শেলী সেনগুপ্তা

  • লক্ষ্মীমনির ঠিকানাবদল

    লক্ষ্মীমনির ঠিকানাবদল

    ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। অজগরের মতো হেলেদুলে স্টেশন থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। পেটের মধ্যে পুরে নিয়েছে লক্ষ্মীমনিকে। নির্বিকার লক্ষ্মীমনির ভাবলেশহীন দৃষ্টি। তাকিয়ে আছে, বাগান নাকি খগেনমাঝি, কাকে দেখছে বোঝা গেল না। খগেনমাঝি চা-বাগানে রোজের শ্রমিক। সিলেটের সবচেয়ে বড় বাগানে কাজ করে। ওর পূর্বপুরুষরা বিহার থেকে এ-বাগানে এসেছিল। সেই থেকে এখানেই ওদের স্থিতি আর এখানেই শেষ। খগেনমাঝির…

  • স্বপ্নভুক পাখিরা

    উঠোনে ছড়িয়ে রেখেছি স্বপ্নের বীজধান, পাখি-মা কুড়িয়ে নিল অভুক্ত ছানার ক্ষুণ্নিবৃত্তির জন্য দূর থেকে দেখি স্বপ্ন খেয়ে বেঁচে আছে পাখিশিশু আমার স্বপ্নরা এখন পাখির পেটে একদিন বৃষ্টি কুড়োতে গিয়ে তুলে এনেছিলাম কিছু শিশিরবিন্দু জমিয়ে রেখেছি চোখের পাত্রে … সেদিন আমাকে বলেনি কেউ আকাশের কান্নার নাম শিশির                   হেমন্ত-বিরহে অবিরাম ঝরছে ঘুমহীন রাতে পাখির পেট থেকে…

  • আয়েশাপাগলির গর্ভফুল 

    আয়েশাপাগলির গর্ভফুল 

    স্কুলে যাওয়ার সময় দেখি আয়েশাপাগলি রাস্তার ড্রেনের পাশে বসে বমি করছে। পথযাত্রীরা যাওয়ার সময় বকে বকে যাচ্ছে। কেউ নাকে রুমাল চেপে চলে যাচ্ছে। আমরা কয়েক বান্ধবী একটু নিরাপদ দূরত্ব রেখে চলে গেলাম। আমার বয়স তখন বারো কী তেরো বছর। সেদিন স্কুল থেকে ফিরেই দেখি সবাই যেন কীসব বলাবলি করছে। জিজ্ঞেস করলে কেউ কিছু বলে না।…

  • ঠিকানা

    শেষ কবে আমি আমার ভেতর প্রবেশ করেছি মনে নেই, শীতের পাখিরা উড়তে উড়তে আমাদের শহরে এলে শিকারির নেশাতুর চোখের তাড়া খেয়ে মায়ের আঁচলে লুকিয়েছিলাম, প্রবেশ করিনি আমার ভেতর, প্রেমিক ভেবে একজনকে বাঁশি কিনে দিলাম আমার খুব কাছের বন্ধুটি বাঁশি শুনে দুলছে তিলক সাপুড়ের পোষা সাপিনীর মতো – সেদিনও মনে হয়নি নিজের ভেতরে ফেরার কথা, নদীভাঙনের…

  • উন্মূল মানুষের গল্প

    শেলী সেনগুপ্তা ‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে Ñ ’ শুনেই বড়বাবা বর্গী তাড়াতে গেলেন, বর্গীর সাথে তিনিও উৎপাটিত, ’৭১-এ আমাকে মায়ের কোলে রেখে বাবা স্বাধীনতা আনতে গেলেন, স্বাধীন দেশে ফিরে আসা বাবার ছিল অস্তিত্বের সংকট, সহোদর এখন পরবাসে লড়ছে নিজের পায়ে, শেকড়কাটা বৃক্ষের মতো ওর এখন মূল বলে কিছু নেই, আমার সন্তানও থাকেনি…

  • মূল্যবোধ

    শেলী সেনগুপ্তা   ভিজে যাচ্ছে অকালের বৃষ্টিতে জমানো 888sport sign up bonus, লুকানো ভালোবাসা, একান্নবর্তী ঘরগৃহস্থি, মাঝরাতের শীৎকার, জানালায় ঝুলে থাকা বিষণ্ণ বিকেল, লাল পেড়ে গরদ শাড়ি, জলে ভিজে জবজব!   কী আশ্চর্য! নুয়ে পড়া কলাপাতাটার নিচে দিব্যি দাঁড়িয়ে আছি দুর্ভেদ্য বৃষ্টির প্রাচীরঘেরা আমরা – কেউ দেখছে না, না বৃষ্টি, না দুর্মুখ প্রতিবেশী!   বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ভূখ–র…