ছোট গল্প
-

ডেথ সার্টিফিকেট
পরিবারটার ওপর যে একটার পর একটা এরকম বিপর্যয় নেমে আসবে এটা কেউই আগে ভাবতে পারেনি। প্রথমে মারা গেলেন এ-পরিবারের পিতা আবদুস সামাদ, যিনি পিডব্লিউডি অফিসের একজন হেড ক্লার্ক হলেও ধন-সম্পত্তি বেশ ভালোই করেছিলেন। পুরনো 888sport appর সূত্রাপুরে, যেখানকার ওরা আদি বাসিন্দা, সেখানে চারতলা একটা বাড়ি তৈরি করেছিলেন সামাদ সাহেব। নিজেরা একটা ফ্ল্যাটে থাকতেন আর বাকি সাতটা…
-

টেডিচাচি
‘চিইইইইইইই’ বলে বুড়ি না ছুঁতেই আমাদের ছি-বুড়ি খেলা যখন মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে থেমে যেত, সেরকম এক সিঁদুররাঙা সন্ধ্যায় আমাদের পাশের বাসার সামনে আসবাবপত্রভর্তি একটা ট্রাক এসে দাঁড়ালো। আমরা তিন বোন আর প্রতিবেশী বন্ধুরা হাঁ করে আসবাবপত্র নামানো দেখতে লাগলাম। আমাদের কারো বাসায় ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল, শোকেস ছিল না। আমাদের যে প্লাস্টিকের পুতুল,…
-

একজন উনপাঁজুরে
কাজীবাড়ির বৈঠকঘরের সামনে থেকে একটা সরুপথ দক্ষিণের বায়ু ঠেলে লাউয়ের মাচান ও পানাজলাটা ছুঁয়ে নদী আইলে গিয়ে উপুড় হয়ে পড়েছে। নদী আইলের উত্তরেই মূলত বসতবাড়ি। দক্ষিণে চরাভূমি। তবে বংশবিস্তারের হারানো তালে দক্ষিণের চরাভূমিতেও বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটা বসতবাড়ি উঁকি মারছে। এদের কতকটা পুরনো, কতকটা নতুন। জাহিদ কাজীবাড়ির সরুপথটা মাড়িয়ে নদী আইলে উঠে পুবে দৃষ্টি ফেলল। পৌষের উত্তুরে…
-

কহর আলীর অলীক সুখ
আষাঢ় মাসের বরষার ধারা শ্রাবণেও বয়ে চলে; বৃষ্টির মেজাজমর্জি বোঝা বড় দায়। শুধু দিনভর বৃষ্টির ব্যাকুলতা। পথ, মাঠ ও খাল-বিল তলিয়ে যায়। বৃষ্টির দিনের সেসব সময় ভেজা কাকের মতো চুপসে থাকে। স্থবির হয়ে থাকে গ্রামীণজীবন। এমন সময় প্রায় নীরবে বিপ্লব ঘটায় প্রকৃতি। সতেজতা পায় গাছপালা, লকলকিয়ে ওঠে তাদের যৌবন। রমিজ খাঁ জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ভাবেন, এবারের…
-

পটভূমি হংকং
ভিক্টোরিয়া চূড়া থেকে ঝুঁকে নিচের দিকে তাকাতেই সমস্ত শরীর যেন শিরশির করে উঠল আকাশের। অনেক নিচে যতদূর দৃষ্টি যায় কিছুটা আবছা ধূসর বিশাল একটা ছবির মতো হংকং শহরটা ভেসে উঠল চোখের সামনে। তার একদিকের অনেকটা জুড়ে ভিক্টোরিয়া হারবারের নীল জল ঘিরে আছে। দুপাশে কাউলুন আর হংকং – পুরনো আর নতুন শহর। বিশাল বিশাল আকাশছোঁয়া স্কাইস্ক্র্যাপার…
-

হোগলার বনে
শীতল বাতাসটা মাঠ থেকে এসে থেকে থেকে ঝটকা মারে। গাছের মগডালে পাখির ডাক মনটাকে উত্তুঙ্গ হাওয়ায় দোলাতে দোলাতে কোথায় যেন নিয়ে যেতে চায়। এমন সময় হারানো 888sport sign up bonusরা ফিরে আসে। গ্রামে তাদের প্রতিপত্তি নেই বললেই চলে। পাড়ার মেয়েদের সঙ্গে হেসেখেলে বেড়ে ওঠা। স্কুলে যাওয়ার বালাই ছিল না। মায়ের জোড়াজুড়িতে পাড়ার মক্তবে আমসিপারা পড়েছে কিছুদিন। তাও বেশিদিন…
-

ডিডেলাস মিথ কিংবা অজগর বুড়ো
তিরিশটি বছর পার হয়ে গেল। তিনটি দশক! জীবনের ভেতরে আরেকটি জীবনের মতো সময়কাল। তিরিশ বছর আগে এক দগ্ধ দিনে শিকার করতে বের হয়ে খড়ম-পেয়ে বুড়োর দেখা পেয়েছিলাম। তারপর তিরিশটি বছর সেই বুড়ো আমার বুকের মধ্যে হেঁটে বেড়িয়েছে। আমার করোটির ভেতরে এঁকে দিয়েছে বিচিত্র জঙ্গম চিত্র …। … শেয়াল শিকারে বের হয়েছিলাম। গ্রামের গরিব লোকেরা পাগলা…
-

ক্রন্দসী
হয়তো নক্ষত্র ফুটে আছে। আকাশ ফুটো করা দালানকোঠার ভারে তা আর দেখার জো নেই। তারপরও যা একটু ফুটোফাঁকা ছিল, দেখতে দেখতে মেঘ ঢুঁসে দেওয়া দালানে তাও ভরে যাচ্ছে। নতুন নতুন ভবন নির্মাণের কাজের ধুম চারদিকে। সকাল শুরু হতে পারে না, তার আগে থেকেই বড়-ছোট বিস্ফোরণ, লোহা-লক্কড়ের ঢেং-ঢাং শব্দে মুখর হয়ে ওঠে এলাকা; চলে সেই সন্ধে…
-

গিটার হাতে মেয়েটি
এক বসবার ঘর। আয়তনে চল্লিশ বাই পঞ্চাশ ফিট। বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার দরোজা এখন বন্ধ। নীল পর্দা ঝুলছে। বসবার ঘর থেকে ভেতরে যাওয়ার দরজা দেখা যাচ্ছে, সেখানেও নীল পর্দা। দরজাটা ভেজানো। ঘরের ডানদিকে একটা জানালা। রিং দিয়ে নীল রঙের পর্দা রডের সঙ্গে লাগানো। জানালার কপাট বাইরের দিকে খোলা, সূর্যের আলো ঘরের পর্দার ভেতর দিয়ে ফিল্টার…
-

বিদ্যাসাগরের মন খারাপ
শনিবারের দুপুরটা ভারী পাথরের মতো বুকে চেপে বসে থাকে। শুক্র, শনি ছুটি বলে এই দুটি দিন আনন্দে ভরে ওঠার কথা, অথচ তা হয় না। পায়েল ব্যস্ত হয়ে থাকে প্রণীলকে নিয়ে। প্রদীপ আর পায়েলের একমাত্র সন্তান নীল – প্রণীলকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে ওর মা। পায়েল খুব কর্তব্যপরায়ণ। সংসারের কাজকর্ম করে মেশিনের মতো। ভোর থেকে ওর কাজ…
-

জাহালম গাছির গন্তব্য
ত্রিভঙ্গ মুরারি খাঁজকাটা কণ্টকময় বৃক্ষ। একখান দুইখান না, সার সার। সুখে-দুঃখে তারা একাট্টা। জাহালমের খাজুর বাগান। ভদ্দরখোলের ছাওয়াল-পাওয়াল বুড়া-জোয়ান কেডা না চেনে। উত্তরা বাতাসের আগমনের আগ দিয়াই জাহালম গাছি কাছা মারে, শক্ত গিট্টু। ধেয়ানে থাকে গোটা হিমানি দিনগুলায়। রসের ধেয়ান, জিরান কাটা পাটালি গুড়ের ধেয়ান। ওস্তাদ গাছি। খেজুর গাছে ঠিলা লাগায়া রস নামান পানির মতো…
-

জাদুগাড়ি
শেষমেশ আলী আক্কাস যখন ঠিক করে ফেলল কপালে যা আছে, বাড়ির ভিটি বেচে হলেও একটা ব্যাটারি রিকশা কিনে ফেলবে, বউ রমিজা আল্লা গো, এইডা কী কও বলে আঁতকে উঠলেও সে শোনার গরজ দেখাল না। চিন্তাটা এক-দুদিনের না, অনেকদিন ধরেই মাথায় ঘুরঘুর করছে। রোজ সকালে মহাজনের গাবতলি গ্যারেজ থেকে প্যাডেল রিকশাটা বের করে রাস্তায় নামতেই মনটা…
