August

  • বত্রিশের সিঁড়িটা সেই থেকে

    পাড় ভাঙা নদী পেরিয়ে তিনি উঠে এলেন। তিনি উঠে এলেন মেঠো সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে তামাটে বাঙালির চিবুক ছুঁয়ে ছুঁয়ে দাঁড়ালেন তিনি আকাশের চেয়েও উঁচু হয়ে। তারপর সব নদী রক্তাভ সমুদ্র হলো বত্রিশ নম্বরের শাদা বাড়িটা ভেতো বাঙালির নিঃশঙ্ক শয্যা হলো। কে ডাকে? কোন শকুনেরা ডাকে আগস্টের ভেজাঘুম ভোরে? তিনি ওম শয্যা ছেড়ে নেমে এলেন বত্রিশের…

  • পুঁজি

    মতিচ্ছন্ন ভারি না হলে, ভরা বর্ষায় নদীতে কে পুঁটি ধরতে যায়! ছোট সে খ্যাপলা, থাকে না মীন, ইলিশও জেনেছে মেছো, পারবে না তাকে ছুঁতে। তবু গন্ধ ভাসে জানা নেই হেঁশেলে শ্রীমতী কীভাবে হয়েছে মাতোয়রা! বাঁশি হাতে টোপ ফ্যালে ছোঁড়া আঁশ গন্ধ শুধুই সম্বল।

  • শ্লোকসন্তাপ

    এই অনুজ্জ্বল জীবনের অর্থ কী? বন্ধু; ঝড়ের রাতের বিপন্ন প্রদীপ আমি, এইটুকু আশা নিয়ে বাঁচি যে নিভে যাওয়ার আগে যদি একবার উজ্জ্বল হয়। একটা জীবন হাসি-কান্নায় কেটে গেল ভাবলাম মৃত্যুর পর অবসরে যাব কিন্তু আমি তো জানি না, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবার জন্য না জানি কত দিন অপেক্ষা করতে হয়। কাল সবকিছু গ্রাস করবে জানি তবে…

  • নয়া বছরের চিঠি

    নয়া বছরের হাওয়া এসে লাগছে আমার এ-গতরে আমিও তো ভুলে যেতে চাচ্ছি ফেলে আসা সব গত রে কিন্তু পাচ্ছি কোনো পার কী কিছু সুখ ভাসছে যে মনে ভালোবাসামোড়া –                তাতে অবশ্য কার কী কিন্তু ছুটে যেতে চাই সঙ্গ কারো পাই বা না-পাই উতলা বৈশাখ বিজু সাংগ্রাই বিষু চাংক্রান বেচইন করে টানছে আমার প্রাণ তবে…

  • রক্তাক্ত দৃশ্যকাব্য

    ভোকাট্টা ঘু‌ড়ির সা‌থে শকুন উড়ে এসে ব‌সে শহ‌রের উপক‌ণ্ঠে। পৃ‌থিবীর ক্যানভাসজু‌ড়ে আজ ধূর্ত চোখ আর রক্তাক্ত দৃশ্যকাব্য। যারা মৌন হ‌য়ে ব‌সে আছে সু‌দি‌নের আশায় তাদের আশার ওপর চুই‌য়ে পড়ে শকু‌নের আহ্লাদ! অদ্ভুতভা‌বে পাশঘে‌ঁষে ব‌সে চিল ‌যেন ছোঁ মে‌রে নি‌য়ে যা‌বে জগৎসংসার ডো‌মেইন দূরাগত ভা‌লোবাসা উড়তে থা‌কে ঘরময়,‌ হো‌স্টিং এর নি‌চে স্তব্ধ হ‌য়ে আছে বিশ্বা‌সের চাকা!…

  • একটি জারুল গাছ

    নদী যেথায় অথই ধারায় বাহিত স্রোতস্বিনী ছিল ওখান থেকে একটু সামান্য দূরে অদৃশ্য সুতোয় গাঁথা পথরেথা, সোনাঝরা গ্রাম ঝোপঝাড়, গাছপালা কাশবন শিউলি-বকুলের গন্ধ আর শান্ত শীতের সকাল পলাতক বালকের মতো দিগন্তে হারিয়ে গেছে। আর, এ-গাঁয়ের নক্ষত্রসোহাগী রাত অমরাবতীর গল্প শুনে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে চেয়েছিল … সেও, দ্যাখো, ওই দূর শহরের আইসিসিইউ’র কাচঘরে এথন বন্দিনী।…

  • গ্রীষ্মের সকালে

    গ্রীষ্মের সকালে হঠাৎ পলকে দেখা হয়ে গেল পড়েনি পা যদিও মাটিতে, ছিলে চাকার বাহনে দূরগন্তব্যের আহ্বানে, কেমন কপিশ কন্দরে আর যেন সকালের সারস্বত সম্মিলনে। ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে পথ যায় পথের কিনারে; তাড়াতাড়ি ছিপ ফেলে বসে থাকা চলে মগড়ার উজান গাঙে। সোমেশ্বরী বসে আছে প্রতীক্ষার বাষ্পীয় শকটে নদীর ঠিকানা কোনো ডায়েরিতে লেখা নাই।

  • রাধিকাগাছ

    আমি খুব বেশি বেশি লিখতে চেয়েছিলাম অন্তত বাড়ুক ফুলের বাগান দালানকোঠা না-বেড়ে হোক ফুলফল যদি নাও জন্মে ঝুল ঝুল ফলদ রাধিকাগাছ বেড়ে যাক সব কাঁটাবন, ঝোপঝাড় গড়ে উঠুক, শেয়াল জোনাকপোকার নিশ্চিত আবাস আমি হেঁড়ে গলায় এই বেসুরো কণ্ঠে ধরি গান সময়-অসময় এক্ষেত্রে সবার আগে রবিবাবুর সংগীত এমন স্পর্ধা দেখে কবিগুরু যেন রোজ ক্ষিপ্ত হন আমার…

  • সম্ভোগ

    এমন গভীর হয়ে হঠাৎ রোদ হারিয়ে যায় এত চমৎকার মেঘ ভেলা ভাসে আকাশে আগুনে তাতিয়ে জমে ওঠা ঘাম কারো না কারো কাছে তুচ্ছ কিছু অথবা হারাবার কিছু নেই তার আর এমন বাতাবিলেবুর রসালো দেহ-সম্ভোগে। নীল হয়ে ওঠে মুখ বৃষ্টি বাতাস হলে উগড়ানো বমিকম্পিতচোখ, যে সংসারী ঢেউ খেলে মিলিয়ে যায় সেও কোথাও অজানায় মন বেঁধে ডুবে…

  • সলতে

    সলতেটা যে জ্বলছে না আজ বাতাস বড়ই বেয়াড়া একটুখানির জন্যে আমার যাচ্ছে হয়ে হাতছাড়া, এখন তো নয় বৈশাখ বা শ্রাবণ মাসের ঝঞ্ঝাকাল খটখটে এই শুকনো দিনে আগুন জ্বালানোর হয় আকাল? কী আর করা – শাপশাপান্ত করেই না হয় ক্ষান্ত দিই সলতেটাকে কৌটায় ভরে মনটাকে আজ গুছিয়ে নিই, তেলের অভাব ছিল বলেই হয়তো হলো গোল এমন…

  • আমি খুব হারিয়ে গেলাম

    কদম পাতায় ফেলে দেওয়া হলো আগুন রাত যখন সকাল ছুঁইছুঁই দেখা গেল পুড়ছে না কিছুই শুধু হেঁটে আসছেন তারা কদমফুল মুখে নিয়ে আগুনেরা তারা আগুনেরা হেঁটে এসে বলল তোমরা কি জেনেছ হলুদ ফুলের নাম হাজার হাজার মাইল পথ বেয়ে আমরা এলাম পথ বেয়ে চলে গেছি বইয়ের মলাট থেকে শিশিরের জলে শিশিরের জল থেকে শেষ পৃথিবীর…

  • সকালে

    তোমাকে আষাঢ়স্য সকালে একবার কদমফুল উপহার দিয়েছিলাম উৎফুল্ল তুমি অদম্য উৎসাহে বলেছিলে গোলাকার সাদাটে হলুদাভ মৃদুগন্ধফুল বর্ষার আগমনীবার্তা কদমফুল প্রকৃতির অব্যর্থ নিয়মে পৃথিবীর বাগানে আজো কদমফুল ফোটে কিন্তু তোমার চাঁদমুখ এতো আবছা-আবডাল লাগে কেন হায় তাহলে কী আমি অনির্দিষ্টকালের জন্য তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি