খুব কাছের সবাই সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে ‘মনজুরভাই’ বলতেন। আমি ‘র’টা বাদ দিয়েছিলাম। বলতাম ‘মনজুভাই’। কেন বলতাম তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। ব্যাখ্যা আবার একটু আছেও। বলতে ভালো লাগত। ওই নিয়ে তিনি কখনো কোনো কথা বলেননি। ফোন তুলে ‘মনজুভাই’ বললেই তিনি হাসিমুখে বলতেন, ‘বলো, মিলন।’ সত্তরতম জন্মদিন উপলক্ষে আমাকে নিয়ে একটি লেখা লিখেছেন। এত ভালোবেসে লেখা, ওরকম লেখা মনজুভাই ছাড়া আর কারো পক্ষে লেখা সম্ভব নয়। এতটাই আপ্লুত হলাম, ফোন করলাম তাঁকে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাইলাম। তিনি হেসে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলেন। বললেন, ‘শোনো, মিলন, তোমাকে বলি। আমার জীবনের সবচাইতে বড় সিদ্ধান্তটা আমি সঠিকভাবে নিতে পেরেছিলাম। শিক্ষকতার পেশা। এই পেশা কী যে আনন্দ দিয়েছে আমাকে, কী যে আনন্দ দিচ্ছে, বলে বোঝাতে পারব না। ছাত্রদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে, কথা বলতে শুরু করলে, মনে হয় আমি এক গভীর আনন্দের জগতে বিচরণ করছি। এই আনন্দের কোনো তুলনা হয় না।’
আহা, তাঁর সে-ই গভীর আনন্দের ভুবন ছেড়ে এভাবে চলে গেলেন তিনি! ভাবলেই মনে হয়, ক্লাসে ছাত্রদের সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে তাঁর সেই বিখ্যাত বাচনভঙ্গিতে, সরস ভাষায় নন্দনতত্ত্বের গভীর গভীরতর দিক নিয়ে কথা বলছিলেন। ক্লাসের সময় কখন শেষ হয়ে গেছে টের পাননি। মনে পড়তেই হাত তুলে ছাত্রদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। সেই ক্লাসরুমটিতে আর কখনোই তাঁর ফেরা হবে না, ভাবলেই বুকটা হু-হু করে ওঠে।
মনজুভাইয়ের সঙ্গে দেখা হতো কম। ফোনে কথা হতো প্রায়ই। ফোনে আন্তরিকতা যতটা প্রকাশ পায়, তার পুরোটাই অনুভব করতাম তাঁর কথায়। তবে দেখা হলেই আমরা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরতাম। তাঁর সেই উষ্ণ আলিঙ্গন, তাঁর সেই স্পর্শের মধ্য দিয়ে অনুভব করতাম, একজন বিশাল হৃদয়ের মানুষ গভীর ভালোবাসায় আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন। তাঁর সামনে দাঁড়ানোর পর, অনেকদিন আমার মনে হয়েছে, আমি যেন দাঁড়িয়ে আছি বিশাল এক মহিরুহের সামনে। অথবা এক পর্বতের সামনে। অথবা এক বাতিঘরের সামনে। মহীরুহ তার শীতল ছায়ায় আমাকে স্নিগ্ধ করছে। পর্বত বুঝিয়ে দিচ্ছে তার উচ্চতা। আর বাতিঘরের আলোয় আমি পথ দেখতে পাচ্ছি। যেন বিশাল সমুদ্রে ভাসতে থাকা আমাকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে সেই বাতিঘর।
আমার কাছে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মানে এরকম এক ব্যক্তিত্ব। এরকম এক কিংবদন্তি। শিক্ষক হিসেবে তাঁর তুলনা তিনি নিজে। ছাত্রদের ভালোবাসায় সবসময়ই তিনি ছিলেন মাথার ওপর। অসীম জ্ঞানের অধিকারী। যেমন শিক্ষক হিসেবে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব, তেমনি লেখক হিসেবেও তা-ই। আর তাঁর পড়াশোনা অতুলনীয়। বিশ্ব888sport live footballটা ছিল তাঁর নখদর্পণে। এই মুহূর্তে পৃথিবীর কোথায় কী লেখা হচ্ছে, মনজুভাইয়ের মতো সেই খবর-জানা মানুষ আমি আর দেখিনি। 888sport appsে এই মুহূর্তে কোন তরুণ অথবা তরুণতর মেধাবী লেখকটি কী লিখছেন সেই খবরও তাঁর জানা ছিল। ভালো লেখার প্রশংসা প্রাণ খুলে করতেন। 888sport live football 888sport app download bdের বিচারক থাকতেন অনেক জায়গায়। দুয়েক জায়গায় আমিও তাঁর সঙ্গী হয়েছি। তখন লক্ষ করেছি, কতটা মন দিয়ে একেকটা বই তিনি পড়েছেন। সেই বই নিয়ে অসামান্য মতামত ব্যক্ত করেছেন। ফাঁকিঝুঁকি জিনিসটা সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের চরিত্রে ছিল না।
কত দিনকার কত 888sport sign up bonus মনে আসে। হুমায়ূন আহমেদের দখিন হাওয়ার ফ্ল্যাটে নিয়মিতই আড্ডা দিতাম আমরা। মনজুভাই মাঝেমধ্যে আসতেন। হুমায়ূনভাই খুব ভালোবাসতেন তাঁকে। আর তাঁকে না ভালোবেসে তো থাকা যায় না! নিজের অজান্তেই তিনি সকলের ভালোবাসা আদায় করে নিতেন। হুমায়ূনভাই নিজে খুব রসিক মানুষ ছিলেন। মনজুভাই নিজেও তা-ই। হাসি-আনন্দ আর রসিকতায় আমাদের সেই সন্ধ্যা বা রাতগুলো অনন্য হয়ে যেত। সেই আড্ডায় অবধারিতভাবে থাকতেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। হুমায়ূনভাইয়ের পাশের ফ্ল্যাটেই তিনি থাকেন। মনজুভাইয়ের প্রতি আলাদা এক টান ছিল মাজহারের। সেই টান যে কী গভীর ছিল, লিখে বোঝানো যাবে না। মনজুভাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর প্রথমেই ছুটে গিয়েছিলেন মাজহার। শেষদিনের শেষ মুহূর্তটি পর্যন্ত তিনি ছিলেন মনজুভাইয়ের পাশে। হুমায়ূনভাইয়ের ক্ষেত্রেও মাজহার তা-ই করেছিলেন। মাজহারের ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই। ভালোবাসার মানুষটির জন্য তিনি সব করতে পারেন।
মনজুভাইও খুব ভালোবাসতেন মাজহারকে। একটি দিনের কথা মনে আছে। বিকেলবেলা কোথায় যেন দেখা হলো আমাদের। সম্ভবত মাজহারের অফিসে। বোধহয় ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ 888sport live football 888sport app download bd’ সংক্রান্ত কোনো মিটিং ছিল। ওটা শেষ করে 888sport app ক্লাবে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ আড্ডা দিলাম আমরা। সেরকম আনন্দময় সন্ধ্যা এই জীবনে আর কখনো ফিরে আসবে না।
তখনো মনজুভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়নি। দৈনিক সংবাদ-এর 888sport live football সাময়িকী পাতাটি ছিল খুব প্রিয়। সেখানে নিয়মিত পড়তাম সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের কলাম ‘অলস দিনের হাওয়া’। সমসাময়িককালের বিশ্ব888sport live football নিয়ে লেখা ‘অলস দিনের হাওয়া’ ছিল অসামান্য। ওই লেখার জন্য আমরা অপেক্ষা করতাম। পৃথিবীর কত কত লেখক আর তাঁদের বইয়ের কথা যে জেনেছিলাম ‘অলস দিনের হাওয়া’ পড়ে।
কলকাতার লেখকরা 888sport appsের লেখকদের তেমন খোঁজখবর রাখেন না। মনে আছে, বিশ-পঁচিশ বছর আগে কলকাতায় গিয়েছি। আদি নিবাস বিক্রমপুরে – এমন একজন লেখকের সঙ্গে পরিচয় হলো। তাঁর নাম প্রফুল্ল রায়। বিক্রমপুরের রাজদিয়া গ্রামের লোক। তাঁর বিখ্যাত বই কেয়াপাতার নৌকো। দেশভাগের পটভূমিতে লেখা। অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক। তাঁর কাহিনি নিয়ে অনেক সিনেমা হয়েছে। যেমন, এখানে পিঞ্জর। এই সিনেমাটিতে অভিনয় করেছিলেন অপর্ণা সেন। আর তাঁর ‘চরাচর’ গল্পটি live chat 888sportায়ন করেছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। পরিচয়ের মুহূর্তেই প্রফুল্ল রায় আমাকে বললেন, ‘তোমাদের দেশের সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম খুব ভালো গল্প লেখেন। তোমার সঙ্গে নিশ্চয় তাঁর পরিচয় আছে। দেখা হলেই তাঁকে আমার শুভেচ্ছা জানাবে। বলবে, কলকাতায় তাঁর একজন বড় ভক্ত আছে।’
888sport appয় র্ফিরে মনজুভাইকে কথাটা আমি বলেছিলাম। শুনে তিনি হাসলেন। ‘প্রফুল্লবাবু আমাকে একবার চিঠি লিখেছিলেন। ভদ্রলোক খুবই বিনয়ী।’ শুধু ওটুকুই। তারপরই কথা ঘুরে গিয়েছিল অন্যদিকে। নিজের প্রশংসা শুনে কখনো তিনি কাতর হতেন না। বরং লাজুক হতেন, প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতেন।
একবার মাজহার অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত তাঁর কয়লাতলা ও 888sport app গল্প বইটির প্রকাশনা উৎসব করলেন। তিনি ওসব ব্যাপারে কখনোই আগ্রহী হতেন না। তবু মাজহার তাঁকে রাজি করালেন। জাতীয় জাদুঘরের হলটিতে অনুষ্ঠান হচ্ছে। মঞ্চে মাথা নিচু করে বসে আছেন তিনি। আমি বসে আছি পাশে। বুঝতে পারছিলাম মনজুভাই খুবই লজ্জা পাচ্ছেন। ভাবি ছিলেন দর্শকসারিতে। একজন আলোচক তাঁর গল্প নিয়ে আলোচনা করছেন। গল্পটি আমারও পড়া। আলোচনা শুনতে শুনতে আমি মনজুভাইয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, ‘ও আপনার গল্পটি বোঝেনি। না বুঝেই আলোচনা করছে।’ তিনি আমার সঙ্গে একমত হলেন। আবার আমাকে সাবধানও করলেন। ‘খবরদার এ নিয়ে কথা বোলো না। বেচারা লজ্জা পাবে।’
এই ছিলেন মনজুভাই। মানুষকে দুঃখ দিতেন না। লজ্জা তো নয়ই। যা ভালো না লাগত, ওই নিয়ে কথা বলতেন না। চুপ করে থাকতেন অথবা কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতেন।
লেখক হিসেবে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম একেবারেই অন্যরকম। অন্য কারো সঙ্গেই তাঁর লেখা মেলে না। বেশ সাদামাটা মেদহীন গদ্য লিখতেন। তবে তাঁর গদ্যভাষার অপূর্ব সৌন্দর্য ছড়িয়ে থাকত গল্পের ভেতর। আপাতদৃষ্টিতে সহজ-সরল সাধারণ জীবনের গল্প লিখতেন। কিন্তু গভীরমনস্ক পাঠক তাঁর লেখার ভেতর থেকে উদ্ধার করেন অন্য এক তাৎপর্য। উত্তরাধুনিকতার বিস্তার তাঁর গল্পের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এক্ষেত্রে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম একক কৃতিত্বের অধিকারী। তাঁর গল্প শুধু তাঁরই গল্প। ওরকম গল্প অন্য কারো পক্ষে লেখা সম্ভব নয়। তাঁর প্রায় সব গল্পই আমি পড়েছি। ‘থাকা না থাকার গল্প’, ‘কাচভাঙা রাতের গল্প’, ‘অন্ধকার ও আলো দেখার গল্প’, ‘প্রেম ও প্রার্থনার গল্প’, ‘সুখ দুঃখের গল্প’, ‘বেলা অবেলার গল্প’। কয়েকটি 888sport alternative link লিখেছেন। আধখানা মানুষ, দিনরাত্রিগুলি, আজগুবি রাত, তিন পর্বের জীবন, কানাগলির মানুষেরা। ব্রাত্য রাইসুর সঙ্গে যৌথভাবে লিখেছিলেন যোগাযোগের গভীর সমস্যা নিয়ে কয়েকজন একা একা লোক। তাঁর প্রতিটি লেখাই আমাকে মুগ্ধ করেছে। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর নন্দনতত্ত্ব বইটি। 888sport live লিখেছেন অনেক। অত্যন্ত চিন্তাশীল ও ভাবনার উদ্রেক করা সেইসব 888sport live। 888sport live chatী সুবীর চৌধুরীর সহযোগে রবীন্দ্রনাথের জ্যামিতি ও 888sport app 888sport live chat প্রসঙ্গ তাঁর আরেকটি অসামান্য গ্রন্থ। 888sport app download apk latest version করেছেন বিশ্ব888sport live footballের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রচনা। সমসাময়িককালের লেখকদের গল্প, 888sport app download apk 888sport alternative link, জীবনী আর 888sport liveের আলোচনা করেছেন। চিত্রকলার আলোচনায় তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। মোট কথা ৭৪ বছরের জীবনে নিজের 888sport live chatদক্ষতায় সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম কিংবদন্তি হয়ে গেছেন।
আমার নূরজাহান 888sport alternative linkটি তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছিলেন। দীর্ঘ 888sport live লিখেছিলেন নূরজাহান নিয়ে। সাড়ে বারোশো পৃষ্ঠার 888sport alternative link মনজুভাইয়ের মতো ব্যস্ত মানুষ ওরকম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে পারেন – এ আমার ধারণায় ছিল না। কিন্তু তাঁর 888sport liveটি পড়ে অনুভব করলাম, সত্যি তিনি তিন পর্বের 888sport alternative linkটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছেন। না পড়লে ওরকম লেখা সম্ভব নয়।
মনজুভাইয়ের মধ্যে কোনো ফাঁকিঝুঁকি ছিল না। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আঠারো ঘণ্টাই কাজের মধ্যে থাকতেন। পরিমিতি বোধ ছিল অসামান্য। নিজের ইচ্ছের বাইরে কিছুই করতেন না। যা করতেন ভালোবেসে করতেন। সানজিদা ভাবি অসুস্থ দীর্ঘদিন ধরে। প্রায়ই মনজুভাই তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতেন। সকালবেলা ভাবিকে নাশতা করিয়ে ওষুধ খাইয়ে কাজে আসতেন। অতি ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁর দুপুরের ওষুধের কথা মনে করিয়ে দিতেন। বাইরে বেশি রাত করতেন না। আটটার মধ্যে বাড়ি ফিরে ভাবিকে সময় দিতেন। কোনো দায়িত্বে অবহেলা করা মনজুভাইয়ের চরিত্রে ছিল না। তাঁকে নিয়ে ভাবলে আমার শুধু একটা কথাই মনে হয়, সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন একজন সম্পূর্ণ মানুষ। পরিপূর্ণ মানুষ। তাঁর চলে যাওয়া মানে আমাদের 888sport live chat-888sport live footballের অঙ্গন অনেকটাই শূন্য হয়ে যাওয়া। বিশাল বৃক্ষ কাটা পড়লে যেমন শূন্য হয় অনেকটা জায়গা, মনজুভাইয়ের প্রয়াণে তেমন শূন্য হলো আমাদের ভুবন। হৃদয়জুড়ে থাকা এরকম ভালোবাসার মানুষটির বিদায় আমৃত্যু ব্যথিত করবে আমার মতো অনেককে। তাঁর কথা ভেবে হু-হু করবে বুক। আমাদের আনন্দময় সন্ধ্যাগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠবে।
কোনো কোনো বেদনা এক জীবনে কাটানো যায় না। মনজুভাইয়ের চলে যাওয়া তেমন এক বেদনা। আমার এই জীবনে এই বেদনা আমি কখনো কাটাতে পারব না। মনজুভাই, চোখের জলে তোমাকে বিদায় জানালাম।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.