অংশুমান ভৌমিক
হাওয়া মে উড়তা যায়ে
মোরা লাল দুপাট্টা মলমল কা মোরা লাল দুপাট্টা মলমল কা
হো জি হো জি
ইধার উধার লহরায়ে
মোরা লাল দুপাট্টা মলমল কা মোরা লাল দুপাট্টা মলমল কা
হা জি হো জি …
- বরসাত (১৯৪৯),
কথা : রমেশ শাস্ত্রী, সুর : শঙ্কর জয়কিষান,
888sport live chatী : লতা মঙ্গেশকর
স্থান : এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল, 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমি, 888sport app। কাল : সন্ধে ৬টা বেজে ৫৫ মিনিট। ৭ আষাঢ় ১৪২৬ বঙ্গাব্দ, ২৩ জুন ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ। পাত্র : মিলনায়তনে ঢোকার মুখে আঁকাবাঁকা সারিতে অপেক্ষমাণ কয়েকশ মানুষ।
পেছনে দাঁড়ানো প্রৌঢ় বললেন, ‘এতো মানুষ কোনো নাটকে দেখি নাই!’
ঘাড় ঘোরালাম। প্রৌঢ় হরদম মঞ্চনাটক দেখেন বলে মনে হলো না। তবে তাঁর তাক লাগার কারণ ছিল। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন রোববারের সন্ধেয় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারের সামনে
যে-জমায়েতটা হয়েছে তাতে মিলনায়তন ভরপুর হলো বলে!
শ-দুয়েক লোক এখনই কাতারে খাড়া। এক-এক করে আরো জুটছেন। মোটের ওপর পাঁচমিশালি জমায়েত। পোড়খাওয়া চেনা দর্শক আছেন কতিপয়। দলবল পাকিয়ে আসেননি গ্রম্নপ থিয়েটারের তেমন কেউ। ছেলেমানুষ কম। মাঝবয়সীই বেশি। যুগল গোনাগুনতি। সুলতান সুলেমান মার্কা আরবি ছাঁদের জেনানার পাশেই পোলো টিশার্ট-ট্রাউজার্সের টিনএজার। সামনে এক প্রৌঢ়া দাঁড়িয়েছিলেন। একা। জানতে চাইছিলেন, নাটকের সময়সীমা কত? বিকেলবেলায় হাঁটতে বেরিয়ে কী মনে করে মিলনায়তনে ঢুকে পড়েছেন। এখন মনে মনে প্রমাদ গুনছেন। এক মাঝবয়সী এই নিয়ে চারবার নাটকটা দেখতে ঢুকছেন। খবরাখবর রাখেন। এতক্ষণ ধরে দুই তরুণীকে শোনাচ্ছিলেন আগে দেখা তিন রকমের তিনটে কঞ্জুস কেমন ছিল। আমরা যে কঞ্জুসের ৭১৮ নম্বর শো দেখতে এসেছি এটা তার কাছ থেকে জানতে পেরে এতক্ষণে জিলিপির প্যাঁচের মতো পাকিয়ে ওঠা কাতারে দাঁড়ানো অনেকে চোখ কপালে তুললেন! অনেকে তুললেন না। তাদের কারো কারো কাছে কঞ্জুস দেখার মধ্যে ফেলে আসা কৈশোর ছুঁয়ে দেখার ইশারা আছে, কারোর কাছে চনমনে যৌবন। কারোর কাছে পুরান 888sport app, তো কারো কাছে পাকিস্তান আমল। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে, মানে ৩২ বছর ধরে লাগাতার সারা 888sport apps জুড়ে যে নাটকটা দাপিয়ে বেড়িয়েছে, কম-সে-কম তিন-চারটে প্রজন্মের নাড়ি ধরতে পেরেছে, তার জনপ্রিয়তার চাবিকাঠি কোথায় লুকোনো? কিসের টানে নাগরিক বিনোদনের হাজারো ছববা সরিয়ে রেখে, আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপে পাকিস্তানের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার খেলা থেকে মুখ ফিরিয়ে ১০০, ২০০, ৩০০, ৫০০ টাকা খরচা করে মঞ্চনাটক দেখতে এসেছেন এতজন?
কঞ্জুসের সময়সীমা প্রসঙ্গে সেই মাঝবয়সী জানালেন, ‘কমবেশি দুই ঘণ্টা।’ শুনে একটু মুষড়ে পড়লেন সেই প্রৌঢ়া। ঘণ্টা-সওয়া ঘণ্টার নাটক দেখা তাঁর অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। মাঝপথে উঠে যাওয়াটা মনঃপূত নয়। কিন্তু সাড়ে ৮টায় বাড়িতে মেহমান আসবেন, মালকিন কোন আক্কেলে সেগুনবাগিচায় পড়ে থাকেন! পেরেশানির ব্যাপারটা বোঝা গেল। মাঝবয়সী মাতববর আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। পেছনের লোক ঠেলা মেরে এগোতে বলায় থেমে গেলেন। ঘড়ির কাঁটা ৭টা ছুঁতেই ঘণ্টি বেজে উঠেছে। নড়েচড়ে এগোতে শুরু করেছেন সবাই।
পায়ে পায়ে সিঁড়ি বেয়ে এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারের ভেতরে গিয়ে পড়তেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। নিচু গ্রামে একটা গান বাজছে। অনেকদিন আগেকার একটা হিন্দি গান – ‘হাওয়া মে উড়তা যায়ে মোরা লাল দুপাট্টা মলমল কা’। এমন গান আজকাল বড় একটা কানে আসে না। এলে একটা মন-কেমন-করা-ভালো-লাগার ঘোর আসে। মেঘলা মনের আকাশে লাল-ফিরোজা-বেগুনি-আসমানি কত ওড়না কত পেটকাট্টি মোমবাতি ভাসতে লাগে। মনে করার চেষ্টা করি, কোন ছায়াছবির গান এটা? বরসাত। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ছবি। রাজকাপুর-নার্গিস। পাকিস্তান আমল সবে শুরু হয়েছে। নবাবি খুশবু লেগে আছে 888sport appর আবহাওয়ায়। পিকচার হাউস তখনো শাবিস্তান হয়নি। মাথা তোলেনি গুলিস্তান। তাতে কী? ভাল্ব রেডিও আছে। চোঙাওয়ালা গ্রামোফোনের টার্ন টেবিলে ৭৮ ঘূর্নির কালো চাকতি আছে। তাতেই রুপোলি পর্দার কুহকে মজেছে পুরান 888sport appর অলিগলি। সিনেমায় উপচে পড়ছে সাদাকালো মোহববতের রঙিন মেŠতাত। আহা! গান তো নয়, টাইম মেশিন যেন! সেই টাইম মেশিনে সওয়ার হয় তিন দশক আগেকার সাড়া জাগানো টেলিভিশন নাটক কোথাও কেউ নেই। তাতে চড়ে বসেন আসাদুজ্জামান নূর, চালকের আসনে বসেন হুমায়ূন আহমেদ। কী কা-! বাকেরভাইয়ের সবচেয়ে প্রিয় গান ছিল না এটা? সত্যি, একটা গান যে কীভাবে উসকে দিতে পারে একেকটা প্রজন্মের অনুভব তা বয়ান করা দায়!
আসন 888sport free bet ‘খ-১’। সবার সামনে। থিতু হয়ে দেখি প্রসেনিয়ামের পর্দা টানা নেই। ওপেন কার্টেন স্টেজ। আবছা আলোয় ভাসছে একটা পুরনো আমলের ইন্দো-সারাসিনিক ঘরানার ইমারত। তার রঙিন কাচের শার্সি দিয়ে ঝিলিক মারে আলুবাজার কোতোয়ালি গে-ারিয়ার আলোছায়া। এটাই তবে হায়দার আলী খান ওরফে কঞ্জুস আলী খানের হাভেলির বৈঠকখানা? মলিয়েরের লেখা সাড়ে তিনশো বছর আগেকার ফরাসি প্রহসনকে তবে এই মহল্লায় এনে ফেলেছেন তারিক আনাম খান?
আগের গান ফুরোতে আরেকটা গান বাজছে। ওই বরসাতের। ‘জিয়া বেকারার হ্যায় আয়ি বাহার হ্যায়/ আজা মোরে বালমা তেরা ইমেত্মজার হ্যায়।’ সেই প্রৌঢ়কে দেখলাম ‘খ-২’তে বসে। চোখের পাতা জুড়ে ঘাড় দুলিয়ে গান শুনছেন। তাঁর চেতনায় কী খেলা চলছে এখন? তিনি কি ফিরে গেছেন সেই পূর্ব পাকিস্তানে যেখানে
হিন্দি-উর্দু-বাংলা-ইংরেজি ছায়াছবি যে-যার মতো করে জায়গা করে নিত জনগণমানসে? যেখানে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মানদীর মাঝি নিয়ে জাগো হুয়া সভেরা বানাতেন আখতার জে কারদার?
বাংলা-উর্দুর আড়াআড়ি মুছে যেত রুপোলি আলোতে?
এদিক-ওদিক দেখি। ঠিক পেছনের সারিতে দুই তরুণী বসে। এলো চুলে লম্বা ঝুলের ফ্রক পরে আহ্লাদে আটখানা। মনের সুখে স্মার্টফোনের টাচস্ক্রিনে আলতো করে আঙুল চালাতে চালাতে গল্পগুজব করছে। ওদিকে সেই কবেকার অনুরোধের আসরের 888sport sign up bonus উথলে দিয়ে শামসাদ বেগম গেয়ে উঠেছেন ‘সাঁইয়া দিল মে আনা রে/ আকে ফির না জানা রে’। কালেকটিভ আনকনশাস কখন কোন সুতো ধরে টান দেয় তার কূল মেলে না। কুমিল্লার কুমার
শচীন দেববর্মনের হাতযশে আজো মাত হয় বাঙালি-হৃদয়।
রিমেক-রিমিক্সের পাড় ছুঁয়ে আদুরে প্রাচীনা পেয়ে যায় সোহাগী অধুনাকে। ফেসবুক-ভাইবারে বুঁদ তরুণী তাতে সাড়া দিয়ে আপনমনে ধুয়ো ধরে – ‘ছম ছমা ছম ছম!’
বেজে ওঠে ‘লেকে পহেলা পহেলা প্যার ভর কে আঁখো মে ঘুমার’। শামসাদ-আশা-রফির আওয়াজ কানে ঢেলে পুরান 888sport app হয়ে ওঠে সেই রুপোর কাঠি-ছোঁয়ানো ‘জাদুনগরী’, যে কতকাল ধরে সেই জাদুগরের জন্য হাপিত্যেশ বসে আছে, যে তার মাথায় সোনার কাঠি ছুঁইয়ে তার ঘুম ভাঙিয়ে দেবে। ও পি নাইয়ারের সুরের দোলায় দুলতে দুলতে, আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে আবছা করে দেওয়া ভুলে যাওয়া রমনা রেসকোর্সের ট্র্যাক বরাবর ছুটে চলে সেই অলীক ঘোড়সওয়ার। ওড়াতে থাকে বাঙালির সমন্বয়ী সংস্কৃতির পরাগরেণু। সাবেক আনকোরা জোয়ান বুঢ্ঢা – হরেকরকমের রসিকের একেবারে ভেতরকার দিওয়ানা দিলকে তাজা করে দিয়ে থার্ড বেল বাজানোর নিদান হাঁকেন কঞ্জুসের নির্দেশক লিয়াকত আলী লাকী। বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। কারণ ১০-১২ মিনিটের এই সুরেলা অবগাহন ততক্ষণে আমাদের নাগরিক স্নায়ুকে শিথিল করে দিয়ে, আমাদের ভেতরকার ঝড়তুফানকে কব্জা করে একেবারে পেড়ে ফেলেছে। ইম্যাজিনড কমিউনিটিজ তৈরি হয়ে গিয়েছে। ওই হায়দারি মঞ্জিলের সঙ্গে আমাদের সব ধরনের দূরত্ব ততক্ষণে ঘুচে গেছে।
ফলে কল্যাণজি-আনন্দজির বাজানো সাপুড়ে বীণে ‘মন দোলে মেরা তন দোলে’র নাগিন সুরে পা মেলাতে মিলিয়ে নাচতে নাচতে উড়তে উড়তে যেই বৈঠকখানায় হাজির হলো নবীন প্রেমে ডগমগ জোড়া কবুতর লাইলি আর বদি, অমনি আমরা নাটকের মধ্যে ঢুকে পড়লাম।
দুই
প্যার কিয়া তো ডরনা ক্যা
যব প্যার কিয়া তো ডরনা ক্যা
প্যার কিয়া কোই চোরি নহি কি
ছুপ ছুপ আহেঁ ভরনা ক্যা …
- মুঘল-এ-আজম (১৯৬০)
কথা : শাকিল বদায়ুনি, সুর : নৌশাদ আলি,
888sport live chatী : লতা মঙ্গেশকর
মলিয়েরের এ-নাটক এখন করছে লোক নাট্যদল (সিদ্ধেশ্বরী)। খবর নিলেই জানা যায় যে, ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মে – দিনটা বোধকরি ২৫ বৈশাখ ছিল – কঞ্জুসের প্রথম মঞ্চায়ন হয় বেইলি রোডের মহিলা সমিতিতে। তখন নাটকটা করত নাট্যদল। অধুনালুপ্ত এই দলটা ছিল দিলিস্নর ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে সদ্য শিখেপড়ে দেশে ফিরে আসা টগবগে যৌবনে ঠাসা। সৈয়দ জামিল আহমেদ, তারিক আনাম খান, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, গোলাম সারোয়ার, কামালউদ্দিন নীলু ছিলেন এর এনএসডি ঘরানার প্রতিনিধি। পাশাপাশি ছিলেন লিয়াকত আলী লাকীর মতো আগমার্কা 888sport appই নাটুয়া। ইব্রাহিম আলকাজির আমল থেকেই এনএসডিতে ফরাসি ও ইতালীয় কমেডি চর্চার একটা ফলবান ধারা তৈরি হয়েছিল। এনএসডি রেপার্টরি কোম্পানি তো মলিয়েরের একাধিক নাটক করেছে। হজরত আওয়ারার ভারতীয় রূপান্তরে মলিয়েরের এ-নাটকটাও হয়েছে, এই ‘কঞ্জুস’ নামেই। এ-ধরনের কমেডি চেষ্টা করে পশ্চিমা ঘরানার স্যাটায়ার আর ফার্সের পাল্লা সমান রাখতে। খাপছাড়া বিদ্ঘুটে সব ব্যাপারস্যাপার নিয়ে রংতামাশা করার দিকে ঝোঁক থাকে। ১৯৭০-৮০র দশক জুড়ে পুরানা দিলিস্নর শাহি তল্লাটে চালু থাকা আরবি-ফার্সি-হিন্দুস্তানি মেশানো উর্দু লবজ কীভাবে এনএসডি ঘরানার প্রসেনিয়াম থিয়েটারে আমদানি করা যায়, কীভাবে পর্দানসিন রক্ষণশীল সমাজের অন্দরে উঁকিঝুঁকি মেরে আধুনিকতার মূলস্রোতের সাপেক্ষে তাদের অবস্থানকে নিশানা বানানো যায়, এ নিয়ে নিরীক্ষামূলক নানান নাটক হয়েছে। অনুমান করি যে, খুব কাছ থেকে এসব চর্চা করার সুযোগ পেয়েছিলেন তারিক আনাম খানরা। 888sport appsে ফেরার পর তাঁদের ফলিত নাট্যচর্চার ফসল বোনা হয়েছে মহিলা সমিতি ও গাইড হাউস মহল্লাতে।
কঞ্জুসের রূপান্তরের পেছনেও পুরান 888sport app আর নতুন 888sport appর মধ্যে গড়ে ওঠা বিভাজনরেখা সক্রিয় ছিল। উর্দু নয়, আরবি-ফার্সির কুঁচি-মেশানো বাংলা জবানের মধ্যে যে-নবাবি চাল আছে, পুরান 888sport appর মুসলমান মহল্লায় চালু থাকা সেই দোআঁশলা বাংলা দিয়ে মলিয়েরের এই মিঠেকড়া নাটকটাকে গড়েপিটে নিয়েছিল নাট্যদল। ১৯৪৭-এর পর থেকে 888sport appকে ঘিরে যে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির আনাগোনা বেড়েছে, ১৯৭১-র মুক্তিযুদ্ধ যে শ্রেণির বাঙালিয়ানাকে এক ধরনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে, দ্রম্নত সামনের সারিতে উঠে আসা সেই শ্রেণির কাছে সাবেক ক্ষমতাসীনের হারজিতের খেলার একটা আভাস ফুটেছিল কঞ্জুসের আড়ালে। ঝোল টানা হয়েছিল তরুণ তুর্কিদের দিকেই। কঞ্জুসি কিপটেমি হাড়গিলেপনা কোনো দেশে কোনো কালেই অনুমোদন পায় না। সে-লোকটা আদতে সুদখোর হলে চাঁদমারি তো তাকে হতেই হয়। এ-ধরনের নাটক আমাদের বাংলা নাট্যপরম্পরায় অতটা না থাকলেও তুখোড় রূপান্তরের দৌলতে তা নিমেষে দেশি চেহারা নেয়। প্যার-মোহববতের ঘাটে নাও ভেড়ানো থাকলে উজান গাঙেও তরি বাওয়া যায়। কিঞ্চিৎ নিচু ভুরুর বিনোদন হলেও উঁচু ভুরুর দর্শকের তারিফ জুটে যায় ঠিকই। কঞ্জুস বা তার আগেপরে 888sport appsে সাড়া ফেলা বিচ্ছু, ভদ্দরনোক, ঘরজামাই মোটের ওপর একই গতে বাঁধা। আত্তীকরণের এই খেলার পুরোভাগে কখনো ছিলেন তারিক আনাম খান, তো কখনো গোলাম সারোয়ার। 888sport appsের প্রসেনিয়াম থিয়েটারের দর্শক এ-ধরনের নাটককে একদা মাথায় তুলে রেখেছেন। এখনো রাখেন। অনেকেই রাখেন। নইলে লোক নাট্যদলের কাঁধেপিঠে চড়ে ৭১৮ রজনী পার করতে পারত না কঞ্জুস।
না। গিনেস বুকে নাম তোলার মতো ব্যাপার এটা নয়। ব্রডওয়ের কোনো কোনো মিউজিক্যাল ২০-২৫ হাজার রজনী মঞ্চস্থ হয়েছে। ওয়েস্ট এন্ডের একটা থিয়েটারে ৬৭ বছর ধরে লাগাতার মঞ্চস্থ হচ্ছে মাউসট্র্যাপ। যদি বাংলা প্রসেনিয়াম থিয়েটারের হিসাব কষতে বসি তবে দেখব মৈমনসিং গীতিকা ভেঙে তৈরি মাধব মালঞ্চী কইন্যার এক হাজারের বেশি শো হয়েছে, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন-ভিয়েতনাম যুদ্ধের মরসুমে শুরু হওয়া মারীচ সংবাদের দৌড় আজো থামেনি, গোরুর গাড়ির হেডলাইট কবেই হাজারের কোঠায় ঢুকে পড়েছে। তবে 888sport appsের প্রসেনিয়াম থিয়েটারের নিরিখে কঞ্জুসের খতিয়ান সত্যিই নজিরবিহীন। লোক নাট্যদলের (সিদ্ধেশ্বরী) কঞ্জুসের সঙ্গে লোক নাট্যদলের (বনানী) কঞ্জুসকে জুড়ে দিলে 888sport free betটা হাজারের ওপরে চলে গেছে।
এর জন্য যে-খুঁটির জোর লাগে সেটা লোক নাট্যদলের আছে। আঙ্গিক একই রেখে বদলে চলা সময়ের সঙ্গে তাল ঠুকে বিষয়ের ভোল পালটে পালটে নেওয়ার জন্য যে সপ্রতিভ নির্দেশনা লাগে সেটা লিয়াকত আলী লাকী দিচ্ছেন। গেল ১৮ বৈশাখ কথা প্রসঙ্গে মাহফুজা হিলালীকে তিনি বলেছেন, ‘কতবার ভেবেছি, অনেক তো হলো, আর কত! এবার বন্ধ করে দেব। কিন্তু হলভর্তি দর্শক আমাকে নাটকটি বন্ধ করতে দেয়নি। ৩৩ বছর ধরে চলছে কঞ্জুস। আমি আটবার এর ডিজাইন পরিবর্তন করেছি। পরিবর্তন করেছি এর পোশাক, লাইট, সেট, মিউজিক – সবই। এবং প্রতি প্রদর্শনীতেই একটা না একটা নতুন কিছু যোগ করি। বিশেষ করে সমসত্ম পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত যে পরিবর্তনগুলো হয় বা যে অনিয়ম বা কোনো নতুন বিষয় যোগ হয়, সাথে সাথে আমি তা কঞ্জুসে জুড়ে দিই। হ্যাঁ, একটার পরিবর্তে আরেকটা দেই। তাই দর্শক প্রতিবারই নতুন কিছু নিয়ে হল থেকে বের হয়।’
নির্দেশকের এ-কথার খেই ধরে কঞ্জুস দেখতে বসলে এর জনপ্রিয়তার রহস্য একটু একটু করে খোলাসা হয়। সত্যি বলতে কী, পপুলার কালচারের হরেক কিসিমের মালমশলাকে কী অনুপাতে মঞ্চনাটকে জুতে নিলে জনপ্রিয়তার কিস্তি মাত করা যায় তার জলজ্যান্ত কেস স্টাডি হলো কঞ্জুস।
কঞ্জুসের গল্পের মধ্যেই একটা চোখে দেখা প্রাণের কথার আভাস আছে। মহাজনি কারবার করে দেদার কামাই করলে কী হবে, খরচাপাতি করা হায়দার আলী খানের (স্বদেশরঞ্জন দাশগুপ্ত) ধাতে নেই। মহল্লার লোকে তাকে ‘কঞ্জুস আলী খান’ বলে ডাকে। তার কিপটেমি নিয়ে হাজারো কিস্সা বাজারে চালু। মা-মরা দুই ছেলেমেয়ে কাজিম (জিয়াউদ্দিন শিপন) আর লাইলিকে (মেহজাবীন মুমু) বড় করেছেন, তবে বখাটে করেননি হায়দার। লাল মিয়া (রুবেল শঙ্কর), ফচলু মিয়ার (তাজুল ইসলাম) মতো চাকরনোকর না পুষলে তার চলে না। অথচ তাদের মাইনে দেবার বেলায় তার আঁটিসুটির অন্ত নেই। কালা মিয়া (আজিজুর রহমান সুজন) নেহাত লোক ভালো। তাই এক হাতে মনিবের ভাঙাচোরা রিকশা চালান, আরেক হাতে রসুইঘর সামলান। এহেন হায়দার আলী খান এখন অষ্টাদশী মর্জিনাকে (অনন্যা নিশি) বিয়ে করার জন্যে খেপে উঠেছেন। রইস বুঢ্ঢা আসলাম বেগের (জুলফিকার আলী বাবু) সঙ্গে লাইলির বিয়েটাও বেলাবেলি সেরে রাখবেন বলে ঠিক করেছেন। কিন্তু তার বিটিয়ারানি যে তার আববাহুজুরের চাকর সেজে বাড়িতে ঘাপটি মেরে থাকা বাপ-মা-হারানো বদিউজ্জামানের (মাসুদ সুমন) সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছে সেদিকে তার হুঁশ নেই। তার আওলাদ যে ওই মর্জিনারই প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে এও তার অজানা। মর্জিনাকে বুঝিয়েসুঝিয়ে হাত করার জন্যে নগরনটী গোলাপজানকে (প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস) কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। জোড়ামিলনের কলকাঠি তার নখদর্পণে। কিন্তু হায়দারের মুঠো আলগা হয় না বুঝে আর কাজিম-মর্জিনার প্রেমে জোয়ার এসেছে দেখে ছলাকলাপটিয়সী এখন কোন দিকে ঝুঁকবেন থই পাচ্ছেন না। এরই মধ্যে হয়েছে কি হায়দারের ২০ লাখি কলসি মাটি খুঁড়ে তুলে নিয়ে চম্পট দিয়েছে ঘরের কেউ। নওশের দারোগার (আবু বকর বকসী) ডাক পড়েছে হায়দারের হাভেলিতে। কাকে সন্দেহ করেন? জবাবে হায়দার বলেছেন, ‘হক্কলরে!’
মধুরেণ সমাপয়েৎ না হলে এ-ধরনের নাটকের মানে থাকে না। শেষমেশ তাই হয়েছে।
লিয়াকত আলী লাকী নিজের মুখেই বলেছেন যে, ৩২ বছর আগেকার নাট্যাভাষকে বদলে বদলে চলেছেন তিনি। বুনে দিয়েছেন একেলে সুতোর নকশা। ফেলে দিয়েছেন সেকেলেপনা। লুসি
তৃপ্তি গোমেজ আর কৃষ্টি হেফাজ মিলে লাইলিকে পরিয়েছেন হাল ফ্যাশনের শাড়ি, বদির গায়ে চড়িয়েছেন হাওয়াই শার্ট আর
থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট। তা বলে তারিক আনাম খানের গড়ে দেওয়া কঞ্জুসের আসল কাঠামো একটুও পালটাননি তিনি। সংলাপের বারো আনাই অবিকৃত। প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে যেই ‘হায় লাইলি মেরে পাগলি, আমরা তো কোনো অন্যায় করিনি’ বলে ‘যব প্যার কিয়া তো ডরনা ক্যা’ বলে উঠেছেন বদিউজ্জামান, তক্ষুনি বেজে উঠেছে লতা মঙ্গেশকরের গলায় ‘প্যার কিয়া তো ডরনা ক্যা’। নেচে উঠেছে যুগল। ঠোঁট মিলিয়েছে গানে। ক্ষণিকের জন্য। শাহজাদা সেলিমকে সাক্ষী রেখে আকবর বাদশার সামনে নাচনেওয়ালি আনারকলির বিদ্রোহের 888sport sign up bonusকে মাথায় চড়তে না দিয়ে দ্রম্নত লাইলি-বদির মোহববতের দুনিয়ায় ফিরিয়ে এনেছেন আমাদের। মোগলাই জাঁকজমকের যে জেল্লা একদা পুরান 888sport appর নবাবি মহল্লায় ফেটে বেরোত, এখনো যার টুকরোটাকরা অবশেষ, তাকে প্রসেনিয়ামের খোপে চালান দেওয়ার মধ্যে যে ওস্তাদি আছে, সেটা কঞ্জুসের জিয়নকাঠি।
১৯৫০-৬০ খ্রিষ্টাব্দের দুই দশক জুড়ে বোম্বাইয়া ছায়াছবিতে উর্দু মেশানো হিন্দি গানের যে-পরম্পরা ছিল, কালচারাল পপুলিজমের হাওয়ায় পাল তুলে যা ভারতীয় উপমহাদেশকে মাতিয়েছে, সেখানেও ওই মোগলাই রোশনাইকে সেলুলয়েডে পুরে ফেলার তাল ঠোকা হতো। সেই তালকেই 888sport appই হাওয়ায় খেলিয়ে দিয়েছিলেন তারিক আনাম খান। লয় পড়তে দেননি লিয়াকত আলী লাকী। বোম্বাইয়া তরিকায় নাটকের মূল কুশীলবদের চেনানোর পর লয় কমিয়ে-বাড়িয়ে সময়মতো ঠিক সমে এনে ফেলছেন। চড়া সুরের মেলোড্রামার কায়দাকানুন জানা থাকায়, সস্ন¨vপস্টিক কমেডির কেŠশল রপ্ত থাকায় কোথাও তেলেজলে হয়নি। 888sport appই কুট্টির জবান যাকে দিয়েছেন তার মাধ্যমে দরকার পড়লে সার্কাস কলাউনের আদিম সুড়সুড়িও আদায় করা গেছে। কমেডি অব ম্যানার্সের গতে দর্শকদের দলে টেনে নেওয়ার হরেক ফিকির ইসেত্মমাল করা গেছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী প্রকল্পে ঘি ঢালা হয়নি তো কী, নিখাদ বাংলা আন্দাজের নাট্যনির্মাণে পা হড়কায়নি। আঙ্গিক আন্তর্জাতিক হওয়া সত্ত্বেও বিষয়ের স্থানিকতা কঞ্জুসের কদর বাড়িয়েছে। শত বালামুসিবত উড়িয়ে দিয়ে মাত হয়েছে তিন থেকে চার প্রজন্মের দর্শক। হাসতে হাসতে পেটের খিল খুলে গেছে তাদের।
বলছি বটে ‘তাদের’, কিন্তু এই ‘তাদের’ কারা? তারেক আনাম খান আর লিয়াকত আলী লাকী জানেন যে ‘তাদের’ হলো হরেকরকমবা নাগরিক উপভোক্তা। উঁচু ভুরুর ড্রামাটিক থিয়েটারে যাদের তেমন রুচি নেই। রুচি নেই সমাজবাসত্মবতার সাম্যবাদী বয়ানে। অথচ যাদের মন পড়ে আছে যাত্রা পালা সারি জারি কিস্সা কাহানিতে, গ্রামগঞ্জের মেঠো বিনোদনের আখড়ায়। যাদের কপাল ফেরাতে আজো জ্যোতিষীর হাত গোনা আছে, কথায় কথায় ‘হায় আল্লা’র ধুয়ো তোলা আছে। দিনগুজরানের ধাক্কায় যারা মহানগর 888sport appয় এসে পড়েছেন, নাগরিক জীবনের অমস্ন-মধুর-তিক্ত-কাষায় অনুভব করছেন, তাদেরকে প্রসেনিয়াম থিয়েটারের ঘেরাটোপে আনতে গেলে মলিয়ের বা গোলডোনি ঘরানার নাটকই তুরুপের তাস। সেই তাসই তাঁরা খেলেছেন। সেই চিড়েতন রুইতন ইস্কাবন। সুবিধেমতো রং বদলে নিয়েছেন, এই যা! সিঙ্গল স্ক্রিন স্ট্যান্ড অ্যালোন সিনেমার দিন ফুরিয়েছে, তাই আলালের ঘরের দুলাল কাজিম এখন বসুন্ধরার মাল্টিপেস্নক্সে যাচ্ছে, ‘নাম্বার ওয়ান শাকিব খান’ মার্কা ঠাঁটবাটে দুরসত্ম হচ্ছে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন লাইলি। ওদিকে সিন্দুকে দেড়মণি তালা না ঝুলিয়ে পাসওয়ার্ড দেওয়া ডিজিটাল লক লাগাচ্ছেন হায়দার। তার মধ্যে বাদশাহ সোলায়মানের আদল পাচ্ছে খোশামুদে বদিউজ্জামান। বিক্রি ডট কমে জমে যাচ্ছে বিকিকিনি। ‘888sport app অ্যাটাক’ বলে পুলিশের কাছে নালিশ ঠুকছেন হায়দার। দুদকের সিকিউরিটি গার্ডকে কটাক্ষ করা হচ্ছে। ক্যালকেশিয়ানদের নিয়ে তামাশা করা হচ্ছে। বিয়ের যৌতুক হিসেবে আইফোন টেন চাওয়া হচ্ছে।
ব্যাপারস্যাপার দেখেশুনে দেদার মজা পাচ্ছেন একেলে দর্শক।
তা বলে সবকিছু একেলে তরিকায় ঢেলে নিতে গেলে নাটকের খোলনলচে পালটাতে হয়। সেটা করেননি নির্দেশক। মর্জিনার গুণকীর্তন করতে বসে দেখতে-শুনতে ‘বুদ্ধিমতী উজ্জ্বলে’র পাশাপাশি ‘নম্র ভদ্র পর্দানসিন পাক পবিত্র’ আদবতমিজের কথাও বলতে হচ্ছে। মিঠা মিঠা বোলে খসমকে হাসিখুশি রাখাই যে বিবির দায়িত্ব এমন ধারণাও প্রচার করতে হচ্ছে। ‘একটু কড়া শাসন’ আর ‘মিঠা বাত’ – এতেই যে পুরুষতন্ত্র 888sport promo codeকে তাঁবে রাখতে পারে এমন বার্তাও দিচ্ছে। এতে দর্শকাসনে বসে থাকা কারো কারো ভুরু কুঁচকোলেও শেষ পর্যন্ত হাসির হররা উঠছে মিলনায়তনে। সমাজপতিদের মর্জিমাফিক জনতার অনুমোদন আদায়ের মাধ্যম হিসেবে এ-ধরনের নাটকের উপযোগিতা অনেকদিনের। এখানে তার ব্যত্যয় হচ্ছে না।
পদে পদে পলিটিক্যালি কারেক্ট হওয়ার দায় কঞ্জুস একেবারেই নিচ্ছে না। ‘বাড়াবাড়ি করে থাকলে গোস্তাখি মাফ করে দিবেন’ বলে পার পেয়ে যাচ্ছে। ঝালকাঠির ওপর 888sport appর খবরদারিকে নান্দনিক স্বীকৃতি দিচ্ছে। আর কে ফিল্মসের সুরের দোলায় মেতে থাকা ভারতীয় উপমহাদেশের 888sport sign up bonusজাগানিয়া ‘মেরা জুতা হ্যায় জাপানি’র সঙ্গে মিল দিতে ‘মেরা জাঙিয়া পাকিস্তানি’ বলতে আটকাচ্ছে না নোকরচাকরদের। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে বিয়ে করার সাধ জাগছে তাদের কারোর। পাশাপাশি ‘লড়কে লেঙে পাকিস্তানে’র রেশ ছুঁয়ে ‘লড়কে লেঙে মর্জিনা’ বলতে আটকাচ্ছে না কাজিমের। কাবুলিওয়ালা মারোয়াড়িদের কিস্সা-কাহিনির পাতায় তিনি খুঁজে পাচ্ছেন সুদখোর আববাজানকে। ৭ই মার্চের ভাষণের ধুয়ো তুলে, নজরুল ইসলামের 888sport app download apk থেকে কামাল পাশার নাম তুলে জিত হাসিল করার হিম্মত দেখাচ্ছেন। ওদিকে ছেলের সঙ্গে কথায় এঁটে উঠতে না পেরে ‘শাহবাগ চত্বর পাইছস’ বলে হুমকি দিচ্ছেন বাপ। ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প সাব’কেও আরেকবার শাদি করানোর মুরোদ দেখাচ্ছেন গোলাপজান। আবার বাপ আর বেটা একই মর্জিনার প্রেমে পড়েছে বুঝে ‘কও কী, এ তো দেখত্যাছি ইস্টার জলসার কাহিনি হইয়া গেল’ বলে কপাল চাপড়াচ্ছেন তিনি।
স্পষ্ট পক্ষপাত নেই। কালা আর ধলার তফাৎ করার আয়াস নেই। আম-আদমির মনের কথা মনের মতো করে বলার মধ্যেই কঞ্জুসের কামেয়াবি।
তিন
বাহারোঁ ফুল বরসাও মেরা মেহবুব আয়া হ্যায়
হাওয়ায়োঁ রাগনী গাও মেরা মেহবুব আয়া হ্যায়
মেরা মেহবুব আয়া হ্যায় …
- সুরয (১৯৬৬)
কথা : হসরত জয়পুরী, সুর : শঙ্কর জয়কিষেন,
কণ্ঠ : মহম্মদ রফি
আম-আদমির মনে অনেক গোপন বাসনা থাকে। তার সুতোয় টান না পড়লে বুঝি ষোলোকলা পূর্ণ হয় না। মলিয়ের সেটা জানতেন। জানেন তারিক আনাম খান ও লিয়াকত আলী লাকী। তাই পুরান 888sport appর কিংবদন্তিপ্রতিম দেহব্যবসার ইশারা খেলে যায় গোলাপজান নামক কোঠাওয়ালি ‘মাসি’র মধ্যে দিয়ে। মহম্মদ রফি-লতা মঙ্গেশকরের গলায় ‘সউ সাল পহেলে মুঝে তুমসে প্যার থা’ শুনিয়ে দিয়ে, হায়দার আর গোলাপজানকে কাছাকাছি এনে নাচিয়ে ছেড়ে নিষেধের পাহারাকে নিমেষে ডিঙিয়ে যায় কঞ্জুস। আরো পুরোনো কলকাত্তাইয়া বোম্বাইয়া লাহোরি আন্দাজের গান ভাসতে থাকে 888sport appই হাওয়ায়। লাল কুর্তা কিস্তি টুপি পরে আর পমপম দুলিয়ে হবু দুলহনকে নিয়ে রিকশায় চড়ে ‘এই পথ যদি না হ্যাষ হয় তবে কেমন হবে তুমি বলো তো’ গাইবার খোয়াবে মেতে থাকেন পঁয়ষট্টির হায়দার। মর্জিনাকে কাছ থেকে দেখে ‘দীপিকা ক্যাটরিনা সানি লিওনির থেকে বেশি খুবসুরত’ মনে হয় হায়দারের। আর রেখেঢেকে চলার দরকার পড়ে না। ‘রসের নাগরে’র আবির্ভাব ঘটে। উল্লাসে মাতোয়ারা হয়ে ‘মাই নেম ইজ শিলা/ শিলা কি জওয়ানি’র প্যারোডি গেয়ে ওঠেন রিকশাওয়ালা। সারারাত ইউটিউব দেখে চান্দি গরম হয় জোয়ান ছেলের। আইটেম নাম্বারের আল বেয়ে পর্নোগ্রাফির দুনিয়াতেও ঢুঁ মারে কঞ্জুস। হেসে কুটিপাটি হয় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল।
ওদিকে বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যার খোয়াইশকে জিইয়ে রেখে শতবর্ষী মান্না দে গেয়ে ওঠেন ‘ও মেরে জোহরা যবিঁ তুঝে মালুম নেহি/ তু আভি তক হ্যায় হসিন অউর ম্যায় জওয়ান/ তুঝ পে কুরবান মেরি জান মেরি জান’। পাঠান-পাখতুন-আফগান মহল্লা আর সুবে বাংলার মধ্যে ওড়াউড়ি থাকে মনপবনের বিমান। দৃশ্যান্তরের সঙ্গী হয়ে ওঠে পায়রা ওড়ানো হাততালি।
এমন অচিনপাখির উড়ান কঞ্জুসকে এমন এক ইসলামি আমেজ দেয় যে শরিয়তি-মারফতির টক্কর সেখানে গৌণ হয়ে যায়। সকলের অজামেত্ম একমাত্রিক বা দ্বিমাত্রিক 888sport apps বানানোর প্রবণতার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে সমন্বয়ী সুফি বা ভক্তিবাদের স্রোতধারা। পাশে পায় ভাঙা বাংলার বিরহকে। যেমন মনে করায় লায়লা-মজনুকে, তেমন ভোলে না দেবদাসকে।
কঞ্জুস শেষ হয় মিসটেকন আইডেন্টিটির তাস খেলে। জাহাজডুবি নয়। দমদমে পায়ের ওপর পা তুলে থাকা মির্জা রুহুল আমিন চাকলাদারের পরিবারকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল সাতচলিস্নশের দেশভাগ। পুরান 888sport appয় হায়দারি হাভেলিতে ফ্যামিলি রিইউনিয়ন হয়। দাঙ্গাহাঙ্গামার কথা তুলেও আখেরে সম্প্রীতির কথা শোনায় কঞ্জুস। বদ রক্ত পুষে না রেখে বের করে দেয়। শান্তিপুরী বাংলা আর 888sport appই বাংলাকে পাশাপাশি এনে মালাবদল করায়।
মালাবদলের এই সিলসিলাই চলে ১১০ মিনিট ধরে। তার দোসর হয় গান। হিন্দুস্তান-পাকিস্তানের ভাগ-বাটোয়ারাকে তুড়ি মেরে ওড়ানো সব গান। শুনতে শুনতে মনে হয় যে, এই বাঙালিজাতির মধ্যে বহুজাতিক বহুভাষিক সংস্কৃতির যে উত্তরাধিকার বয়ে চলেছে, একটু বুদ্ধি খরচা করে তার ভাঙা সাঁকোগুলোকে মেরামত করে দিলে যদি মানুষের এমন আদর পাওয়া যায়, তবে আমজনতার মনের মধ্যে ছিটকিনি তুলতে যারা উঠেপড়ে লেগেছে তাদের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে সংস্কৃতিকর্মীদের আরো কাজে লাগায় না কেন কোনো সরকার?


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.