তুষার কবির

  • রক্তজবার বনে

    এই রক্ত ও রোদন ভরা বিষাদ বসন্তে – সন্ধ্যার কিছুটা আগে ছেঁড়া চিরকুট হাতে হেঁটে যাই গোধূলির লালাভ আলোয় এক রক্তজবার বনে! চেরাকাঠে বীণা বেজে উঠতেই বুঝি ফের এসে গেছে বিলাপ বসন্ত – আবারো শোনা যাবে সেই রক্তফেন গ্রামোফোন ভুল সুরে গাঁথা পাপের পয়ার হারানো প্রেমের সারগাম! তবুও এ বসন্তে তোমার পায়ের ছাপ ধরে হেঁটে…

  • বৃষ্টির জংশনে

    এ-বর্ষায় ছড়ানো বৃষ্টির গান শুনতে শুনতে তোমার পুরনো ঘরে ছুটে যাব! সাদামাটা কদমের গোছা নিয়ে হারানো জংশনে হেঁটে যাব! জমাট বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে তোমার আমব্রেলার দিকে ছুটে যাব! জানি তুমি বারান্দা থেকে দেখবে আমার ভিজে যাওয়া মুখ – বৃষ্টিভেজা শার্টে আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকব জলার্ত রাস্তায় – হাতে ধরে রাখব জলভেজা বিবশ কদম –  আর…

  • শীতপত্র

    এ শীত আছড়ে পড়ে অরণ্যের গানে – জঙ্গলের ডালপালা চিরে হাওয়া শীতল প্রাণে! এ শীত ছিটকে পড়ে হিম জলযানে – ভোরের নৈঃশব্দ্য ফুঁড়ে কুয়াশার ক্যারাভানে! শীতের গহিন ঘ্রাণে পরিযায়ী হিমেল ডানায় – আমি ছুটে যাই জঙ্গলের সবুজ মাচানে জেগে ওঠা দূরের ভাসানে – কুয়াশা মোড়ানো কোনো নিঝুম জংশনে! এ শীতে মুদ্রিত হয় ফেলে দেয়া পুরনো…

  • সারগাম

    বৃষ্টির সুরেলা শব্দে আমার উঠোনে ঝরে পড়ে সান্ধ্য স্বরলিপি! যশরাজ সুরে সুরে বৃষ্টি পড়ে হিম জানালায়! ছড়ানো সুরের ঘোরে দূর কেয়াবনে বেজে ওঠে নিঝুম সানাই। তোমার শাড়ির ভাঁজে বৃষ্টি ঝরে জলের মাদল হয়ে। বিজলির বিভোর প্রভায় তোমার মুখের রেখা ফুটে ওঠে সান্দ্র তারানায়! শব্দের শরীর জুড়ে বৃষ্টি ঝরে – এ-সন্ধ্যায়। ঝরে ভেজা অক্ষরের মাঝে, ধোঁয়াওঠা…

  • অধিনায়ক

    সে-রাতের কথা ভাবতেই দেখি ধুলোয় লুটোয় কালো চশমার ফ্রেম রক্তছোপ শাদা পাঞ্জাবির নক্ষত্র বোতাম ধোঁয়াহীন পাইপের ভাঙা ছড় – রাতচেরা গুলিশব্দে থেমে যায় সুরভরা গ্রামোফোন খসে পড়ে ভ্রমর ও ভাঁটফুল ডেরা থেকে উড়ে যায় পয়ার ও পায়রার স্বর – ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে কেঁপে ওঠে দোয়েলের ডানাভাঙা শিস! ৩২ নম্বর এই বাড়ির সিঁড়িতে তুমি পড়ে…

  • আমলকী

    তুষার কবির   বৃষ্টির দোতারা বাজে – জলে ভেজা কিশোরী কদম ফুটে ওঠে মুগ্ধ দ্যোতনায়! রক্তহিজলের ঝাঁকে সুরের সরোদ বাজে – দুই পায়ে হেঁটে যায় অলীক ডাকপিয়ন – উড়ে যায় জমা চিঠি দূরের এক আমলকীবনে!   প্রেমের ক্বাসিদা বাজে ভুলে থাকা সান্ধ্যগানে – অশ্রম্ননদীর কিনারে – সেই সুরে ঘোরে এক কুমারী রাধিকা!   এসো, হারিয়ে…

  • জঙ্গলের গান

    তুষার কবির বিকেলের ঘুঘুডাক শুনে শুনে পৌঁছে যাই সেই সুরের তাঁবুতে। একটু আগেই দেখে এসেছি আমি ঝাপটানো ময়ূরীর ডানা – শুনে এসেছি ঘোড়ার খুরের ধ্বনি আর বনডাহুকির ডাক। কয়েকটি ডুমুরের দানা হাতের মুঠোয় নিয়ে আমি ঢুকে পড়ি সুনসান নিঝুম তাঁবুতে! একটু আগেই দেখে এসেছি আমি পোখরাজ সাপের বাঁকানো লেজ – শুনে এসেছি দোয়েলের সেরেনাদ আর…

  • এসরাজ

    তুষার কবির   ফেলে-দেয়া নোটবুক খুলে তুমি পেয়ে গেছ যত ভ্রম স্বরগ্রাম – বিকেলের ধূলিরেখা – আর চেরাই কাঠের সান্ধ্যগান।   মায়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছে দ্যাখো তোমার কোটর – নেমে যাচ্ছে ঠান্ডা জলস্রোত করোটির রেখাপথে ভেঙে যাচ্ছে কৌণিক প্রিজম – টুকরো টুকরো ক্রিস্টালের কণা।   এবার গানের খাতা খোলো; জমে থাকা ধূলি ঝেড়ে গোধূলির স্বরলিপি থেকে…

  • ডাক

    তুষার কবির   অরণ্যের গান শোনো; দূরগামী পাতার পয়ারে কে যেন বাজিয়ে যায় রাতচেরা সুরের বেহালা।   হেমমেত্মর তারবার্তা কাঁধে নিয়ে – ধূলিওড়া গোধূলির পথে – মুঠোভরা চিঠি হাতে হেঁটে যায় এক অলীক পিয়ন।   কড়ই পাতার মতো তিরতিরে হাওয়ায় দ্যাখো অপেরার ঘ্রাণ জাগে নদীতীরে – নীলকণ্ঠী ডাহুকির বুক চিরে জেগে ওঠে বিকেলের রাধাচূড়া –…

  • সমুদ্রসংগীত

    তুষার কবির সমুদ্রও মাঝে মাঝে গেয়ে ওঠে তার রাতচেরা সেরেনাদ – মাঝরাতে আরো শোনা যায় তার মার্মেইড স্বরে কান্না – দূর তাঁবু ও বাতিঘর থেকে উঠে আসে রিনরিনে সাইরেন – মাস্তুলের হাওয়ায় ভেসে আসে নৈঃশব্দ্যের ঘুমঘোর বীণা! ঝিনুকের বুকঝিম্ ঘুম আর প্রবালের দুঃখগাথা নিয়ে সমুদ্রও মাঝে মাঝে বলে ওঠে জলনূপুরের জমানো কিন্নরী – ফুঁসে ওঠা…

  • শীতঘুম

    তুষার কবির   শীতের কোরক খোলো – তোরঙ্গের নিচে আছে ওম আরো আছে খড়কুটো; দেশলাই জ্বেলে দাও রাতে কুঠুরির স্বর শোনো – বজরায় নিভে যায় মোম বাইজির ভাঁজ খোলে, জ্বলে ওঠে কুমুদ মৌতাতে।   পুরনো পিয়ন হাঁটে ধূলিখামে কিশোরীর ঘুম চিঠির গহিনে আছে অক্ষরের স্বাতিতারা স্বর – কিছুটা তোমার কথা আরো শোনো জলের মাতম তবে…

  • মর্মর

    তুষার কবির শীতঘুমে পাতা ঝরে; আরো ঝরে মর্মরের ধ্বনি – ভেজা কোরকের ঘ্রাণ ভাসে কৌমুদিনী স্বরে – বিকল পালক ওড়ে চারিদিকে – খড়ের গাদার পাশে শুয়ে থাকে শাদা কাকাতুয়া – কুয়াশার ক্যারাভানে চড়ে হারিয়ে ফেলেছে সে তার পীতাভ-পিঙ্গল ডেরা! তুমি চেয়েছিলে আজ শুধু কথা বলে যেতে – ভেতরের চাপা রাখা কথার বুদ্বুদ সব বের করে…