পাঁচ

কী যে সুন্দর একটা ছেলেবেলা ছিল আমার! মেদিনী মণ্ডল গ্রাম, মাওয়ার বাজার, কালীরখিলের মাঠ, মনীন্দ্র ঠাকুর, হাজামবাড়ি আর কাজির পাগলা হাইস্কুল।

আমার কখনও প্রাইমারি স্কুলে পড়া হয়নি। যদিও খাইগ বাড়িতে প্রাইমারি স্কুল একটা ছিল, গ্রামের অনেকের সঙ্গে আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়েরা সেখানে পড়ত, কিন্তু আমার পড়া হয়নি। বাষট্টি সালে আব্বা আমাকে কাজির পাগলা হাইস্কুলে ভর্তি করে দিলেন, সরাসরি ক্লাশ টুতে। তখন আমার সাড়ে ছয় বছর বয়স। লেখাপড়ায় আমি কিছুটা ভালো ছিলাম। টু থেকে থ্রিতে উঠলাম সেকেন্ড হয়ে। ফার্স্ট হলো গোয়ালীমান্দ্রা হাটের লাগোয়া খালের পশ্চিম পাশের বেদেবাড়ির একটা ছেলে। তার নাম এখন আর আমার মনে নেই। কালোপানা রোগা পটকা ঢ্যাঙা ধরনের ছেলেটি। ক্লাশের ছেলেরা তাকে বলত ‘বাইদ্যাবাড়ির পোলা’।

কাজির পাগলা হাইস্কুলে আমি পড়েছি ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত। বাষট্টি থেকে পঁয়ষট্টি সাল, চার বছর। এই চার বছরের জীবনে ওই ছেলেটি ছিল আমার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী। কখনও সে ফার্স্ট হয়, কখনও আমি। ফলে তার সঙ্গে বন্ধুত্বটা আমার আর হয়নি। বন্ধুত্ব হয়েছিল মোশারফের সঙ্গে, বাতেনের সঙ্গে। ক্লাশ থ্রিতে পড়ার সময় বন্ধুত্ব হলো নুহর সঙ্গে। নুহর ভালো নাম মাহবুব। ফোরে পড়ার সময় এক ক্লাশ নিচের, থ্রিতে পড়া মফির সঙ্গে। মফির বড়ভাই শফি, আমি ডাকতাম শফিদা, শফিদা ছিল আমার বড়ভাই আজাদের বন্ধু। আমার চে’ দু-ক্লাশ উপরে পড়ত তারা।

বিক্রমপুর অঞ্চলে বড়ভাইকে দাদা বলার নিয়ম। দাদা শব্দটা পুরো উচ্চারণ না করে আমরা করতাম দা।

একটা মেয়েও পড়ত আমাদের সঙ্গে, হেনা। বাতেনের বড়বোন। বাড়ি মৌছামান্দ্রা। হেনা দেখতে খুব সুন্দর ছিল। সুযোগ পেলেই আড়চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে আমি হেনাকে দেখতাম। ব্যাপারটা হেনা বুঝত কি-না কে জানে, আমাকে সে তেমন পাত্তা দিত না। সুন্দরী মেয়েরা ছোটবেলা থেকেই অহংকারী হয়, হেনাও বোধহয় তেমন অহংকারী ছিল। তবে একদিন টিফিনের সময় লাল রঙের মুড়লিভাজা খাচ্ছিল হেনা, আমি তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে, হেনা ভাবল আমি বুঝি মুড়লির লোভে তাকিয়েছি, মিষ্টি করে হেসে বলল, খাইবা?

মনে আছে, আমার হাতে কয়েকটা মুড়লিভাজা দিয়েছিল হেনা। জীবনে সেই প্রথম আমার ধন্য হওয়া।

ওই অতটুকু বয়সের 888sport sign up bonus, ভাবলে আশ্চর্য এক রোমাঞ্চে এখনও গা কাটা দিয়ে ওঠে। জীবনে প্রথম দেখা সুন্দর মেয়ে হেনা।

888sport appয় চলে আসার পরও বাতেন-হেনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। গেণ্ডারিয়ার একই এলাকায় থাকতাম আমরা। ধুপখোলা মাঠের পশ্চিম পাশের গলিতে, ডিস্টিলারি রোড। ওদের বাসা ছিল রাস্তার ওপর। আমরা থাকতাম গলির উত্তর দিককার একটু ভেতর দিকে। সেই জায়গাটার আবার একটা ডাকনাম ছিল, মুরগিটোলা। আমি পড়তাম গেণ্ডারিয়া হাইস্কুলে, বাতেন কে.এল. জুবিলি স্কুল। হেনা পড়ত মনিজা রহমান গার্লস স্কুলে, আমার বড়বোন মণির সঙ্গে। বাতেন-হেনা যেমন এক ক্লাশে পড়ত আমি আর মণিও ছিলাম তেমন।

কিন্তু 888sport appয় আসার পর বাতেন-হেনার সঙ্গে তেমন বন্ধুত্ব আমার আর ছিল না। কেন, কে জানে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে হেনাকে কখনও কখনও দেখি। সে বড় হয়েছে, আরো সুন্দর হয়েছে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বড় হয় তাড়াতাড়ি। হেনাকে তখন আমার চে’ বড় লাগে। নিজের বয়সী ছেলের দিকে তাকাবার সময়ও হেনার বুঝি তখন আর নেই। আমি নিতান্তই ওর বান্ধবীর ছোটভাই।

বিকেলবেলা বাতেনের সঙ্গে দেখা হয় ধুপখোলা মাঠে। আমরা দুজন পাড়ার দু ক্লাবের মেম্বার। যে যার দল নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ফুটবল-ক্রিকেট সবই ভালো খেলে বাতেন, আমি একেবারেই পারি না। তবু খেলতে যাই। ফুটবলের পিছু সারামাঠ ছুটোছুটি করি। হয়তো সারা বিকেলের খেলায় একবার দুবারও বলে পা ছোঁয়াবার সুযোগ পাই না।

একদিনকার কথা পরিষ্কার মনে আছে। অন্য মহল্লার সঙ্গে ম্যাচ। প্লেয়ার শর্ট পড়েছে দেখে আমাকেও নিয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, দেড়ঘণ্টার ম্যাচে একবারও বলে পা ছোঁয়াবার সুযোগই পেলাম না আমি। আমার পায়ের কাছে বল আসবার আগেই কেউ-না-কেউ ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। দেড়টা ঘণ্টা বেকুবের মতো মাঠে ছুটোছুটি করলাম আমি। খেলা শেষ হওয়ার পর ভারি অপমানবোধ করেছিলাম। না, ফুটবলটা আমার হবে না।

ক্রিকেটেও এরকম একটা 888sport sign up bonus আছে আমার। সেটা ধুপখোলা মাঠে না, বিক্রমপুরের হলদিয়া স্কুলের মাঠে। আমি বেড়াতে গিয়েছিলাম নুহদের বাড়ি। কোন বছরের কথা ঠিক মনে নেই। তখন কি 888sport appয় চলে এসেছি না কাজির পাগলা স্কুলেই পড়ি, তাও মনে নেই। নুহদের বাড়ি গেছি বিকেলবেলা। নুহ আর ফিরতে দিল না। রাতে থেকে গেলাম। পরদিন সকালেও দেখি নুহ আমাকে ছাড়ে না। শুনলাম হলদিয়া স্কুলের মাঠে ক্রিকেট ম্যাচ। আমাকে খেলতে হবে। খেলা শেষ করে দুপুরে খেয়ে তারপর যেতে হবে। নানারকমভাবে বোঝাবার চেষ্টা করলাম, বুজিকে বলে আসিনি। বুজি চিন্তা করবে।

বুজি মানে নানি। আমি আর আমার বড়ভাই থাকতাম বুজির কাছে। কখনও কখনও মণিও থাকত। মা-বাবা 888sport app ভাইবোন নিয়ে 888sport appয়। স্কুল ছুটিছাটার দিনে কখনও কখনও 888sport appয় গিয়েও থাকতাম আমরা। জিন্দাবাহার থার্ড লেনে বড়সড় একরুমের একটা বাসা ছিল আমাদের। ওই একরুমে এতগুলো মানুষ। তখন আটটি ভাইবোন আমরা। পরে আরো তিনজন হয়। পাঁচ ভাই, ছয় বোন। একটি ভাই আঠারো দিন বয়সে মারা যায়। সে জন্মেছিল ওই জিন্দাবাহারের বাসায়।

আর ছিল পুনুআম্মা। মার ছোটবোন। আমাদের খালা, কিন্তু আমরা ডাকতাম আম্মা, পুনুআম্মা। বয়সকালে বিয়ে হয়েছিল তাঁর, একটি মেয়েও হয়। রিনা। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে সংসার করা তাঁর হয়নি। জীবন কাটালেন আমাদের সঙ্গে।

বাবা চাকরি করতেন মিউনিসিপ্যালিটিতে। কেরানির চাকরি। জিন্দাবাহারের সেই বারোয়ারি বাড়ির 888sport app ভাড়াটেরা বাবাকে ডাকত কেরানিসাব। আমরা ডাকতাম আব্বা। মাকে মা, বাবাকে আব্বা। নিয়মমতো মা আম্মা হলে বাবা হয় আব্বা। কিন্তু আমরা মাকে মা-ই ডাকতাম, পুনুখালাকে ডাকতাম আম্মা।

কিন্তু ওইটুকু চাকরিতে এতগুলো মানুষের ভরণপোষণ! আব্বা মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে যেতেন। সবাইকে পাঠিয়ে দিতেন গ্রামে। মেদিনী মণ্ডলের বাড়িটি আসলে আমার নানাবাড়ি। আমাদের নিজস্ব গ্রামের নাম ‘পয়শা’। সেই গ্রামে আব্বার আত্মীয়স্বজনরা আছে। সৎমা, দুই সৎভাই আর এক বোন আছে। ক্ষেত-খোলার ধানপানে ভালোই চলে তাদের। কিন্তু আব্বার নিজস্ব জমিজমা, বাড়িঘরের অংশ কিছুই নেই। সবই বিক্রিবাটা করে ফেলেছেন তিনি। বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই হয়েছেন। এদিকে আমার কোনো আপন মামা নেই। আব্বা গেছেন বুজির ছেলে হয়ে। বুজি তাঁকে ডাকতেন ‘খোকার বাপ’ বলে।

পয়শা গ্রামে কিছুই ছিল না আমাদের, তবু বছর দুবছরে এক দুবার যাওয়া হতো। আব্বার সৎভাই ফজল আর হাপি, আমরা ডাকতাম ফজলকাকা হাপিকাকা। এই দুজন মানুষের জন্য অপরিসীম টান ছিল আমার। তাঁরা দুজনও খুব ভালোবাসতেন আমাকে। জিন্দাবাহারের বাসায় তাঁরা দুজনও এসে থাকতেন মাঝে মাঝে। একরুমের ঢালাও বিছানায় গাদাগাদি করে শুয়ে থাকতাম আমরা।

ফজলকাকা খুব ভালো গান গাইতেন। হেমন্তের সেই গান!

‘ছেলেবেলার গল্প শোনার দিনগুলি

 এখন কতো দূরে

আর আসে না রাজার কুমার পঙ্খিরাজে উড়ে’

ভারি সুন্দর করে গাইতেন ফজলকাকা। তাঁর কাছ থেকেই বোধহয় গানের একটা গলা আমি পেয়েছিলাম। ছেলেবেলায় গানের প্রতি বেজায় একটা টান জন্মেছিল আমার। যে গান শুনতাম সেটাই গাইবার চেষ্টা করতাম।

গানের কথা পরে, আগে সেই ক্রিকেট খেলার কথা বলি।

 তো নুহ কিছুতেই আমাকে ছাড়বে না। বুজির কথা বলে পাত্তা পেলাম না বলে আমি যে ক্রিকেট একদমই খেলতে পারি না তাও বললাম, অর্থাৎ নানারকমভাবে পিছলাবার চেষ্টা, কিন্তু কাজ হলো না। রাতটা নুহদের বাড়ি থেকে পরদিন সকালে হলদিয়া স্কুলের মাঠে গেলাম খেলতে।

এখানে ছেলেবেলায় খেলা আমাদের এক অদ্ভুত ক্রিকেটের কথা বলা উচিত। সেসব নুহদের ওই খেলার বেশ অনেকদিন আগের ঘটনা। আমার মায়ের মেজো চাচার প্রথমপক্ষের ছেলে হাফেজ মামা ছিলেন কাঠমিস্তিরি। এরকম বাড়ির ছেলে হয়ে, যার বাপ ছিল জাহাজের সারেং সে কী করে কাঠমিস্তিরি হয় সেসব অনেক কথা। পরে বলা যাবে। তো হাফেজ মামা একবারের শীতকালে বাড়ির পোলাপানদের একটা ব্যাট বানিয়ে দিলেন। সেটা দেখতে ব্যাটের প্রায় কাছাকাছি হলেও আসলে হয়েছিল নৌকার ছোটখাট একখানা বইঠা। ওই জিনিস পেয়েই যে কী আনন্দ আমাদের, কী-যে আহ্লাদ। পুনুআম্মা ত্যানা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে আজদাহা একখানা সুচ দিয়ে সেলাই করে করে ক্রিকেটের বলও একটা বানিয়ে দিলেন। বউন্না গাছের চারখানা চিকন চিকন ডাল কেটে জাহাঙ্গির কিংবা আলমগীর মামা চারটা উইকেট বানালো। যেখানে দাঁড়িয়ে ব্যাট করা হবে সেখানে থাকবে তিনটা উইকেট আর তার উলটোদিকে একটা। সমেদ খাঁ নানার বাড়ির পশ্চিম দিককার মাঠে দুপুরের পর থেকেই খেলতে শুরু করতাম আমরা। আমাদের বাড়ির একদঙ্গল ছেলে। আমাদের ঘর থেকে আমি আর আমার বড়ভাই, মেজোনানার ঘর থেকে জাহাঙ্গির আর আলমগীর মামা। ছোটনানার ঘর থেকে মোতালেব আর তালেব মামা, হাফেজ মামার ছেলে মিণ্টু। মিণ্টুর বড় দুভাই ছানা আর সেন্টু তখন পাচ্চর না ঠাকুরগাঁও কোথায় যেন পেটেভাতে দর্জিকাজ শেখে, বাকি ঘটনাটা আরো আগে ঠিক মনে করতে পারছি না। ছানা-সেন্টুদাও আমাদের খেলার সঙ্গী ছিল কি-না ভুলে গেছি।

যাহোক সেই ক্রিকেটের নিয়ম ছিল বড় অদ্ভুত। উইকেটে বল লাগাতে পারলে আউট তো বটেই, ব্যাটসম্যানের বাঁ পায়ে লাগাতে পারলেও আউট। এলবিডব্লিউ ব্যাপারটা আমরা জানতামই না। ফলে আমাদের বোলিংয়ের কায়দাটাই ছিল আলাদা, একদম টার্গেট প্রাকটিসের মতো, কী করে ব্যাটসম্যানের বাঁ পায়ে বলটা লাগানো যায়। এ-কারণে ধামধাম আউট হয়ে যেত ব্যাটসম্যানরা। আমরা আনন্দে ফেটে পড়তাম।

আমাদের সেই খেলায় বাউন্ডারির হিসাবটাও ছিল অদ্ভুত। বল সীমানা পেরিয়ে যাওয়া মানেই ছক্কা, উড়ে গেল না গড়িয়ে গেল কে দেখে। চার রানের বালাইটা ছিলই না।

এই ক্রিকেট-প্রতিভা নিয়ে আমি গেছি নুহদের হয়ে খেলতে। লজ্জায় কাউকে বলতেও পারি না যে ক্রিকেটের ‘ক’ও আমি জানি না।

দুরু দুরু বক্ষে খেলতে নামলাম। প্রথম বলটা চোখ বুঁজে পেটাবার চেষ্টা করলাম, ব্যাট আমার বল ছুঁতেই পারল না। সেকেন্ড বলেও আগের মতোই ব্যাট চালালাম। এবার লাগল। পাগলের মতো দৌড়ে দুটো রান নিলাম।

কিন্তু তৃতীয় বলে কোনও কাজই হলো না। আমার পেছনে দাঁড়ানো উইকেটগুলো মিসমার হয়ে গেল। বোল্ড।

জীবনে সেই আমার শেষ ক্রিকেট খেলা।

তবে একটা খেলা আমি মোটামুটি ভালো খেলতাম, ব্যাডমিন্টন। গেণ্ডারিয়া স্কুলে পড়ার সময় আমি মুকুল বজলু সুষেণ উপেন মানবেন্দ্র মানে খোকন শীতকালে খোকনদের বাড়িতে সারাটা বিকেলজুড়ে ব্যাডমিন্টন খেলতাম। কখনও কখনও পোস্তগোলা থেকে মোহাম্মদ আলী, ডাকনাম বুলু, সে-ও খেলতে আসত। কাঠের পুলের ওপার, কলুটোলা থেকে আসত বেলাল।

আমাদের ভুবন তখন দিন দিন বড় হচ্ছিল। প্রিয় বন্ধুর 888sport free bet বেড়ে যাচ্ছিল।

বালকবেলার বহু বহু বছর পর বাতেনের সঙ্গে একদিন দেখা হলো ভিকারুননিসা নূন স্কুলে। ওর মেয়ে অ্যাডমিশান টেস্ট দিতে এসেছে। আমার দু-মেয়েই ভিকারুননিসায় পড়ে। সেবার আমার বন্ধু স্বপন দত্তের মেয়ে এথা গেছে অ্যাডমিশান টেস্ট দিতে। স্বপনের সঙ্গে আমিও গেছি, দেখি গার্জিয়ানদের ভিড়ে বাতেন দাঁড়িয়ে আছে। অনেকক্ষণ কথা বললাম দুজনে। বেশ কিছু বছর খুলনায় ছিল বাতেন, তারপর 888sport appয় ফিরে ইসলামপুরে কাপড়ের বিজনেস করছে। বেশ মোটা হয়েছে বাতেন, চালচলনে ভারিক্কি এবং টাকাঅলা মানুষের ভাব। আশ্চর্য ব্যাপার, বাতেন আমাকে তুমি তুমি করে বলছিল। সময়ের দূরত্বে আমরা দুজন যেন অনেক দূরের মানুষ হয়ে গেছি।

কিন্তু হেনার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর ব্যাপারটা হয়েছিল ঠিক উলটো। দেখা হয়েছিল পূর্বাণী হোটেলে, অভিনেতা আবদুল কাদেরের বিয়েতে। কাদের ভাই বিয়ে করলেন মধ্যবয়সে। তাঁর জগতের অনেকের সঙ্গে আমিও গিয়েছি বিয়েতে। কাদের ভাই তাঁর কলিগদের সঙ্গে, কলিগদের স্ত্রীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। সেই স্ত্রীদের মধ্যকার একজন হেনা। সে আমাকে চিনতে পেরেছিল, আমি পারিনি। কিন্তু আমাকে দেখে এবং পেয়ে এমন উচ্ছ্বসিত হলো হেনা, বেশ গৌরব করে ওর স্বামীর সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিল। ছেলেবেলায় যার সঙ্গে কখনওই তেমন কথা বলা হয়নি, কত কথা যে সেদিন তার সঙ্গে হলো। সেই ছেলেবেলার কথা, কাজির পাগলা স্কুলের মধুময় দিনগুলোর কথা। হেনার বড়মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, হেনা নানি হয়ে গেছে। আমাদের দুজনেরই চুলে পাক ধরেছে, কিন্তু যতটা সময় আমরা দুজন গল্প করলাম, মনেই হলো না আমাদের বয়স বেড়েছে, আমরা যেন সেই ছেলেবেলাতেই আছি। আমরা যেন এখনও কাজির পাগলা স্কুলেরই ছাত্রছাত্রী। হাতের মুঠোতে মুড়লিভাজা নিয়ে এখনই যেন হেনা আমাকে বলবে, খাইবা!

নুহর সঙ্গে একদিন আচমকাই দেখা হলো মতিঝিল থানার উলটোদিককার গলির মুখে। আনমনা ভঙ্গিতে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে নুহ। পোশাক-আশাক বরাবরের মতোই ধোপদুরস্ত, ফর্সা সুন্দর আর কটা চোখের চেহারা এখনও সমান আকর্ষণীয়, বয়স যেন বাড়েইনি নুহর। গাড়ি থামিয়ে ডাকলাম, নুহ হাসিমুখে আমার পাশে উঠে বসল। আমি জানি নুহ চিটাগাংয়ে সেটেল করেছে। কয়েক বছর আগে চিটাগাংয়ে ওর সঙ্গে দেখাও হয়েছিল, বড় মেয়েটি ছিল সঙ্গে। বাবার সঙ্গে মেয়ে যাচ্ছিল বুয়েটে অ্যাডমিশান টেস্ট দিতে। সেই মেয়ের নাকি বিয়ে হয়ে গেছে, নুহ নানাও হয়ে গেছে। গাড়িতে বসে নুহ সারাক্ষণ শুধু নাতির গল্পই করল। এতবছর পর যে দুবন্ধুর এভাবে দেখা হলো ওই নিয়ে নুহর যেন কোনও আগ্রহই নেই। অথচ কাজির পাগলা স্কুলের জীবনে আমি আর নুহ শুধু অপেক্ষায় থাকতাম কখন টিফিন হবে, কখন আমরা দুজন দুজনার গলায় হাত দিয়ে কিংবা হাত ধরাধরি করে কাজির পাগলা বাজার আর নয়তো স্কুলের মাঠে ঘুরে বেড়াবো, মন ভরে গল্প করব। ছুটির সময় দুজনেরই চোখ ছলছল করত, একটা রাত আর পরের দিনের সকালবেলাটা দুজন দুজনকে ছেড়ে কেমন করে থাকব!

তখনকার দিনে স্কুল বন্ধ থাকত রোববার। শনিবারে হাফস্কুল। তার মানে পুরো দেড়টা দিন নুহকে ছেড়ে থাকা! আমাদের দুজনেরই খুব কান্না পেত, বুকের ভেতর উথালপাথাল কষ্ট।

নুহদের বাড়ি শিমুলিয়া। ছুটির পর বড়ভাই আর গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে নুহ চলে যেত একপথে, আমি আরেক পথে। যেতে যেতে যতক্ষণ দেখা যায় আমরা দুজন মুখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দুজনকে দেখতাম। কখনও কখনও চোখও মুছতাম।

আর আজ! এত এত বছর পর দেখা, আমার পাশে বসে নুহ করছে তার নাতির গল্প। নাতির দুরন্তপনায় সে মুগ্ধ। আমার পাশে সে বসে আছে ঠিকই, কিন্তু তার মন পড়ে আছে নাতির কাছে।

মফির জন্যও নুহর মতোই টান ছিল আমার। কিন্তু নুহ আবার কেন যেন মফিকে তেমন পছন্দ করতো না। ফলে আমি কখনও কখনও ভালো রকমের একটা গ্যাঁড়াকলে পড়তাম। দুজনেই আমাকে নিয়ে টানাটানি করত। বুঝে উঠতে পারতাম না আমি কোনদিকে যাবো, কার দিকে যাবো। দুজনকেই আমি ভালোবাসি, দুজনেই আমার সমান প্রিয়।

মফির বড়ভাই শফিদা ছিলেন ক্লাশের ফার্স্টবয়! আমার বড়ভাই তেমন ভালো ছাত্র না, তবু গভীর বন্ধুত্ব দুজনের। শফিদা মাঝে মাঝে আমার বড়ভাইকে, আমরা ডাকি দাদা, দাদাকে চিঠি লিখতেন। ডাকে যেসব চিঠি আসত আমাদের বাড়ি। সেহের আলী পিয়ন চিঠি দিয়ে যেত বাড়িতে। কী সুন্দর গোটা গোটা হাতের লেখা শফিদার। ইংরেজি বাংলা দুটোই সুন্দর। শফিদা নিজেও বেশ সুন্দর, স্টাইলিস্ট ধরনের লোক।

মফির একদম বড়ভাই রফিদাও কাজির পাগলা স্কুলে পড়তেন, আমার ছোটনানার মেজো ছেলে রউফ মামার সঙ্গে। রফিদাও আমাকে খুব আদর করতেন। দু-একবার গান্ধির দোকানের ভোসা সাইজের রসগোল্লাও খাইয়েছেন আমাকে।

ওই বয়সে মিষ্টির প্রতি বেজায় লোভ ছিল আমার।

মফিদের বাড়ি পুব কুমারভোগ, চন্দ্রের বাড়ির মাঠের ওদিকে। দুচারবার ওদের বাড়িতে আমি গিয়েছি। গেলেই প্লেটভরে সেমাই খাওয়াতো মফি। দু-একবার পোলাও-মোরগও খাইয়েছে, বড় বড় মাছের টুকরো দিয়ে ভাত খেয়েছি মফিদের বাড়ি।

তবে নুহদের বাড়িতে এক দুপুরে খাওয়ার কথা খুব মনে আছে আমার। সেদিন শনিবার ছিল, হাফস্কুল। নুহ আমাকে ওদের বাড়ি নিয়ে গেছে। ওদের দোতলা ঘরের বারান্দার দিককার রুমটিতে বসিয়ে আমাকে আর নুহকে ভাত খেতে দিলেন ওর মা। এত বড় একটি কইমাছ তুলে দিলেন আমার পাতে, সেদিনের আগে অতবড় কই আমি কখনও খাইনি। আর কী যে ভালো রান্না, সেই স্বাদ যেন আজও জিভে লেগে আছে।

কিন্তু আমি কখনও আমার বন্ধুদেরকে বাড়িতে এনে খাওয়াতে পারতাম না। নুহ কিংবা মফি কখনও আমাদের বাড়িতে আসেনি। একবার মফিকে আমি দাওয়াত দিয়েছিলাম। কাইল স্কুল ছুটির পর তুই আমার লগে যাবি। মফি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হলো। বাড়িতে এসে বুজিকে বললাম, মফি আইবে কাইল। শুনে বুজি কেমন একটু দিশেহারা হলেন। বুঝলাম মফিকে ভাল্ ভালাই খাওয়াবার চিন্তায় দিশেহারা হয়েছেন তিনি।

কিন্তু পরদিন মফি আমার সঙ্গে এল না।

স্কুল ছুটির পর মফিকে আমি বললাম, ল।

মফি বলল, কই যামু?

তর তো আমার লগে যাওনের কথা।

না-রে, আমি যামু না।

ক্যা?

এমতেঐ।

না তর যাওন লাগবো। বুজিরে আমি কইছি তুই যাবি।

না-রে আমি যাইতে পারুম না।

আমি যে তারপর কত রকমভাবে মফিকে নিয়ারা করলাম, মফি কিছুতেই রাজি হলো না, কিছুতেই এল না। কেন যে এমন করল সে! আমার খুব কান্না পাচ্ছিল, খুব মন খারাপ হচ্ছিল।

আমাকে একা বাড়ি ফিরতে দেখে বুজি কিন্তু তেমন অবাক হলেন না। হাসিমুখে বললেন, কী-রে তর দোস্তে আইলো না?

গভীর অভিমানের গলায় বললাম, না।

ক্যা? অরে তুই দাওত দেছ নাই?

হ দিছি তো?

তয় আইলো না ক্যা?

কে কইবো?

মফি না আসাতে আমি যে খুব দুঃখ পেয়েছি বুজি তা বুঝে গেলেন। আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, তুমি মন খারাপ কইরো না ভাই। আইজ না আইছে কী হইছে, আরেকদিন আইবোনে। যাও তুমি হাতমুখ ধুইয়া আহো, আমি তোমার ভাত বাড়তাছি।

মফি আসবে বলে পুবের ভিটির পাটাতন ঘরে আমাদের দুজনের খাবার ব্যবস্থা করেছিলেন বুজি। এই ঘরটা সাধারণত ব্যবহার করা হয় না। তালা বন্ধই থাকে। মফির সম্মানে সেদিন খোলা হয়েছিল। কিন্তু মফি এল না।

সে-সময় দাদা পুনুআম্মা কিংবা মণি বাড়িতে ছিল কি-না আমার মনে নেই। শুধু বুজির মুখটাই মনে আছে। যেন বুজি আর আমিই বাড়িতে, আর কেউ যেন ছিল না।

কিন্তু খেতে বসে আমি একেবারে হকচকিয়ে গেলাম। কোথায় ভাত? বুজি তো মফির জন্য পোলাও রেঁধেছেন, ড্যাকরা একখানা মোরগ জবাই করেছেন। সঙ্গে ঘন দুধের চিনির পায়েস। খেজুড়ি গুড় দিয়েও পায়েস হয়, কিন্তু বুজি করেছিলেন চিনি দিয়ে। একা একা সেই খাবার খেতে খেতে মফির ওপর ভারি একটা অভিমান হয়েছিল আমার। তারপর বেশ কয়েকদিন মফির সঙ্গে আমি কথা বলিনি। মফিকে দেখলেই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতাম। মফিকে দেখিয়ে দেখিয়ে নুহর সঙ্গে বেশি মিশতাম। নুহ আমাকে তখন খুব খাওয়াতো, খুব ভালোবাসতো। ওদের বাড়ির অবস্থা ভালো। একআনা দুআনা পয়সা রোজ স্কুলে নিয়ে আসত নুহ। সেই পয়সায় লিলি বিস্কুট মুড়লিভাজা কিংবা লেবেনচুস খেতাম আমি আর নুহ।

সেই সুখের দিন কোথায় হারিয়ে গেছে!

গভীর রাতে আমার ডান কানে একটা পিঁপড়া ঢুকে গেল।

কানে পিঁপড়া ঢুকার অভিজ্ঞতা আমার নেই। কান নিয়ে আমার অতিপ্রিয়বন্ধু সানাউল আরেফিনের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শুনেছিলাম। নবীগঞ্জের বাড়িতে আরেফিনরা সব ভাইবোন বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বেড়াতে গেছেন। রাতের বেলা গাদাগাদি করে শুয়ে আছে, আরেফিনের কানে একটা টিকটিকির বাচ্চা ঢুকে গেল। আরেফিনের হৈচৈ আর চিৎকারে বাড়ির সবাই জেগে উঠেছে। বাড়ির সবচাইতে প্রিয় ছেলে আরেফিন, তার কানে টিকটিকির বাচ্চা ঢুকে গেছে। কিছুতেই সেটাকে বের করা যাচ্ছে না। সবাই দিশেহারা হয়ে গেছে। খালাম্মা কান্নাকাটি শুরু করেছেন। আর টিকটিকির বাচ্চাটি এমন বেকুব ধরনের কানের ভেতরকার অন্ধকার জগতে ঢুকে গেলে যে মৃত্যু অবধারিত এই বোধটি তার নেই। তাকে যতই বাইরে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে সে ততই ভেতর দিকে ঢুকতে চাচ্ছে। বহুক্ষণের চেষ্টা কসরৎ ইত্যাদির পর সেটাকে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় বের করা হলো। আহ্ স্বস্তি! কিন্তু আরেফিনের তখনও ভয়টা কাটেনি। ওর কেবল মনে হচ্ছে হয়তো আবার কানে একটা টিকটিকির বাচ্চা ঢুকবে। এই বাড়িতে কোটি কোটি টিকটিকির বাচ্চা ঘুরে বেড়াচ্ছে। মানুষের কানে ঢুকা ছাড়া তাদের আর কোনও কাজ নেই।

বাকিরাত কানে তুলো গুঁজে শুয়েছিল আরেফিন। একটা মিনিটও আর ঘুমাতে পারেনি। অদ্ভুত এক আতঙ্কে দিশেহারা হয়েছিল। ঘটনাটা শোনার পর থেকে টিকটিকির বাচ্চা দেখলেই আরেফিনের কথা মনে পড়ে আমার। বুকটা কেমন হু হু করে। আহা কী কষ্টটা আরেফিন পেয়েছিল।

আরেফিনের সেই কষ্ট এবং অস্বস্তির কিছুটা আমি টের পেলাম কানে পিঁপড়াটা ঢোকার পর। শোয়ার আগে আমাদের বিছানা খুব ভালো করে ঝেড়ে দেয় কাজের মেয়েটি। তাছাড়া পিঁপড়া টিপড়ার বালাই আমাদের বেডরুমে থাকার কথা না। এসব ব্যাপারে জ্যোৎস্না খুবই সেনসিটিভ। তেলাপোকা ইত্যাদি দেখলেই এরোসল ¯েপ্র করে। একদিন এরোসল ¯েপ্র করলে বেশ কয়েকদিন তেলাপোকা পিঁপড়া কিংবা মাছি দেখা যায় না। কিন্তু মশাটা ঠিকই থাকে। উহারা মরে না। কিংবা যত মরে পরদিন তার দ্বিগুণ হয়ে ফিরে আসে।

তারপরও রাতদুপুরে আমার কানে পিঁপড়া ঢুকে গেল। তখনও পুরোপুরি ঘুমাইনি আমি, তন্দ্রামতো এসেছে। কানের ভেতর পিঁপড়া চরছে টের পেয়েই লাফ দিয়ে উঠে লাইট জ্বেলেছি, কটনবাড নিয়ে কান থেকে পিঁপড়াটা বের করার চেষ্টা করছি। কটনবাড জিনিসটা আমি প্রায় প্রতিদিন ব্যবহার করি। গোসল করার সময় প্রতিদিনই সাওয়াে রর পানি আমার কানে ঢোকে, ফলে কটনবাডের দরকার হয়। এখনও কটনবাড চালিয়ে দেখি, বাহ্, পিঁপড়া তো বেরিয়ে গেছে। কানে পিঁপড়া ঢুকলে তার নিরাময়ে কটনবাডের কোনও তুলনা হয় না।

নিশ্চিন্ত হয়ে শুয়ে পড়েছি, ওমা খানিক পর দেখি কোথায় যেন বেশ ঘটর-মটর শব্দ হচ্ছে। প্রথমে বুঝতেই পারিনি শব্দটা হচ্ছে আমার কানের ভেতর। আর একটা পিঁপড়ার চলাচলও টের পাচ্ছি সেখানে। তার মানে কী, পিঁপড়াটা তাহলে বেরোয়নি? কটনবাডের ব্যবহার দেখে কানের ভেতরকার নিশিছদ্র অন্ধকারে ঘাপটি মেরেছিল! এখন সুযোগ বুঝে প্রথমে কানের পর্দায় পদচারণা করে, ঘটর-মটর শব্দে জানান দিচ্ছে, না হে আমি বেরোইনি, এখনও জায়গামতোই আছি।

কী যন্ত্রণা!

আবার লাফিয়ে উঠেছি আমি, আবার কটনবাড নিয়ে আগের মতো চালিয়েছি কানে। এবারও ঠিক আগের মতোই সব ঠিকঠাক হয়ে গেল। কোনও অস্বস্তি নেই। পিঁপড়া এবার নিশ্চয় বেরিয়ে গেছে। কটনবাডের আঘাতে হয়তো মৃত্যুবরণই করেছে। কানের গুঁড়ো গুঁড়ো ময়লার মতো ঝরে গেছে কোথাও।

কিন্তু না, খানিক পর আবার সেই অস্বস্তি। আবার সেই পিঁপড়ার চলাচল, কানের গুহায় ঘটর-মটর শব্দ।

সর্বনাশ! এ কী হচ্ছে!

এবার জ্যোৎস্নাও উঠে বসেছে। বেচারা প্রেসারের ওষুধ খায়, ঘুমের ওষুধ খায়। তার ঘুমের ডিস্টার্ব হচ্ছে। তবু কানে পিঁপড়া ঢুকেছে শুনে সে একটা সাজেশান দিল। ওসব কটনবাড-ফাডে কাজ হবে না, দুই নাক টিপে ধরো, অন্য কানে কড়ে আঙুল ঢুকিয়ে যতক্ষণ পারো দমবন্ধ করে রাখো দেখবে পিঁপড়া বেরিয়ে গেছে।

 সেই কাজও করলাম, কিন্তু কাজ হলো না। প্রায় ঘণ্টাখানেক জ্বালাতনটা চলল। এর মধ্যে কতবার যে কটনবাড ব্যবহার করলাম। কটনবাড দেখেই পিঁপড়াটা যেন কোথায় উধাও হয়ে যায়। খানিকক্ষণ ঘাপটি মেরে থাকার পর আবার বেরিয়ে আসে।

একবার ভাবলাম, না কটনবাড আর ব্যবহার করব না, দেখি পিঁপড়াটা তার মতো বেরিয়ে আসে কি-না!

এবার কিন্তু কাজ হলো। নিজের মতো করে কানের ভেতর খানিক চরলো পিঁপড়াটা তারপর আস্তে ধীরে বেরিয়ে এল। লতির কাছাকাছি আসতেই আঙুলে ডলে আমি তাকে শেষ করলাম। কিন্তু বাকি রাতটা আর ঘুমই হলো না আমার।

এসব সাত-আটমাস আগের কথা।

পরদিন সকালে ডালু আমাকে ফোন করল। মিলনদা, আমি ডালু।

আমার খালাতো ভাই ডালুর ভালো নাম মাজহারুল ইসলাম। কখনও কখনও সে ডালু হোসেনও লেখে। কেন যে তার এরকম তিনটা নাম, আমি ঠিক বুঝতে পারি না।

ডালু অত্যন্ত ভদ্র বিনয়ী এবং নম্র স্বভাবের ছেলে, অত্যন্ত সৎছেলে। তার সততা নিয়ে আমাদের ফ্যামিলি এবং আত্মীয়স্বজনদের কারও কোনও সন্দেহ নেই। আমরা প্রত্যেকেই ডালুর ওপর খুব নির্ভর করি। ডালুকে খুব পছন্দ করি। ওর কথার আলাদা একটা গুরুত্ব আছে।

 সেই সকালে ডালুর ফোন পেয়ে আমার মাথার ভেতরটা কী রকম যেন একটু টলমল করে উঠল। কেন যে বর্তমান সময়টা মুছে যেতে চাইল। আমার মনে পড়ল বহুকাল পেছনে ফেলে আসা একটি রাতের কথা। মেদিনী মণ্ডল গ্রাম, আমার নানাবাড়ি, ঘর অন্ধকার করে সেজাল খাঁ ফকির জ্বীন ডাকছেন, এই মাত্র জ্বীন এসে ঢুকেছে ঘরে, আমাদের যাচ্ছে এক ঘোরতর নিদানের কাল। 888sport app মিউনিসিপ্যালিটিতে আব্বার চাকরি নিয়ে কিছু-একটা ঝামেলা হয়েছে। সেই ঝামেলার সুরাহা করতে জ্বীনেরা পথ বাতলে দেবে। ছোটনানার চতুর্থ ছেলে মোতালেব, মোতালেব মামাও আছেন আমাদের সঙ্গে।

আজ সকালে ডালুর ফোন পেয়ে কেন যে সেই দূর-অতীতের রাতটি ফিরে এল 888sport sign up bonusতে। নিজের অজান্তে সেই রাতটিতে ফিরে গেলাম আমি। অদ্ভুত এক ঘোরলাগা গলায় বললাম, ডালু, মোতালেব মামার কানে যে সেই রাতে একটা পিঁপড়া ঢুকে গিয়েছিল, তোর মনে আছে?

আমার কথায় মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারল না ডালু। বোঝার কথাও না। বোকার মতো বলল, জ্বি! (চলবে)