April-May 2022
-

রেহানা ও তার গাছ
তখনো একটা মুনিয়া পাখি তেঁতুলগাছের মাথায় বসে একগুঁয়ের মতো আলোর একটা প্রান্ত টেনে ধরে রেখেছিল। নয়তো সন্ধ্যা কবেই নেমেছে। বাড়ির আঙিনায়, গোয়ালঘরে, বাঁশঝাড়ে, সর্বত্রই। শুধু গাঙ্গুলিদের বাড়ির মস্ত তেঁতুলগাছের পেছনে ক্ষেত থেকে তুলে আনা পাকা টমেটোর মতো একফালি আকাশ। মুনিয়া পাখির দাপাদাপি আর অসময়ের গানে বিকেলটা যেন থেমে আছে সেখানে। সন্ধ্যার শিহরণ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে…
-

হাইফেন
একটু আগেই ড্রাইভারকে ছুটি দিয়েছিল সোহানা। সে জানত না আকরাম এতো তাড়াতাড়ি অফিস শেষ করে এসেই বলবে, ‘চলো, তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। অনেক কষ্টে সিরিয়াল পেয়েছি এখানে অনেক রোগীর ভিড়ে। এক মাস আগেই নাকি সিরিয়াল নিতে হয়। তোমার নয় নম্বর। অনেক কষ্টে ম্যানেজ করেছি। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।’ একটানে কথাগুলি বলে যায় আকরাম। যদিও…
-

নিঃসঙ্গ কলতান
ফেব্রুয়ারির সকালবেলার হালকা শীত শীত ভাবটা গায়ে যেন মখমল কাপড়ের মতো আরামে জড়িয়ে থাকে। ভোরের দিকে মাখনের মতো নরম কাঁথাটা আরো ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিলাম। পুরনো শাড়ি দিয়ে হাতে সেলাই করা নরম কাঁথা। মফস্বল শহরগুলোতে এখনো এসব সহজেই পাওয়া যায়। ছোটবেলায় দেখেছি, মা তার পুরনো শাড়িগুলো জমিয়ে, সেগুলো দিয়ে কাঁথা বানাতে দিয়ে দিত। খুলনায়…
-

একটি লাল ফড়িংয়ের গল্প
এক পুবের আমগাছের ছায়াটা গুটিগুটি পায়ে যেন সেতু মিয়ার দিকে এগিয়ে আসছে। ছায়াটা ঠিক নিরেট ছায়া নয়, রোদের খানিকটা লুকোচুরি আছে ছায়ার ভেতর। কিন্তু সেতু মিয়ার প্রয়োজন নির্ভেজাল রোদ। সে নির্ভেজাল রোদের জন্য এরই মধ্যে তিনবার জায়গা বদল করেছে। পিঁড়ি পেতে সে প্রথমে বসেছিল ঘরের দাওয়ায়। রোদটা সেখান থেকে সরে যেতেই সে গিয়ে পুবের খোলা…
-

মাস্ক-সম্পর্কিত একটি সত্য ঘটনা
থার্মাল স্ক্যানারের সামনে দাঁড়াতেই ধবধবে সাদা স্পেস স্যুট পরিহিত নিরাপত্তা কর্মীটি মাহিদুলের চোখে চোখ রেখে ঈষৎ বিরক্তিযুক্ত কণ্ঠে বললেন – ‘আরে ভাই কী করছেন? হাত নয়, আপনার কপাল আনেন স্ক্যানারের সামনে।’ অনভ্যাসের কারণেই হয়তো হাতটি আগে চলে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে স্ক্যানারের সামনে নিজের মুখাবয়বটি তুলে ধরে মাহিদুল। স্ক্যানারের ডিজিটাল স্ক্রিনে ভেসে ওঠে শরীরের তাপমাত্রা…
-

মৃত্তিকার মায়া
প্রণব মজুমদার সাবিত্রীরা কেউ যেতে চায়নি। নিজেদের জমিজিরাত ও ভিটেমাটি ছেড়ে দেশান্তর কেন? প্রশ্নটা সাবিত্রীরও। মাটি কামড়ে থাকতে চেয়েছিল ওরা। পিতার মতো অতিশয় মাটির মায়া সাবিত্রীরও ছিল। দেশ ছেড়ে যেতে সেদিন একটুও মন সায় দেয়নি তার। বারবার বাবাকে বলেছে, ‘নতুন অচেনা জায়গা! তোমাদের ছেড়ে কীভাবে সেখানে থাকবো?’ উত্তরে বাবা বলেছেন, ‘দিনকাল খারাপ! কখন কী হয়ে…
-

একটি চিরকুট ও একজন আতিকউল্লাহ
নেতা, পাতিনেতা, সাংবাদিক, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, সুহৃদ, শত্রু সবার সময়-অসময়ের উৎপাতে বাড়িটা যেন বাজার হয়ে উঠেছে। এমন ঘটনা পরিচিত পরিবেশে এর আগে আর ঘটতে দেখেনি কেউ, শোনেওনি। অপার কৌতূহল যেন হঠাৎ তেড়ে আসা সুনামির মতো নানা প্রশ্ন নিয়ে নানা সম্ভাবনায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাচ্ছে। হাট-বাজার, চায়ের স্টল, বৈঠকখানা, পার্টি অফিস, গলির মোড়ের আড্ডা – সর্বত্র সব কথার মাঝে…
-

দুধপট্টি
বিয়ের কিছুদিন পর আমি আবিষ্কার করি যে, আমার আমার বর সাধারণ মানুষ নয়, সে বেশ সৃজনশীল, সে কবি কি না আমি বিয়ের আগে জানতাম না, তার সম্পর্কে কোনো তথ্য বাবা আমাকে বলেনি; আমি বাধ্য কন্যার মতো বিয়ের পিঁড়িতে বসলাম কোনো কিছু না ভেবেই। তো একদিন দেখি সে ব্রার নতুন নামকরণ করছে, সে বলছে, তোমার দুধপট্টির…
-

অনিঃশেষ ঘুমের ভেতর
জা য়গাটা বেশ ভালোই, দিঘল সরল পত্রময় গাছে ঘেরা, শান্ত আর নির্জন, অনেকটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপদেশের মতো সুন্দর, নিরুপদ্রব। এখানকার অনন্ত নিরালায় হু হু বাতাস এসে শিশুদের মতো নিশ্চিন্তে দোল খায়। এই অখণ্ড স্তব্ধতায় রৌদ্র এসে ঋষির মতো ধ্যানমগ্ন হয়। গভীর রাতে যখন পৃথিবীর ওপর নক্ষত্রের আলো ঠিকরে পড়ে, এখানকার বাঁশবাগানে তখন শনশন বাতাসের শব্দ হয়।…
-

পোষা প্রাণ
মিনির বিড়ালের সঙ্গে ভুলুর কুকুরের বিসম্বাদটা শুরুই হলো নাম দিয়ে। নামের প্রসঙ্গটা হাতে বানানো বড় কাগজের পাখি হয়ে ফরফর করে চারপাশে উড়লো। তা ওরা ওদের পছন্দের নাম রাখতেই পারে, তাতে কী সমস্যা! কিন্তু কথা ঘন হয়ে ওঠে নিজেদের নামধাম দেওয়া-নেওয়ার সময়। – তুমার নাম কী? – ভুলু। – ভুলু তো কুকুরের নাম! মুখ কালো হয়ে…
-

প্রেম কিংবা প্রকৃতির গল্প
আমার দাঁতের চিকিসৎক গোল্ডিন কিছুটা ভ্রু কুঁচকে আমার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি নিশ্চয় রাতের বেলা দাঁত কিড়মিড় করো?’ গলার স্বরটি একই সঙ্গে প্রশ্ন করা আর বিচারিক রায় পড়ে শোনানোর মতো। তখন পর্যন্ত বাইরের পৃথিবীতে আমি একজন খুব স্বাভাবিক মানুষ। অন্তত এ-পর্যন্ত আমি তাই ভেবে এসেছিলাম। বাইরের পৃথিবী বলতে বোঝাচ্ছি যাদের সঙ্গে সম্পর্কটা পেশাগত। আমার…
-

বিভাজন চাই না, মেয়ে
ওদের বরাদ্দ ছিল দুটো ঘর আর একটা বারান্দা। বারান্দায় খাওয়ার ব্যবস্থা। এক ঘরে বাবা-মা, আরেকটায় ওরা তিন ভাইবোন। ভাইয়ের জন্য একটা আলাদা খাট, খাটের পাশে পড়ার টেবিল। আলোর জন্য বাবা এক শীতে নতুন লাল কার্ডিগান কিনে দিলো, ছায়ার জন্য নীল রঙের সেকেন্ডহ্যান্ড। ওরা দুই বোন সেগুলি পরে বাইরে গোল্লাছুট খেলতে গেলে ছায়া খেলার সাথিদের গর্বভরে…
