অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় বা মেজো। জন্ম ১৯১৪ সালে, 888sport appর কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া গ্রামে। বাবা পুলিশ বিভাগে কর্মরত ছিলেন, বদলির চাকরি, বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান। তাই তাঁকে ঘুরে ঘুরে অনেক ধরনের এবং মানের স্কুলে পড়তে হয়েছে। কিছুদিন একটা মাদ্রাসায়ও পড়েছিলেন।
কিন্তু এই ভবঘুরে শিক্ষাজীবন সত্ত্বেও শৈশব থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল তাঁর তীক্ষ্ণ মেধা, তীব্র কৌতূহল এবং লেখাপড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহ। 888sport appর সরকারি মুসলিম হাই স্কুলে যখন ভর্তি হলেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগত একটু স্থিতি এলো, তখন তিনি সহজেই তাঁর মেধার পরিচয় তুলে ধরতে সক্ষম হন। শিক্ষাক্ষেত্রে পরীক্ষার মাধ্যমে উৎকর্ষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের যাত্রা তাঁর শেষ হয় ১৯৩৬ সালে যখন তিনি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও রাষ্ট্র888sport apk বিভাগ থেকে (দুটোই তখন এক বিভাগ ছিল) প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। সে-বছরেই ওই বিভাগে তিনি লেকচারার পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে যোগ দেন এবং ১৯৩৮ সালে স্থায়ীভাবে নিয়োগ পান।
১৯৪৫ সালে বৃত্তি পেয়ে আব্দুর রাজ্জাক লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে পিএইচ.ডি করতে চলে যান এবং বিশ্বখ্যাত রাষ্ট্র888sport apkী প্রফেসর হ্যারল্ড লাস্কির অধীনে কাজ শুরু করেন। তাঁর থিসিসের বিষয় ছিল ‘পলিটিক্যাল পার্টিস ইন ইন্ডিয়া’। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, লাস্কি অল্পবয়সেই (মাত্র ৫৭ বছরে) ১৯৫০ সালের মার্চ মাসের ২৪ তারিখে মারা যান। তাঁর পরিবর্তে নতুন সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অপেক্ষাকৃত নবীন কিন্তু স্বনামধন্য অধ্যাপক প্রফেসর মরিস জোন্স। অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক থিসিসের কাজ শেষ করে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের কাছে তা দাখিল করলেও, ডিগ্রিলাভ করার জন্য যেসব পদক্ষেপ প্রচলিত এবং প্রয়োজনীয় হিসেবে গণ্য করা হয়, সেগুলি উপেক্ষা করে কিছুটা অব্যাখ্যাত কারণে জুলাই মাসের ১৫ তারিখে লন্ডন থেকে 888sport appর পথে রওনা হন।
পাঁচ বছর লন্ডনে কাটিয়ে ডিগ্রি না নিয়ে আব্দুর রাজ্জাকের দেশে ফিরে আসার ব্যাপারটা এতই অভূতপূর্ব ও বিস্ময়কর যে, সেটাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বহু অনুমাননির্ভর গল্প। তাহলে কি লাস্কি মারা গেছেন বলেই দুঃখে-হতাশায় বিহ্বল হয়ে, কিংবা অন্য কেউ তাঁর অভিসন্দর্ভ বুঝতেই পারবে না সেই ভয়েই কি উনি চলে এলেন? নাকি নতুন সুপারভাইজারের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে তিনি প্রস্থান করলেন? নাকি নতুন কমিটির সঙ্গে ফুটনোট, রেফারেন্স ও 888sport app তথ্যসূত্র নিয়ে তাঁর কিছুটা বিরোধ ঘটে, যে-কারণে তিনি আর সময় নষ্ট না করে দেশে পাড়ি দিলেন? নাকি তাঁর ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল বলে (বাস্তবে ফুরিয়েও গিয়েছিল), কিংবা আর্থিক অসুবিধা ছিল (জাহাজে ফিরে আসার টিকিটের পয়সাও পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে ধার করতে হয়েছিল) বলে এই অধ্যায় শেষ না করেই ইতি টানতে বাধ্য হলেন? এটা রয়ে গেছে একটা অমীমাংসিত রহস্য হিসেবে! আব্দুর রাজ্জাক নিজেও এই ব্যাপারটা খোলাসা করেননি। যাই হোক, ওঁর সম্বন্ধে প্রশ্ন-বিতর্ক, জল্পনা-কল্পনা, বিভ্রম, ভুল-বোঝাবুঝি রয়েই যায় এবং ক্রমশ ঘনীভূত হয়।
তবে এসব সত্ত্বেও অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে কতগুলি বিষয় ছিল খুবই স্পষ্ট এবং প্রশ্নাতীত। প্রথমত, তাঁর ব্যক্তিত্বে ছিল এক ধরনের নৈতিক স্বচ্ছতা, শিশুসুলভ সরলতা, মানবিক উদারতা এবং অপরকে সাহায্য করার স্বতঃস্ফূর্ত প্রবণতা। একজন নিরহংকারী, অনাড়ম্বর ও অমায়িক মানুষ হিসেবে তিনি যথার্থই সমাদৃত ছিলেন।
দ্বিতীয়ত, তিনি ছিলেন একজন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবিশিষ্ট মানুষ, কোনোদিন কাউকে অনুকরণ করেননি বা তাঁকে নিরূপণ করার সুযোগ কাউকে দেননি। তিনি যা ছিলেন এবং যা হতে চেয়েছেন, তা-ই ছিলেন, তা-ই হয়েছেন। তাঁর ব্যক্তিত্বে প্রমাণিত হতো তাঁর নিজস্বতা। তাঁর বেশভূষায়, কথাবার্তায়, হাসি-ঠাট্টায় ও আলাপ-আলোচনায় তিনি শুধু খাঁটি বাংলার সন্তান ছিলেন না, ছিলেন একজন নিরেট কেরানীগঞ্জের সন্তান।
তিনি চৌকস ইংরেজি বলতেন, অনেকবার বিদেশ গেছেন, বক্তৃতা করেছেন, হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ড ফেলোশিপ লাভ করেছেন, ইউনিভার্সিটি অব দিল্লির ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। কিন্তু কোনোদিনও ‘সাহেব’ হওয়ার চেষ্টা করেননি। একইভাবে 888sport appsে সমাজের উচ্চশ্রেণির বহু প্রতিনিধির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল নিয়মিত এবং ঘনিষ্ঠ। কিন্তু জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কোনোদিনও সেই সমাজে গৃহীত হওয়ার জন্য নিজের মধ্যে কোনো পরিবর্তনের চেষ্টা করেননি।
তৃতীয়ত, তিনি ছিলেন একজন মোহমুক্ত ও চাহিদা-বিবর্জিত মানুষ, যাঁর পার্থিব কোনো লোভ, আকাঙ্ক্ষা, বাসনা, চাহিদা ছিল না। সেজন্যই তিনি সারাজীবন কোনো পদোন্নতি চাননি, সাধারণ প্রভাষক হিসেবে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। সেজন্যই অকৃতদার থেকেছেন, নিজস্ব সংসারের প্রলোভনেও জড়িয়ে পড়েননি। কিছু 888sport free bet login ছাড়া তাঁর জাগতিক কোনো প্রাপ্তি বা বস্তুগত অর্জনও রেখে যাননি। সেজন্যেই তিনি হতে পেরেছিলেন সৎ, স্বতন্ত্র এবং নির্ভীক একজন জীবনসাধক, একালের একজন তপস্বী, সত্যিকার অর্থে একজন আলোকিত মানুষ।
তবে এই ব্যক্তিগত গুণাবলির ঊর্ধ্বে যে বৈশিষ্ট্য তাঁকে সবার কাছে বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছিল, তা হচ্ছে জ্ঞানের ওপর তাঁর বিশ^াস এবং জ্ঞান অর্জনে, উন্নয়নে ও অগ্রগতি সাধনে তাঁর সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল অগাধ এবং বিস্তৃত; অনুসন্ধিৎসা ছিল বহুমুখী ও বিচিত্র; এবং জ্ঞানসাধনা ছিল একনিষ্ঠ ও নিঃস্বার্থ। উল্লেখযোগ্য যে, এ-ব্যাপারে তাঁর মূল্যবোধ ও মনোভাব ইউরোপীয় ইন্টেলেকচুয়াল ট্র্যাডিশন দ্বারা পুরোপুরি নির্ধারিত না হলেও এর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। এর মূল বক্তব্য ছিল এই যে, জ্ঞান আজগুবি বা গুপ্ত কোনো পদ্ধতির ওপর নির্ভর করতে পারে না। আর এর গ্রহণযোগ্যতা বা উৎকর্ষের বিচার শুধু নির্ভর করবে সেটি কতটুকু যুক্তিসংগত, প্রমাণসাপেক্ষ এবং মানবকল্যাণের পক্ষে। এটি অবশ্যই স্বীকার্য যে, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক, শৈল্পিক, মানসিক বা ব্যক্তিগত আবেগ বা বিশ্বাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ‘সত্য’ বা ‘উপলব্ধি’র একটি ক্ষেত্র থাকতে পারে, তা আমাদের অভিজ্ঞতা এবং অস্তিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশও হতে পারে। কিন্তু যা দৃষ্টান্ত ও পর্যবেক্ষণ দ্বারা সমর্থিত নয় কিংবা কার্ল পপারের ভাষায় যা অসত্য প্রতিপন্ন করা যায় না (অর্থাৎ যা Falsifiable নয়), তা 888sport apkসম্মত জ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে না।
একই সূত্র ধরে তিনি মনে করতেন যে, জ্ঞানের বিভিন্ন দিক এবং প্রকাশ পরস্পর সম্পৃক্ত এবং একে অপরের পরিপূরক। জ্ঞানই হচ্ছে জ্ঞানের উদ্দেশ্য, চরিতার্থতা ও আনন্দ। জ্ঞানের অন্য কোনো উপযোগমূলক (tilitarian) উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। যদিও জ্ঞানের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি, আবিষ্কার, দৃষ্টিভঙ্গি ও বস্তুগতভাবে জীবন সহজ করার উপাদান আমরা পেতে পারি আনুষঙ্গিক সুবিধাবলি হিসেবে; কিন্তু সেগুলি জ্ঞানের লক্ষ্য হতে পারে না। জ্ঞান চলমান একটি প্রক্রিয়া এবং এর কোনো উপসংহার বা শেষ কথা নেই। জ্ঞানসাধনা একটি যাত্রা, কোনো গন্তব্য নয়।
এসব ব্যাপার যেমন সর্বজনীনভাবে গৃহীত এবং অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি গভীর ও আন্তরিক 888sport apk download apk latest versionর উদ্রেক ঘটায়, তেমনি 888sport app কিছু প্রসঙ্গে কয়েকটি প্রশ্ন, দ্বিধা, জিজ্ঞাসাও রয়ে যায়। এগুলি প্রধানত তাঁর রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা ঘিরে উত্থাপিত হয় এবং দ্বিতীয়ত শিক্ষকতা এবং গবেষণার প্রবৃত্তি ও ফলপ্রসূতাকে কেন্দ্র করে উঠে আসে। কথাগুলি অস্বস্তিকর হলেও অবান্তর নয়, এবং একটা আলোচনা অপরিহার্য বলে মনে হয়।
এটা বহুজনস্বীকৃত (যাঁরা তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন সকলেই মানবেন) যে, গণতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল রাজনীতিতে তাঁর আস্থা ছিল অবিচল, অকপট ও অনস্বীকার্য। একইভাবে তাঁর মানসিক উদারতা এবং মানবিক জীবনবোধ ছিল প্রচ্ছন্ন ও সংশয়াতীত। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও মানতে হয় যে, কোনো দল, মত, নেতা, দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস, উদ্দেশ্য, গন্তব্য বা আদর্শ নিয়ে কোনো ইশারা তিনি দিয়ে যাননি, বা পক্ষপাতমূলক ইঙ্গিত করেননি। এমনকি বিগত শতকের ৫০-৬০-এর দশকের উত্তাল এবং অসাধারণ দিনগুলিতেও যখন বিশ^বিদ্যালয়ের হাওয়ায়, শরীরে, স্নায়ুতে, রন্ধ্রে রাজনৈতিক ঝড় বইছিল, তখনো কোনো মিছিলে, বিবৃতিতে, সভায়, বৈঠকে, লেখায় তাঁর অবস্থান তিনি স্পষ্ট করে দেননি। রাজনীতির একজন স্বনামধন্য শিক্ষক এবং প্রভাবশালী চিন্তকের কাছ থেকে এই আপাত-অনীহা অনেককেই বিস্মিত করেছে, বিব্রত করেছে এবং এমনকি পীড়িত করেছে।
স্যারের এই বিচ্ছিন্নতা আরো বিশেষভাবে আশ্চর্যজনক এই কারণে যে তাঁর শিক্ষক, গুরু, mentor, অধ্যাপক লাস্কি নিজেও গভীরভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। লেবার পার্টির একজন একনিষ্ঠ কর্মী শুধু নয়, তার চেয়ারম্যান পর্যন্ত হয়েছিলেন (১৯৪৫-এ যখন অধ্যাপক রাজ্জাক তাঁর তত্ত্বাবধানে ডিগ্রি করছেন)। তিনি বামপন্থী ধারার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, স্পার্টাকাস লীগ এবং পরে পপুলার ফ্রন্টের নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন, এবং ওয়ার্ল্ড জাইওনিস্ট কংগ্রেস-এর নিবেদিতপ্রাণ সমর্থক হিসেবে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছিলেন। তাঁর ছাত্র হয়ে আব্দুর রাজ্জাক কেমন করে এই রাজনৈতিক দূরত্ব বহাল রেখে সবকিছু এড়িয়ে চললেন তা নিয়েই অনেকের প্রশ্ন।
তাঁর রাজনৈতিক নিস্পৃহতা সম্বন্ধে যেসব প্রশ্ন তোলা হয় তার দু-ধরনের উত্তর দেওয়া সম্ভব। প্রথমত, তাঁর তথাকথিত নির্লিপ্ততা নিয়ে বয়ান হয়তো একটু অতিকথনের পর্যায়ে চলে গেছে। এটা ঠিক যে, প্রত্যক্ষভাবে তিনি এগিয়ে আসেননি, তর্জনী উঁচিয়ে সোচ্চার হয়ে মাঠে নামেননি, আদর্শগতভাবে বিশেষ কোনো দিকনির্দেশনার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেননি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তিনি গর্তে মাথা ঢুকিয়ে রেখেছিলেন বা রাজনৈতিক কার্যকারিতাকে তাচ্ছিল্য বা অস্বীকার বা বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁকে বিভিন্ন তৎপরতায় পাওয়া যায়। আমরা জানি, তিনি ভাষা-আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন সভায় উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় লিপ্ত ছিলেন, এবং বহু প্রকারে তাঁর সমর্থন ও সহায়তা ব্যক্ত করেছিলেন। বিশেষ করে যেসব শিক্ষক সরকারি দমননীতির শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের পাশে তাঁর উপস্থিতি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, দৃঢ় এবং সজাগ।
তাছাড়া আমরা এও জানি যে, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান রচনাকালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে দু-একটা খুবই চাঞ্চল্যকর কথা বলেছিলেন (যথা, সেনাবাহিনীতে পূর্ববাংলাকে কেন্দ্র করে যেন দু-একটা রেজিমেন্ট গঠন করা হয়, বা পাকিস্তানের রাজধানী যেন চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়, ইত্যাদি) এবং পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গেও উপদেষ্টা হিসেবে তিনি করাচি গিয়েছিলেন। অল্প সময়ের জন্য তিনি পূর্ব পাকিস্তানের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়াও 888sport appsের স্বায়ত্তশাসন ও পরবর্তীকালে স্বাধীনতা সংগ্রামে যেসব ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী জড়িত ছিলেন, তাঁদের অনেকের মুরুব্বি বা বন্ধু হিসেবে থেকেছেন, তাঁর বাসায় তাঁদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল, দিয়েছেন তাঁদের প্রশ্রয়, আশ্রয় ও সাহস। তাই প্রত্যক্ষভাবে তিনি রাজনেতিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত হননি ঠিকই, কিন্তু পরোক্ষভাবে সহযাত্রী হিসেবে থেকেছেন, নিঃসংকোচে এবং নির্ভরযোগ্যভাবে। তিনি আড়ালে থেকেছেন, কিন্তু পালিয়ে বেড়াননি।
এ প্রসঙ্গে অন্য একটা কথাও প্রযোজ্য। যেহেতু অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের মৌলিক পরিচয় একজন স্কলার হিসেবে, এবং যেহেতু এই ধরনের মানুষরা কোনো রাজনৈতিক পরিচয় সাধারণত অনুসরণ বা ব্যক্ত করেন না, যে প্রবণতা পাশ্চাত্যেও বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল, সেটাই তিনি বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। এর কারণটাও খুবই স্পষ্ট ও যুক্তিসংগত। কোনো আদর্শগত প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার একজন স্কলারের সত্যসন্ধানের ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে, তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নিরপেক্ষ বা খোলা মনের অবস্থান (intellectual detachment) খর্বিত করতে পারে, এবং গবেষণার বিষয় এবং উপসংহার প্রভাবিত করতে পারে। এর মাধ্যমে এনলাইটেনমেন্টের অনুশাসন বা ক্যানন অনুযায়ী ‘সত্যের খাতিরে নিরাসক্ত দৃষ্টিভঙ্গি’ (the disinterested pursuit of truth) ব্যাহত হতে পারে। তাই স্যারের নির্মোহ ভাব এবং স্বাধীনচেতা অভিব্যক্তির জন্য সমালোচিত বা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও ‘বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সুদৃঢ় নৈতিক সংহতি’ (scholarly integrity) বজায় রাখাটাই তিনি শ্রেয় মনে করেছেন, পেশাগত কারণে এবং জ্ঞানসাধনার প্রয়োজনে।
অনেকের মনে তাঁকে ঘিরে শেষ প্রশ্নটা হচ্ছে ঠিক সেই শিক্ষকতা বা গবেষণার ব্যাপারটা কেন্দ্র করেই। ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে তাঁর অপারগতা, হয়তো বা অনীহা, তাঁর বহু ছাত্রই খেয়াল করেছে, মন্তব্য করেছে। এখানেই আব্দুর রাজ্জাকের একটা আইকনিক কনট্রাডিকশন ধরা পড়ে – যে-শিক্ষক নিয়মিত ক্লাসে যান না, গেলেও অধিকাংশ সময় বিষয়বস্তু নিয়ে বিশেষ কোনো আলোকপাত করেন না, তিনিই কীভাবে এত নামকরা এবং প্রভাবশালী শিক্ষক হতে পারেন, শিক্ষকদের শিক্ষক হিসেবে আখ্যায়িত হন, বহু ছাত্রছাত্রীর গুরু হিসেবে সুপ্রসিদ্ধ হন? শ্রেণিকক্ষে যিনি অপেক্ষাকৃত ছায়াসম ছিলেন, তিনি বাইরে এত সপ্রতিভ, গতিশীল এবং অনুপ্রেরণাদায়ক কীভাবে গণ্য হয়েছেন, বছরের পর বছর, প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে?
কিন্তু আব্দুর রাজ্জাকের ক্লাসরুম-অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষক হিসেবে তাঁর পরিচয় একেবারেই ভিন্ন। ক্লাসরুমে ৬০-৭০-এর দশকে যেসব দুর্দান্ত শিক্ষক পাওয়ার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে, যাঁদের শিক্ষকতার গুণ, মান, দাপট এবং প্রভাব সত্যিই তুলনাহীন, যাঁদের পেয়ে আমরা ধন্য হয়েছি, যাঁদের বক্তৃতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছি, তাঁদের থেকে তিনি একেবারেই ভিন্নরকম ছিলেন। ‘সফল’ শিক্ষকদের জন্য শুধু বিষয়বস্তুর ওপর দখল বা কর্তৃত্বই যথেষ্ট নয়, কিছু performing
arts-এর গুণাবলি (যথা ভাষা, নাটকীয়তা, রসবোধ, আত্মবিশ্বাস, সাবলীলতা, অভিব্যক্তি, ক্যারিশমা, ঢং, আবহ তৈরি, বিষয়বস্তুকে উপভোগ্য করানোর শৈলী) এসব দক্ষতাও আবশ্যক হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে স্বভাবগতভাবে আব্দুর রাজ্জাক পারদর্শী ছিলেন না, চেষ্টাও করেননি। তাই অন্যদের তুলনায় তিনি ছিলেন ক্লাসরুমে কিছুটা ম্লান। অনেকের সেখানে ধারণা, তাঁর উপস্থিতি তেমন কার্যকর ও উজ্জ্বল ছিল না।
কিন্তু এতে আসল দায় কি অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের, না আমাদের, সেটাও চিন্তা করার বিষয়। অর্থাৎ যেসব criteria বা নির্ণায়ক বা প্রত্যাশার ভিত্তিতে আমরা শিক্ষকতার বিচার করছি সেগুলি কতটুকু প্রযোজ্য, বা আদৌ তাৎপর্যপূর্ণ কি না। জনপ্রিয় শিক্ষক এবং ভালো শিক্ষক কি একই কথা? প্রথমটি না হয়েও কি দ্বিতীয়টি হওয়া সম্ভব? অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক কি দ্বিতীয় পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন না?
এটি সম্ভব হয় দুটি যুক্তির ওপর ভিত্তি করে। প্রথমত রাজ্জাক স্যারের স্নেহের জায়গাটা ছিল বিশাল, সবাইকে প্রশ্রয় দিতেন, চিন্তা করতে শেখাতেন, প্রশ্ন করার সাহস জোগাতেন, আমাদের চিন্তাভাবনা নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করতেন, বাসায় আসতে বলতেন, বিভিন্ন রেফারেন্সের কথা বলে ও পরামর্শ দিয়ে সময় সময় আশ্চর্যজনকভাবে আমাদের জ্ঞান অন্বেষণের যাত্রাটা সহজ এবং আমাদের চিন্তার জগৎটা বিস্তৃত করে দিতেন। তিনি ক্লাসরুমে কী পড়িয়েছিলেন সেটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না (নিশ্চয়ই তাঁর কাছেও না)। তবে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতির ক্ষেত্রে স্যারের অবদান ও আশীর্বাদ ছিল সূক্ষ্ম কিন্তু স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য।
অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে রাজ্জাক স্যারের একটা মৌলিক পার্থক্য ছিল এই যে, অন্যরা তাঁদের বিরাট জ্ঞানের ভাণ্ডার নিয়ে ছাত্রদের মাঝে আসতেন এবং তা থেকে প্রয়োজন ও পরিমাপমতো বিতরণ করতেন। কিন্তু স্যার অপেক্ষা করতেন যে, ছাত্ররা তাঁর কাছে গিয়ে এর প্রাচুর্য আবিষ্কার করবে। তাই ছাত্ররা কী পাবে, কতটুকু পাবে, সেই দায় এবং উদ্যোগ স্যার তাদের থেকেই প্রত্যাশা করতেন। এই চেষ্টা অনেক ছাত্রই করতে চাইতেন না। তাই শিক্ষক হিসেবে স্যার তাঁদের কাছে থেকে যেতেন কিছুটা অনাবিষ্কৃত এবং হয়তো বা অবমূল্যায়িতও।
দ্বিতীয়ত, একজন শিক্ষক ক্লাসরুমে কী পড়িয়েছিলেন সেটা অনেকেই ভুলে যাবেন, কিন্তু তিনি কেমন মানুষ ছিলেন তা মনে থাকবে। তাই উৎকৃষ্ট শিক্ষক শুধু ক্লাসরুমে তাক-লাগানো বক্তৃতায় প্রকাশিত হন না, তিনি ওঁর জীবনসাধনায় কী উদাহরণ, দৃষ্টান্ত, আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন সেটাও বিবেচ্য। আর রাজ্জাক স্যারের ব্যক্তিগত গুণাবলি (যা আগেই উল্লেখ করেছি – নৈতিক স্বচ্ছতা, চাহিদা-বিবর্জিত জীবনসাধনা, নিরহংকারী ও অমায়িক ব্যক্তিত্ব, মানুষকে সাহায্য করার স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যাস, জ্ঞানের ওপর আস্থা, ছাত্রদের ভালোবাসা ইত্যাদি), এসবের মাধ্যমে তিনি অনন্য হয়ে উঠেছিলেন, এবং আমাদের কাছে একটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত এবং একজন প্রকৃত শিক্ষক হিসেবে বিশেষ 888sport apk download apk latest versionভাজন হয়েছিলেন।
একই ধরনের প্রশ্ন ওঠে ওঁর গবেষণা সম্বন্ধেও। এত বিশাল যাঁর জ্ঞানভাণ্ডার, শুধু বইয়ের জগতেই যাঁর বিচরণ এবং বিনোদন, জ্ঞানের বিস্তার এবং উৎকর্ষের ওপর এত যাঁর বিশ্বাস, যিনি এত লোককে গবেষণার কাজে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং সাহায্য করেছেন, জ্ঞানসাধনায় এমন সামগ্রিকভাবে নিবেদিত ও সম্পৃক্ত যে মানুষ, তিনি নিজে জ্ঞান উৎপাদনের ব্যাপারে এত অনাগ্রহী ছিলেন কেন? বিভিন্ন আলাপচারিতায় সময় সময় ইতস্তত, বিক্ষিপ্তভাবে কতিপয় বিষয়ে ওঁর ব্যুৎপত্তিগত অনুসন্ধান বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু মন্তব্য (insights and intuitions) খুবই চমকপ্রদ, তীক্ষ্ণ এবং ব্যতিক্রমী বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ সময়, মাত্র দুয়েকটা বক্তৃতা এবং ছোটখাটো লেখা ছাড়া, তা কথাচ্ছলে, আটপৌরে পরিবেশে, হালকা মেজাজে, আঞ্চলিক ভাষায় বর্ণিত হয়েছে, তা সংগঠিত বা তথ্যসমৃদ্ধভাবে পেশ করা নয়।
কোনো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাডেমিক আলোচনায় বা লেখালেখিতে তাঁকে পাওয়া এত বিরল এবং দুঃসাধ্য হয়ে উঠলো কেন? কোনো গবেষণালব্ধ মৌলিক অবদান ওঁর থেকে পাওয়া গেল না কেন? আমরা কীভাবে তাঁকে বিচার করবো, এবং তার চেয়েও বড় কথা, কীভাবে মনে রাখবো? শুধু কি কিছু মানুষের 888sport sign up bonusতে এবং গল্পে তাঁর অবস্থান থাকবে, এবং তাঁদের অনুপস্থিতিতে তিনি বিস্তৃত হয়ে যাবেন? রাজ্জাক স্যারের কি কোনো নিজস্ব পরিচয় থাকবে না, যেখানে অন্যের মাধ্যমে নয়, নিজেই তিনি তাঁর কথা, চিন্তা, জ্ঞান, হাজির করে গেছেন, যা আমরা ভবিষ্যতে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবো, স্থায়ীভাবে উপকৃত হবো?
গবেষণার স্বল্পতার সমালোচনা style কোনো style বা criteria কেন্দ্রিক নয়। বরং এটা empirical একটা বিষয় যা যাচাইযোগ্য এবং প্রমাণসাপেক্ষ। এটা সত্যি যে, স্যার অন্যদের গবেষণা বা লেখালেখির ব্যাপারে যে উৎসাহ দেখিয়েছেন; নিজের বেলায় তার একেবারে বিপরীতও ছিলেন, দৃশ্যমানভাবে উদাসীন। অনেকেই স্যারের ওপর ভর করে চিন্তাজগতে উপরে উঠেছেন, ওঁর সাহায্যে নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তিক ছুরিতে শান দিয়েছেন, কিন্তু ওঁকে গলাতে, টলাতে, নড়াতে পারেননি। এটা অনেকের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর ছিল এবং কিছুটা হতাশাজনকও।
কিন্তু এখন অনেক আনন্দ এবং গর্ব নিয়ে এ-কথা বলা যায় যে, গত দু-এক বছরে এই প্রশ্নের অন্তত আংশিক জবাব দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বহুপ্রত্যাশিত তাঁর সেই জল্পনা-কল্পনার ইন্ধনকারী অভিসন্দর্ভটি প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর পাণ্ডিত্যের ব্যাপ্তি এবং গভীরতা বিচার করার একটা নির্দিষ্ট মাপকাঠি পাওয়া গেল। আগেকার শূন্যতা বা অন্ধকার হাতড়ে বেড়ানোর প্রবণতা এবং প্রয়োজনীয়তা বহু অংশে কমে আসবে। অন্যের 888sport sign up bonusকথার মাধ্যমে তিনি বেঁচে থাকবেন না, এখন তাঁকে নিয়ে আলোচনা একটা বাস্তব উপাদানকে ঘিরে হতে পারে, ওঁকে দাঁড় করানোর একটা ভিত্তি নির্মিত হয়েছে। অবশেষে রাজ্জাক স্যার নিজের ‘Voice’ পেলেন, নিজের প্রমাণ।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.