জরিনা আখতার

  • আরও একটু বাঁচো

    সমস্ত স্তব্ধতার মাঝে তুমিই একমাত্র কোলাহল – তুমি বেহালার ছড় সুরের খেয়া ভাসিয়ে দাও হৃদয়ের প্লাবনে, তুমি টুংটাং ডোরবেল – প্রিয়জনের আগমন-ধ্বনি, তুমি বেলি বু’র পায়ের ঘুঙুর রুনুঝুনু তান – কত্থক নাচের প্রিয় বেল, শৈশবের সরষে ক্ষেতে কাকতাড়ুয়া হাঁড়িটি ভেঙে তোমার খিলখিল হাসি এই বোবা শহরে আজো শোনা যায়; টেলিফোনের অপর প্রান্তে তুমি কল্লোলিত নদী,…

  • মৎস্যকুমারী

    জরিনা আখতার হয়তো তার ডোরাকাটা শাড়ির পাড়ে চোরকাঁটা লেগে আছে কুয়াশায় ভিজে আছে আঁচল এলোচুল পিঠে ছড়ানো অথবা হাত-খোঁপা কপালে টিপ, চোখে কাজলরেখা হিজল গাছে ফুটে থাকা গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের মতো অলংকার-শোভিত                                                                      শরীর, হয়তো নয় – অনিন্দ্যসুন্দরী, চোখ-ধাঁধানো রূপে আলোকিত করা চারদিক হয়তো কিছুই নয়; আমি তাকে দেখি না, দেখে না কেউ তবু…

  • শিরোনামহীন

    জরিনা আখতার আকাশের খ- খ- কালো মেঘ থোকা থোকা কালো আঙুরের মতো ঝুলে আছে পৃথিবীর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে – কোথাও অন্ধকার নেই ঝড়ো হাওয়ায় অশান্ত হয়ে উঠছে না গাছেদের হৃদয়, ময়ূরের নেচে ওঠার কথা নয় – তবু বেগুনি ময়ূরেরা নাচে গুপ্ত গুহার কালো ময়ূরের ডাকে, বর্ষা নয় – তবু কানের ঝুমকোর মতো কদম ফুলগুলো…

  • গল্পের শেষ থেকে শুরু

    জরিনা আখতার অকস্মাৎ সমূলে উৎপাটিত হলো গাছটি নানারকম শব্দ করতে করতে অনেকটা খেলার মাঠে বালকদের হইচই করার মতো, তারপর উত্থাপিত হলো নানা প্রশ্ন – গাছটি এইভাবে উপড়ে পড়লো কেন কেউ কি শত্রুতা করে গোপনে গোড়ার মাটি কেটে গাছটিকে আলগা করে দিয়েছিল নয়তো মাটিরই আর ধারণক্ষমতা ছিল না গাছটিকে বহন করবার অথবা ফিনিক্স মাখির মতো গাছটিরই…

  • জ্যোৎস্না ও জোনাকির গল্প

    জরিনা আখতার তবে এখানেই থাকো তোমরা – এই নিশিপুর গ্রাম তোমাদের অভয়াশ্রম, এখানে এভাবে না এলে তো তোমাদের সঙ্গে দেখাই হতো না! জোড়াদিঘির প্রান্ত ছুঁয়ে বনে-বাদাড়েই খেলা করো তোমরা অবাধ স্বাধীনতায়, নিশিপুর মানে মুক্তি – প্রকৃতির সাথে জীবনের নিবিড় সখ্য কয়েকটি দিন; দুপুরের প্রখর রোদে জোড়া দিঘিতে জলক্রীড়ায় মেতেছে কয়েকটি বালক মেঠোপথে মানুষের আসা-যাওয়া নীরবতায়…

  • একসাথে পথে যেতে যেতে

    জরিনা আখতার ঝুলো বারান্দায় শীত-রোদের খেলা পাশাপাশি দুটো বেতের চেয়ার, টবে ক্যাকটাস এই যে দুজন তরম্নণ-তরম্নণী বসে আছে পরস্পরের জন্য কম্পিত হৃদয়ে – আজ থেকে দশ বিশ তিরিশ চলিস্নশ অথবা পঞ্চাশ বছর পর এরকমই আন্দোলিত হবে দুজনের হৃদয় পরস্পরের জন্য! নাকি এই তপ্ত হৃদয় নির্ভেজাল ভালোবাসা কিছুই থাকবে না আর – শীত-রোদ হয়তো সেভাবেই খেলা…

  • শাস্তি

    জরিনা আখতার   ওই দুঃখী নক্ষত্রটি আজ রাতেও আমাকে ঘুমোতে দেবে না – আমার দুচোখ বরাবর ঝুলে আছে রাতের আকাশে কী করে ঘুমোই; আমার বুকে যে ব্যথার মৃদঙ্গ বাজছে তাতে যোগসাজশ করেছে ওই নক্ষত্রটি, এখন রাতের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে জেগে আছি – কী করে ঘুমোই দিনের বেদনার্ত 888sport sign up bonusগুলো এখনো প্রতিফলিত হচ্ছে ওই নক্ষত্রের শরীরে, কী…

  • ফাটল

    জরিনা আখতার   অকস্মাৎ দেয়ালের ফাটলটি প্রথম দেখে আমি অাঁতকে উঠেছিলাম – কেননা, নিয়ম অনুযায়ী ফাটলটি আরো বৃদ্ধি পাবে, একসময় খসে পড়তে থাকবে দু-একটি করে ইট, তারপর দেয়ালের বৃহৎ অংশ ধসে পড়বে সশব্দে – তাহলে তো উন্মুক্ত হয়ে যাবে, আমার সবকিছু, আমার দীর্ণ জীবন, জীর্ণশীর্ণ সংসার, হতদরিদ্র ঘর-গৃহস্থালি সবার চোখে ধরা পড়ে যাবে, আমার সমূহ…

  • অধরা

    জরিনা আখতার   জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছ বললে ভুল হবে – আজীবন তুমি আমার স্বপ্নে বসবাস করছ বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে, সেই দূর শৈশবে জেগে উঠেছিলাম তোমাকে পাবার সাধনায় – আলপথে হাঁটতে হাঁটতে একাকিত্বের বেদনা যখন বিস্ময়কর আনন্দে রূপায়িত হলো সেই থেকে শুরু – শস্যক্ষেতে অধীর অপেক্ষায় একটি নিঃসঙ্গ বক জলের আরশিতে একটি হিজল গাছের অকৃত্রিম…