সৈয়দ শামসুল হক

  • বালক, তুমি একদিন ॥ তৃতীয় পাঠ

    বালক, তুমি একদিন আমাদের কবি হবে, উড়ে যাবে কালের ফুৎকারে – আমি সেই শিরোনাম ছেপে দিচ্ছি আজকের মেঘাবৃত সংবাদপত্রে। দূরপ্রান্ত বালক, তোমাকে স্বাগত এবং শোকের ভেতরে টানটান আমি তোমার ওষ্ঠের ভেতরে উপস্থিত, তোমার অভিষেকে আমি উপস্থিত। এই ঝকঝকে দুরবিন, ওই প্রজ্বলিত নীলাঞ্চল, এই চোখ, ওই নক্ষত্র, এই বিকাশমান দিন, ওই অস্তমান বিস্তার, এ সকলই একদা…

  • বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে

    এই পৃথিবীতে আর আকাশ দেখিনি আমি এত অবনত – ঘুমন্ত শিশুর মুখে যেন চুমো খাবে পিতা নামিয়েছে মুখ; প্রান্তর এতটা বড় যেন মাতৃশরীরের ঘ্রাণলাগা শাড়ি; আদিকবি পয়ারের মতো অন্ত্যমিল নদী এত শান্তস্বর; এতই সজল মাটি কৃষকের পিঠ যেন ঘামে ভিজে আছে; যদিও বৃষ্টির কাল নয় তবু গাছ এত ধোয়ানো সবুজ; দেখিনি এমন করে পাখিদের কাছে…

  • নদী কারো নয়

    \ ২৭ \   মকবুল হোসেনের ঘুম ভেঙে যায়। রাত এখন কত? নির্ণয় তার নাই। কোথায় সে আছে তারও কোনো নির্ণয় নাই। প্রথমে সে মনে করে চাটগাঁয়ে বোধহয় আছে, সার্কিট হাউসের কামরায়, চাটগাঁয় সে এসেছে একটা 888sport live footballসভায় যোগ দিতে। পরমুহূর্তেই ঘোরটা ভেঙে যায় – এই চাটগাঁ থেকে ফিরেই তো সে বুয়ার কাছে জানতে পেয়েছিলো তার…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক ॥ ২৫ ॥ মানুষের মন এমন, ভেতরের সব শক্তি দিয়ে শূন্যের ভেতরে সত্য ছবি তৈরি করতে চায়, এমন ছবি যা হাত বাড়িয়ে ছোঁয়া যাবে। নদীর বুকে নৌকো। নৌকোয় পা রাখবেন দেবী। মানবীর ছদ্মবেশে দেবী আজ। এভাবেই দেবী দেখা দেন মানুষের কাছে। তার ভেজা পায়ের ছাপ পড়ে নৌকোর পাটাতনে। পাটাতন তো নয়, জীবন!…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক ॥ ২৪ ॥ চা আনতে কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমানের সমুখ থেকে উঠে যায় কুসমি। – আপনে বইসেন খানিক, চা নিয়া আসি। বিস্কুট কি দেমো? তিনি হাত নেড়ে অস্পষ্ট একটা ভঙ্গি করেন, যার অর্থ দিতেও পারো, নাও পারো। সাইদুর রহমানকে আজ গল্পে পেয়েছে। কুসমি তাঁর দিকে খানিক নজর ফেলে দেখে নেয়। মনে হয় অনেকক্ষণ…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক ॥ ২৩ ॥ আধকোশার জল বড় শীতল মনে হয় বালক মুকুলের, চোখেমুখে সে জলের ঝাপট মারে, তারপর আঁজলা ভরে পান করে, তার ভেতরটাও শীতল হয়ে যায়। ভোরে জলখাবার তার জোটে নাই, মা আজ হেঁসেলে প্রবেশ করে নাই; আধকোশার জল তাকে ক্ষুধার মুখে তৃপ্তি দেয়, সে উদ্গার তোলে। দূরে দাঁড়িয়ে আছে মইনুল হোসেন…

  • বালক, তুমি একদিন / দ্বিতীয় পাঠ

    বালক, তুমি একদিন কবি হবে, আমি সেই দিনের জন্যে শোক করছি। আমি এই ধনুক থেকে ছুড়ে দিচ্ছি তীর, নৌকো থেকে দিয়ে দিচ্ছি গতি, নদী থেকে জালের টানে তুলে ফেলছি মহাশোলের সিঁদুরপরা মুড়ো, আছড়ে ফেলছি তোমার তকতকে নিকোনো উঠোনে, বালক, এই শোক। অবিরাম তোমার কণ্ঠ থেকে এখন উচ্চারিত হচ্ছে যে শব্দসকল, আমি তার ভেতরে এখন পুরে…

  • বালক, তুমি একদিন

    দূরপ্রান্ত বালক, আমি স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি, একদিন কবি হবে তুমি। বাইচের নৌকোর টান তোমার শরীরে এখন তরতর করে উঠছে, বীজতলার সবুজ তোমার চুলে এখনই, তোমার শাপলা এখনি লাল, সরল স্বচ্ছ জল এখন নালার ওপর দিয়ে বহে যাচ্ছে, তুমি পা ডুবিয়ে, মাছের বা নক্ষত্রের ঝাঁক চঞ্চলতাই যেন এখন তোমার করোটিতে, গুঞ্জন করছে অরুণ পতাকা হাতে ভোর…