2004

  • বিরোধ ছাপিয়ে

    আমেদ আলি ও বিষ্ণু দে কলকাতারই কলেজে পড়াতেন। শুনেছি কাহিনী, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময়ে, আমেদ বলেন একদা Ñ ‘বিষ্ণু এই দাঙ্গার ভয়ে তুমি যদি না-ই আসো আমার বাড়িতে তাহলে তুমি ও আমি মেনে নিই ঘৃণ্য এই দুর্ঘটনা যেন কলকাতার বুকে যা কখনো না হওয়ারই কথা ছিল।’ দুজনে চলেন তাই আমেদের বাড়ি কলেজের পরে। আমেদের খানসামা, বাবুর্চি,…

  • সাথে চাকা, ফাঁকা পেলেই চেপে দেবে

    পুবের গাছে হেলান দেয়া মই, বাঁশকাঠি, রে বুনো Ñ শুয়োরের তেজে মাল সাজা, শাঁ শাঁ বায়ু ঝেটিয়ে দিক শ্যাওড়ার দানো কাচা মাটিতে বাঁধ হচ্ছে, বাঁধ মানেই তো ঘেরের মধ্যে খলবল ধান বিলি দিয়ে চোখ খুটে খা, গতরে দাগ ধরলে হেই ভাটি! দক্ষিণে গোলপাতা তেল-সিঁদুরে উবুজুবু ঘন্টি বাঁধ ছেলের কোমরে : টুং-টাং লাফ দিক ছাগ-শিশু পায়ের…

  • দক্ষিণ – ইস্পাতের ফলা ধার হচ্ছে

    শিশুটি আকাশ বন্ধক রেখে দুধ পান করছে। মায়েরা অপুষ্ট, ক্ষত, ক্লান্ত ও বধির রাত্রিকালীন অবগাহন শেষে স্তন দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে এখন কাদা ও গোবরে হুটোপুটি খাচ্ছে; হামা দিচ্ছে সন্তান, শিশু কবে হাঁটতে শিখবে পাতার ভেতর পিঁপড়ে ও উঁই খুঁটে খাবে ভবিষ্যৎ? হায় সন্তান, নষ্ট জলে তৈরি হচ্ছে ক্লিষ্ট ভোজ দুধের নহর কই, কোথায় সে ফলবাগানের…

  • মানুষ কী অসামান্য প্রাণী

    অনর্থ এই সময়ের সাবলীল স্রোতে বয়ে যায় নিঝুম দুপুর, নিঃসঙ্গ আর্তনাদে চারিদিক মগ্ন-দগ্ধ, তুমুল উত্তাপে অসহায় জনপদ পুড়ে যায় নগরীর দাপটে, ব্যক্তিবর্গ অহঙ্কার-অসুখে মহামারী-আক্রান্ত, প্রতিটি মানুষের বাহুমূলে জমেছে নোনা ঘাম বিন্দু বিন্দু সমুদ্রের বৃষ্টি সফেন, এইভাবেই অপরাধ জমা হয় গোপন বিচারে, আকাশ থেকে নেমে আসে ওই সহস্র রাতের কাহিনী – বোবাকান্না, কি ছিল সেই শূন্য…

  • আমাকে সন্তান করো

    আমাকে সন্তান করো। টেনে নাও বুকের নিকট ঠোঁট রাখো গালে ও কপালে। চোখ স্নিগ্ধ করে দাও চুম্বন ক্রিয়ায় আমাকে সন্তান করো। গোলাপি বর্ণের হাতে শুইয়ে আমাকে শূন্যে তুলে দাও, লুফে নিয়ে শিশুঘ্রাণ পেতে আমার বুকের মধ্যে থাকো আমাকে চিনিয়ে দাও আকাশের তারা হয়ে গিয়েছে যে পূর্বপুরুষেরা। যে-মাটিকে মর্দিত করেছ আর ফসল তুলেছ Ñ চেনাও সে-মাটি।…

  • জীবনী অংশত বৃষ্টি

    শরতের রৌদ্র মেঘ; এতকাল পর আহা, এরকম ছবি বৃষ্টি আজ কি কি চায় – খ্যাকশিয়ালের বিয়ে? মামাবাড়ি পার হয়ে তোমাদের বাড়িতে পুকুর শাপলা তুলতে গিয়ে এক ডুবে বৃষ্টি মাথায় ভেসে উঠতেই রোদ Ñ তখন কি শরৎ বুঝি Ñ দেবদাস কে লিখেছে জানি? জানাজানি পরে হবে Ñ ফিরে যাচ্ছি Ñ পেছনে পুকুর বাক্সপেটরা, ফেরিঅলা, লোকালের ভিড়ে…

  • সমুদ্রের স্বগতোক্তি

    কখনও বিশ্রাম নিই না। দিবারাত্রি চলতে থাকে তরঙ্গের আছাড়ি-পিছাড়ি। আমার তৃষ্ণার দৈর্ঘ্য আকাশ-সমান। রৌদ্রমেঘে জ্বলি নিভি, ঘূর্ণিস্রোতে দুলি। নানা প্রজাতির মাছে উদ্ভিদে শৈবালে ভরভরন্ত পেতে আছি বিশাল সংসার। মানুষকে কাছে ডাকি। বলি, তোমরা ক্ষুদ্রতা-খোলস ভেঙে চর্চা করো উদারতা, সহনীয় কোমল মৈত্রী ও প্রেম। কষ্টে সৃষ্টে ছেঁদো স্বার্থ ভুলে গিয়ে সম্মিলিত ঐকতানে নেচে বেজে ওঠো। তোমরা…

  • আস্থায় আনন্দে এসো

    বস্তুত কঠিন ছিল। সময়ের দাহ্যতাকে নিয়ে যাবো স্থিত আয়োজনে যেখানে ক্লান্তির পাশে শুয়ে-বসে ঘন অন্ধকার             বর্শামুখ, বিসদৃশ খুলি, মৃত মানুষের হাড় বিচ্ছেদের কথা যদি বলি Ñ বস্তু ও বন্যতা যদি… মৌন, মধুগুঞ্জরণে ধসে গেছে সভ্যতার দীর্ঘ লোকালয়। দেখি, যে পাখিটি আলো স্বল্পতায়  কেঁদেছে রাত্রির ঘুমে; অনাকর্ষ মুগ্ধ অন্তপুরে             একই শব্দ একই দৃশ্য :…

  • আমাদের আয়ু

    আমাদের আয়ু বায়ুর মতো। এইÑ আছে ঠিকঠাক পরমুহূর্তে নেই আমাদের গান সুরহীন ছন্দকাটা গেরস্ত তবে নেই গেরস্তি ক্ষেত চাল গম আটা আমাদের আয়ু মুহূর্তে বদলে রং কংসমামায় রূপ নেয় অথবা সঙ আমরা জানি না আমাদের নাম গোত্র আমরা জপি- সারাবেলা শাক-নুন স্তোত্র তবু আমাদের মিলাদ মিছিল পুজো-নৈবেদ্য খেতে কোলাহল ভরে হয় হেঁটে হেঁটে যেতে পথের…

  • কারুবাসনা

    জানি শুধু পোশাকের অবল¤¦নেই সাঁতার কেটেছিÑ ডেকেছি ঝর্নার নাম ধরে টিলার অনেক নিচে যে যমুনা তাকে আমি চুঁইয়ে চুঁইয়ে আরও জল আরও বেশি আত্মা হয়ে বিনিময় হয়েছে, তারপর,Ñ একদম মরে গেছি গরম লাভার স্রোতে হিমবাহ গলে যায়, গলে যায় মঞ্জরীর                     পাশেই মৌচাক! আমি কি মাদক, প্রিয়? না, কি মধু? না হলে কেন যে,Ñ আমাকে…

  • লিমেরিক

    (১) বেদেবউ সাপের শরীর নিয়ে             গাঁয়ের পথে উত্থিত যুবকেরা বাঁশঝাড়ে ডাকে             বল, কত চাও নগ্ন শিশুটি নৌকায় কাঁদে             মা, ভাত দাও (২) নলখাগড়ার জলে দুটি হাঁস             আপন মনে ভাসে দূরে শিকারির বন্দুকের             শব্দ ভেসে আসে (৩)  যৌবনবিদ্ধ যুবকেরা পুঁটিমাছের মতো অস্থির             নীড়সন্ধানী যুবতী   বিলে বকের মতো এক পায়ে ধীর…

  • নিবেদন

    নিবেদন

    888sport appsের প্রচুর মানুষ জীবিকার সন্ধানে এখন পৃথিবীর প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে গেছেন। জিয়া এয়ারপোর্টের সামনে টিনের স্যুটকেস অথবা কাপড়ের বোঝা হাতে লাইন করে দাঁড়ানো তরুণদের মুখ মনে আসছে, যাঁরা মধ্য এশিয়ায় যাচ্ছিলেন নির্দিষ্ট চাকরি করতে। এঁদের বেশিরভাগই এসেছেন বিভিন্ন গ্রাম থেকে। নিশ্চয়ই যাওয়ার সুযোগ পেতে দালালদের কমিশন দিতে হয়, কিন্তু ঘরে বসে বেকার হয়ে পড়ে…