সবুজপত্র : শতবর্ষ পরে উত্তরাধিকারের পর্যালোচনা

চিরঞ্জীব শূর

প্রমথ চৌধুরীর জন্মের ১৫০ বৎসর অতিক্রান্ত আর সবুজপত্রর ১০০ বৎসর। প্রকৃতপক্ষে লেখক-সম্পাদক-সমালোচক প্রমথ চৌধুরীকে বাংলা 888sport live football পেয়েছে মূলত সবুজপত্রের মাধ্যমে। কাজেই তাঁর লেখক-জন্মেরও ১০০ বছর ধরতে পারি সবুজপত্রের সঙ্গে সঙ্গেই। পর্যালোচনার জন্য ১০০ বছর যথেষ্ট সময়। কিন্তু কোন মানদ– হবে পর্যালোচনা শুরুতেই তার উল্লেখ থাকা উচিত। আর এটাও বলে রাখা ভালো যে, এই নিবন্ধে বিশিষ্ট আলোচক-সমালোচকদের মূল্যায়নের প্রসঙ্গ এসেছে বেশি – এতটাই বেশি যে, উদ্ধৃতিচিহ্ন বা ইনডেন্ট ব্যবহার করে দৃশ্য-দূষণ ঘটতে দেওয়া হয়নি। বস্ত্তত,
উদ্ধৃতি অংশকে চিনতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয় আর
উদ্ধৃতি নির্বাচনের মধ্যেই নিহিত আছে নিবন্ধকারের তথা সংকলকের দৃষ্টিভঙ্গি। সুতরাং, কোনো মৌলিক 888sport liveের দাবি নেই এতে; বরং তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে পাঠকের চোখ দিয়ে পাঠাংশ জুড়ে জুড়ে বক্তব্যবিষয়কে স্পষ্টভাবে বৃহত্তর পাঠকের কাছে তুলে ধরার দায়িত্বকে।

বুদ্ধদেব বসু সবুজপত্রকে বাংলা ভাষার প্রথম লিটল ম্যাগাজিন বলে অভিহিত করেছিলেন। সে-সময়ের 888sport live football ও 888sport live chatে সবুজপত্রের অবদান আলোচনা করার সূত্রে লিটল ম্যাগাজিনের যে-লক্ষণগুলো আমরা পাব, তার নিরিখে আজকের লিটল ম্যাগাজিনের স্থানাঙ্ক নির্ণয়ের একটি সংযত চেষ্টা চালানো যেতে পারে – অবশ্যই তা সময়ের পরিবর্তনের সূত্রে আদর্শের সানুপাতিক সরণের প্রসঙ্গ মাথায় রেখে।

এক

যদি প্রথমে আমরা সবুজপত্রের আবির্ভাবের নেপথ্য উদ্দেশ্য নিয়ে অনুসন্ধান করি, আমরা দেখতে পাব, মূলত রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্যসমৃদ্ধ ইচ্ছায় ও প্রমথ চৌধুরীর সুপ্ত অভিপ্রায়ের যৌথতায় সবুজপত্র জন্মলাভ করে। রবীন্দ্রনাথের কী উদ্দেশ্য, কী ইচ্ছা ছিল আমরা বরং অন্নদাশঙ্কর রায়ের কাছ থেকে শুনে নিই – প্রবাসীর দরজা বরাবরই রবীন্দ্রনাথের কাছে অবারিত ছিল। কিন্তু, পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করার পর ইউরোপ-আমেরিকা ঘুরে এসে তাঁর মধ্যে যে-পরিবর্তনের ইচ্ছে জাগল তা প্রবাসী-সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষে ধারণ করা সম্ভবপর হতো না বলেই তিনি মনে করেছিলেন। যেমন, চতুরঙ্গ 888sport alternative linkের জগমোহন ছিলেন ঘোর নাসিত্মক, দামিনী নামের এক বিধবা 888sport promo code রাতে শচীশের গুহায় ঢুকেছিল মিলনের জন্য। আবার ঘরে বাইরে 888sport alternative linkের সন্দীপ ও বিমলার পরকীয়া বা জাপানের কথায় জাপানি স্ত্রী-পুরুষের নগ্ন স্নানের বিষয় রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষে প্রকাশে বিব্রত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অন্যদিকে, প্রমথ চৌধুরীর বাসনা ছিল সাধু ভাষার হাত থেকে চলিত ভাষার উদ্ধার – যে-দুঃসাহস রবীন্দ্রনাথেরও ছিল না। চতুরঙ্গ সাধু ভাষায় লেখা হয়ে থাকলেও প্রমথনাথের প্রবর্তনায় ঘরে বাইরে লেখা হয় চলিত ভাষায়। তবে পাঠকের কাছে সবুজপত্রের জনপ্রিয়তা শুধু চলিত ভাষার জন্য নয়, সবুজপত্র তাদের নিয়ে যেত ঘরের আঙিনা থেকে বাইরের ময়দানে, দেশ থেকে বিশ্বে আর অতীত থেকে বর্তমানে, পুরনো থেকে নতুনে।

প্রমথ চৌধুরী তাঁর সবুজপত্রের প্রথম 888sport free betর ভূমিকায় সবুজপত্র প্রকাশের কার্যকারণ সম্বন্ধে যে-ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তা সংক্ষেপে আমরা পড়ে দেখি – ‘ইউরোপের স্পর্শে আমরা, আর কিছু না হোক, গতি লাভ করেছি, অর্থাৎ মানসিক ও ব্যবহারিক সকল প্রকার জড়তার হাত থেকে কথঞ্চিৎ মুক্তি লাভ করেছি। এই মুক্তির ভিতর যে আনন্দ আছে সেই আনন্দ হতেই আমাদের নব-888sport live footballের সৃষ্টি। […] ইউরোপের কাছে আমরা একটি অপূর্ব জ্ঞান লাভ করেছি। সে হচ্ছে এই যে, ভাবের বীজ যে দেশ থেকেই আনো না কেন, দেশের মাটিতে তার চাষ করতে হবে। […] ইউরোপের নবীন 888sport live footballের সঙ্গে ভারতবর্ষের প্রাচীন 888sport live footballের আকারগত সাদৃশ্য না থাকলেও অন্তরের মিল আছে। সে হচ্ছে প্রাণের মিল – উভয়ই প্রাণবন্ত। […] সুতরাং আমাদের নবজীবনের নবশিক্ষা, দেশের দিক ও বিদেশের দিক দুই দিক থেকেই আমাদের সহায়। এই নবজীবন যে-লেখায় প্রকাশিত হয় সেই লেখাই কেবল 888sport live football – বাদবাকি লেখা কাজের নয়, বাজে। এই 888sport live footballের বহির্ভূত লেখা আমাদের কাগজ থেকে বহির্ভূত করবার একটি সহজ উপায় আবিষ্কার করেছি বলে আমরা এই নতুন পত্র প্রকাশ করতে উদ্যত হয়েছি। একটা নতুন কিছু করবার জন্য নয়, বাঙালির জীবনে যে নূতনত্ব এসে পড়েছে তা-ই পরিষ্কার করে প্রকাশ করার জন্য। ‘সুকুমার সেনের বিবৃতিতে সবুজপত্রের উদ্দেশ্য হিসেবে আমরা এরই প্রতিধ্বনি শুনি – ’ ১. ইউরোপীয় 888sport live footballের স্পর্শে আসিয়া আমাদের 888sport live footballে যে মুক্তির স্ফূর্তি ও সচলতা আসিয়াছে সেই নূতনের বেগ নিরুদ্ধ না করা। ২. সর্বভূমিক, সর্বজনিক, সর্বকালিক ভাবকে আত্মসাৎ করিয়া তাহাকে নিজের দেশে নূতন করিয়া গড়িয়া তোলা – ইউরোপীয় 888sport live footballের এই যে শিক্ষা আমাদের গৌরবের অতীত আমাদের চিনাইয়াছে এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাইয়াছে – এই শিক্ষা প্রত্যাখ্যান না করা।’

দুই

উৎসমুখ অনুসন্ধানের পরপরই আমাদের পর্যালোচনার সূচিমুখ সবুজপত্রের অনন্যপূর্বতা (ভারতচন্দ্রের ভাষায়) আর তার অবদান।

রবীন্দ্রনাথের কথাই ধরা যাক। বুদ্ধদেব বসুর মতে, রবীন্দ্রনাথ সবুজপত্রের কাছে পেয়েছিলেন পুরনো অভ্যাসের বেড়ি ভাঙার সাহস, যৌবনের স্পর্শ, গদ্যভাষার জন্মান্তর-সাধনের প্রেরণা – বরং         যে-প্রেরণা তাঁর মনের মধ্যে বহুদিন ধরে গুমরে ফিরেছিল, তাকে নিঃসংকোচে মুক্তি দেবার পথ পেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের নিজের কথায় – ‘আমি যখন সাময়িক (সম্ভবত ‘সাধনা’) চালনায় ক্লান্ত এবং বীতরাগ, তখন প্রমথ-র আহবানমাত্র সবুজপত্র বাহকতায় আমি তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলুম। প্রমথনাথ এই পত্রিকাকে একটা বিশিষ্টতা দিয়েছিলেন। তাতে আমার তখনকার রচনাগুলি 888sport live football সাধনায় একটি নতুন পথে প্রবেশ করতে পেরেছিল। প্রচলিত অন্য কোন পরিপ্রেক্ষণীর মধ্যে তা সম্ভব হতে পারতো না। সবুজপত্রে 888sport live footballের এই একটি নতুন ভূমিকা রচনা প্রমথ’র কৃতিত্ব। আমি তার কাছে ঋণ স্বীকার করতে কখনো কুণ্ঠিত হইনি।’

সবুজপত্রের যে প্রধান পরিচয় সারস্বত সমাজে চালু আছে তা হলো, রবীন্দ্রনাথের কথাতেই বলি : সবুজপত্র বাংলা ভাষার মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে গেল। সমালোচকের মতে, সবুজপত্র পত্রিকা অবলম্বন করে কথ্য ভাষার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস শুধু একটি বিচ্ছিন্ন 888sport live footballিক উদ্যম মাত্র নয়, এর বিস্ত‍ৃতি ও প্রভাব একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মর্যাদাবাহী। অন্নদাশঙ্কর রায় একদিন প্রমথবাবুকে বলেছিলেন – ‘আপনার জন্যই চলিত ভাষা এখন বাংলা 888sport live footballের নতুন লেখকদের সকলের ভাষা হতে চলেছে। আপনি প্রবর্তক।’ তিনি মৃদু হেসে বলেছিলেন, ‘আমাদের চলতি ভাষা কিন্তু শিক্ষিত ভদ্রলোকদের ভাষা। এটা সর্বজনের ভাষা নয়। একে আরও সহজ সরল করতে হবে। নইলে এটাও হবে একপ্রকার সাধুভাষা।’

তাই সমালোচকের ব্যাখ্যায় শুধুমাত্র সর্বনাম বা ক্রিয়াপদের চলিত রূপ ব্যবহারের মাধ্যমেই কথ্যভাষা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, বরং তার প্রাঞ্জলতা, দ্রম্নতসঞ্চারী লঘুতা যা আমাদের বাসত্মবজীবনের সঙ্গে অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ, তাকেই মর্যাদা দেওয়া ওই ভাষার প্রধান লক্ষ্য ছিল। অশোক মিত্রের কথাতে এর প্রতিধ্বনি পেয়ে যাই – প্রমথ চৌধুরীর যে-প্রতিভা আমাদের মুগ্ধ করে তা লেখা এবং বলার মধ্যে যে-শৈলী ব্যবধান, তা সম্পূর্ণ সেতুবন্ধনের জাদু। যেন প–ত মানুষটি, রসিক মানুষটি, বুদ্ধিদীপ্ত মানুষটি আমার-আপনার মুখোমুখি বসে কথা বলছেন, লিখছেন না, লেখা এবং কথা, দুইয়ের গড়নই একরকম, কোনো বিরোধ-বৈপরীত্য নেই।

বলা বাহুল্য, প্রমথ চৌধুরীর ভাষাচিন্তার বিপুল নিদর্শন তাঁর 888sport liveে ছড়িয়ে আছে। যেমন, অন্নদাশঙ্করেরর রচনা থেকে জানতে পারি – ‘আমাদের দেশে সাধু ভাষা বনাম চলতি ভাষা এই মামলা ছাড়া আরও একটি মামলা ছিল। সেটি বাংলা ভাষা বনাম ইংরেজি ভাষা।’ এই প্রসঙ্গে প্রমথনাথ ‘বাংলার ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক 888sport liveে লিখেছেন, ‘888sport live footballে সম্পূর্ণ আত্মপ্রতিষ্ঠ হবার পরে ইউরোপের অনেক দেশেই দেশী-ভাষাকে পরপর তিনটি বাধাকে অতিক্রম করতে হয়েছে। মোটামুটি ধরতে গেলে, লোকভাষার ক্রমোন্নতির ইতিহাস হচ্ছে এই : প্রথমত কোনো মাতৃভাষার, দ্বিতীয়ত কোনো বিদেশী ভাষার এবং তৃতীয়ত কোনো কৃত্রিম ভাষার চাপ থেকে বেরিয়ে যাওয়া। এদেশে মাতৃভাষা মানে সংস্কৃত, বিদেশি ভাষা মানে ইংরেজি আর কৃত্রিম ভাষা মানে সাধু ভাষা। এর মধ্যে আপসের সূত্র কোথায়?’

সেই অন্নদাশঙ্করই আবার বলছেন – ‘পাঠকরা কেবল ভাষার জন্য ‘সবুজপত্র’ পড়তেন না। তাতে থাকত বহুবিতর্কিত বিষয়ে খোলাখুলি মতপ্রকাশ। সবুজ কথাটার মনে তরতাজা। চলতি ভাষায় লিখলে কী হবে যদি বিষয়গুলো হয় গতানুগতিক, বস্তাপচা, মামুলি। সবুজপত্র-র প্রকৃত সম্পদ ছিল বিদগ্ধ মানস। তেমনটি তারপরে কোথাও দেখতে পাওয়া গেল না। সেই জন্য ‘সবুজপত্র’কে আমরা একটি ল্যান্ডমার্ক বলে গণ্য করব।’

এই পর্বে সবুজপত্রে প্রকাশিত রচনায় ব্যতিক্রমী ইমেজের কয়েকটি নমুনা পেশ করলে বোধহয় প্রামাণিক হবে। চতুরঙ্গ 888sport alternative linkে (১৩২১ বঙ্গাব্দ) আমরা পাই চেতনাপ্রবাহের আঙ্গিক, ইনার রিয়ালিটির সন্ধান, আত্ম-আবিষ্কারের পথে চরিত্রের উত্তরণ, 888sport live chat-সচেতন জীবনবীক্ষা। বাংলা 888sport alternative linkে পূর্ণতার অন্বেষণ ও ব্যক্তিচরিত্রের সর্বময় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আধুনিকতার নবদিগমেত্মর সূচনা আমরা দেখতে পাই। উচ্চবর্ণের অভিজাত সমাজের নায়ক আর রইল না বাংলা 888sport alternative linkে। সাধু গদ্যের সঙ্গে চলিত গদ্যের বেগ ভাষায় সঞ্চারিত আর অকাব্যিক শব্দ ব্যবহার করে সচেতনভাবে সাধু বাংলার আভিজাত্যকে আঘাত করার প্রবণতা দেখতে পান সমালোচকেরা।

সবুজপত্রে প্রকাশিত রবীন্দ্ররচনা থেকেই আমরা উদাহরণগুলো তুলে ধরছি। ‘স্ত্রীর পত্র’ গল্পে আমরা দেখতে পাই 888sport promo code-ব্যক্তিত্বের মুক্তির আকুলতা, ভাবে-ভাষায় বিদ্রোহ, চলিত ভাষায় লেখা প্রথম গল্প। ‘বেষ্টনী’ গল্পে সমালোচকেরা দেখেন জীবনের রূপ রচনা নয়, ভাষা রচনা। পারম্পর্যগ্রথিত গল্পকথনের পরিবর্তে গল্পের সূত্রে জীবনের সমালোচনা। সর্বোপরি, আঙ্গিকে গল্পধর্মের ভিন্নতা।

ঘরে বাইরে 888sport alternative link চলিত ভাষার প্রথম 888sport alternative link। তার মধ্যে আমরা পেয়েছি বঙ্গভঙ্গের দুর্বলতা ও যান্ত্রিকতা বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি। আর, মানবতাই যে সব আন্দোলনের মূল ভিত্তি – এই মনোভাবের প্রতিষ্ঠা।

বলাকা কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে সমালোচকদের মত হলো,
ভারতীয় কাব্য888sport live footballে এই প্রথম আন্তর্জাতিক মাত্রা যুক্ত হলো। বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী অশান্ত ইউরোপ 888sport slot gameের ফলেই কাব্যধারার
এই পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। জাগ্রত জীবনবোধের আলোকে সামগ্রিক বিশ্বচেতনা, জীবনের অদম্য গতিপ্রবাহ, সমকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষেত – কী নেই এই নিরীক্ষায়। প্রকাশভঙ্গিতে সংগীত ও চিত্রধর্মের মিলন, ছন্দের গতিময়তা খুবই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। ভাবে বুদ্ধিদীপ্ততা অথচ প্রকাশ স্বতঃস্ফূর্ত আবেগময় ছন্দের মাধ্যমে – এই বৈপরীত্যের সম্মেলনে রবীন্দ্রকাব্যে  এসেছিল অভিনব সৌন্দর্যব্যঞ্জনা।

রবীন্দ্রনাথ এই পর্বের গল্প সম্পর্কে নিজেই বলেছেন – ‘আমার এই লেখাগুলি গল্পপিপাসু পাঠকদের বেশ ঢকঢক করে খাবার মতো হচ্ছে না – এগুলোকে গল্প না বললেই হয়।’ আর, বলাকা সম্পর্কে বলছেন – ‘এই 888sport app download apkগুলি প্রথম সবুজপত্রের তাগিদে লিখতে আরম্ভ করি।’

এই পরিবর্তনের সূত্রে, কোনো কোনো সমালোচক মনে করেন, রবীন্দ্রনাথ তো অনেক তরুণ লেখককে প্রভাবিত করেছেন সমকালে ও পরবর্তীকালে; কিন্তু তিনি একজন তরুণের দ্বারাই প্রভাবিত হয়েছিলেন – যিনি প্রমথ চৌধুরী।

সবুজপত্রের বৈশিষ্ট্য-অবদানের আলোচনায় এভাবেই এসে যায় প্রমথ চৌধুরীর কথা। আমরা বরং প্রমথ চৌধুরীর উদ্দেশে কিছুটা কাল ও পরিসর নিবেদন সেরে নিই।

সমালোচকদের মতে, প্রমথ চৌধুরী তাঁর 888sport live footballে ও জীবনে যে কয়টি গুণের চর্চায় দায়বোধ করতেন, সেগুলো হলো –  যুক্তিবিচারে 888sport apk download apk latest versionশীলতা, প্রসাদগুণ, বলিষ্ঠ প্রকৃতিস্থতা, মার্জিত রসিকতা, নিবিড় ঐহিকতা, সূক্ষ্ম রুচিবোধ, পরিশীলিত জীবনবোধ। তাঁর রচনায়, ভাষা ও 888sport live রীতিতে এই চরিত্র-বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। ভাবালুতা, অস্পষ্টতা, অত্যুক্তি, পুনরুক্তি, বিশৃঙ্খল-পদান্বয়, অকারণ বিশেষণ বাহুল্য, অনুরূপ ক্রিয়াপদের একঘেয়েমি – বাংলা গদ্যের এসব দুর্বলতা তিনি তাঁর রচনার ধারেকাছে ঘেঁষতে দেননি। আমরা বীরবলী গদ্যে বাংলা গদ্যের যে পরিমিত, সংযত, ব্যঙ্গরসনিপুণ, তীক্ষনাগ্র উজ্জ্বল চেহারা দেখি তা আসলে ওই মনেরই বহিঃপ্রকাশ। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, এই চরিত্র-বৈশিষ্ট্য তিনি আর ব্যক্তিগত রাখেননি। কালক্রমে তা হয়ে ওঠে গোষ্ঠীগত – সবুজপত্রীদের সকলের লেখাতেই এই বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে। সমালোচকের মতে, সবুজপত্র গোষ্ঠীর মানসিকতা ছিল নতুন, যুক্তিনির্ভর। লক্ষ্য ছিল বিশ্বনাগরিকতা, বৈদগ্ধ্যমার্জিত বুদ্ধির উদ্বোধন। তাদের আগ্রহ ছিল রুচির পরিশীলন ও মার্জনার।

এই প্রসঙ্গে একটি কথা বললে বোধহয় ফোকাসভ্রষ্ট হওয়ার অভিযোগ উঠবে না – প্রমথ চৌধুরীর লেখায়, ভাষায়, রসবোধে যদি কারো প্রভাব খুঁজতে হয়, তবে অষ্টাদশ শতকের কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি ভারতচন্দ্রের নাম চলে আসে। প্রমথ চৌধুরীর মতে, বাংলা 888sport live footballে ভারতচন্দ্রের মতো 888sport live chatী আর হয়নি। তাঁর কথাতেই – ‘ভারতচন্দ্রের 888sport live footballের প্রধান রস কিন্তু আদিরস নয়, হাস্যরস। এ-রস মধুর রস নয়, কারণ এ-রসের জন্মস্থান হৃদয় নয় মসিত্মষ্ক, জীবন নয় মন।’

দুজনেই কৃষ্ণনাগরিক, অর্থাৎ স্থানিক প্রতিবেশী, যদিও কালিক ব্যবধান দুশো বছরের।

রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের দুজন অগ্রগণ্য কবির মনোভাব এখানে উদ্ধৃত করা যাক। সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কথা এখানে বলছি না,
কেননা সবুজপত্রের অমিত্মমপর্বে তাঁর ভূমিকা অনেকেরই জানা। রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ ৭ জুন ১৯৭৩ তারিখে বরিশাল থেকে প্রমথ চৌধুরীর উদ্দেশে তাঁর ধূসর পাণ্ড‍ুলিপি কাব্যগ্রন্থের আলোচনার অনুরোধসহ যে-চিঠি লিখেছিলেন তার মূল অংশটি পড়ি – ‘আপনার স্ফটিকের আলোর মতন স্বচ্ছ ও পরিষ্কার গদ্য888sport live বাংলা 888sport live footballে এক অবর্ণনীয় জিনিস বলে মনে হয়। বাংলা 888sport live footballে এ জিনিস কোনোদিন ছিল না, আজো তৈরি হল না, আপনি একাই প্রচুর পরিমাণে দিয়ে গেলেন। গদ্যরচনার এই বিশিষ্টতার দিক দিয়ে আপনি রবীন্দ্রনাথের এক পঙক্তি ওপরে, এবং 888sport live footballে রবীন্দ্রনাথের পরেই আপনার স্থান। … সেই সবুজপত্রের দিন থেকেই জানি বাংলা 888sport live footballে অদ্বিতীয় সমালোচক হচ্ছেন আপনি।’

আর, বুদ্ধদেব বসু সবুজপত্রের অবদান প্রসঙ্গে লিখছেন, – ‘এর প্রথম দান প্রমথ চৌধুরী বা বীরবল …। প্রচলিত অন্য কোনো পত্রিকায়, অন্য কোনো সম্পাদকের আশ্রয়ে প্রমথ চৌধুরীর স্বকীয়তার বিকাশ হতে পারতো না, তাছাড়া শুধু রচনাতেই নয়, সম্পাদনাতেও তিনি ছিলেন প্রতিভাবান।’

তিন

তাহলে এবার সম্পাদক প্রমথ চৌধুরীকে নিয়ে আলোচকরা কে কী বলেছেন, তার পর্যালোচনা করা যাক। হয়তো অনেকেই জানেন, রবীন্দ্রনাথ কতটা গুণগ্রাহী ছিলেন প্রমথের আর প্রমথও তাঁর গুণগ্রাহী, ভক্ত নন। সম্পাদক প্রমথ চৌধুরীকে তিনি কতটা সমীহ করতেন তার নজির কম নেই। যেমন প্রমথনাথকে বলা রবীন্দ্রনাথের কথাতেই শুনি – ‘আমি ‘আমার জগ’ নামক একটা লেখা লিখে ভয়ে ভয়ে মণিলালের কাছে পাঠিয়েছি। ভয়ের কারণ এই, এরকম তত্ত্ব আলোচনা আমার অধিকারের মধ্যে নয়। পাছে আমার নামের জোরে তোমরা ওটাকে তরিয়ে দিতে চাও সেই জন্যে মণিলালকে বলে পাঠিয়েছি, যদি সেটা পড়বার সময় তোমার মুখে কোনপ্রকার সম্পাদকীয় বিকার দেখা দেয় তাহলে ওটাকে ফস্ করে সরিয়ে নিতে।’

আর, সবুজপত্র সম্পাদনার ক্ষেত্রে যে-মেন্টরিং তিনি
প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ উভয়ভাবেই করতেন, তার ভূরিভূরি নিদর্শন আছে চিঠিপত্রে। একবার সরাসরি প্রমথ চৌধুরীকে লিখলেন – ‘তুমি যে কাগজ বের করবে, তাতে পাঠকদের দেবার বরাদ্দটা বড় কথা নয়, লেখকদের উপর দাবির কথাটা তার চেয়েও বড় কথা। দাবি অর্থযোগে বা শব্দযোগে 888sport live চাওয়া নয় – কাগজের চরিত্রের মধ্যেই সে দাবি থাকবে, সে চরিত্র অলক্ষেতে লেখককে উদ্বুদ্ধ করে, সাবধান করে, লেখার অপরিচ্ছন্নতা, শৈথিল্য, চিন্তার দৈন্য আপনিই সংকুচিত হয়।’

আরো একটি চিঠিতে তিনি লিখছেন – ‘সবুজপত্র পড়ে খুব খুশি হলাম। কিন্তু আরো লেখক চাই। লেখা সৃষ্টির চেয়ে লেখক সৃষ্টির বেশি দরকার। লেখা-সৃষ্টির দ্বারাই লেখককে টানা যায় কিন্তু এখনো বেশি দূর পর্যন্ত সবুজপত্রের টান পৌঁছোচ্ছে না। নবীন লেখকেরা সবুজপত্রের আদর্শকে ভয় পায় – তাদের একটু অভয় দিয়ে দলে টেনে নিও, ক্রমে তাদের বিকাশ হবে।’

সবুজপত্রে পুসত্মক/ রচনা-সমালোচনা বিভাগ চালু করবার জন্য রবীন্দ্রনাথের যে-ইন্ধন তার পরিচয়বাহী একটি চিঠি এখানে পড়ছি – ‘888sport app মাসিকে যে সমসত্ম আলোচ্য 888sport live বের হয় তার সম্বন্ধে সম্পাদকের বক্তব্য বের হলে উপকার হবে। প্রথমত যারা উৎসাহের যোগ্য সেইসব লেখকেরা পুরস্কৃত হবে, দ্বিতীয়ত অন্যের লেখা সম্মুখে রেখে বলবার কথাটিকে পরিষ্কার করে বলবার সুবিধা হয়। তাছাড়া আধুনিক 888sport live footballের মাঝিগিরি করতে হলে সমালোচনার হাল ধরা চাই। প্রতিমাসে সমালোচনার যোগ্য বই পাবে না কিন্তু মাসিকপত্রের লেখাগুলোর প্রতি লক্ষ্য করে কিছু না কিছু বলবার জিনিস পাবে। বিরুদ্ধ কথাও যথোচিত শিষ্টতা রক্ষা করে কিভাবে বলা উচিত তার একটা আদর্শ দেখাবার সময় এসেছে।’

সবুজপত্রের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের মেন্টরিং একটি পৃথক 888sport liveের বিষয়। সেখানে কালক্ষেপ না করে আমরা বরং সম্পাদক প্রমথ চৌধুরীর রণকৌশল ও বিশিষ্টতা নিয়ে কিছুটা অনুসন্ধান চালাই। এর সঙ্গে সঙ্গেই আসবে প্রমথ চৌধুরীর মেন্টরিংয়ের ব্যবহারিক পদ্ধতি। সর্বযুগে সর্বক্ষেত্রে ভিশনসম্পন্ন নেতৃত্ব এক বিরল প্রজাতি – যদিও আমাদের দেশে ঊনবিংশ শতক এর ব্যতিক্রম। বড়মাপের কবি ঔপন্যাসিক-সমালোচক-নেতা আমরা এই ভিশন দিয়েই চিনি। সম্পাদনার ক্ষেত্রেও যখন শক্তিশালী কোনো লেখক এগিয়ে আসেন, তখন সেই পরিপ্রজ্ঞার ছটা আমরা দেখতে পাবো – এ-কথা অস্বাভাবিক লাগার নয়। নতুন চিন্তা, নতুন ভাষায় পরিবেশন করতে চেয়ে যে সবুজপত্রের জন্ম – তার জন্য মেধা ও 888sport live chatবোধসম্পন্ন সম্ভাবনাময় তরুণদের মেন্টরিংয়ের উদ্দেশ্যে তাঁকেই ‘সবুজসভা’র আয়োজন করতে হয়েছিল। সে ছিল প্রায় লেখক তৈরির (গ্রম্নমিংয়ের) কর্মশালা। কীসব সদস্য তার – যাঁদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীকালে নিজ নিজ ক্ষেত্রে বড় বড় অবদান রেখেছেন – অতুলচন্দ্র গুপ্ত, বরদাচরণ গুপ্ত, কিরণশঙ্কর রায়, হারীতকৃষ্ণ দেব, প্রবোধ চট্টোপাধ্যায়, সুরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, সোমনাথ মৈত্র, সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, দিলীপ কুমার রায়, শেষ পর্বের অমিয় চক্রবর্তী, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অন্নদাশঙ্কর রায়, …। আমরা এবার ‘সবুজসভা’র ক্রিয়াকর্ম সম্পর্কে কিছু 888sport sign up bonusকথা পড়ি, যা থেকে তার অবদান আন্দাজ করতে পারব।

ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় লিখছেন – ‘আমাদের বই পড়ার অভ্যাস ও বড় বড় ব্যাপার নিয়ে তর্ক প্রবৃত্তির জন্যই প্রমথবাবু নিজের কাছে আমাদের টেনে নেন ও শিক্ষা দিয়ে সবুজপত্রের দল তৈরি করেন। সেখানে অভিব্যক্তিবাদ, নতুন ফিজিক্স, নতুন অর্থনীতি আর নব্যদর্শন নিয়ে আলোচনা অসামাজিক বিবেচিত হত না।’

এর ফলে সমালোচকদের মতে, বাংলা 888sport live888sport live footballে একটি নতুন যুগের সূচনা হলো। তা মননশীল আলোচনার ধারা – যার ভিত্তি যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, যার লক্ষ্য বুদ্ধির মুক্তি, যার সাধনা নির্বিশেষ সংস্কৃতিসাধনা, জ্ঞান888sport apkের তদ্গত আলোচনা। তাই প্রকাশভঙ্গির সারল্য, অনায়াসস্বচ্ছন্দ কথ্য গদ্যরীতি, তীক্ষন সজাগ বুদ্ধিবৃত্তি – সবুজপত্রের সব রচনাতেই উপস্থিত।

ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তাঁর ঝিলিমিলিতে জানিয়েছেন – ‘সবুজপত্রের প্রায় সব রচনায় প্রমথবাবুর হাত থাকত, কেবল রবীন্দ্রনাথের ও অতুলবাবুর বেলায় নয়।’

সেই অতুলবাবু বলছেন – ‘প্রমথবাবু আমাদের উৎসাহিত করতেন এই নতুন ভাব ও 888sport live footballকে প্রাচীন ভারতবর্ষের ভাব ও 888sport live footballের আলোকে পরীক্ষা করতে।’ অতুলবাবুর কথায় জানতে পারি, প্রমথ চৌধুরী নতুন বই কিনে নিজে পড়ে ফেলার পর সবুজপত্রীদের মধ্যে তাঁদের আগ্রহ অনুযায়ী বিলি করতেন আর পড়ে এসে সভায় আলোচনা করার নির্দেশ থাকত সঙ্গে।

সেই অনুষঙ্গেই ধূর্জটিপ্রসাদের লেখায় আবার পাই – সৃষ্টির প্রধান কথা জ্ঞান, ভাবের আবেগ নয়, এবং সে-জ্ঞান যত ইহজগতের হয় ততই ইহজগতের মঙ্গল। 888sport apkই ইহজগতের জ্ঞানের মধ্যে একমাত্র পদ্ধতি যাকে বিশবাস ও নির্ভর করা যায়, বিসত্মর দোষ সত্ত্বেও এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিরই সাহায্যে কুসংস্কার ও স্বার্থপরতা দূর হয় – অন্যায়ের বোঝা কমে, দৃষ্টি তীক্ষন হয় ও বহুদূর পর্যন্ত চলে।

লেখার মেন্টরিংয়ের ক্ষেত্রে প্রমথ চৌধুরীর প্রিয় লেখক ও সম্পাদনা সহযোগী সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীর লেখায় পাই – ‘শব্দের দেহায়তন যত বাড়বে, অর্থের মূল্যও যে তত বাড়বে এ ভুল আমাদের প্রমথবাবু ভেঙেছেন। শব্দকল্পদ্রম্নমের বাইরেও যে চিন্তাশীলতার অবসর আছে তা আমাদের স্বীকার করতেই হবে।’

চিঠির বয়ানে এবার মেন্টরের চাহিদার কথা শুনি – ‘রবিবাবু মহাশয় আমাকে ক্রমাগত তাড়া দিচ্ছিলেন ইউরোপের নতুন চিন্তা সব ‘সবুজপত্রে’ প্রকাশ করতে। আমার পক্ষে এক হাতে তা করা অসম্ভব। সুতরাং আমি দু-চারটি এমন লোক চাই যাদের হাতে ইংরেজি বই দিলে তা বাংলা 888sport liveে রূপান্তরিত হবে।’

অন্নদাশঙ্কর বলছেন, ‘দুঃখের বিষয় তেমন লোক পাওয়া কষ্টকর ছিল। যাঁরা লিখতেন তাঁরা পড়তেন না, আর যাঁরা পড়তেন তাঁরা লিখতেন না – এটা বঙ্কিমচন্দ্রের সময়ে যেমন সত্য ছিল, রবীন্দ্রনাথের সময়েও তেমনি। 888sport app download apk latest version করতে অনেকে পারেন, কিন্তু যেটার প্রয়োজন ছিল, সেটা ইংরেজির 888sport app download apk latest version নয়, ইউরোপের চিন্তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ পরিচয়।’

এবার যদি আমরা মেন্টরের ভাবনাকে পড়ে নিয়ে তরুণ লেখকদের মতামতকে মিলিয়ে নিই তবে পত্রিকা সম্পাদনায় একটি শক্তিশালী অংশ যে মেন্টরিং – সে-ধারণার প্রতিষ্ঠা হয়। অন্নদাশঙ্কর রায়কে লেখা চিঠিতে প্রমথ চৌধুরী লিখছেন – ‘লেখার কথা উঠলেই আমি আর্টের উপর বেশি জোর দেই, কারণ এটা নয় যে আমি ভাবের চাইতে ভঙ্গিকে বেশি মূল্যবান মনে করি। যে কথার অন্তরে মন নেই, যত কারিগরি করে দেহ গড় না কেন তার ভিতরে প্রাণ থাকবে না। তবে যে এত আর্ট আর্ট করি তার কারণ অপরকে বড় ভাবে ভাবতে শেখানো বড় কঠিন, কিন্তু ভালো করে লিখতে শেখানো অপেক্ষাকৃত সহজ।’

আবার, এই প্রসঙ্গে তরুণ লেখকদের সম্পর্কে তাঁর প্রত্যাশা বা পরামর্শ আমরা পাই ‘নতুন লেখক’ শীর্ষক 888sport liveে – ‘সকল প্রকার 888sport live football রচনার মূলে আছে লেখবার আন্তরিক প্রবৃত্তি, সুতরাং ঐ প্রবৃত্তির সাক্ষাৎ যত বেশি লোকের ভিতর পাই, তত আমি বঙ্গ 888sport live footballের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আশান্বিত হয়ে উঠি। যে-সকল বিজ্ঞ ব্যক্তিরা যুবকদের এ প্রবৃত্তিতে বাধা দিতে চান, তাঁরা ‘প্রবৃত্তিরেষা নরানাং নিবৃতিস্ত্ত মহাফলাঃ’ এই শাস্ত্রবচনের অর্থ ঠিক হৃদয়ঙ্গম করেন না। লেখবার প্রবৃত্তি ঐ জাতীয় প্রবৃত্তি নয়। এই লেখবার প্রবৃত্তি যাঁর আছে তাঁর যদি সেই সঙ্গে নিজের শক্তিতে বিশ্বাস থাকে, তাহলে তিনি একজন যথার্থ লেখক হতে বাধ্য। কারণ উক্ত শক্তির বিকাশ একমাত্র তার চর্চাসাপেক্ষ।’

এবার আমরা সম্পাদক প্রমথ চৌধুরীর কয়েকটি বিশিষ্টতাকে তুলে ধরার চেষ্টা করব, যার নিদর্শন ইতোমধ্যে উদ্ধৃত বিভিন্ন আলোচক-সমালোচকের বিবৃতির মধ্যে প্রচ্ছন্ন ছিল। অর্থাৎ, আমরা এবার প্রমথ চৌধুরীর সম্পাদনার অনন্যতা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।

প্রথমত, পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য স্পষ্ট ও ঘোষিত। তাঁর নিজের কথায় – ‘অন্ত ও অনমেত্মর মধ্যে, পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে, 888sport sign up bonus ও আশার মধ্যে মধ্যস্থতা করাই হচ্ছে সবুজের অর্থাৎ সরস প্রাণের স্বধর্ম।’ আবার, অন্যত্র বলছেন – ‘দেশের অতীত ও বিদেশের বর্তমান – ভাষান্তরে, প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্য ও আধুনিক ইউরোপীয় চিন্তাভাবনা – এ দুয়ের বিরোধ নয়, বরং সমন্বয়ই হচ্ছে 888sport live footballকে স্বদেশি করে তোলার উপায়।’

এই যে স্ব-দেশ ও স্ব-কালের সমন্বিত চাহিদা তাঁকে উপলব্ধি করার জন্য যে পরিপ্রজ্ঞার দরকার তা কজন সম্পাদকের কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি। ভিশিয়নারি 888sport live footballিক না হলে এ-জিনিস আশা করা বৃথা। বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ ছাড়া এ প্রসঙ্গে প্রমথ চৌধুরীর তুল্যমূল্যে আর কাউকে কি আমরা তুলে বসাতে

পারি? পরবর্তীকালে সুধীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব এই মর্মে ধারে কাটলেও ভারে কাটে কিনা তা বিদ্বজ্জনেরাই বলতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, গুণমানের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নেই। সেখানেও স্পষ্ট ঘোষণা – যে লেখায় লেখকের মনের ছাপ নেই তা সম্পাদক ছাপাবেন না কারণ তা 888sport live football নয়, 888sport live footballের জঞ্জাল। তিনি তো স্পষ্টই বলেছেন, ‘সবুজপত্র-র কাজ পাঠককে আনন্দ দান করা, মনোরঞ্জন করা নয়।’ পাঠক, লক্ষ করবেন, প্রথম বর্ষের দ্বাদশ 888sport free bet  (চৈত্র, ১৩২১) রবীন্দ্রনাথের দুটি নাটক (বসমেত্মর পালা, ফাল্গুনী) নিয়েই প্রকাশিত হয়েছিল, আবার, দ্বিতীয় বর্ষের দশম 888sport free betর (মাঘ, ১৩২২) সূচি – রবীন্দ্রনাথের ঘরে বাইরে ও ‘বৈরাগ্য সাধন’, প্রমথ চৌধুরীর ‘আর্যধর্ম্মের সহিত বাহ্যধর্ম্মের যোগাযোগ’ এবং ‘বীরবলের শিক্ষার নব আদর্শ’; তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় 888sport free betর (জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৩) সূচি – প্রমথ চৌধুরীর ‘ফরাসী 888sport live footballের বর্ণপরিচয়’ (888sport live) ও ‘চার ইয়ারী কথা’ (গল্প) আর রবীন্দ্রনাথের ‘জাপান যাত্রীর পত্র’; পঞ্চম বর্ষের দ্বাদশ 888sport free betর (চৈত্র ১৩২৫) সূচি – সুরেশ চন্দ্র চক্রবর্তীর ‘একটা অসম্ভব গল্প’, বরদাচরণ গুপ্তের 888sport live ‘সামাজিক 888sport live football’, অতুলচন্দ্র গুপ্তের ‘আর্যামি’ আর প্রমথ চৌধুরীর সম্পাদকের নিবেদন; দশম বর্ষের পঞ্চম 888sport free betর (মাঘ, ১৩৩৩) সূচি – প্রমথ চৌধুরীর ‘অভিভাষণ’, কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পেনসনের পর ও উপসংহার’ (বক্তৃতা) আর অবনীন্দ্রনাথ রায়ের 888sport live ‘ডাকঘর’। তাহলে এটা বোঝা যাচ্ছে যে, গুণগতভাবে উত্তীর্ণ লেখার 888sport free bet কম হলেও তা দিয়ে পত্রিকা প্রকাশ পেতে পারে।

তৃতীয়ত, পাণ্ড‍ুলিপির সম্পাদনা, তথা কপি এডিটিং। প্রমথ চৌধুরীর কপি এডিটিং এক কিংবদমিত্মসম ব্যাপার। আগেই বলেছি ধূর্জটিপ্রসাদের কথায় যে, রবীন্দ্রনাথ ও অতুল গুপ্তের লেখা ছাড়া সবার লেখাতেই তিনি কলম চালাতেন।

সবুজপত্রে প্রকাশিত হারীতকৃষ্ণ দেবের প্রথম 888sport live ‘বাংলা 888sport live footballে বাংলা ভাষা’ পড়ে প্রমথনাথ যথেষ্ট প্রশংসা করেছিলেন কিন্তু কাটাকাটি-ছাঁটাছাঁটিও করেছিলেন বিসত্মর। ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তাঁর আমরা ও তাঁহারা বইতে একটি ঘটনার কথা জানান – ‘অজিত চক্রবর্তীর একটা ৩০-৩৫ পৃষ্ঠার 888sport live প্রমথ চৌধুরীর কাছে
আসে ‘সবুজপত্রে’র জন্যে। তখন অজিত বাবুর যথেষ্ট সুনাম, তিনি রবীন্দ্র-888sport live footballের ধুরন্ধর; রবীন্দ্রনাথের প্রিয়। যতদূর মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথই লেখাটা পাঠিয়েছিলেন, কিংবা প্রমথবাবুকে হয়তো দেখতে বলেছিলেন। যাই হোক, লেখাটা বেরুল বটে, কিন্তু ছয় পৃষ্ঠায়। কেটে-কুটে ওইতে দাঁড় করেছিলেন প্রমথবাবু।’

নামজাদা লেখকেরও লেখা না-পড়ে, সম্পাদনা না-করে সবুজপত্রতে ছাপতে দিতেন না। যেমন, অমৃতলাল বসুর গুণগ্রাহী হয়েও তাঁর লেখা না-পড়ে ছাপতে রাজি হননি।

চতুর্থত, আগেই বলেছি, ইংরেজি-সংস্কৃত-বাংলা সাধুভাষা এই ত্রিসত্মরীয় হার্ডল পেরিয়ে চলিত ভাষার ভগীরথ প্রমথ চৌধুরীর মতে, ‘ঐ চলিত ভাষা শহরে এলিট শ্রেণীর ভাষা যাকে ঘসেমেজে সহজ সরল করে সাধারণের ভাষায় রূপান্তরিত করতে হবে। ইতিহাস, দর্শন, 888sport apk, রাজনীতি, 888sport live football সমালোচনা সর্বত্রই হবে সেই ভাষারই বিস্তার।’ অশোক মিত্র লিখেছেন – ‘ধূর্জটিপ্রসাদের বড়ো গর্ব ছিল – যে গর্বের কথা তিনি ‘ঝিলিমিলি’তে উল্লেখ করেছেন – প্রমথ চৌধুরীর কাছ থেকে ‘কুঁচিয়ে ধুতি পরা’ থেকে শুরু করে ‘সিগারেট খাওয়ার ধরন, চলন, বলন’ সব কিছু শিখেছিলেন। সবচেয়ে বেশি শিখেছিলেন লেখার কথনভঙ্গি।’

পঞ্চমত, শুধু মননের সৃজনের প্রকাশনা মাত্রই নয় – তার চর্চার ধারাবাহিকতা ছিল অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আর, এই চর্চাই ছিল গ্রম্নমিংয়ের নামান্তর। আমরা সবুজসভায় তরুণ সদস্যদের নতুন নতুন বই পড়ানো, পড়ে আত্মস্থ করার জন্য আলোচনা করানো – এসব আগেই জানতে পেরেছি। আমরা অন্নদাশঙ্কর রায়ের বয়ান থেকে জানতে পারি, সবুজপত্র সম্পাদক নতুন লেখকদের বোঝাতেন, ‘কী লিখব’ এটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ‘কেমন করে লিখব’ সেটাও তেমনই।

তিনি তরুণ লেখকদের ভালো লেখা পড়লে ডেকে এনে প্রশংসা করতেন – সে অন্য কোনো পত্রিকায় মুদ্রিত হলেও। অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাথে তাঁর এই সূত্রেই আলাপ-পরিচয়। চিঠিপত্রে এর নজির রয়েছে যথেষ্ট। যেমন, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে প্রমথ চৌধুরী লিখছেন, ‘… তোমার লেখার ওপর কলম চালাতে হয় না। … লেখক হবার জন্য দুটি জিনিস দরকার, সে দুটিই তোমার যথেষ্ট আছে। লেখক হবার জন্য দরকার প্রথমত concrete-এর জ্ঞান। দ্বিতীয়ত ভাষার উপর অধিকার – এই দুই গুণের সমান পরিচয় তোমার লেখায় পাওয়া যায়।’

ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, হারীতকৃষ্ণ দেব, সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী – এরা সকলেই তাঁদের লেখায় প্রমথ চৌধুরীর গ্রম্নমিংয়ের প্রমাণসূচক সম্পাদনার কথা সগৌরবে স্বীকার করেছেন।

ষষ্ঠত, প্যাশনের দিক থেকে, দায়বদ্ধতার দিক থেকে প্রমথ চৌধুরীর কাছে নিজের লেখালেখি ও সবুজপত্র প্রকাশ একার্থবোধক। অব্যবসায়িকভাবে কাগজ করতেন, বিজ্ঞাপন নেওয়াও তাঁর ইচ্ছাবিরুদ্ধ ছিল। প্রচ- অর্থকষ্টে থাকলেও যতদিন পেরেছেন পত্রিকা চালিয়ে গেছেন। শেষ পর্যায়ে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের আর্থিক সহায়তায় সবুজপত্র প্রকাশ পেয়েছে – তিনি বিদেশ চলে যাওয়ায় সবুজপত্র বন্ধ হয়ে যায়। যতদিন সবুজপত্র চলেছে, প্রবল অর্থকষ্টের সময়েও, প্রমথ চৌধুরী তাঁর আদর্শ থেকে, প্রাথমিক ও বৃহত্তর উদ্দেশ্য থেকে কোনোভাবেই বিচ্যুত হননি। বোঝা মুশকিল যে, সবুজপত্রের জন্য তাঁর লেখালেখি নাকি তাঁর লেখালেখি প্রকাশের জন্য সবুজপত্র

বীরবলী গদ্যের জাদুকর, চলিত ভাষার ভগীরথ, সবুজপত্র সম্পাদনা – এই অনন্যপূর্ব পরিচয়ের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ এমন শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব এই বাংলার 888sport live chat888sport live footballের ইতিহাসে আর দুটি পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। সবুজপত্র সম্পাদনা তো আর মামুলি ব্যাপার নয়। বুদ্ধির মুক্তি ও বিশ্ববিদ্যার চর্চা করে তিনি বাঙালিকে বিশ্বনাগরিক করতে চেয়েছিলেন – বিশ্বায়নের একশ বছর আগেই।

চার

আমরা এবার সবুজপত্রের লিগ্যাসি বা উত্তরাধিকারের প্রসঙ্গে প্রবেশ করবো। স্বদেশ-স্বকাল সম্পর্কে প্রমথ চৌধুরীর উদ্বেগ-উদ্যোগ প্রসঙ্গে আমরা এতক্ষণ কিছু 888sport sign up bonusচারণ বা পুনর্পাঠ নাকি আলোচনা করলাম। কিন্তু তার ধারাবাহিকতা নিয়েও তাঁর চিন্তা ছিল। তাঁরই নিবন্ধ থেকে অন্তত একটি সাক্ষ্যপ্রমাণ পরিবেশন করতে চাইছি – ‘কেউ একটা নতুন পত্র বার করতে উদ্যত হয়েছেন, একথা শুনলেই আমি খুশি হই। কারণ, নিত্যনতুন পত্রিকার জন্ম বঙ্গ888sport live footballের প্রাণের লক্ষণ। পাঠকের 888sport free bet না বাড়লে যে 888sport live footballের শ্রীবৃদ্ধি হয় না, একথা তো সকলেই জানেন। কিন্তু সেই সঙ্গে একথাটাও সকলের মনে রাখা উচিত যে, লেখকের 888sport free bet বৃদ্ধি হওয়ার উপরেই 888sport live footballের উন্নতি নির্ভর করে না; 888sport live footballের স্থিতি ও উন্নতি যে লেখক-পাঠক উভয়ের যোগাযোগের উপর নির্ভর করে, সে কথা বলাই বাহুল্য। নতুন পত্রের আবির্ভাবের কথা শুনলেই যে আমি খুশি হই, তার কারণ এই সূত্রে পরিচয় পাই যে, আবার জনকতক যুবক লেখক শ্রেণীতে ভুক্ত হচ্ছেন। এই নতুন দলের ভিতর ক’জন কালক্রমে বড় লেখক হয়ে উঠবেন, এ প্রশ্ন মনে মনে জিজ্ঞাসা করাও বৃথা; কেননা সে প্রশ্নের উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ।’

প্রমথ চৌধুরীর সেই ‘ভবিষ্যৎ আমাদের নিকটবর্তী অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ’। লিগ্যাসির কথা বলতে হলে সবুজপত্রের অব্যবহিত পরবর্তী সময়ে, সমালোচকদের মতে, সবুজপত্রের বুদ্ধিপ্রবণ মননশীলতার সাধনাগদ্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, 888sport app download apkয় সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ও সামগ্রিকভাবে কলেস্নালপন্থীদের কাছে গৃহীত হলো না। তার ফলে যুক্তি, বুদ্ধি ও মননচর্চা একটি সীমাবদ্ধ অভিজাত গোষ্ঠীর মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে রইল। তবে পরিচয় পত্রিকার প্রথম যুগের 888sport app download apk ও 888sport liveে সবুজপত্রের আদর্শের অনুসরণ ও সার্থক প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।

কোনো কোনো সমালোচকের মতে, ইউরোপে বুদ্ধির যুগ শুরু হয়ে গেছে অষ্টাদশ শতকে (এজ অব রিজন বা এনলাইটেনমেন্ট পর্ব বলতে সেখানে ১৬৮৫-১৮১৫ সময়কালকে ধরা হয়) আর তার ঢেউসদৃশ আমাদের নবজাগরণের ধাত্রকাল ঊনবিংশ শতক। ওই যুগগত বুদ্ধিবাদকে, সর্বদিদৃক্ষু মননশীলতাকে সবুজপত্র 888sport appsে পরিবেশন করেছিল। তাছাড়া, বিংশ শতকের বাংলার আবিষ্কার হচ্ছে – গণবাদ, সমাজতন্ত্রবাদ, প্রগতিবাদ, যুক্তিবাদ ও ব্যক্তিস্বাধীনতাবাদ।

এর মধ্যে প্রগতিবাদ প্রচারে কলেস্নালের ও সমাজতন্ত্রবাদ প্রচারে পরিচয়ের কৃতিত্ব অধিকতর হলেও যুক্তিবাদ ও ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যবাদের চর্চার কৃতিত্ব সবুজপত্রের প্রাপ্য। তাই, সমালোচকদের মতে, বিংশ শতাব্দীর বাংলার আধুনিকতার অন্যতম প্রধান ধারক-বাহক সবুজপত্র

কার্ত্তিক ১৩৩৮ 888sport free betর শনিবারের চিঠিতে সম্পাদক নিদান দিলেন, ‘সবুজপত্র মরে পরিচয়ে পরিণত।’ গোড়ায় পরিচয় পত্রিকার আদর্শ, চিন্তা, রচনা নির্বাচন, আন্তর্জাতিকতা, মননের নিরপেক্ষতা, আঙ্গিক বিন্যাস – সবই সবুজপত্রের প্রভাবজাত। সুধীন্দ্রনাথ, ধূর্জটিপ্রসাদ, হারীতকৃষ্ণ, সত্যেন্দ্রনাথ প্রমুখ সবুজপত্রীই অগ্রণী হয়েছিলেন পরিচয়ের মতো উন্নত রুচির পত্রিকা প্রকাশে।

এ-কথা তো বলা বাহুল্য যে, বাঙালিত্ব বা ভারতীয়ত্বের সীমানা অতিক্রম করে বিশ্ব888sport live footballের সঙ্গে যুক্ত হবার প্রয়াস অবশ্যই সবুজপত্রের প্রেরণাসঞ্জাত। 888sport app download apk পত্রিকার আঙ্গিক বিন্যাস, নতুন প্রতিভা আবিষ্কার এবং সর্বোপরি চিন্তাশক্তি ও প্রকাশভঙ্গির নিজস্বতা সবুজপত্রের কথা 888sport app download for android করায়। সবুজপত্রের মতোই 888sport app download apk আন্তর্জাতিক 888sport live footballের সঙ্গে পাঠকের পরিচয় স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছিল।

পাঁচ

বুদ্ধদেব বসুই জানিয়েছিলেন – ‘সবুজপত্র’ বাংলা ভাষার প্রথম লিটল ম্যাগাজিন। … কিন্তু, লিটল ম্যাগাজিন নামেই যখন প্রতিবাদ, তখন রূপে ও ব্যবহারেও তা থাকা চাই – আর সেটা শুধু একজন অধিনায়কেরই নয়, একটি 888sport live footballিক গোষ্ঠীর। ‘সবুজপত্রে’ এই লক্ষণ পুরোমাত্রায় বর্তেছিল। তাতে বিদ্রোহ ছিল, যুদ্ধ ঘোষণা ছিল, ছিল গোষ্ঠীগত সৌষম্য।’

আমরা বরং এখানে বুদ্ধদেব বসু সে-সময়ে সবুজপত্রের রেফারেন্সে লিটল ম্যাগাজিনের যে-কয়েকটি মূল্যবান বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করেন তাকে পেশ করি –

১. বহুলতম প্রচারের ব্যাপকতম মাধ্যমিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

২. একজোড়া মলাটের মধ্যে সবকিছুর আমদানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

৩. সময়ের সেবা না করে সময়কে সৃষ্টি করার চেষ্টা – এইটেই লিটল ম্যাগাজিনের কুলধর্ম।

৪. বিদ্রোহ, যুদ্ধ ঘোষণা।

৫. ব্যক্তিস্বরূপের স্ফূর্তি।

৬. গোষ্ঠীগত সৌষম্য।

৭. আর্থিক অপব্যয়ের শক্তি।

৮. শুধু রচনা প্রকাশ করাই কাজ নয় … লেখককে প্রকাশ করাও তার কর্তব্য।

৯. যার অনতিস্থায়ী জীবনের মধ্যে 888sport live footballের সদ্যতন বিশেষ সাধনাটি মূর্ত হয়ে উঠবে।

১০. বিশেষ কোনো সময়ে, বিশেষ কোনো ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর উদ্যমে বিশেষ কোনো একটি কাজ নিয়ে এরা সঞ্জাত হয় এবং সেটুকু সম্পন্ন হলেই এদের তিরোধান ঘটে। স্বল্পায়ু তাই এদের চরিত্রলক্ষণ।

সবুজপত্র মডেলটিকে সামনে রেখে লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কে বুদ্ধদেব বসুর যে-সাধারণীকরণ তথা সংজ্ঞায়নের প্রয়াস, তার নিরিখে আজ লিটল ম্যাগাজিনের যে-স্থানাঙ্ক তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক হবে না। যদিও একশ বছরের ব্যবধানে প্রাসঙ্গিকতার ভিন্নতা কতটা ব্যাপ্ত তা অনুমান করা গেলে বৈধতা দানের সুবিধে গ্রহণ করা ঠিক হবে কিনা তাও বিতর্কসাপেক্ষ।

আজ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত, লিটল ম্যাগাজিনের 888sport free bet প্রচুর। প্রমথ চৌধুরীর মত অনুযায়ী, একে ‘বঙ্গ 888sport live footballের প্রাণের লক্ষণ’ আর বলা যায় কিনা তা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। জন888sport free bet বৃদ্ধির মাত্রাকে ব্যাখ্যা করার সঙ্গে একে মিলিয়ে দেওয়াটা নিশ্চয়ই ঠিক হবে না। শুনতে পেলাম, ইউনিসেফ কলকাতাকে ‘সিটি অব লিটারেচার’ শিরোপা দিতে চলেছে। তার নেপথ্যে লিটল ম্যাগাজিনের পরিমাণগত অবদান কতটা তা জানতে না পারলেও অনুমানে একে ‘ডেমোগ্রাফিক ভিডিডেন্ড’ বলা যায় কিনা গবেষণার বিষয়। কিন্তু গুণগত সমীক্ষায় উদ্যত হলে আজকের তথাকথিত লিটল ম্যাগাজিন পরিম-লের বেশ বড়সড় পরিমাণকে আমাদের আলোচনার চৌহদ্দির বাইরে রাখতে হবে।

এই প্রসঙ্গে দুটি বিষয়কে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য বলে মনে হলো বলেই আগে আলোচনা করে নিচ্ছি। প্রথমত, বুদ্ধদেব বসু যা বাণিজ্যিক কাগজের ক্ষেত্রে বলেছিলেন – শুধু সমাবেশ ঘটায়, সামঞ্জস্য সাধন করে না, যা সংগ্রহ করে তার ভেতর দিয়ে কোনো ভাবনাকে মূর্ত করে তোলার চেষ্টা নেই, শুধু কালস্রোতে ভেসে চলা এদের কাজ, কোনো নতুন তরঙ্গোৎক্ষেপ নয়। আজ, দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এই অনুযোগ আজকের তথাকথিত অবাণিজ্যিক কাগজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য – বিশেষ করে, প্রবীণ খ্যাতনামা লিটল ম্যাগাজিন (?) যারা পুরোদস্ত্তর প্রকাশকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। দ্বিতীয়ত, সম্পাদনার যে মান-মাত্রা আমরা শতবর্ষ আগে বাংলা সাময়িক পত্রের ক্ষেত্রে জেনেছি, প্রমথ চৌধুরীর সমসময়ে ও অব্যবহিত পরে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়-ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-যোগেশচন্দ্র বাগল (প্রবাসী), সজনীকান্ত দাস (শনিবারের চিঠি), সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (পরিচয়), বুদ্ধদেব বসু (888sport app download apk), প্রদ্যুন্ন ভট্টাচার্য – অরুণ সেন – রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য (888sport live footballপত্র), বিরাম মুখোপাধ্যায় (পত্রিকা), জগদীশ ভট্টাচার্য
(কবি ও 888sport app download apk), নির্মাল্য আচার্য (ক্ষ), অশোক সেন (বারোমাস)  – তারপর? ১৯৫৯-৬০ সাল নাগাদ ধূর্জটিপ্রসাদের আক্ষেপ শুনি, তাঁর লেখায়, ‘এখন দেখছি সম্পাদনার বালাই চলে গেছে’ – তা কি আজ আরো প্রকট হয়ে পড়েনি? নাকি তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে?

তবে একথা সত্যি যে, সেদিনের সাধু-চলিত ভাষার পালাবদলের পর্বে সম্পাদনার প্রয়োজন বেশি ছিল। তার ওপর, চলিত ভাষাকে মুষ্টিমেয় ভদ্রলোকের মান থেকে সর্বজনীন মাত্রায় রূপান্তরিত করার স্বন্যসত্ম দায়িত্ব ছিল প্রমথ চৌধুরীর কাঁধে – যাঁর মাথায় ছিল রবীন্দ্রনাথের হাত। আজ দু-একটি পত্রিকায় পাণ্ড‍ুলিপি ছাপার আগে পড়া হয়। পাঠকের চোখে সম্পাদক সে-লেখার যেখানে যেখানে বক্তব্যবিষয় বোঝার অসুবিধে হয় বা তথ্যের গরমিল চোখে পড়ে বা তত্ত্বের অনুধাবনে কোনো দুর্বলতাজনিত কারণে জটিলতা নজরে আসে – লেখকের সম্মতি সাপেক্ষক্ষ নিজেই কাটেন বা পালটান বা যোগ করেন আর বিষয়ের ভার বেশি হলে লেখককে দিয়ে সংশোধন পছন্দ করেন। তবে, আগে যেমন প্রায় প্রত্যেক পত্রিকাতেই কমবেশি সম্পাদনা চালু ছিল – এখন ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব পত্রিকাতেই সম্পাদনা উঠে গেছে। কোথাও সম্পাদক তাঁর বোধবুদ্ধির অনেক ওপরের মানমাত্রাবিশিষ্ট লেখা ছাপেন, যেখানে তাঁর হসত্মক্ষেপের প্রশ্নই ওঠে না আর কোথাও সম্পাদকের সময়ই নেই, প্রয়োজনও বোধ করেন না।

বুদ্ধদেব বসু লিটল ম্যাগাজিন তথা অবাণিজ্যিক সাময়িকপত্রের যে-বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষক্ষতে আজকের লিটল ম্যাগাজিনের বৈশিষ্ট্যগুলোকে পরবর্তী প্রজন্মের কোনো তরুণ গবেষকের তুলনামূলক বিশেস্নষণের জন্যে লিপিবদ্ধ করতে ইচ্ছে হয়।

যে-পত্রিকাগুলো অনেককাল ধরে প্রকাশিত হচ্ছে এবং পাঠকমহলে সুপরিচিত শুধু তাদেরকে কেন্দ্র করেই কিছু সাধারণীকরণ, কিছু বৈশিষ্ট্য-সন্ধানের চেষ্টা এখানে করা হচ্ছে। যেমন –

১. বাজার অর্থনীতির যুগে এই পত্রিকাগুলোকে আর অবাণিজ্যিক বা অব্যবসায়িক বলা যাবে কিনা – অন্তত মোটিফের ভিত্তিতে – তা আর সন্দেহের সীমায় নেই। শুধুই বলা যায় অল্প পুঁজির পত্রিকা। এই শ্রেণির পত্রিকার বেশিরভাগই কমবেশি প্রকাশক হয়ে উঠেছে। কিন্তু লিটল ম্যাগাজিন তকমার সুবিধা নিয়ে লেখকদের সম্মানমূল্য দেন না। কেউ কেউ পুরনো লেখা পুনর্মুদ্রণে মনোযোগী বেশি। কেউ কেউ আবার যখন-তখন সমসাময়িক পত্রিকা, এমনকি বই থেকেও লেখা নিয়ে পুনর্মুদ্রণ করেন – সংশিস্নষ্ট লেখক বা সম্পাদকের অবগতি বা অনুমতি ছাড়াই এবং পুনর্মুদ্রণের উল্লেখ ছাড়াই।

২. মধ্যমেধার রমরমা এই পত্রিকাগুলোতে। দু-একজন বিদ্বজ্জনের লেখা তার মধ্যে গুঁজে দিয়ে পত্রিকার বিক্রয়যোগ্যতা বজায় রাখেন। পত্রিকার মানকে নিশ্চিত করা, বজায় রাখা বা উন্নত করার চিন্তা আছে বলে মনে করার মতো কোনো চিহ্ন নেই। কোন বিষয়ে বিশেষ 888sport free bet করলে বিক্রি বাড়বে সেদিকে যত চিন্তা – কোন বিষয়ের চর্চা এই সময়ে অত্যন্ত জরুরি সে-চিন্তার চেয়ে। ওইসব রগরগে বিষয়ের বিশেষ 888sport free bet করবার সময় পত্রিকার চর্চার যে ধারাবাহিকতা তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিনা সে-বিবেচনার কথাও ভুলে যান সম্পাদক বা সম্পাদকম-লী। আর, যারা প্রথমে
পুসত্মক-প্রকাশক, তারপর পত্রিকা-প্রকাশক হয়েছেন তাদের কাছে চর্চার আশা করা উচিত হবে না। একই বিষয়ে একাধিক পত্রিকায় বিশেষ 888sport free bet করার প্রতিযোগিতাও দেখা যাচেছ। এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগী পত্রিকার আগেই প্রকাশ করতে হবে – এই তাড়াহুড়োয় লেখার মানের সঙ্গে সমঝোতা করতে হচ্ছে – সেই চিন্তাও গৌণ হয়ে গেছে।

৩. সময়কে সৃষ্টি করার কুলধর্ম এখন আণুবীক্ষণিকভাবে বিরল। 888sport free betধিক্যে চোখে পড়ে পাঠকের মনোরঞ্জনের লক্ষ্যে তথা সময়ের সেবায় প্রকাশিত বিশেষ 888sport free bet। আনন্দ? সে তো কবে মারা গেছে। তবে শোকের বাজার আছে। যদিও আনন্দসন্ধানী পাঠক রাতের তারার মতো দিনের আলোর গভীরে অপেক্ষমাণ। তাঁরা বিদেশি 888sport live football থেকে স্বদেশে ফিরছেন না। তাঁদের মধ্যে বাইলিঙ্গুয়াল পাঠক যাঁরা, তাঁদের টানবার মতো মানমাত্রাসম্পন্ন কাগজের 888sport free bet আঙুলেও গুনতে হবে না।

অপ্রিয় সত্য বলার রেওয়াজ নেই, তবু আসল কথাটি হলো, এখনকার বেশিরভাগ সম্পাদকের জ্ঞানগম্যির সেই মাত্রা নেই,
সেই মানসিকতাও নেই, যে সমসময়ের বা অনতিদূর ভবিষ্যতের সমস্যা-প্রতিরোধী আশু কর্মসূচিকে চিহ্নিত করে সেইমতো পরিকল্পনা করে কাজ করবেন। তারা ব্যসত্ম কোন বছরে কোন মনীষীর শত, সার্ধশত, দ্বিশত জন্মবর্ষ তার খোঁজে – তাও যদি সেই উদ্যাপনে নতুন কোনো মূল্যায়ন পাওয়া যেত!

৪. লেখককে তৈরি করা, প্রকাশ করার কথা রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব দুজনেই বলেছেন, প্রমথনাথ চেষ্টা করেছেন সবুজসভার মাধ্যমে। আর এখন কজন সম্পাদক লেখা পড়ে নতুন লেখক খোঁজেন বা সম্ভাবনাময়ের খোঁজে পরীক্ষামূলকভাবে লিখিয়ে গ্রম্নমিং করার প্রক্রিয়া বেছে নেন? আসলে চর্চা ব্যাপারটাই আর নেই। এখন শুধুই প্রকাশ – তার পূর্বাপরে সম্পাদকের আগ্রহ নেই, দায় তো নেই-ই। একটা উদাহরণ দিই, ২০১৯ কলকাতা পুসত্মকমেলায় কোনো পত্রিকা থেকে প্রকাশিত একটি বই ভালো বিক্রি হয়েছে। বইমেলার পর ছয়টি পত্রিকার সম্পাদক লেখককে ফোন করেছেন ওই বিষয়ে আরো একটি বই প্রকাশের আমন্ত্রণে, পত্রিকায় লেখার জন্য নয়। পত্রিকা এখন মুখোশ, আসল কাজ পুসত্মক প্রকাশনা।

৫. সদ্যতন বিশেষ সাধনার ঝলক খুঁজে পাওয়া যায় না অধিকাংশ লেখায়, পত্রিকায়। ব্যতিক্রমের চিহ্ন যে-সম্পাদকের চিন্তায় ও লেখকের রচনায় চোখে পড়ে তাকে পাগলামো ছাড়া কীইবা বলা যায়। সেই ক্যাপটিভ পাঠকদেরও, 888sport free bet যতই কম হোক, তেমনই আখ্যা দেওয়া যায়। আজকাল ‘সিরিয়াস’ বলে ‘অপর’ করে দেওয়ার রীতি হয়েছে – অন্যসব যেন হালকা ব্যাপার-স্যাপার, ইচ্ছে হলেই হলো, চলো খেলি – লেখালেখি, ছাপাছাপি।

অথচ এখন, বিশ্বায়নের সৌজন্যে স্বদেশ-স্বকালের সদ্যতন সাধনার সুযোগ অনন্ত – তার সন্ধানের প্রয়াস চোখেই পড়ে না। মনে হয়, এইসব পত্রিকার সম্পাদক আর তাঁদের পরামর্শদাতাদের ভিশন তথা পরিপ্রজ্ঞা তো দূরের কথা, সাধারণ দূরদৃষ্টিতেও ছানি পড়েছে নাকি ‘ভেস্ট’ তাদের দেখতে দেয় না খোলা চোখে। আর অপব্যয়ের শক্তি তথা ইচ্ছেটাও আর নেই – স্বদেশ-স্বকাল এসব এখন বড় বড় সেকেলে বকুনি – এলিটিস্ট, অ্যাকাডেমিক।

৬. পঞ্চাশের দশক থেকে ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা’র সেস্নাগান শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। কিন্তু আজো বুঝতে পারিনি বিরোধিতা ‘প্রতিষ্ঠানে’র বিরুদ্ধে, নাকি ‘প্রাতিষ্ঠানিকতা’র বিরুদ্ধে। কেননা পরবর্তীকালে একদা-বিরোধীদের প্রাতিষ্ঠানিকতার মাত্রা চোখে লাগে। আজ যখন ঐতিহ্যসম্পন্ন পত্রিকার উদ্যোক্তাদের দেখি – বাণিজ্যিক কাগজে পত্রিকার আলোচনা বা অনুষ্ঠান-সংবাদ প্রকাশ পেলে
ফেসবুকে সম্প্রচার করে শস্নাঘা প্রকাশ করেন, তখন তথাকথিত ‘অল্টারনেট প্রেসে’র স্পিরিটের অপমৃত্যু দেখতে পাই। এই পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা-স্বীকার কি প্রতিষ্ঠান-নির্ভরতার চিহ্ন বহন করে না?

৭. সৃজনশীল রচনাই হোক বা মননশীল 888sport liveই হোক – স্বতঃস্ফূর্ততার চর্চা এখন বিরল। 888sport app download apk ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে এখন প্রকল্প-পরিকল্পনার প্রাধান্য। গল্প-888sport alternative linkে সমীক্ষা-গবেষণার জয়জয়কার যাতে, প্রমথ চৌধুরীর কথায়, ‘মন নেই, ছক আছে।’ আর 888sport liveে লেখকদের নিজস্ব চিন্তাস্রোত-উদ্ভূত বিষয়ে কদাচিৎ লিখতে পারেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্পাদকের বিশেষ 888sport free betর চাহিদা মেটাতে হয় – যেখানে স্বভাবতই স্বতঃস্ফূর্ততার চেয়ে গবেষণাপত্রের মতো নির্মাণের গুরুত্ব বেশি। লেখকের ভাবনাপ্রসূত বিষয়কে ছাপবার সম্পাদকও এখন কম – তা যতই নতুন বিষয়ে হোক বা তার ভাষা-আঙ্গিকে যতই নতুনত্ব থাকুক। কেননা, বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিক্রয়যোগ্যতাই সম্পাদকের কাছে মূল্যবান। যদি বিদ্বজ্জন হন তবে যে-কোনো বিষয়ের লেখা চলবে – কেননা সেখানে নামেই বিক্রি হবে। পত্রিকার লেখকগোষ্ঠী 888sport live chat-888sport live football-রাজনীতি-সংস্কৃতি বিষয়ে যখন যেমন 888sport free bet হবে তিনি সে-বিষয়ে লিখবেন। এখন তো বই পড়তে হয় না – ইন্টারনেট থেকে বাছাই করে পাঞ্চ করে-888sport app download apk latest version করে নামিয়ে দেওয়া যায় অর্থাৎ লিখন কর্মটি এখন ডাউনলোড করার শামিল। কাট অ্যান্ড পেস্ট এখন রাইটিংয়ের অন্য নাম। এখন আদর্শ নয়, কৌশল তথা স্ট্র্যাটেজিই হলো কিওয়ার্ড। সুতরাং নতুন পরিসর সৃষ্টি করার পরিবর্তে
বাজার-চলতি চাহিদা মেটানোর নিজস্ব কৌশল উদ্ভাবনে ব্যসত্ম সকলে।

আজ গণশিক্ষার প্রভাবে বৃহত্তর পাঠকম-লীর রুচির মানমাত্রা ও সংবাদ888sport live footballের প্রভাবে 888sport live footballচর্চার গড় মান যে-পর্যায়ে সেখানে আমাদের কাছে সবুজপত্রের চর্চাকে অ্যাকাডেমিক মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাহলে কি বুদ্ধদেব বসুর দেওয়া লিটল ম্যাগাজিনের বৈশিষ্ট্যগুলোকে পুনর্লিখনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে? কেননা, ‘Exception does not prove the rule’। আসলে তিনি বেঞ্চমার্ক করেছিলেন আন্তর্জাতিক পত্রিকার সঙ্গে। বৈশিষ্ট্যগুলোকে নির্ধারণ করেছিলেন হয়তো আন্তর্জাতিক মানকে মাথায় রেখে।

শতবর্ষ আগে, ইউরোপের সমসময়ের নতুন চিন্তাকে জানা ও জানানোর আর তার সঙ্গে স্বদেশের প্রাচীন-প্রাণবন্ত চিন্তার সমন্বয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন প্রমথ চৌধুরী। আজ সে-সময় এসেছে আরো প্রকট হয়ে। বিশ্বের জ্ঞানকে রপ্ত করা বা আয়ত্ত করা আর কোনো অপশন নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরিহার্য কেননা কার্যক্ষেত্র এখন বিশ্ববাজার। এই যে আদিকল্পের ব্যাপক সরণ – তার বিরোধিতা করতে গেলেও তাকে জানতে হবে, তার সম্ভাব্য কুপ্রভাবগুলোকেও বুঝতে হবে সেই জানার মাধ্যমে। আজ পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের নতুন ভাবনার পুসত্মক হোক, গবেষণা হোক – আমরা খুব সহজেই পেতে পারি। তৎসত্ত্বেও আমরা এই উত্তরাধিকারের শ্রমসাধ্য পথে হাঁটিনি। এর জন্য থাকতে হয় নতুন কাজ করার স্বতঃস্ফূর্ত তাগিদ তথা প্যাশন আর স্বদেশ-স্বকাল সম্পর্কে দায়িত্ববোধ।

সবুজপত্রকে যদি প্রথম লিটল ম্যাগাজিন বলে মেনেও নিই এবং বুদ্ধদেব বসুর সাধারণীকৃত বৈশিষ্ট্যগুলোকেও স্বীকার করি তবে আজকের আদর্শ লিটল ম্যাগাজিনের (১) চিন্তন বিশ্বকে সম্প্রসারিত করার কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদ্যোগী হওয়ার কথা। কেননা সমসাময়িক বিশ্বকে জানার আগ্রহ চিরকালই বিদ্যোৎসাহী মানুষের মৌলিক প্রবৃত্তি। (২) ইন্টারডিসিপ্লিনারি চর্চায় উৎসাহী হওয়ার কথা। অখ- জ্ঞানের চর্চা ভারতে যেমন, পাশ্চাত্যেও তেমনই। 888sport apkের দার্শনিক কার্ল পপারের মতে, বিদ্যা বিষয়ের ভাগাভাগি বুর্জোয়া ব্যবস্থার Divide and Rule জাতীয় কৃৎকৌশল। (৩) লেখায়, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক যে অটোক্রিটিক্যালিটির কথা বলেছেন তার নিরিখে তরুণদের গ্রম্নমিং করার কথা। (৪) নতুন প্রজন্মের কাছে স্বদেশের অতীত জ্ঞানচর্চা আর স্বকালের মননবিশ্বের যথার্থ সমন্বয়ের আবহ তৈরি করা। আর, (৫) সৃজনশীল লেখায় এই সমন্বয়ের প্রভাবে বালজাক, মার্কেজ না হোক রবীন্দ্রনাথের শেষ পর্বের স্বতঃস্ফূর্ত নিরীক্ষার সমার্থক কিছু রূপান্তরের আভাস সন্ধান করা।

সমৃদ্ধ এক অতীত আর নেতিবাচক এই বর্তমান – ভবিষ্যতের কাছে আলোর আশা করা ছাড়া আমাদের কাছে আশ্বাসের কিছু নেই। সান্তবনার আছে ব্যতিক্রমী দু-একটি কাজ যার বীজ থেকে ক্রমান্বয়ে মুখে মুখে প্রাণস্পন্দিত হবে বাংলা 888sport live football – এমনটি আশা করাই আমাদের ভবিতব্য।

হারীতকৃষ্ণ দেবকে দলে টানবার উদ্দেশ্যে প্রমথ চৌধুরী চিঠিতে লিখেছিলেন – ‘বাঙ্গলা 888sport live footballে জ্ঞানের দিকটে আজ পর্যন্ত ফাঁকা রয়ে গিয়েছে। আর যতদিন বাঙ্গলা 888sport live football জ্ঞানের ভা-ার না হবে, ততদিন উঁচুদরের কাজ ও সমালোচনার জন্যও আমাদের দু-একটি প্রতিভাশালী লেখকের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে। এক বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের লেখা বাদ দিয়ে বাঙ্গলা 888sport live footballে এমন কিছু থাকে না, যা ভদ্রলোকের পাতে দেওয়া যায় – তা নিয়ে গৌরব করা তো দূরের কথা। … আমাদের মতো প্রতিভাহীন লোকদের পক্ষে আমরা যেটুকু জ্ঞান 888sport apk সঞ্চয় করেছি তার ভাগ দেশের লোককে দেওয়াটা কর্তব্য।’

সবুজপত্র আর চালাতে না পেরে প্রমথ চৌধুরী যখন হতাশ, চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লেখেন – ‘সবুজপত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে বই কি। দেশের তরুণদের মনে সবুজ রং-কে বেশ পাকা করে দেবার পূর্বে তোমার ত নিষ্কৃতি নেই।’

প্রবীণতার বর্ণহীন রসহীন চাঞ্চল্যহীন পবিত্র মরুভূমির মাঝে মাঝে অন্তত একটা-আধটা এমন ওয়েসিস থাকা চাই যাকে সর্বব্যাপী জ্যাঠামির মারী-হাওয়াতেও মেরে ফেলতে না পারে।

এরই রেশ ধরে আমরা কি বুঝবো যে, যে-যুগেই হোক সবুজপত্র একটা-আধটাই হবে? তবে যুগে যুগে সবুজপত্র যেন ‘প্রাণের বৈচিত্র্য আপন বিদ্রোহের সবুজ জয় পতাকাটি শুভ্র একাকারত্বের মধ্যে গেড়ে দিয়ে অমর হয়ে দাঁড়ায়।’

সহায়ক গ্রন্থ

১.     অন্নদাশঙ্কর রায়, রবীন্দ্রনাথ প্রমথ চৌধুরী ও সবুজপত্র, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অকাদেমি, দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০১৪।

২.     অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়, বীরবল ও বাংলা 888sport live football, দে’জ পাবলিশিং, ২০০৩।

৩.    জীবেন্দ্র সিংহরায়, প্রমথ চৌধুরী, মডার্ন বুক এজেন্সি, ১৯৫৪, তৃতীয় সংস্করণ, ১৯৭৬।

৪.     ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ধূর্জটিপ্রসাদ রচনাবলী, তৃতীয় খ-, দে’জ পাবলিশিং, দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০১৭।

৫.     নরেশ গুহ-সম্পাদিত 888sport live football সারথির সমীপে, ‘প্রমথ চৌধুরীকে লেখা অমিয় চক্রবর্তীর পত্রাবলি’, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অকাদেমি, ২০০০।

৬.    প্রমথ চৌধুরী, 888sport live সংগ্রহ (প্রথম খ-), বিশ্বভারতী, ১৯৫২,  তৃতীয় সংস্করণ, ১৯৫৯।

৭.     প্রমথ চৌধুরী, আত্মকথা, মনফকিরা, ২০০৭।

৮.    বুদ্ধদেব বসু, স্বদেশ ও সংস্কৃতি, বেঙ্গল পাবলিশার্স প্রা. লি., দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৬০।

৯.     বুদ্ধদেব বসু, কালের পুতুল, নিউ এজ পাবলিশার্স, ১৯৫৯।

১০.   মলয়েন্দু দিন্দা-সম্পাদিত প্রমথ চৌধুরী : অসংকলিত রচনা সম্ভার, গাঙচিল, ২০১৩।

১১.   রথীন্দ্রনাথ রায়, বাংলা 888sport live footballে প্রমথ চৌধুরী, জিজ্ঞাসা, ১৯৫৮, তৃতীয় সংস্করণ, ১৯৮১।

১২.   রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চিঠিপত্র, পঞ্চম খ-, বিশ্বভারতী, তৃতীয় সংস্করণ, ১৪২২।

১৩.  সুপ্রিয় ভট্টাচার্য-সংকলিত ও সম্পাদিত, প্রমথ চৌধুরীর              পত্রাবলী সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী (মণি)কে, ইন্ডিয়ানা, ২০১১।

১৪.   সুভাষ চৌধুরী-সংকলিত ‘ইন্দিরা দেবী’, প্রমথ চৌধুরী   পত্রাবলী, আনন্দ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, ২০১৫।

১৫.   সুরজিৎ বসু, বাংলায় 888sport live football আন্দোলন, পাঠ, ২০০৫।

১৬.  হারীতকৃষ্ণ দেব, সবুজ পাতার ডাক, আনন্দ, ১৯৯৭।

সহায়ক নিবন্ধ

১৭.   মলয়েন্দু দিন্দা, ‘সম্পাদক প্রমথ চৌধুরী’, কোরক, বিলুপ্ত  888sport live footballপত্র বিশেষ 888sport free bet, ১৪১৩। ১৮.      সন্দীপ দত্ত-সংকলিত, ‘সবুজপত্র পত্রিকার সূচিসমগ্র’,              অমৃতলোক, সবুজপত্র বিশেষ 888sport free bet, অগ্রহায়ণ ১৪২১।