2019
-
ওসিপ মান্দেলেশ্তাম : ভাগ্যের হাতে প্রতারিত এক রুশ কবি
ভাবানুবাদ : মনজুরুল হক কে জানে ‘বিচ্ছেদ’ শব্দের ভেতরে কোন সে হাহাকার থাকে অপেক্ষায় আমাদের, কোন সে ভাগ্যের কথা বলে পাখির ডানা ঝাপটানো – অ্যাক্রোপোল যখন পুড়ে যায় আগুনের লেলিহান শিখায় ওসিপ এমিলিয়েভিচ মান্দেলেশ্তামের জন্ম ১৮৯১ সালে পোল্যান্ডের ওয়ারশ নগরীর এক ইহুদি পরিবারে। পোল্যান্ড তখন ছিল রুশ সাম্রাজ্যের অধীন। মান্দেলেশ্তামের জন্মের পর চামড়ার ব্যবসায়ী পিতা…
-
আর্তনাদ
শারমিন সুলতানা রীনা আনমনে সাগরের তীরে হাঁটছিল ঝিনুক একটি বালির কণা কখন মিশে গেছে বুকের গভীরে। দিনে দিনে বালির বিষাক্ত লালায় জন্ম নেয় চকচকে মুক্তার শুভ্র দানা। মুক্তা বেড়ে ওঠে জঠরে তার। ঝিনুক টের পায় মহাকালের গর্ভে তার করুণ বিনাশ। দীর্ঘ প্রহরশেষে ঝিনুক মিশে যায় মৃত্যুর শীতল কোলে। পৃথিবীর রক্তিম আভা বরণ করে অপরূপ মুক্তাকে।…
-
আসুক আবার বৃষ্টি
মেহেদী ইকবাল এতক্ষণে বৃষ্টি তবে থামলো! বৃষ্টির সাথে প্রকৃতির কত কথা পাতারা মুখিয়ে ছিল, সবুজ বৃক্ষরাজি আর নদীর দুইপাড় জুড়ে যে-ঘাসের বন, তারা সব অপেক্ষায় ছিল। অপেক্ষায় ছিল মৃত্তিকার গভীরে গোপন গর্ভবীজ রোদে পুড়ে ক্লান্ত কাক আর দলবদ্ধ শালিকেরা সব! সমূহ কষ্ট ভুলে পানকৌড়ি তাকিয়েছিল আকাশের দিকে কাঙিক্ষত ছিল সবার সফল সঞ্চালন হাওয়ার। আজ বৃষ্টিশেষে…
-
বিমূর্ত ক্যানভাস
মোহাম্মদ শামছুজ্জামান তরল আঁধারের বলয় ছেড়ে সিঁড়ি ভেঙে উঠে যাই লুকিয়ে থাকা আলোর রেণুগুলো খেলা করে প্রজাপতির মতো চারপাশে, নিঃসঙ্গ বাতাস দেয়ালের কার্নিশে হিমধরা ভয়ে জেগে থাকে, এগিয়ে আসে কোলাহলহীন অস্তিত্বের সংকট মোমের মতো গলে যায় একটু একটু করে নিয়নের বাতি। জমাট অন্ধকারে ভেজা কার্পেটের আলতো ছোঁয়ায় রক্তকণিকা চঞ্চলমতি হয়ে ঝর্ণার স্রোতে বাইতে চায় কী…
-
দশ আঙুল
রেজাউল কারীম এইভাবে গল্প শুরু হয়ে গেল সবুজ জপমন্ত্র থেকে বেরিয়ে বেসামাল কাঁকরগুলো ঝাঁপ দিলো রক্ত-মাংসের ফেস্টুনে। তারপর মেঘ হলো। গল্প নাড়তে নাড়তে পা রাখলাম ঘরে। আমার সে কী আনন্দ! তারপর রোদ এলো। গল্প শুকোতে শুকোতে পা রাখলাম বাইরে। আমার সে কী আনন্দ! এইভাবে গল্প শুরু হয়ে গেল ইতিহাসে ক্রমশ দ্রবীভূত হলো পুতুলনাচের দশ আঙুল।
-
ইতি শতবর্ষী সুভাষ
পিয়াস মজিদ আগুন অধ্যুষিত এই কালমালঞ্চে নির্বাসন আমার। পুষ্পের পরশমণি জাগায় না বরং পাড়ায় ঘুম। ফুলের হর্ম্য আছে, প্রেমডাকাত নেই বাবরালি আর সলোমনের মা মে দিনের মিছিলে গলা মেলাতে গিয়ে নিজেরাই আজ কবন্ধ 888sport app download apk। হাত-পা হারা ইদানীং আবহাওয়ায় সমুদ্রও শুকায় পদাতিক-তৃষ্ণায়। আলোয় নাকি ভুবন ভরা! পাঁচ পাশে অন্ধকারের উজ্জ্বল ইম্প্রেশন কবরের কোরাস, চিতার বৈভব। আমার…
-
বর্ষার কড়ি
সঞ্জয় আচার্য যাও মেঘ দূরে … আমার ঘরে রৌদ্রের দেখা নেই রৌদ্রবিহীন সঙ্গীবিহীন গ্রামপথ আজ ফাঁকা যখন থাকি একা মেঘ ভর করি তোমাতেই চোখ রাঙানো বস্ন্যাকবোর্ডে তোমার ছবি আঁকা। বৃষ্টি হলে ভালো লাগে আবার না ভালো একটু যদি পেতাম তোমার আলো, তুমি গেছ দূরে কদমগুলো ভিজছে আমার জানালা এলোমেলো আগুন আকাশ দেখেই আমি ভয় পেয়ে…
-
ফণীজ্বর
সাবেরা তাবাসসুম রাত দুর্মর ফণী আছড়ে পড়ে উপকূলে হিহি ঠান্ডা লতা-পাতা কাঁথা কুঁকড়ে আছে সমূহ তস্কর শীতল সেখানে অন্ধকার সেখানে সম্ভব অসম্ভব প্রাণ-সমাদর যেন শেষ নূহের প্লাবন যেন এই বেঁচে থাকা অহেতুক অতিরঞ্জন তোমার প্রশ্ন নেই – মাথার উপরে ছাদ আমার প্রশ্ন নেই – নগর জ্বেলেছে আলো তুমি আজ শয্যাকাতর সভাশেষে আমি থরথর পৃথিবী ডুবলো…
-
লালনের খাঁচা
প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায় মনের মধ্যে সহস্র মন তার একটাতে কখন লালন বসিয়ে গেছে আজব কী এক খাঁচা – টের পাইনি সারা জীবন। এখন দেখি, যখন-তখন ছটফটাচ্ছে অচিন পাখির বাঁচা! এই কিনারে ওই কিনারে ডানায় এমন ঝাপট মারে ভয় করে এই ছিঁড়ল শিকল বুঝি! আবার ভাবি, অন্ধকারে যাবার আগে আলোর পরে নিজের সঙ্গে নিজেই খানিক যুঝি! এই-যে…
-
অমিয় বৃক্ষ অধরাই থেকে গেল
মাহমুদ কামাল হেঁটে যেতে যেতে যতটা পেয়েছি, আলো অন্ধকারেই চাদরের মধুরিমা যেটুকু সকাল সজীবতা এনে দিতো সেটুকুই ছিল প্রাপ্তির জিজ্ঞাসা একজীবনের আয়ুরেখা গতিহীন নদীপথগুলো ছোট হতে হতে মৃত দেখা না দেখার মাঝখানে যত বাধা অমিয় বৃক্ষ অধরাই থেকে গেল ছন্দই ছিল একান্ত অনুভবে অপছন্দের অতিরেক ঢেউগুলো ভেঙে দেয় বৃতি নিয়ে যায় দূর দেশে… কেউ কি…
-
যখন তাদের প্রিজনভ্যানে তোলা হচ্ছিল
মিনার মনসুর দিয়াবাড়ির কাশবন ঝলসে দিয়ে ওরা বেরিয়ে এসেছিল। ভোরের বিনম্র আলোর মিছিল। তাদের অনিন্দ্যসুন্দর অবয়ব থেকে বকুল শিউলি বেলির মতো টুপটাপ ঝরে পড়ছিল শিশিরের সস্নেহ সম্ভাষণ। ঝরবে নাই-বা কেন, চীনের মহাপ্রাচীরকেও ছাপিয়ে উঠেছিল তাদের সংকল্পের দ্যুতি ও বিশালতা। মহাত্মা অতীশ দীপঙ্কর জানেন কত দীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে ওরা এখানে এসেছে। যখন সারিবদ্ধভাবে তাদের…
-
কাদামাটির বই
শ্যামলকান্তি দাশ আমাকে দাও একটি-দুটি সুর ভাঙা ঘাটের পুরনো সেই গান শরৎকালের রৌদ্রছায়াগুলি একলা বাড়ির ঈষৎ অভিমান। আমাকে দাও ঘন শ্যামল লিখা ভরে উঠুক মনপাগলের খাতা, আমাকে দাও দিনান্তের ছবি – হাটবারের শুকনো ফুলপাতা। আমাকে দাও শুরুর শুরুটুকু, অপরিসর সাঁকোর চলাচল, আমাকে দাও আজীবনের মতো চোখের কোণে ফোঁটা দুয়েক জল। আমাকে দাও … কী আর…
