হেসে পরিক্রমা একটি তীর্থ888sport slot gameের অভিজ্ঞতা

মার্টিন কেম্পশেন

888sport app download apk latest version : জয়কৃষ্ণ কয়াল

বিশ শতকের যে-কোনো জার্মান লেখকের চেয়ে হেরমান হেসের পাঠক888sport free betর ব্যাপ্তি অনেক বেশি। তাঁর গল্প, 888sport alternative link, 888sport app download apk ও নিবন্ধের 888sport app download apk latest version বাংলা-হিন্দিসহ সব মুখ্য ভাষাতেই পাওয়া যায়। জীবন সম্পর্কে রোমান্টিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামাজিক দুষ্টক্ষত তথা মানুষের দুর্দশার জন্য গভীর উদ্বেগের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন তিনি। জন্মসূত্রে রক্ষণশীল প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টান; কিন্তু সেই ধর্মীয় পরিসর থেকে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। প্রকৃত ঈশ্বর-সন্ধানী ব্যক্তির মতো সব মানুষের অন্তর্বিকাশ মেনে নেওয়ার মানসিক ঔদার্য নিয়ে ভালোবেসেছেন 888sport app ধর্মকেও, বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও তাওবাদকে (ঞধড়রংস)। ভারতবর্ষ ছিল তাঁর প্রেরণার উৎস।
আমার বার্ষিক গ্রীষ্মকালীন ইউরোপ সফরের সময় এমনও হয়েছে যে, হেরমান হেসে যেখানে যেখানে থেকেছেন, তেমন একাধিক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। আমার মনে হয়েছে, ব্যাপারটা তীর্থযাত্রার শামিল। তাঁর জন্ম ছোট্ট একটা শহর কালফে, জায়গাটা স্টুটগার্টের কাছাকাছি। শহরের অবস্থান একটা সংকীর্ণ উপত্যকায়। কালফের দুদিকে বহতা নদী নাগোল্ড (ঘধমড়ষফ) উপত্যকা ছাড়িয়ে ক্রমে ঢালের দিকে গড়িয়ে গেছে। জায়গাটা এখনো ছবির মতো, অসংখ্য সাবেকি আমলের বাড়িঘর; সেগুলোর পরিচর্যায় পরিচ্ছন্নতার ছোঁয়া। শহরের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় ছোট্ট একটা বাজারের মধ্যে লেখকের জন্মভিটা।
হেসের সৃষ্টিসম্ভারে অনেক আত্মজীবনীমূলক রচনা আছে, সেগুলো অনেক সময় কথা888sport live footballের আদল নিয়েছে। কাঁচা বয়সে হেসে কালফ শহরের যে খুদে-শহরমনস্কতা আর সংকীর্ণ খ্রিষ্টান আনুগত্যের অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন, তা তাঁকে বিষাদ-ভারাক্রান্ত করেছে।
সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য, মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার জন্য তাঁর তরুণমন আকুলি-বিকুলি করেছে।
কালফের যাঁরা গণ্যমান্য ব্যক্তি, তাঁরা কেউই হেসের এ-ধরনের মনোভাবে সন্তুষ্ট ছিলেন না, তাঁরা এড়িয়ে চলেছেন তাঁকে। এমনকি তাঁর মৃত্যুর পরেও কালফের কয়েক দশক লেগেছে তাঁদের এই সেরা নামী সন্তানকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিতে। কোনো একটা সময়ে শুরু হয়েছে দ্বিবার্ষিক হেসে আলোচনা চক্রের, হেসের জন্মভিটের কাছে সুসজ্জিত একটা প্রদর্শনীশালা খোলা হয়েছে। কালফে একটা প্রাতিষ্ঠানিক 888sport live football 888sport app download bdের ব্যবস্থাও হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পুরসভার বোধোদয় হয়েছে যে, হেসে সেখানে ভূমিষ্ঠ হয়ে শুধু এই শহরটাকে ধন্য করেননি, তাঁর একটা নিজস্ব বাজারদরও আছে। তাঁর ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে তাই জমাটি হেসে মেলার সূচনা করেছিল কালফ। কমবেশি ২৫০ রকম কার্যক্রমের ব্যবস্থা ছিল সে-মেলায়।
স্টুটগার্টের উত্তরে ছিল মাউলব্রোন (গধঁষনৎড়হহ) নামে মধ্যযুগীয় একটি সিস্টেরসিয়ান (ঈরংঃবৎপরধহ) মঠ, মঠটি পরবর্তীকালে প্রটেস্ট্যান্ট স্কুলে পরিণত হয়। ১৮৯১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সাত মাস এই স্কুলের ছাত্র হিসেবে পড়াশোনা করেছেন হেসে। স্কুলের ঘিঞ্জি-আদাড়ি আবহাওয়া, সেই সঙ্গে নীরস, এমনকি নিষ্ঠুর শিক্ষাপদ্ধতি আর ছাত্রদের পারস্পরিক প্রতিযোগিতা, কখনোবা প্রতিহিংসার সম্পর্ক, বয়ঃসন্ধিকালের সংবেদনশীল হেসের পক্ষে ছিল অসহনীয়। স্কুল থেকে পালিয়ে গিয়েছেন তিনি, মনে এমন গভীর হতাশা এসেছে যে, আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। মানসিক হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসার দরকার পর্যন্ত হয়েছে।
সেই কাঁচা বয়সেই পাকাপোক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হেসে, তিনি শুধু ‘লেখকই হবেন, অন্যকিছু নয়’। সম্ভবত সেই মরিয়া লক্ষ্যই তাঁকে তাঁর সমস্যা থেকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। মাউলব্রোনে তাঁর দুর্ভোগের বিষয় নিয়ে পরবর্তীকালে তিনি লিখবেন তাঁর বিখ্যাত 888sport alternative link আন্ডার দ্য হুইল (টহফবৎ ঃযব ডযববষ, ১৯০৬)। এদেশেও আমাদের মনে পড়বে কলকাতার ছাত্র হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অভিজ্ঞতার কথা। হেসে এবং রবীন্দ্রনাথ দুজনই স্কুল ছেড়েছেন লেখাপড়া শেষ না করে।… পরে তাঁর নার্সিস ও গোল্ডমুন্ড (ঘধৎুরংং ধহফ এড়ষসঁহফ, ১৯৩০) 888sport alternative linkে হেসে মঠের অনুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে অবশ্য মাউলব্রোনকে তাঁর 888sport apk download apk latest version নিবেদন করেছেন তিনি।
মাউলব্রোনের সেই হাত-পা ছড়ানো চমৎকার মঠচত্বর এখনো স্কুল হিসেবেই আছে। মধ্যযুগীয় সেই কাঠামো এখনো অক্ষত, তা জার্মানির সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন হর্ম্যচত্বর হয়ে উঠেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, হেসে প্রতিষ্ঠানটির নামে যে-‘কলঙ্ক’ এঁকে দিয়েছেন, তা কাটিয়ে উঠতে মাউলব্রোন কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট সময় লেগেছে। কিন্তু কালে কালে তাঁরাও ধাতস্থ হয়েছেন এবং তাঁদের অনেক উৎসব-অনুষ্ঠানে এখন হেরমান হেসেকে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন; তাঁদের বিশাল চত্বর ব্যবহৃত হচ্ছে সেই উৎসবে।
হেরমান হেসের জন্ম যদিও জার্মানিতে এবং আমরা তাঁকে ‘জার্মান লেখক’ বলতেই ভালোবাসি, কিন্তু জীবনের দীর্ঘতম সময় তিনি কাটিয়েছেন সুইজারল্যান্ডে (ঝরিঃুবৎষধহফ), সুইস নাগরিকত্ব নিয়েছেন। ১৯১২ সালে তিনি প্রথমে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নে (ইবৎহব) বসবাস করতে শুরু করেন। তারপর ১৯১৯ থেকে ১৯৬২ সালে, অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত ছিলেন মন্টানয়োলায় (গড়হঃধমহড়ষধ)। জায়গাটা ইতালির সীমান্তঘেঁষা সুইজারল্যান্ডের ইতালিয়ানভাষী অঞ্চল টিচ্চিনোতে (ঞরপরহড়)।
রবীন্দ্রনাথের মতো হেসেও ছিলেন প্রকৃতির সঙ্গে রোমান্টিক প্রেমে মশগুল। পরপর যে-দুটো বাড়িতে তিনি থেকেছেন, কাজা কামুজ্জি (ঈধংধ ঈধসুুঁর, ১৯৩১ সাল পর্যন্ত) এবং কাজা রোস্যাতে (ঈধংধ জড়ংংধ), সেই দুটি বাড়িই ছিল ঢালু একটা পর্বতের চূড়ায়। ওপর থেকে দেখা যায়, লুগানো (খঁমধহড়) শহর আর বিশাল একটা মনোরম হ্রদ – জঙ্গলে ছাওয়া পাহাড়ের মধ্যে গুটিসুটি মেরে থাকা অনেক গ্রামের পাশে। হেসে বারবার তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন টিচ্চিনোর শৈল প্রকৃতির কাছে। তাঁকে মুগ্ধ করেছে তা, প্রেরণা দিয়েছে নিরবচ্ছিন্নভাবে।
রবীন্দ্রনাথ এবং হেসে দুজনেই চল্লিশ বছর বয়সের কাছাকাছি সময়ে নির্বাসন নিয়েছেন যে-যার শান্তির আশ্রয়ে, যথাক্রমে শান্তিনিকেতন আর মন্টানয়োলায় এবং প্রায় আরো চল্লিশ বছর কাটিয়েছেন তাঁদের সেই স্বনির্বাচিত সৌন্দর্যের মাঝখানে। কোনো প্রথাগত তালিম ছাড়াই ছবি আঁকতে শুরু করেছেন দুজনেই। টিচ্চিনোর নিসর্গকে ভালোবেসে হেসে একটার পর একটা ছবি এঁকেছেন জলরঙে। রবীন্দ্রনাথ ভালোবেসেছেন আপন অন্তর্লোক, সেই জগতের সৌন্দর্যলক্ষ্মী আর শয়তানের রূপ-রং দিয়েছেন তিনি।
২০০৪ সালের জুনের কথা। উত্তর ইতালিতে আমার দিদিমার বাড়িতে গিয়ে ঠিক করলাম, আমার পূর্বতন শিক্ষক স্থানীয় এক জার্মান দম্পতির সঙ্গে মন্টানয়োলায় বেড়াতে যাব। তাঁদের গাড়িতে আমাকে নিয়ে দুঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে তাঁরা চললেন সুইজারল্যান্ডের জমকালো লাগো মাজ্জোরে (খধমড় গধমমরড়ৎব) বরাবর। লুগানোর কাছাকাছি এসে বুঝলাম হেসে যে-ভূমিরূপ ভালোবাসতেন, যা তিনি কাগজে এঁকেছেন, তা মোটেই এই ভূপ্রকৃতি নয়। লুগানো এখন 888sport live chatনগরী, উপত্যকাভূমির দৈর্ঘ্য আড়াআড়ি চিরে বেরিয়ে গেছে প্রশস্ত ব্যস্ত রাজপথ। আমরা যখন কাজা কামুজ্জির কাছে এসে দাঁড়ালাম, দেখলাম হাজার হাজার মোটরের গড়গড় শব্দে বাতাস ঝালাপালা। জীবদ্দশাতেই হেসে এই ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য আক্ষেপ করতেন। আজ তাহলে তিনি কী বলতেন?
হেসের দুটি প্রাসাদই এখন একাধিক পরিবারের দখলদারিতে। জনসাধারণের জন্য তাই সেগুলো উন্মুক্ত নয়। পাঁচ বছর আগে চেষ্টা হয়েছিল কাজা কামুজ্জির যে-অংশে হেসে থাকতেন তা কেনার, সে- প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, যথেষ্ট পরিমাণ টাকার জোগাড় করা যায়নি। তবে একটা ছোট প্রদর্শনীশালা খোলা হয়েছে ওই জায়গাসংলগ্ন ছোট একটা বাড়িতে। জায়গাটায় এসে সেই মহান স্রষ্টার অস্তিত্ব এমন প্রবলভাবে অনুভব করলাম যে, আমার প্রায় নিশ্বাস আটকে এলো।
কাজা রোস্যার খোঁজ করতে গিয়ে দেখলাম বাড়িটা শনাক্ত করা কঠিন। সরু একটা পায়ে চলার রাস্তার পাশে তা যথারীতি গাছপালা আর ঝোপঝাড়ে আধাআধি 888sport app পড়ে আছে। ফটকে নামফলক বা কোনো নিশানচিহ্ন নেই। বাড়ির বাসিন্দারা কি তাঁদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে এতটাই সন্ত্রস্ত?
পাহাড় থেকে নামার পথে আমরা থামলাম সেন্ট আবোন্ডিও (ঝঃ. অননড়হফরড়) গির্জার কাছে। সূচিমুখ সাইপ্রাস (ঈুঢ়ৎবংং) গাছেরা খোলা তরবারি-হাতে প্রহরীর মতো চারুসুন্দর বাড়িটাকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে। দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। গির্জার পরেই সেন্ট আবোন্ডিও সমাধিভূমি। এখানেই অন্তিম বিশ্রামে শায়িত আমাদের পরমপ্রিয় কবি ও লেখক। কঠিন একখ- পাষাণফলক নিজের শরীরে হেসের নাম উৎকীর্ণ করে কবরটা দেখিয়ে দিচ্ছে। এই সমাধিভূমিতে অন্য অনেক সমাধির যে আড়ম্বর ও সমারোহ, হেসের সমাধিতে তা নেই।
ইউরোপের রীতি অনুযায়ী হেরমান হেসে তাঁর জীবদ্দশায় এই সামান্য ভূমিটুকু কিনে রেখেছিলেন এবং সম্ভবত সমাধির সাদামাটা পরিকল্পনাতেও তাঁর হাত ছিল কিছু। কিন্তু তাঁর বিমুগ্ধ পাঠকরা যে গুচ্ছগুচ্ছ ফুল রেখে গেছে ধূসর পাথরে – যার কিছু মøান, কিছু এখনো সজীব – সেই ফুলগুলোতে নিশ্চয় হেসের কোনো হাত ছিল না।
মহাকালের অনন্ত নীরবতার আড়ালে লেখক আর পাঠকের নিঃশব্দ আলাপ এভাবেই চলতে থাকবে, চলতেই থাকবে…।
আমার হেসে-পরিক্রমা সম্পূর্ণ হবে না তাঁর সম্পর্কে আরো কিছু কথা না বললে, বিশেষ করে তাঁর ছেলে হাইন্যার হেসের (ঐবরহবৎ ঐবংংব) সঙ্গে আমার সাক্ষাতের কথা না বললে।
হেরমান হেসে প্রয়াত হয়েছেন পঁচাশি বছর বয়সে, ১৯৬২ সালে। ২০০১ সালে যখন হেসে-পরিক্রমা করি, তখন তাঁর তিন ছেলের মধ্যে একমাত্র বিরানব্বই বছর বয়সী হাইন্যার হেসে বেঁচে। তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ১৯৯৪ সালে, হেসের জন্মস্থান কালফ শহরে হেরমান হেসে আলোচনা চক্রে (ঐবৎসধহহ ঐবংংব ঈড়ষষড়য়ঁরঁস) গিয়েছিলাম হেরমান হেসের সঙ্গে কালিদাস নাগের বন্ধুত্ব নিয়ে নিবন্ধ পড়তে। শ্রীনাগ ছিলেন কলকাতার নামকরা ঐতিহাসিক এবং রবীন্দ্র-সহচর। হাইন্যার হেসে আমার নিবন্ধের প্রশংসা করলেন। জানালেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তিনি ভারত সফরে এসেছিলেন, তখন সারা উপমহাদেশে তাঁর সঙ্গে ছিলেন একজন আলোকচিত্রী।
আমরা দুজনে একটা বিকেল একসঙ্গে কাটালাম আমাদের দুজনেরই বন্ধু-দম্পতি ফোলক ও উরসুলা মিশেলসের (টৎংঁষধ গরপযবষং) বাড়িতে। জায়গাটা ফ্রাংকফুর্টের কাছে। সেখানে হাইন্যারের কজন ছেলেমেয়ে এবং নাতি-নাতনিও এসে জড়ো হয়েছিলেন। হাইন্যার সুইজারল্যান্ডে তাঁর বাড়িতে আমাকে নিমন্ত্রণ করলেন, সেই নিমন্ত্রণ অবশ্য আমি রাখতে পেরেছি আরো এক বছর পরে।
হাইন্যার হেসে থাকতেন দক্ষিণ সুইজারল্যান্ডের টিচ্চিনো পাহাড়ে, লাগো মাজ্জোরের ওপরের দিকে। সামনে কয়েক মাইল জুড়ে ছড়িয়ে আছে আলপ্স (অষঢ়ং) পর্বতমালার দক্ষিণের একটি হ্রদ। জায়গাটা পর্যটন আবাস এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত আসকোনা (অংপড়হধ) শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। একাই থাকতেন তিনি, আর্চেনয়ো (অৎপবমহড়) নামক একটা গ্রামের বাইরের দিকে। নিচে হ্রদটা থাকার জন্য গ্রামটার দৃশ্যপট অসাধারণ। কিন্তু হাইন্যার হেসের বাড়িটার অবস্থান ঝোপঝাড় আর গাছপালার মধ্যে, তাতে শুধু বাড়িটাই আড়াল হয়নি, হ্রদ দেখার ক্ষেত্রেও অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা থেকে সরু একটা ফুটপাত ধরে নিচের দিকে নামতে শুরু করলে হঠাৎই সামনে পড়বে বাড়ির দরজা। বড় রাস্তা বা ফুটপাতের কোথাও বাড়িটা সম্পর্কে কোনো নিশান-ইঙ্গিত নেই। কারণটা তক্ষুনি স্পষ্ট হয়ে গেল আমার কাছে – আমি প্রবেশ করছি বিজনমনের নিভৃত ভূমিতে, সেই মনটা এক সন্ন্যাসীর।
অভ্যন্তরীণ গৃহসজ্জার কাজ করতেন হাইন্যার হেসে। অনেক শোকেস সাজিয়েছেন তিনি, সাজিয়েছেন বড় বড় দোকানের দেখন জানালা (ফরংঢ়ষধু রিহফড়)ি। তাঁর পরিকল্পিত বাড়িটাও তেমনি ব্যক্তিগত সৌন্দর্যবোধ আর ব্যবহারিক বিলাসের নিদর্শন। চারদিক জুড়ে বইয়ের তাক, ওপরটা সাজানো আসল (ড়ৎরমরহধষ) চিত্রমালা দিয়ে, ফাঁকা জায়গা সামান্যই। কিছু ছবি হেরমান হেসের আঁকা, জলরঙে। বাকিগুলো এঁকেছেন হাইন্যার হেসের বন্ধুরা। বসার ঘরের ভেতর থেকে সরু ঘোরানো সিঁড়ি উঠে গেছে তিনতলা পর্যন্ত। সেদিন বিকেলে আবহাওয়া ছিল চমৎকার, তাই বাগানে বসেই আমাদের আনা চা আর কেকের সদ্ব্যবহার হলো।
হাইন্যার হেসের আশ্রম নিবাসে আমার দ্বিতীয় হানা ২০০১-এর জুনে। এবার আমাকে যেটা চমকিত করল তা হলো বাবা-ছেলের দৈহিক আদলের সাদৃশ্য। একই রকম চৌকো চিবুক, সেই জেদ, হয়তোবা আরো কঠোর প্রত্যয়ী অভিব্যক্তি। আমার দুই সাক্ষাৎকারের মাঝের সময়টা জুড়ে ছিল হাইন্যারের লেখা অনেক চিঠি, সেগুলো এদেশে তিনি পাঠিয়েছিলেন আমাকে। সংক্ষিপ্ত, টাইপ করা চিঠি। তাতে লেখক হিসেবে আমার কাজে, শান্তিনিকেতনের কাছে সাঁওতাল গ্রামে আমার সেবামূলক কাজে সমর্থন জুগিয়েছেন তিনি। এমনকি আমাদের শিক্ষামূলক কাজের জন্য কিছু অনুদানও দিয়েছেন।
চিঠিতে আমি যা লিখেছি, খুঁটিয়ে পড়ে সব বিষয়ে তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। একই সঙ্গে উল্লেখ করেছেন তাঁর অসুস্থতার কথা, তাঁর শারীরিক দুর্বলতার কথা। সব চাহিদার মোকাবেলা করতে গিয়ে নিজের সময় ও সামর্থ্যরে সঙ্গে তাঁর লড়াইয়ের কথা। তা জেনে চিঠিগুলো পেয়ে আরো বেশি ধন্য মেনেছি নিজেকে এবং সত্যি বলতে কী, আমাকে নতুন শক্তিতে উজ্জীবিত করে চিঠিগুলো তাদের উদ্দেশ্যও সিদ্ধ করেছে। বরিষ্ঠ বিচক্ষণ বন্ধু হিসেবে কি উপযুক্ত মানুষ!
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাইন্যার হেসেকে ক্রমশ তৈরি হয়ে উঠতে হয়েছে বাবার উত্তরাধিকার বহনের জন্য। গর্ব, সেইসঙ্গে বাবার কীর্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে নৈরাশ্যও তাঁকে কেমন আচ্ছন্ন করে রেখেছে, সে-কথাও আমাকে বলেছেন তিনি। নোবেল 888sport app download bd বিজয়ী এমন একজন বরেণ্য মানুষকে বাবা হিসেবে পেয়ে স্বাভাবিকভাবে তিনি গর্বিত। সারাটা জীবন লোকে তাঁকে চিহ্নিত করেছে ‘হেরমান হেসের ছেলে’ বলে।
বাবার খ্যাতির পাশাপাশি নিজের দিকে তাকিয়ে একই সঙ্গে তাঁকে সতর্ক হতে হয়েছে তাঁর অযোগ্যতা আর আত্মগ্লানির ব্যাপারেও।
হাইন্যার হেসে বাবা-মায়ের সঙ্গে এক ছাদের তলায় কাটিয়েছেন মাত্র জীবনের প্রথম নটি বছর। তখন ছিলেন জার্মানির লেক কনস্টান্সের (খধশব ঈড়হংঃধহপব) কাছে গাইএনহোফেনে (এধরবহযড়ভবহ) এবং পরে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নে। এ-প্রসঙ্গে হেরমান হেসের পারিবারিক জীবনের কথা সংক্ষেপে উল্লেখ করা যেতে পারে।
সময়টা ১৯০৩ সাল, হেরমান হেসের বয়স তখন ২৬ বছর। জার্মানির বাসেলে (ইধংবষ) আছেন তিনি। সেই সময় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো তাঁর চেয়ে নয় বছরের বড় মারিয়া বারনৌলির (গধৎরধ ইবৎহড়ঁষষর)। প্রতিভাময়ী সংগীতকার, স্বাধীন আলোকচিত্রী (ভৎববষধহপব ঢ়যড়ঃড়মৎধঢ়যবৎ)। মহিলা হিসেবে এ-পেশায় সুইজারল্যান্ডে তিনি প্রথম। নিজের স্টুডিও আছে তাঁর। দুজনে ঘোরাঘুরি শুরু করলেন এদিক-ওদিক, বিশেষ করে 888sport live chat পরিম-লে। বিয়ের আগে চিঠিতে এক বন্ধুকে মারিয়া সম্পর্কে নিজের মনোভাব প্রকাশ করলেন হেসে : ‘এ-কথা অন্তত বলতে পারি যে শিক্ষা, জীবনের অভিজ্ঞতা এবং মননশীলতার নিরিখে মেয়েটি আমার সমকক্ষ। আমার চেয়ে বয়সে বড়, সব দিক দিয়ে আত্মবিশ্বাসী, কঠোর পরিশ্রমী।’
তাঁদের বিয়ে হলো ১৯০৪ সালে। বিয়ের পরে যুগলে বাসা বাঁধলেন জার্মানির লেক কনস্টান্সের কাছে গাইএনহোফেনে। সেখানেই তাঁদের তিন সন্তানের জন্ম যথাক্রমে ১৯০৫ সালে ব্রুনো হেসের (ইৎঁহড় ঐবংংব), ১৯০৯ সালে হাইন্যার হেসের এবং ১৯১১ সালে মার্টিন হেসের (গধৎঃরহ ঐবংংব)। ১৯১২ সালে হেসে দম্পতি সপরিবারে চলে আসে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্ন শহরে।
মারিয়া বরাবরই ছিলেন অন্তর্মুখী প্রকৃতির, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি আরো বেশি ডুবে যেতে লাগলেন নিজের মধ্যে। অন্যদিকে তাঁর স্বামী চাইছিলেন ব্যাপক ঘোরাঘুরি আর লেখালেখির মাধ্যমে নিজের অতীতের বুর্জোয়া খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে। ফলে দূরত্ব বাড়ছিল দুজনের, তবে বাইরের কারো পক্ষে বলা শক্ত কোনটা আগে ঘটেছিল : হেরমান হেসের বহির্মুখী টান নাকি মারিয়ার মানসিক অবসাদ।
বার্ন শহরের 888sport sign up bonusতে হাইন্যার হেসের মনে তাঁর মায়ের মূর্তি উজ্জ্বল। জীবনটা জমিয়ে উপভোগ করেছেন মারিয়া। ছেলেদের নিয়ে প্রচুর ঘোরাঘুরি করতেন শহরের এদিক-ওদিক – পাহাড়ে চড়তে নিয়ে যেতেন তাদের, নিয়ে যেতেন সাঁতার শেখাতে। বাতের সমস্যা ছিল তাঁর, তবে ১৯১৮ সালের আগে মানসিক অসুস্থতা প্রকাশ পায়নি। ১৯১৮ সালে হেরমান হেসে যখন সম্পর্কছেদের সিদ্ধান্তের দিকে এগোলেন, তখন মারিয়ার স্বাস্থ্যের ব্যাপক অবনতি ঘটল। মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করাতে হলো তাঁকে।
আস্তে আস্তে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল মারিয়া আর হেরমান হেসের। হাইন্যার হেসের বয়স তখন মোটে নয় বছর। বাধ্য ছেলের মতো তিনি চলে গেলেন স্কুলের ছাত্রাবাসে। ছুটিছাটায় এসে থাকতেন বাবার কাছে। অনেক পরে বাবার উত্তরাধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন তিনি, তখন শুরু করেছেন তাঁর লেখার প্রচার বা সে-বিষয়ে গবেষণা। তিনি প্রয়াত হয়েছেন ২০০৩ সালে, বিখ্যাত বাবার বৃদ্ধ সন্তান জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছেন বাবার 888sport sign up bonus সংরক্ষণের জন্য। লড়াই করেছেন প্রকাশকের সঙ্গে, লড়াই করেছেন আদালতে, প্রদর্শনীশালায়।
বেশ কয়েক দশক হেরমান হেসে বাস করেছেন টিচ্চিনো পাহাড়ে, মন্টানয়োলার ছোট্ট একটা প্রাসাদে। হাইন্যার লড়াই করেছেন বাড়িটা সংরক্ষণ করে প্রদর্শনীশালা হিসেবে বাবার নামে উৎসর্গ করতে। সে-লড়াইয়ে তিনি হেরে যান, তবে অন্য একটা লড়াইয়ে জিতেছেন। ২০০১ সালের শুরু থেকে ফোলকের মিশেলসের সম্পাদনায় হেরমান হেসের সমগ্র রচনার (ঈড়সঢ়ষবঃব ডড়ৎশং ড়ভ ঐবৎসধহহ ঐবংংব) প্রকাশ শুরু করেছে ফ্রাংকফুর্টের য়ুর্কাম্প প্রকাশনী (ঝযঁৎশধসঢ় ঠবৎষধম)। এ একটা 888sport app download for androidীয় উদ্যোগ। শেষ সাক্ষাৎকারে হাইন্যার আমাকে উপহার দিয়েছেন হেরমান হেসের একটি চটি 888sport app download apk সংকলন, কবির নিজের হাতে জলরঙে আঁকা টিচ্চিনো পাহাড় আর গ্রামের ছবিতে অলংকৃত। প্রথম পৃষ্ঠায় হাইন্যার স্বাক্ষর করে লিখেছেন : ‘প্রশংসার সঙ্গে’।
কে কার প্রশংসা করছেন!