যাপারে খুব উঁচু ধারণা এখনো হয়নি। তবে যারা গান করছে তাদের মধ্যে কয়েকজন নিশ্চয়ই উঠে আসবে। কিন্তু সংগীতজ্ঞ হওয়া – এটা পূর্বাঞ্চলে হচ্ছে না।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার পরিবারের মধ্যে সংগীত…
কুমারপ্রসাদ : না না, coming generation -এর মধ্যে সবাই ট্যাস ফিরিঙ্গি।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার সন্তানদের মধ্যে?
কুমারপ্রসাদ : আমার নিজের মেয়ে অন্যভাবে মানুষ হয়েছে। ভারতীয় সংগীত-টংগীত ওদের মধ্যে নেই। আমার তো নিজের ভাই নেই। কিন্তু খুড়তুতো ভাইয়েরা – বিমলাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছেলেরাও – কেউ সংগীতের দিকে গেল না। সংগীতের ব্যাপারটা তো সবার হয় না। তবে সবাই লেখা-পড়ার জগতে আছে। আমার খুড়তুতো বোন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক, খুড়তুতো ভাই Institute of Social Research -এর অধ্যাপক ছিলেন। আমিই কেবল শিক্ষার জগতে যাইনি। বংশের একমাত্র কুলাঙ্গার।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি যে ওদিকে যেতে পারতেন না তা তো নয়। আপনার বন্ধুবান্ধব সবাই তো বেশ উঁচুমানের। সত্যজিৎ রায়, রাধাপ্রসাদ গুপ্ত, নীরেন চক্রবর্তী – সবাই তো উঁচুমাপের মানুষ।
কুমারপ্রসাদ : সেটা তো আমি নির্বাচন করেছি। এটাতো এমনিতে হয়নি। সেদিক থেকে আমার জীবনটা ঠিকই আছে। শুধু একটাই আক্ষেপ, লেখার কাজটা কেন আরো আগে শুরু করলাম না। পঁয়ষট্টি বছর বয়সে যেটা শুরু করলাম সেটা কেন আটান্ন বছর বয়সে করলাম না। ৎ
যে ঐতিহ্য সেটা যেন শেষ না হয়ে যায়। তারপরে দেখলাম যে, for different sociological reasons আমার এই চেষ্টা ভস্মে ঘি ঢালা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও অভ্যাসবশত করে যাচ্ছি।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি ফোর্ড ফাউন্ডেশনের আনুকূল্যে হিন্দুস্থানি সংগীতের ঘরানা নিয়ে যে কাজ করছেন…
কুমারপ্রসাদ : করেছি। ওটা হয়ে গেছে।
গোলাম মুস্তাফা : এর লক্ষ্য কী ছিল?
কুমারপ্রসাদ : লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন ঘরানার গানগুলো ধরে রাখা এবং ঘরানাগুলোর বিশ্লেষণ। এই কাজটা আমি করে দিয়েছি। বিভিন্ন ঘরানার যেসব 888sport live chatী আছেন তাঁদের হাজারখানেক ঘণ্টার রেকর্ড করেছি। কিন্তু ওখানেই ওগুলো পড়ে আছে। ইন্টারনেটে আনতে কারো সাহস হচ্ছে না। কারণ কপিরাইটের প্রশ্ন আছে। যিনি মারা গেছেন, তাঁর বংশধর এসে যদি পয়সা দাবি করে! এর মধ্যে তো আই.টি.সি আছে। ওরা ব্যাপারটা নেড়ে-চেড়ে দেখছে। সেই নেড়ে-চেড়ে দেখতে দেখতে আমার জীবদ্দশা পার হয়ে যাবে।
গোলাম মুস্তাফা : এগুলো ক্যাসেটে বা সিডিতে বের করা যায় কি-না?
কুমারপ্রসাদ : ক্যাসেটে করেছি। সিডিতেও হয়েছে। কিন্তু এখনো তো বাজারে বের হয়নি। আর ওখানে যাঁরা আছেন তাঁরা কেউ শুনেছেন বলে তো আমার মনে হয় না। দেখুন কোনো সিরিয়াস কাজকর্ম এখন আর আমাদের দেশে সম্ভব নয়। আপনি যা-ই বলুন। 888sport apps সম্পর্কে আমি কোনো উক্তি করব না। কারণ সত্যি সত্যি 888sport appsের এই দিকটা আমি এখনো দেখিনি, বুঝিনি এবং খুব ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হইনি। এটুকু বলতে পারি যে এখানকার লোকেদের মধ্যে আগ্রহের কিছুটা অভাব আছে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে আমি বলেছি যে আগে go for to train the trainers । তাঁদের বোঝাতে হবে কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে। তাঁদের মধ্যে শিক্ষার প্রচার হবে, তবে তো তাঁরা শিক্ষাদান করবেন। আর দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে একটা ক্যাসেটের লাইব্রেরি থাকা দরকার। যেখানে পুরানো দিনের গায়কদের গান সংরক্ষিত থাকবে এবং সেগুলো শিক্ষার্থীরা অবাধে ব্যবহার করতে পারবে। চট্টগ্রামের সংগীত-ভবনও কিছু করতে পারে। কিন্তু ওদের তো আর্থিক অবস্থা তেমন নয়।
গোলাম মুস্তাফা : এখানে একটা সমস্যা আছে। সমগ্র 888sport appsে মাত্র দুটো জায়গাতে এই ধরনের গানের ক্যাসেট, সিডি কিনতে পাওয়া যায়। তারাও যেসব ক্যাসেট আনে সেগুলো সেই তারকা 888sport live chatীদেরই।
কুমারপ্রসাদ : আজকে যাঁরা তারকা-888sport live chatী, তাঁদের।
গোলাম মুস্তাফা : যেমন আজ একজন সমঝদার আপনাকে বলছিলেন, তিনি ওয়াহিদ খাঁ সাহেবের কোনো গান শোনেননি। ওয়াহিদ খাঁ সাহেবের একটা ক্যাসেট পাওয়া যাচ্ছিল বছর কয়েক আগে। দ্বিতীয়বার সেটি আর আসেনি। এখানে এই সমস্যাটা প্রকট।
কুমারপ্রসাদ : এইচ.এম.ভি. চেয়ারম্যান চয়েস বলে কিছু বের করেছিল। সেটা একটা মহৎ কাজ। সব পুরানো ওস্তাদদের যেসব কাজ ৭৮ আর.পি.এম-এর রেকর্ডে ছিল সেগুলো সাফ-সুতরো করে বের করছিল। ঘরানা অনুসারে তারা কাজটা করছিল। তাছাড়া ময়জুদ্দিন খাঁ, গওহরজান এবং আরো অনেকের গান বের করেছিল। সেগুলো তো বিক্রি হলো না। সে-রকম প্রচারও ওরা করেনি। সেজন্যে আমি হতাশ বলব না, তবে নিরাসক্ত হয়ে পড়েছি। আমার চেষ্টা তাই ছিল যাতে আমার কথা সহজবোধ্য হয়। লেখাটা পড়ে সাধারণ লোকেরা আগ্রহী হয়, আবার যাঁরা সাধারণের গণ্ডিতে পড়েন না তাঁদেরও যেন ভালো লাগে। মনে হয় যে, হ্যাঁ এটা করা উচিত। আমার প্রথম বই কুদরত রঙ্গিবিরঙ্গী তো ঘরানার ইতিহাস নয়, এটা Historz of Creativitz, সৃজনশীলতার ইতিহাস। কোন জায়গা থেকে কোন প্রভাবটা এলো, কীভাবে একজন সেটা সমৃদ্ধ করল, সেটাই দেখানোর চেষ্টা করেছি।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি বোধহয় ইচ্ছে করেই লেখার ভঙ্গিটা বৈঠকি ঢংয়ে করেছেন।
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ। প্রথমত ওটাই আমার ভাষা। আর দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল কঠিন বিষয়কে সহজ করে বলা।
গোলাম মুস্তাফা : তাছাড়া সংগীতও একটা বৈঠকি ব্যাপার। আপনি বোধহয় সেই মেজাজটা বজায় রাখতে চেয়েছেন।
কুমারপ্রসাদ : সেটা আমার বইতেই বলা আছে : ‘It will be a serious book in a lighter vein.’
গোলাম মুস্তাফা : এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। কেউ কেউ কড়া সমালোচনাও করেছেন।
কুমারপ্রসাদ : কড়া ঠিক করেনি, তবে অনেকে সমালোচনা করেছেন। একজন আমাকে বাইশ পাতার একটা চিঠি লিখে জানতে চেয়েছেন আমি বইতে হিন্দি ভাষা কেন ব্যবহার করেছি। তিনি উর্দু বলেননি, হিন্দি বলেছেন। তাঁর অভিযোগ, আমি কেন বাংলা ভাষার সঙ্গে হিন্দি ব্যবহার করেছি। তার জবাব হচ্ছে, বেশ করেছি। যে-সময়ের কথা লিখছি, সেই দুনিয়ার flavour convez করতে হলে বাংলার সঙ্গে হিন্দি মেশাতে হবে। আর দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে অনেকেই আমাকে বলেছেন যে, আমি নাকি শুধু মুসলমান ওস্তাদদের সম্পর্কে লিখেছি, হিন্দুদের সম্পর্কে লিখিনি। আমি তারও জবাব দিয়েছি যে, আজকের দিনে এ ধরনের উক্তি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত নয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমার কুদরত রঙ্গিবিরঙ্গীতে যেসব ওস্তাদের কথা বলেছি, পাঠকরা তার আগে তাদের নামও শোনেনি। ভাস্কর বুয়ার কথা কেউ জানতেন না। দিলীপচন্দ্র বেদীকে কটা লোক জানতেন, আমি জানি না। পরবর্তীকালে সিদ্ধেশ্বরী বাঈ থেকে শুরু করে বহু মারাঠি ওস্তাদের কথা লিখেছি। তৃতীয় কথা হলো সংগীতে আবার হিন্দু-মুসলমান কী? মুসলমান ওস্তাদরা না থাকলে কি আজকে হিন্দুস্থানি সংগীত থাকত? তবে এধরনের কথা যারা বলে সৌভাগ্যবশত আমাদের দেশে তার 888sport free bet কম। আপনাদের এখানে কীরকম জানি না।
গোলাম মুস্তাফা : আমাদের এখানে ব্যাপারটা অন্যরকম। সবকিছুই মুসলমানরা করেছে – এরকম একটা গৌরববোধ কাজ করে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ভাবটা আছে।
কুমারপ্রসাদ : কথাটা ঠিকই বলছে। কিন্তু composite culture -এর ব্যাপারটা না হিন্দুর, না মুসলমানের, না বৌদ্ধের, না খ্রিষ্টানের।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি বলছেন যে, ওরা ঠিকই বলছে। কিন্তু এই বলার উদ্দেশ্যটা কী? বক্তব্যের সত্যতা হয়ত আছে কিন্তু এটা বলার মধ্যে একটা উদ্দেশ্য কাজ করে।
ঘরানার ব্যাপারে আপনি বলেছেন যে, ঘরানা প্রতিবন্ধক হিসেবেও কাজ করে।
কুমারপ্রসাদ : প্রতিবন্ধক বলেছি এই অর্থে যে এর মধ্যে একটা গোঁড়ামি কাজ করে। আমার ঘরানার বাইরে কোনো গান শুনবে না – এই ধরনের বিধিনিষেধ ছিল। তখন শোনার সুযোগও কম ছিল। ওস্তাদরা শুনতেন, শুনে মুখে তারিফ করতেন। কিন্তু নিজের ঘরানার বাইরে কোনো কিছু শেখায় বাধা ছিল। আর অসম্ভব কৃপণতাও ছিল – আমি যাকে-তাকে দেবো না। এই করে যে কত ভালো ভালো জিনিস গোরস্তানে চলে গেছে তার ঠিক-ঠিকানা নেই।
গোলাম মুস্তাফা : আবার তালিমের জন্যে ঘরানার প্রয়োজনের কথাও তো বলেছেন।
কুমারপ্রসাদ : সেটা ঠিক। কারণ ঘরানাদার ওস্তাদের কাছে না গেলে তালিম হবে না। তাঁদের তালিম দেওয়ার প্রক্রিয়াটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
গোলাম মুস্তাফা : ঘরানার অনুদারতার ব্যাপারটা যদি আমরা স্বীকারও করে নিই, তবু সব ওস্তাদই নিজ নিজ ঘরানায় উৎকর্ষ আনার চেষ্টা করেছেন। এটা তো ইতিবাচক দিক।
কুমারপ্রসাদ : সে তো হবেই।
গোলাম মুস্তাফা : কাজেই এটাকে একেবারে নাকচও করা যাবে না, আবার হুবহু…
কুমারপ্রসাদ : ব্যাপার হচ্ছে কি জানেন, শিক্ষিত লোকজন – যাঁদের liberal background আছে – এরকম তো ভাতখাণ্ডেজীর আগে সংগীতে বড় একটা কেউ আসেননি। যাঁরা এসেছিলেন – যেমন বাঙালিদের মধ্যে রাজা শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর, কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায় – তাঁরা তো practising artist ছিলেন না। তাঁরা ওটা প্রসার করার চেষ্টা করেছেন। যাঁরা শিক্ষা-দীক্ষা পেয়েছেন, বোঝেন, যাঁদের বিশ্লেষণী শক্তি আছে তাঁদের মধ্যে ঔদার্য আসার কথা। তাঁরা ওই কথা বলবেন যে, তালিমের জন্যে ঘরানাদার ওস্তাদের কাছে যাওয়া উচিত। তবে তিনি যা বলবেন তা-ই বেদবাক্যের মতো মানতে হবে, এর কোনো মানে নেই।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি যেগুলোকে প্রধান ঘরানা হিসেবে অভিহিত করেছেন, বর্তমানে সেই ঘরানাগুলোর প্রধান প্রতিনিধি কারা?
কুমারপ্রসাদ : গোয়ালিয়র, জয়পুর এখনো বেঁচে আছে। গোয়ালিয়রে উল্লাস কশালকর আছেন, লক্ষ্মণ পণ্ডিত আছেন। জয়পুরের অনেকেই গাইছেন। শ্রুতি সাদালিকর আছেন, অশ্বিনী ভিদে আছেন। আগ্রা বর্তমানে শ্মশান। কিরানায় ভীমসেন যোশী আছেন। পাতিয়ালায় অজয় চক্রবর্তী আছেন, তবে ওঁর গানটা ধীরে ধীরে পালটে যাচ্ছে।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি হারমোনিয়ামকে বলেন…
কুমারপ্রসাদ : একটা বেজন্মা যন্ত্র।
গোলাম মুস্তাফা : কিন্তু জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ খুব ভালো হারমোনিয়াম বাজাতেন এবং আপনার গানের সঙ্গে বাজিয়েছেনও।
কুমারপ্রসাদ : অজয় চক্রবর্তী হয়ত ওঁর চেয়ে ভালো হারমোনিয়াম বাজান। আমার সঙ্গেও একবার সংগত করেছিলেন। আমার বক্তব্য হচ্ছে কিছু না থাকলে হারমোনিয়াম নিতে হয়। কিন্তু হারমোনিয়ামে তো শ্রুতি নেই, মীড় নেই, গমক নেই। এই তিনটা পিলারের ওপর আমাদের হিন্দুস্থানি সংগীত দাঁড়িয়ে। যে-যন্ত্রে এগুলো নেই, সেই যন্ত্র আমার নেওয়ার দরকার কী? রবীন্দ্রনাথ তো হারমোনিয়াম নিতেন না। উনি সঙ্গে এস্রাজ নিতেন।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার বাবা ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কি কখনো গান করেছেন?
কুমারপ্রসাদ : না, তিনি গান করেননি। মানে perform করেননি।
গোলাম মুস্তাফা : কিন্তু ওঁর তো সংগীতে তালিম ছিল?
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, উনি রাধিকা গোস্বামীর কাছে, পরে তাঁর শিষ্য মহিম মুখুয্যের কাছে ধ্রুপদের তালিম নিয়েছিলেন। পরে লখনউয়ে যখন ভাতখাণ্ডেজীর কলেজ চালু হয়, তাতে ওঁর রোল নম্বর এক ছিল। উনি আমাকে বলেছিলেন যে শুধু কল্যাণ ঠাটের ওপরে ভাতখাণ্ডেজী আটখানা বক্তৃতা করেছিলেন। সেগুলোর নোট নিয়েছিলেন, হারিয়ে গেছে। উনি বলেছিলেন, ‘ভাতখাণ্ডেজীর সান্নিধ্যে আসার পর সংগীত সম্পর্কে কোনো তর্ক করা আমি ছেড়ে দিয়েছি। বিদ্যা কাকে বলে? যে ভাতখাণ্ডেজী এবং শ্রীকৃষ্ণ রতন্জন্করের সান্নিধ্যে এসেছে সে আর কখনো মুখ খুলবে না।’ এটা আমারও বিশ্বাস। তাঁদের বিশ্লেষণের পেছনে লজিক ছিল। কেন এটা হবে? এই যে phrase–টা আমি ঁংব করলাম এটার complimentarz phrase হবে এই। এবং এটাকে ব্যবহার করা হবে না কেন? নিশ্চয়ই করতে হবে, না হলে রাগ খুলবে না। অনেক রাগই তো অঙ্ক। এটা যদি হয় তো ওটা হবে। ডান হাত থাকলে বাঁ হাত থাকবে। তাঁরা অনেক খেটে-খুটে অনেক ঘরানার বহু বন্দিশ, বহু ধ্রুপদ-ধামার, খেয়াল শুনে-পড়ে বিশ্লেষণ করে অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি বলছিলেন রাগ একটা অঙ্ক। রাগ তো permutation-combination -এর নিয়ম মেনে তৈরি হচ্ছে।
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, permutation-combination তবে প্রত্যেক রাগের একটা নিজস্ব personalitz আছে; সধলড়ৎ রাগগুলোর। তা না হলে thez would not have stood the test of time| Major রাগগুলো যখন গাওয়া হবে তখন সেগুলো কীভাবে গাইতে হবে? আমি ছাত্র-ছাত্রীদের শেখানোর সময় রাগের যে মূল ঢ়যৎধংব এবং phrase Ges subsidiarz phrase আছে সেগুলো বোঝাই এবং বলি যে এভাবে গাইলে রাগটা খুলবে। তারপরে সেগুলোকে কীভাবে অলঙ্করণ করতে হবে, , phrase -গুলোকে নানা দিক থেকে কীভাবে approach করতে হবে সেইটা তোমরা শেখো। আমার বিচারে আমি যা বুঝি সেটাই আমি তাদের বোঝাই, শেখাই। কারণ আমি তো শুধু গান শিখিনি, আমি বহু সৎসঙ্গ করেছি। বহু বুদ্ধিমান লোকের সান্নিধ্যে এসেছি। রবীন্দ্রলাল রায়, শ্রীকৃষ্ণ রতন্জন্কর, আমার বাবা, শ্রীকৃষ্ণ রতন্জন্করের অনেক শিষ্য- তার মধ্যে দিনকর কাইকিনির সঙ্গে আমি এক সময়ে যুগলবন্দি গাইতাম। কাজেই আমার জ্ঞানটা শুধু ওস্তাদের শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমি আহরণ করেছি।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার স্ত্রী তো গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর কাছে শিখেছিলেন?
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, বেশ কিছুকাল শিখেছিলেন।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার মায়ের কি সংগীতে কোনো শিক্ষা ছিল?
কুমারপ্রসাদ : না, আমার মা গান শুনতেন। তবে তিনি কিছু বুঝতেন বলে মনে হয় না। অন্যদিকে তাঁর আগ্রহ ছিল। তিনি 888sport app download apk লিখতেন। বুদ্ধদেব বসুর 888sport app download apk পত্রিকায় তাঁর 888sport app download apk ছাপা হতো। রবীন্দ্রনাথ-সংকলিত একটি বইতেও তাঁর 888sport app download apk ছাপা হয়েছিল। আমার মা ছায়া দেবী নামে লিখতেন।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার মা সম্পর্কে অশোক মিত্রের একটা লেখা আছে – ছায়া মাসী। লেখাটা বেশ ভালো।
কুমারপ্রসাদ : হ্যাঁ, লেখাটা বেশ ভালো।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার বাবা ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে আমরা একভাবে জানি। আপনি তাঁকে দেখেছেন খুব কাছ থেকে। ওঁকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
কুমারপ্রসাদ : দেখুন উনি ছিলেন elite intellectual, উনি সাধারণ লোকের জন্যে নন। ওঁর লেখা, ওঁর লেখাপড়া, ওঁর ভাষা, চিন্তাধারা, অধ্যাপনা – এসব আমাদের তুলনায় অনেক উঁচুমানের। ওঁর মূল্যায়ন করার যোগ্য আমি নই। ওঁর মূল্যায়ন বিভিন্ন লোকে করবেন। কারণ 888sport live footballিক হিসেবে ওঁর একরকম মূল্যায়ন, সমাজতাত্ত্বিক হিসেবে অন্য প্রকারের মূল্যায়ন, সংগীতজ্ঞ হিসেবে আরেকভাবে মানুষ ওঁকে জানবে। তবে এটুকু বলতে পারি, ছাত্র-ছাত্রীরা ওঁর দ্বারা খুব প্রভাবিত হয়েছেন। তাঁদের 888sport free bet অগুনতি। তাঁদের অনেকেই জীবনে একটা কিছু করে দেখিয়েছেন; এবং ওঁদের গুরুকে ওঁরা ভোলেননি। এখন ওঁর বইগুলো পুনর্মুদ্রণ করানোর চেষ্টা করছি। Modern Indian Culture, Indian Music : An Introduction, Basic Concepts of Sociologz- এই তিনটে বই রূপা থেকে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। Personalitz and Social Sciences সেটাও বের করবে। তবে আমার কাকা বিমলাপ্রসাদ না থাকলে ওঁর বাংলা রচনাবলি বের করা সম্ভব হতো না।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার উত্তর-পুরুষদের মধ্যে কেউ কি উঠে আসছেন?
কুমারপ্রসাদ : আমার উত্তর-পুরুষদের ব্যাপারে খুব উঁচু ধারণা এখনো হয়নি। তবে যারা গান করছে তাদের মধ্যে কয়েকজন নিশ্চয়ই উঠে আসবে। কিন্তু সংগীতজ্ঞ হওয়া – এটা পূর্বাঞ্চলে হচ্ছে না।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার পরিবারের মধ্যে সংগীত…
কুমারপ্রসাদ : না না, coming generation -এর মধ্যে সবাই ট্যাস ফিরিঙ্গি।
গোলাম মুস্তাফা : আপনার সন্তানদের মধ্যে?
কুমারপ্রসাদ : আমার নিজের মেয়ে অন্যভাবে মানুষ হয়েছে। ভারতীয় সংগীত-টংগীত ওদের মধ্যে নেই। আমার তো নিজের ভাই নেই। কিন্তু খুড়তুতো ভাইয়েরা – বিমলাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছেলেরাও – কেউ সংগীতের দিকে গেল না। সংগীতের ব্যাপারটা তো সবার হয় না। তবে সবাই লেখা-পড়ার জগতে আছে। আমার খুড়তুতো বোন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক, খুড়তুতো ভাই Institute of Social Research -এর অধ্যাপক ছিলেন। আমিই কেবল শিক্ষার জগতে যাইনি। বংশের একমাত্র কুলাঙ্গার।
গোলাম মুস্তাফা : আপনি যে ওদিকে যেতে পারতেন না তা তো নয়। আপনার বন্ধুবান্ধব সবাই তো বেশ উঁচুমানের। সত্যজিৎ রায়, রাধাপ্রসাদ গুপ্ত, নীরেন চক্রবর্তী – সবাই তো উঁচুমাপের মানুষ।
কুমারপ্রসাদ : সেটা তো আমি নির্বাচন করেছি। এটাতো এমনিতে হয়নি। সেদিক থেকে আমার জীবনটা ঠিকই আছে। শুধু একটাই আক্ষেপ, লেখার কাজটা কেন আরো আগে শুরু করলাম না। পঁয়ষট্টি বছর বয়সে যেটা শুরু করলাম সেটা কেন আটান্ন বছর বয়সে করলাম না।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.