May-June 2019
-
সম্পাদকীয়
বাংলা ছোটগল্প সূচনাকাল থেকেই জীবনের বহুকৌণিক দিকের উন্মোচন করে চলেছে। বিস্তৃত পরিসর ও পটভূমি নিয়ে জীবনের নানা অনুষঙ্গ ছোটগল্পে প্রতিফলিত হয়েছে। ফ্রয়েডীয় ও মার্কসবাদী চেতনা ছোটগল্পের ভুবনকে একদা সমৃদ্ধ করেছিল। অন্যদিকে প্রান্তিক ও ব্রাত্য মানুষের জীবনসংগ্রাম ছোটগল্পকে নানাদিক থেকে জিজ্ঞাসা-উন্মুখ করে তুলেছিল। রবীন্দ্রনাথ তাঁর রচিত ছোটগল্পে মননধর্মিতার সঙ্গে সাধারণ লোকজীবন-উপলব্ধিকে যে প্রসারিত চেতনায় বিস্তৃত করেছিলেন,…
-

একটি রহস্যভেদের গল্প
শুক্কুরবারের কা-টা ঘটানোর আগে কাশেম আমাদের গ্রামে পাত্তা পাওয়া কেউ ছিল না। অথবা এটা বললে ভালো হয়, কাশেমকে নিয়ে বহুকাল আমাদের মাথা ঘামাতে হয়নি। কিন্তু শুক্কুরবার আসর ওয়াক্তের পর থেকে কাশেমকে পাত্তা দিতে শুরু করতে হয় আমাদের। শুক্কুরবার দুপুরের একটু পরপর কাশেম গলায় ফাঁস নেয়। তার জিহবা বের হয়ে যায় আধহাত এবং সে মাটি হতে…
-

কায়েসের অজ্ঞাত লাশ
কাফনে মোড়া লাশের পাশে হাঁটু ভাঁজ করে বসে আছেন ওয়ালীউল্লাহ। কেতাদুরস্ত এই মানুষটি কখনো এভাবে মাটিতে বসেন না। নাকি বসেছেন, কবে? মনে করা হয় না। সকল চিন্তা মিলিয়ে যায় কোনো এক কৃষ্ণগহবরে। এমন বারবার হচ্ছে। কোনো বিষয় তার চিন্তায় জায়গা করে নিতে পারছে না। এই যে তিনি তাকিয়ে আছেন, দেখলে মনে হবে তার দৃষ্টি ওই…
-

চামড়া
‘বাবা,আমার বিস্কুট এনো।’ মায়ের এক পাশে শোয়া ছোট্ট মেয়েটি মাথা তুলে বলে। অপর পাশ থেকে বড় ছেলেটা চোখ কচলাতে কচলাতে জিজ্ঞেস করে, বাবা, পরীক্ষার ফি দিতে হবে, টাকা আছে? স্ত্রীও ক্ষীণস্বরে কাছে ডেকে বলে, ওষুধ তো ফুরিয়ে গেছে গো! সবার আবদারে শুধু হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ে জগা। মুখে কোনো কথা নেই, দুচোখ জুড়ে দুনিয়ার দুশ্চিন্তা এসে…
-

শেষ বিছানা
আমি পঙ্কজ এবং ওর বিছানার কথা বলতে বসেছি। কিন্তু একটা ঘটনা বলতে গেলে আরেকটা চলে আসে, এর পেছনে মানুষের ইতিহাস, তার মস্তিষ্কের গঠন অথবা আমার ব্যক্তিগত স্বভাব দায়ী হতে পারে। মানুষের জীবনের ঘটনাগুলো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। রাজনীতিতে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে একটা বিশেষ পদবাচ্য শব্দ আছে। জীবনে নেই, যদিও জীবন একটা রাজনৈতিক বাস্তবতা। তাহলে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’র…
-

রাত্রিমা ও ঘুমগাছের বন
এই গল্পটা আমার মায়ের। এটাকে গল্প বলা যাবে কিনা বুঝতে পারছি না; কিন্তু গল্পের মতোই। এখনো ভাবলেই সব দৃশ্য হয়ে যায়। আমাদের ছিল ঘুমগাছের বন। সেই বনের ভেতর আমাদের কাঠের দোতলা বাড়ি, টিনের ছাউনি। ওখানে থাকতো আমার রাত্রিমা, আমি, আমার ভাইবোনেরা, একটি ভয়ানক রূপবতী বৃদ্ধ দাদি, আর মধ্যে মধ্যে বাবা। বাবা তো দূর বনের সরকারি…
-

মরিচপোড়া
আমি যখন বাড়িটির সামনে এসে দাঁড়ালাম, সূর্য তখন মধ্যগগন থেকে অল্প একটু হেলে পড়েছে পশ্চিমে। চারদিকে ঝাঁঝাঁ সোনা গলানো রোদ। আমিও এসেছি বহু পথ অতিক্রম করে। কত হবে? হাজার লাখ ক্রোশ। মাপজোখ নেই। আমি কিছুটা ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত। যদিও রোগ, শোক, জরা আমাকে তেমন একটা ছুঁতে পারে না। তারপরও এই নশ্বর পৃথিবীর সবকিছুই যেহেতু একদিন…
-

শৈশবের বানরেরা কোথায় হারাইয়া গেল
যদিও সায়েন্স ল্যাবের ভিড়মগ্ন রাস্তাঘাট মানুষ এবং নানা কিসিমের (বাস, জিপ, প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টেম্পো, মোটরসাইকেল, রিকশা ইত্যাদি …) যানবাহনে বিপর্যস্ত, যদিও এলিফ্যান্ট রোডের দোকানগুলো শাড়ি, বস্নাউজ, ব্রা, পাঞ্জাবি, বাহারি জুতা, চশমা, ঘড়ি, শোপিসে ঠাসা এবং এসবের প্রাচুর্যে যদিও বানরবিষয়ক ভাবনা অপ্রাসঙ্গিক মনে হয় তবু আবুল কাসেমের মাথায় এ-ভাবনাই লাফঝাঁপ মারে। এমনকি শৈশবে দেখা সেই…
-

অলক্ষে
শেওড়াপাড়ায় ধসে যাওয়া রহমান টাওয়ারের ধ্বংসাবশেষের ফাঁকে পড়ে থাকা হাজারখানেক গার্মেন্ট শ্রমিকের লাশ এবং আহত বা জীবিতদের ভিড়ে সোমা আখতারকে (২১) আর খুঁজেই পাওয়া গেল না! কয়েক দফায় জুরাইন কবরস্থানে যেসব নাম-না-জানা গার্মেন্ট শ্রমিকের গলিত-অর্ধগলিত বা খ–ত লাশ কবর দিয়েছে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম তাদের ভেতরে, যাদের বিকৃত চেহারাটা কিছুটা হলেও বোঝা যাচ্ছিল তখন, সেই দলেও…
-

শান্তা, শাড়ি আর সালমার কথা …
হঠাৎ আমাদের কথাগুলো খইয়ের দানার মতো ফুটতে লাগলো। উৎসাহের আতিশয্যে সেগুলো দুজনের উষ্ণ মুখগহবরের ভেতর থেকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়তে থাকলো টেবিলের দুপাশে। অনেকটা ফটফট ফটাশ আওয়াজ তুলে। আমাদের মনের ওপর কথাগুলোর প্রভাব ছিল এমনই সশব্দ, দারুণ উত্তেজনাকর। আমরা দুজন টেবিলের দুদিকে বসে ছিলাম। অনেকদিন পর এমন অন্তরঙ্গ আলাপের সুযোগ পেয়ে আমরা উভয়েই বেশ প্রগলভ হয়ে উঠলাম।…
-

হরিপদর দোকানে বিকেল নামার সময়
বহু পুরনো জংধরা টিনের বাক্সে বাঁশ কিংবা গজারি কাঠের চেলা দিয়ে বাড়ি মারলে যেরকম পুরনো আমলের মতো একটা আওয়াজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, ফইজুলের গলার স্বরটাও অবিকল সেরকম। ফইজুল যখন অপরিচিত জায়গায় গিয়ে কথা বলে তখন সবাই ওর দিকে যতটা না আগ্রহ নিয়ে তাকায় তারচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে শোনে তার কথা। ফইজুলের এই কথা বলার ধরন-ধারণের…
-

অমানুষ
সিঁড়ি দিয়ে দ্রুতবেগে নামছে ও, এগারো ধাপের একটা সিঁড়িতে দুবার পা। দশতলা থেকে নামতে বড়জোর এক মিনিট। হাতের মুঠোয় শুধু দুটো ফোন নম্বর, বাঁশপাতা কাগজে লেখা। পালাতে হবে তাকে, এক্ষুনি! পেছনে ধাবমান-গিন্নি দুই সিঁড়ি দ্রুততার সঙ্গেই নেমেছিল, এককালে সেও কম খেলোয়াড় ছিল না যে! কিন্তু সাম্প্রতিক হার্টের ব্যামো, কোমরের হাড় ক্ষয় তাকে থামাল। মাথাটা কাজ…
