পান্ডুলিপি করে আয়োজন

মধুময় পাল

তিনি পান্ডুলিপি তৈরি করছিলেন। তাঁর আঙুলগুলো সাদা কাগজের ওপর নড়াচড়া করছিল। আঙুলে কখনো ধরা গাম টিউব, কখনো কাঁচি। অস্ত্রোপচারের জ্ঞানী আঙুল। শূন্য পাতার মধ্যভাগে জড়িত করছিলেন মুদ্রিত কাগজের টুকরো দ্বীপভূমি। মুখ তুলে আমাকে বসতে বললেন। পরপর তিনটে চেয়ার। বসি। টেবিল ল্যাম্পের নিচে তাঁর হাতের সহৃদয় কুশলতা দেখতে থাকি।

ওই যে লেখাগুলো বেরিয়েছে, সেসব নিয়ে বই করার আদেশ পেয়েছি। জানি না কী বই হবে, আদেশ পালন করছি। পান্ডুলিপি বানিয়ে দিতে হবে। বললেন ভূমেন্দ্র গুহ।

তখন বিকেল। এক অনুজ-বন্ধুর সঙ্গী হয়ে দরগা রোডে ভূমেন্দ্র গুহর কাছে এসেছি। বন্ধু তাঁর অনেক দিনের চেনা, প্রীতিভাজন। দরজায় নেমপেস্নট : ডা. বি এন গুহ রায়। বন্ধুর কাছে শুনেছি তিনি বিরাট ডাক্তার। তাঁর কর্মকা- ও নন-মেডিক্যাল 888sport app কা–র প্রচুর গল্প শুনেছি। যেখানে বসে আছি, এটা চেম্বার। ডাক্তারবাবুর ডানদিকের দেয়ালে এক্স-রে পেস্নট দেখার ‘ভিউ বক্স’। টেবিলে সাবেক

কৃষ্ণাঙ্গ রাশভারী টেলিফোন। বাইরে বেশ কয়েকটা চেয়ার, রোগী ও তার সঙ্গীদের বসবার। আমার ভালোই লাগছিল, এরকম একজন গুণী মানুষের সামনে বসতে পেরে। আবার অস্বস্তিও হচ্ছিল, তাঁর ডাক্তারির কাজে অসুবিধে ঘটাচ্ছি না তো। তখনো জানা নেই যে রোগী আসা বিশেষ পছন্দ করেন না তিনি। কোথাও ফোন করে বলে দিলেন, পেশেন্ট নেই তো? এলে বলে দেবেন ডাক্তারবাবুর শরীর ভালো নেই।

আলেখ্য : জীবনানন্দর পান্ডুলিপি তৈরি করছিলেন তিনি। কয়েকটি লেখা পড়বার সুযোগ হয়েছে। সেই থেকে মুগ্ধতা। 888sport sign up bonusকথা অনেকেই লেখেন, এমন করে কজন লেখেন, এমন মেধাবী ও দরদি ভাষায় এমন ঋজু গাঢ় উচ্চারণে হৃদয় ছুঁয়ে বলা, কজন পারেন।

আমার গোপন ইচ্ছে ছিল, জীবনানন্দের পান্ডুলিপির ওপর হাত রাখব, পান্ডুলিপি স্পর্শ করব প্রণামের মতো। এটা একটা আবেগ। কারো কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে। ইচ্ছের চাপে বলে ফেলি, ডাক্তারবাবু, জীবনানন্দের একটা খাতা দেখতে পারি। নিশ্চয়, বলে তিনি টেবিলের নিচে ফাইল খুলে বের করে দিলেন। গদ্যের। ছুঁয়ে থাকলাম। পড়ার চেষ্টা করলাম। সামান্য কিছু পারলাম। তিনি আরো একটা খাতা দিলেন। গদ্যের। পড়তে পারিনি। হস্তাক্ষরে এত অস্পষ্টতা, অস্থিরতা।

সামান্য কিছু কথা হয়েছিল সেদিন। বন্ধুই একটার পর একটা প্রসঙ্গ বলে গেলেন। আর তিনি নিপুণ হাতে, লালনের হাতে তৈরি করতে থাকলেন ছবির মতো পান্ডুলিপি। সন্ধের মুখে এসে পড়লেন তাঁর কয়েকজন অনুগামী। বুঝতে পারলাম এঁরা প্রায়ই এখানে আসেন এবং অনেক দিন ধরে আসছেন। ডাক্তার বাবু সহকারী কর্মিনীকে ছুটি দিয়ে দোতলায় গেলেন আগতদের নিয়ে। চলে এলাম।

এরপর দরগা রোডে একবার কি দুবার গিয়েছি। দু-চারবার ফোনে কথা হয়েছে। একদিন বললেন, কলেজ স্ট্রিটে আসবেন? একটু দরকার আছে। যদি সময় করতে পারেন? আমার সঙ্গে ডাক্তারবাবুর দরকার থাকতে পারে ভাবতেও কেমন লাগে। বলি, কী দরকার জানতে পারি? বলেন, আসুন না, যদি অসুবিধে না হয়। ঠিক হলো, কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে দেখা হবে। দুপুর দুটো নাগাদ। দেখা হলো। তিনি শেয়ালদার দিকে হাঁটতে লাগলেন। এ-কথা সে-কথা।

থামলেন আনন্দ পাবলিশার্সের সামনে। দশ কপি আলেখ্য : জীবনানন্দ কিনলেন। চলুন, কফি হাউসে। অনেকদিন আসিনি। তিনি বললেন। জিজ্ঞেস করি, এতগুলো কপি কিনলেন কেন? ওঁরা তো অথর্স কপি দেন। জবাবে তিনি বলেছিলেন, দেবেন। আগে বিক্রি-টিক্রি হোক। কে কিনবে মশাই! একে জীবনানন্দ, তায় ভূমেন্দ্র গুহ। বেরোনোর পর দশ কপি কিনেছিলাম। আজ দশ কপি। বন্ধুদের দিতে হয়। যদি পড়ে দেখে। সেদিন কফি হাউসের টেবিলে ‘ভূমেনদা’ বা ‘ভূমেন বাবু’ করে যারা এলেন, প্রত্যেককে বই দিলেন। দিনটি ছিল ২৭ জানুয়ারি ১৯৯৯। আমাকে যে-বইটি দিয়েছিলেন, তার আখ্যাপত্রে সইয়ের নিচে তারিখটি আছে। অনেক বই দিয়েছেন তিনি।

১৯৯৯-এ দেওয়া বইয়ে লিখেছিলেন ‘মাননীয়েষু’। ২০০৮-এ লিখেছেন, ‘বন্ধুবরেষু’। তবু, বলতেই হয়, ভূমেন্দ্র গুহর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ধারাবাহিক ছিল না। কখনো রোজ ফোন। রাত

একটা-দেড়টা পর্যন্ত। তিনিই ফোন করতেন। আমি করলে লাইন কেটে নিজে করতেন। কারণ আমার বিল উঠবে। কখনো নীরবতা নেমে এলো। এক বছর-দুই বছর। কোনো কথা নেই। শেষ কথা হলো তো তিন বছর পর। মাননীয়েষু থেকে বন্ধুবরেষু হলেও, ডাক্তারবাবু থেকে ভূমেনদা হলেও এ-লেখা ছেঁড়া ছবির বেশি কিছু হতে পারে না।

আমাদের এক বন্ধু বলেছেন, ভূমেন্দ্র গুহ জীবনানন্দের পান্ডুলিপির সন্তান। কথাটায় চমক আছে এবং তথ্য দিয়ে কিছুটা প্রমাণ করাও যায়। পান্ডুলিপি তো এর আগে আরো কেউ-কেউ পেয়েছিলেন। আমরা বলতে পারি, জীবনানন্দের পান্ডুলিপি ও ভূমেন্দ্র গুহ অপৃথক সত্তা, বাগর্থের মতো সম্পৃক্ত। শঙ্খ ঘোষ গভীরতর অর্থে বলেন, ভূমেনের জীবনানন্দ অনুরাগ অপার্থিব।

 

ময়ূখের সুতোয় গাঁথা

জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে জীবনানন্দ দাশের পক্ষে বাতাস কিছু অনুকূল ছিল তখন। ছোট পত্রিকার বিশেষ 888sport free bet বেরোচ্ছে। ভালো বিক্রি। সেমিনার হচ্ছে। সমেত্মাষজনক সমাগম। অপ্রকাশিত গল্প-888sport app download apk প্রকাশ পাচ্ছে। পাঠক উন্মুখ। যারা একদিন জীবনানন্দকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, সেই বাণিজ্যপত্রও জীবনানন্দ 888sport free betর পসার নামাচ্ছে বাজারে। জীবনানন্দ চর্চা একটা আলোড়ন হয়ে ছুঁতে পারছে দূর শহরতলির ভাবনাদ্বীপ। এই আলোড়নের কেন্দ্রে আছেন ভূমেন্দ্র গুহ। একদা জীবনানন্দ দাশের ‘ট্রাঙ্কগুলির কার্যনির্বাহী অভিভাবক’, অধুনা জীবনানন্দের সদ্য-উদ্ধারপ্রাপ্ত অযত্নলাঞ্ছিত পোকাপীড়িত পান্ডুলিপির তত্ত্বাবধায়ক। ভূমেনবাবুর সঙ্গে আমার পরিচয় আছে জেনে বাংলা বইয়ের প্রকাশন ও বিপণন কেন্দ্র নয়া উদ্যোগের স্বত্বাধিকারী বন্ধুবর পার্থশংকর বসু জীবনানন্দ বিষয়ে একটি গ্রন্থ প্রস্ত্তত করা যায় কিনা ভাবতে বললেন। হাজির হলাম দরগা রোডে ভূমেন্দ্র গুহর কাছে। অপ্রকাশিত লেখা নিয়ে বই করা যাবে না, আইনি জটিলতা আছে, জানালেন ভূমেনবাবু। হঠাৎই মনে পড়ে গেল জীবনানন্দ দাশের প্রয়াণের কয়েক মাস পর প্রকাশিত জীবনানন্দ 888sport sign up bonus ময়ুখের কথা, যা এখন শুধু দুষ্প্রাপ্য নয়, বিস্মৃতপ্রায়। এরপর ভূমেন্দ্র গুহর বয়ানেই জানা যাক সেই বই হয়ে ওঠার বৃত্তান্ত। ‘পার্থ সেই বিস্মৃত 888sport free betটির একটি পূর্ণাঙ্গ ফটোকপি জোগাড় ক’রে ফেললেন।… বলা নেই কওয়া নেই, পার্থ হঠাৎ একদিন আমার পড়ো বাড়িতে এসে হাজির হলেন সেই ফটোকপিটি এবং তার আনুষঙ্গিক পুরো 888sport free betটির কম্পোজ করা প্রম্নফ নিয়ে; দেখে দিতে হবে; তিনি সেই 888sport free betটি বই আকারে পুনর্মুদ্রিত করবেন আবার। তাঁর দাবি : ‘জীবনানন্দ 888sport sign up bonus ময়ূখ’-এর হয়ে ওঠার গল্পটিও আমাকে লিখে দিতে হবে, তিনি এই বইতে অধিকন্তু হিসেবে গল্পটি জুড়ে দিতে চান। এবম্প্রকার সমূহ বিপৎপাতে আমি হতচকিত হয়েছিলুম বলতে হবে, এবং তাকে এই শুভ এষণা থেকে প্রতিনিনিবৃত্ত করতেও কম প্রয়াস পাইনি, তাও স্বীকার্য।… হলই যখন, আমি আমার সেই পুরোনো দিনের প্রায়-ভুলে-যাওয়া প্রথম যৌবনের আঁকাড়া সময়ের উজ্জীবন করতে চাইলুম, এবং তখনকার থেকে যারা বন্ধু হয়ে আছে, সেই জগদিন্দ্র ও প্রতাপকেও এই মৃগয়া আস্বাদনের জ্বালায় জড়িয়ে নিলুম; তারাও জড়িয়ে পড়তে আপত্তি করেনি।’ সেই পুনর্মুদ্রণ অনেক নতুন তথ্যে সমৃদ্ধ হয়ে আত্মপ্রকাশ করল জীবনানন্দ সভাঘর-এ, ২০০০ সালের জানুয়ারি লিটল ম্যাগাজিন মেলার সময়। ময়ূখের সেই সৈনিকরা প্রায় সবাই এসেছিলেন ভূমেনবাবুর আমন্ত্রণে। 888sport sign up bonusচারণার সে এক মেঘ ও রৌদ্রের সন্ধ্যা।

নয়া উদ্যোগ নিয়ে ভূমেন্দ্র গুহর দূরপ্রসারী একটা ভাবনা ছিল। বিধান সরণির শ্রীমানী বাজারে একদিন ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে পড়লেন। বললেন, জীবনানন্দের যে-ছবিটা সর্বত্র দেখা যায়, সেটা তৈরি এই ডি. রতনের সৌজন্যে। জীবনানন্দ-অনুরাগীরা ডি. রতনের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তার উলটো ফুটপাথে নয়া উদ্যোগ যদি জীবনানন্দ চর্চার কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে, আমাদের পক্ষে সেটা গর্বের বিষয় হবে না কি? প্রথমে বুঝতে পারিনি, উনি ঠিক কী চান। ‘নয়া উদ্যোগে’র দপ্তরে পৌঁছে বুঝিয়ে বললেন, এরপর জীবনানন্দের অপ্রকাশিত সব লেখা এখান থেকে বেরোবে। পুরোনো প্রকাশকের আইনি বাধা কাটিয়ে উঠতে পারলে অমিতানন্দ দাশের অনুমতিক্রমে নতুন-পাওয়া পান্ডুলিপির লেখা এঁরাই প্রকাশ করবেন। 888sport app download apk-গল্প-888sport alternative link-দিনলিপি – সব মিলিয়ে বেশ বড়ো কাজ হবে। নানা কারণে ভাবনা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে ২০০১-এর জানুয়ারিতে বেরিয়েছিল জীবনানন্দ দাশের গল্প। ভূমেনবাবুর পরিকল্পনামাফিক। তিনি লিখেছিলেন ‘ভূমিকার বিকল্প’। ওই বছরই বেরোয় সঞ্জয় ভট্টাচার্যের অজানা বঙ্গকে জানো। ভূমেনবাবুরই পরিকল্পনা। তাঁর অনুরোধে বইটিতে পরিচায়ক নিবন্ধ লেখেন দীপংকর লাহিড়ী। সঞ্জয় ভট্টাচার্যের রচনাসমগ্র প্রকাশের জন্যও বিস্তর পরিশ্রম করেন ভূমেনবাবু। দুষ্প্রাপ্য বইগুলি সংগ্রহ করা থেকে প্রকাশের অনুমতি পেতে উত্তরাধিকারীর খোঁজে দৌড়াদৌড়ি – সবই করেছেন। কয়েকটি জায়গায় সঙ্গী হয়েছিলাম। সঞ্জয় ভট্টাচার্যের লেখা ছিল তাঁর দ্বিতীয় প্যাশন। পাঠক তথা বাজারের সাড়া না পাওয়ায় সংগত

কারণেই পার্থশংকর এই উদ্যোগ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছিলেন। এতে ভূমেনবাবু বেজায় চটে যান।

এই সময় একটা উল্লেখযোগ্য কাজ হতে পেরেছিল। 888sport appsে জীবনানন্দ দাশের রচনার বৈধ প্রকাশের বন্দোবস্ত। সে-দেশে অনেকেই জীবনানন্দ ছাপেন নৈতিকতা ছাড়াই। মনে আছে, কলকাতা বইমেলা তখন ময়দানে – রাত সাড়ে ৯টা কি তারও বেশি হবে, মেলার মাঠ নির্জন, পার্ক স্ট্রিটের দিকে পাকা রাস্তার গেটের পাশে পুলিশের তাঁবু, আমরা – ভূমেন্দ্র গুহ, জীবনানন্দের ভ্রাতুষ্পুত্র অমিতানন্দ দাশ, পার্থশংকর বসু, 888sport appsের অবসর প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী আলমগীর এবং আমি – প্রায় শূন্য তাঁবুতে বসে একটি চুক্তিপত্রে সই করেছিলাম। 888sport appsে জীবনানন্দ রচনা প্রকাশের চুক্তিপত্র। আইনি অধিকার পেলেন অবসর প্রকাশনা। ভূমেন্দ্র গুহর সঙ্গে সে-দেশের প্রকাশনার একটা আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ তৈরি হলো।

কলকাতার সংবাদপত্র দৈনিক আজকালের শারদ 888sport free betর তৎকালীন সম্পাদক জন্মশতবর্ষের কলরবে জীবনানন্দ দাশের অপ্রকাশিত 888sport app download apk ছাপার ইচ্ছা করলেন। ভূমেনবাবুকে বললাম। তিনি পাঁচটি 888sport app download apk কপি করে দিলেন, সঙ্গে ভূমিকা। পরের বছর সঞ্জয় ভট্টাচার্য ও জীবনানন্দ দাশের 888sport app download apk ছাপা হলো। তার পরের বছর, বাংলা ১৪০৮, ছাপা হলো জীবনানন্দের 888sport alternative link জীবনের উপকরণ। আমার সৌভাগ্য 888sport alternative linkটি পত্রিকা দপ্তরে জমা দেওয়ার আগে তার ফটোকপি পড়ার ও সেটা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। একটি অস্বস্তিকর ঘটনা ঘটে

সফলতা-নিষ্ফলতা 888sport alternative link ছাপা নিয়ে। বাংলা সন ১৪১০। 888sport alternative linkটির ‘নোট’ তৈরি করেছিলেন ভূমেনবাবু খুব খাটাখাটনি করে, যার আয়তন 888sport alternative linkের তিনগুণেরও বেশি। 888sport alternative linkটি ৪০ পৃষ্ঠার, ‘নোট’ ১২৫ পৃষ্ঠার। তাঁর যুক্তি, 888sport alternative linkের সঙ্গে ‘নোট’ যাওয়া আবশ্যিক, তাহলে লেখার তাৎপর্য স্পষ্ট হবে। ‘নোট’ ছাড়া এ-লেখা ছাপার মানে হয় না। শারদ 888sport free betর সম্পাদকের সম্মতি নিয়েই তিনি কাজে হাত দিয়েছেন। সম্পাদনের যুক্তি, তিনি সম্পাদকীয় নোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এত বড়ো ‘নোট’ ছাপার জায়গা নেই। ভূমেনদা 888sport alternative link তুলে নিতে চান। সম্পাদক বলেন, সেটা কী করে হয়। বিজ্ঞাপন হয়ে গিয়েছে। ছাপা না হলে নানারকম কথা হবে। ভূমেনবাবু তাঁর জায়গা থেকে নড়তে নারাজ। পরে জেনেছি, সমস্যা মেটাতে শঙ্খ ঘোষকে মধ্যস্থতা করতে হয়েছিল। আজকালকে এরপর জীবনানন্দের 888sport app download apk ছাড়া আর বড়ো লেখা দেননি।

তবু, এই প্রত্যাখ্যানের ঘটনায়, আজকাল দপ্তরে অপমানিত হওয়ার ঘটনায় তিনি তাঁর মতো করে আমাকে গালমন্দ করেছেন, রেগে গেলে তাঁর মুখ বেলাগাম হয়ে যেত। অপমানের দায়টা যেন আমার।

 

তিনটি বেড়ানোর গল্প

১. এসে যে গভীরতর লাভ হ’লো…

পুরোটাই বাসে যাব। ট্রেন থেকে প্রকৃতি দেখা যায়। ধানক্ষিত, গাছপালা, পুকুর, পাখি উড়ে যাচ্ছে, গরু চরছে। মনোরম দৃশ্য। সুখী সুখী ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। জনপদ দেখা যায় না, মানুষ দেখা যায় না। বাস যায় গাঁ-গঞ্জ ঘরবাড়ি আর আটপৌরে জনজীবনের গা ভেতর দিয়ে। বলেছিলেন ভূমেনদা।

বালুরঘাট যাব আমরা। মধ্যবর্তী পত্রিকার সম্পাদক বিশ্বরূপ দে সরকারের আমন্ত্রণে। হঠাৎ করেই ঠিক হয়েছে ভূমেন্দ্র গুহও যাবেন। আয়োজকদের তরফে একটা আকাঙক্ষা ছিল। ওঁদের হয়ে প্রস্তাব রাখি ভূমেনদার কাছে। প্রথমটায় রাজি হননি। পরে রাজি হলেন এই ভেবে যে, শহর-শহরতলির দূরে বাংলাকে, গ্রামবাংলাকে দেখা যাবে। উত্তর বাংলা তো চিরদারিদ্র্যর চলমান ছবি। ফেলে আসা পূর্ব বাংলাকেও অনুভব করা যায় সেখানে। 888sport live footballসভা তাঁর কাছে গৌণ। উপলক্ষ হতে পারে, লক্ষ্যটা কিন্তু অন্য। আয়োজকরা অবশ্য ভূমেন্দ্র গুহ যাবেন শুনে খুশি হয়েছিলেন। আলেখ্য জীবনানন্দর লেখক, দরগা রোড 888sport app download apk পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক এবং কবি ভূমিন্দ্র গুহ। বালুরঘাটে তখনো ট্রেন যায় না। লাইন পাতার কাজ হচ্ছে। মালদা থেকে বাসে যেতে হবে। ট্রেনে গেলে ধকল কম। কিন্তু টিকিট পাওয়া যাবে কি?

ভূমেনদা তখন সত্তরের কাছাকাছি। বাসেই যাবেন জেনে বিশ্বরূপরা আমাদের নিতে একটি ছেলেকে পাঠালেন। সন্ধের মুখে দরগা রোড থেকে বেরিয়ে ধর্মতলা। রকেট বাস। সামনের দিকের সিট। অবধারিত কিছু বিঘ্ন সত্ত্বেও একপ্রকার স্বাচ্ছন্দ্যেই পৌঁছানো গিয়েছিল। ভোরের অনেকটা পথ জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়েছিলেন ভূমেনদা। মাঝে-মাঝে ডেকে বলছিলেন, দারিদ্র্য দেখুন। বঞ্চনা দেখুন। দেখুন, এভাবেও বেঁচে থাকা যায়। শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্য নেই, খাবারই নেই। এরা ভোটের মানুষ। রাজনীতির লোকেদের খেলার মানুষ।

পথপ্রদর্শক ছেলেটি আমাদের নিয়ে গেলেন ‘ক্ষণিকা’য়। পুরসভার অতিথিশালা। ব্যবস্থা মন্দ নয়। আয়োজকরা আগেই জানিয়েছিলেন, দুদিনের 888sport live footballসভা। প্রথম দিন 888sport app download apkর। দ্বিতীয় দিন গল্পের। বালুরঘাটবাসী লেখক পীযূষ ভট্টাচার্য এলেন তরুণ সঙ্গীদের নিয়ে। বিশ্বরূপ এলেন। আড্ডা হলো। ভূমেন্দ্র গুহকে পেলে তখন সবারই প্রধান জিজ্ঞাসা জীবনানন্দ দাশ। যতদূর মনে পড়ে, একটি সাক্ষাৎকারের পরিকল্পনা ছিল বিশ্বরূপের। জানা নেই, সেটা ফলবতী হয়েছিল কিনা। দুপুরে খবর এলো, কলকাতা থেকে কয়েকজন বিশিষ্ট কবি এসেছেন। উঠেছেন কাছেই একটা সরকারি আবাসে। বিকেলে দেখা গেল। বিশিষ্ট কবিদের থাকার জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত। ভিড়টাও সেখানেই। স্থানীয় তরুণ কবিরা পরিচিত হচ্ছেন, ঠিকানা নিচ্ছেন, 888sport app download apk দিচ্ছেন ইত্যাদি। বিশিষ্টদের কেউ-কেউ বালুরঘাটে ভূমেন্দ্র গুহকে দেখে রীতিমতো অবাক। আরে, তুমি! কখন এলে? কোথায় আছো? খুব ভালো। তারপরই প্রশ্ন, আজই ফিরছ? ভূমেনদা বললেন, আমি ঘুরতে এসেছি। ওঁরা অবাক। বালুরঘাটে কেউ ঘুরতে আসে! যাক, সন্ধেয় 888sport app download apk সভা হলো। জেলা পরিষদ ভবনের দোতলায়। মধুপর্ণী পত্রিকার সম্পাদক অজিতেশ ভট্টাচার্য ছিলেন। শ্রোতৃসমাবেশ ঘন। অনেকেই দাঁড়িয়ে। সভা সফল। রাত নটা নাগাদ ভাঙল। কলকাতার বিশিষ্ট কবিরা চলে গেলেন। চারদিক ফাঁকা হয়ে গেল। পীযূষ ভট্টাচার্য আমাদের রাতের বালুরঘাট দেখাতে নিয়ে বেরোলেন। হেঁটে-হেঁটে ঘোরা হলো আত্রেয়ী নদী পর্যন্ত। বোঝা গেল, বিশিষ্ট হওয়ার কৌশল ভূমেন্দ্র গুহ জানেন না, বা মানেন না।

পরের দিন দুপুরে পীযূষদার বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া। ভূমেনদা বললেন, আপনাদের বাজার দেখব। একটি জায়গার বাজার সেখানকার অর্থনীতি, সংস্কৃতি, জনরুচি, সামাজিক অভ্যাসের ধারণা দেয়। বাজারের এ-মাথা ও-মাথা ঘুরলেন। খুঁজলেন আরেকটা জিনিস, গোপনে আপনমনে, তাঁর ছেড়ে আসা দেশের চিহ্ন, ছায়া। এবার খুঁজতে বেরোলেন এক বন্ধুকে। নাম সরিৎ তোপদার। অসুস্থ জীবনানন্দের রাত-পাহারায় থাকা দলের একজন। শুনেছেন, তিনি প্রয়াত। শোনাটা ভুলও হতে পারে। তাঁর স্ত্রী হয়তো আছেন। দেখাই যাক খুঁজে। সূত্র হিসেবে সম্বল শুধু বন্ধুর নাম। পদবিটা একটু অন্যরকম বলে সেই সূত্রে প্রথমে তাঁর পাড়া, তারপর বাড়ি চিহ্নিত করা গেল। দরজা খুললেন বন্ধুর স্ত্রী। তিনি চেনেন না ভূমেন্দ্র গুহকে। পুরনো দিনের কিছু কথা 888sport sign up bonus থেকে পেড়ে আনতেই চেনা হয়ে গেল। এক ডাক্তার বন্ধুর কথা স্বামীর কাছে বহুবার শুনেছেন ভদ্রমহিলা। ভূমেনদা বললেন, ওর 888sport free bet login কোথায়? পত্র-পত্রিকাগুলো আছে? থাকলে নিয়ে আসুন। ভদ্রমহিলা কয়েকটা বই আনলেন। তাদের পাতা ওলটাতে-ওলটাতে ভূমেনদা বের করলেন একটা নীল কালিতে লেখা একদা-সাদা কাগজ। প্রেসক্রিপশন, যা বন্ধুর অসুখে ডাক্তার বি.এন. গুহ রায় করেছিলেন। চলিস্নশ বছর আগে। কড়া ভাঁজ সন্তর্পণে খুলে দেখালেন অদ্ভুত সুন্দর হস্তান্তরে বাংলা প্রেসক্রিপশন। আমরা বিস্ময়ে ভূমেনদার দিকে তাকিয়ে থাকি। হিজিবিজি লিখে একজন রোগীকে কেন বিড়ম্বনায় ফেলব, কেন অস্পষ্ট রাখব ওষুধের নাম? সেই কবে থেকে ভেবেছি।

ঘুরতে-ঘুরতে আত্রেয়ীর পাড়। নদীর জল নেমে গেছে তলপেটে। পাড় ধরে হাঁটতে-হাঁটতে চক ভৃগুর শ্মশান। সেখান থেকে পীযূষদার বাড়ি। দোতলার ঘরে বসে জীবনানন্দের গদ্য নিয়ে বললেন ভূমেনদা। সফলতা নিষ্ফলতা নিয়ে বললেন। বউদি ডাকলেন, খেতে হবে তো! রান্নাঘর, খাবার ঘর হিম-হিম। ফিরতি বর্ষায় বন্যার জলের নিচে থাকে দশ-বারো দিন। প্রতি বছর। নদীর পাড়ে বাড়ি। নদী উঠে আসে ঘরে। ভূমেনদা বললেন, গর্ভগৃহ। বীজক্ষিতের গন্ধ। বালুরঘাটের বিশেষ মাছ রাইখর এবং আড় মাছ পড়ল পাতে, সঙ্গে তুলাইপাঞ্জি চাল। অনেকদিন পর স্বল্পাহারের মাত্রা ভাঙলেন ভূমেনদা। নিজেরই স্বীকারোক্তি।

বিকেলে গল্পপাঠ একেবারেই জমেনি। শ্রোতা নেই। কারণ, পাশেই রবীন্দ্র ভবনে ‘বুগি উগি’ হচ্ছে। কাল যারা এখানে এসেছিল, আজ তারা সেখানে। উদ্যোক্তা-পাঠক-শ্রোতা মিলে মেরেকেটে জনা দশ-বারো। তবু গল্প পাঠ হলো। তাড়াতাড়ি শেষও হয়ে গেল। ফিরে এলাম ‘ক্ষণিকা’য়। এখানে দু-তিনজন তরুণের সঙ্গে ভূমেনদা মেতে উঠেছিলেন বিদেশি 888sport live football নিয়ে। তরুণদের জানতে চাওয়া, আর ভূমেনদার বলে যাওয়া। ক্লান্তি নেই। তবু থামতে হয়। অতিথিশালার নিয়মকানুন আছে।

ফেরা হলো সকাল ৭টার লোকাল বাসে। সে এক জার্নি বটে। সারাদিন খাওয়া নেই। শুধু বিস্কুট আর জল। খানাখন্দের পথ আর লজ্ঝর বাস। ঝাঁকুনিতে অ্যানাটমি ছত্রখান হওয়ার জোগাড়। কোনো দিন ভোলা যাবে না।

কেমন ঘুরলেন?

মন্দ কী! কিছু তো লাভ হলো।

 

২. জলের শব্দের ওপর পিঠ রেখে শুয়ে নামের বাহার আছে। তিস্তা-তোর্সা। দুটি নদী। দুটি জলস্রোত। আসলে জনস্রোত। হকারস্রোত। খাদ্য অ-খাদ্য যাবতীয় সস্তা সামগ্রী নিয়ে হকারেরা সার দিয়ে চলেছে চিৎকার করতে-করতে। এ চিৎকার ক্ষুধার, বাঁচতে চাওয়ার। জনকল্যাণকর রাষ্ট্র ও জনদরদি সব সরকারের চরম অপদার্থতার প্রত্যক্ষ প্রমাণ এই চিৎকার। নামে এক্সপ্রেস। লোকালেরও অধম। যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে। এবং দাঁড়িয়ে থাকে। মানুষের যেন শেষ নেই। উঠছে তো উঠছেই। ভূমেনদাকে কোনোক্রমে বসিয়ে দেওয়া গেছে ঠাসাঠাসি করে। আমি দাঁড়িয়ে আছি। জনস্রোত ও হকারস্রোত এড়িয়ে, দুই সার সিটের মাঝখানে, যাকে রেলযাত্রীদের পরিভাষায় বলে ‘লাইন’।

ভূমেনদা আর আমি কাটোয়া যাচ্ছি। ব্যান্ডেল থেকে উঠেছি। তাড়াতাড়ি এবং কিছুটা শান্তিতে যাওয়া যাবে বলে এক্সপ্রেসে ওঠা। এর চেয়ে ঢের ভালো লোকাল ট্রেনে যাওয়া। যাই হোক, আমার ভুল মেনে নিয়েছি। অস্বীকার করে লাভ নেই, ভূমেনদা বিরক্ত। এত কষ্টসাপেক্ষ, যন্ত্রণাদায়ক যাওয়ার কোনো মানে হয়? ধীরে-ধীরে মেনে নেন। হাজার-হাজার মানুষ এই পথে এইভাবে নিত্য যাতায়াত করে বেঁচে থাকার তাগিদে। আমরা তো একটা দিন। ফেরার পথে লোকাল ট্রেনে আসব। কাটোয়ার কয়েকজন 888sport live footballানুরাগী – তুষার প–ত, রাজকুমার রায় চৌধুরী, চন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় – ভূমেন্দ্র গুহকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ঘোরাঘুরি হবে, আড্ডা হবে, আর ভূমেনদা ঘরোয়া সভায় জীবনানন্দ সম্পর্কে বলবেন। কাটোয়ার বন্ধুরা আমার মাধ্যমে ভূমেন্দ্র গুহর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি তখন একরকম ‘এজেন্ট’। আমাকে তিনি একটু-আধটু পছন্দ করেন জেনে মাধ্যম করা। ওঁরা কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। অত বড়ো ডাক্তার। তার ওপর জীবনানন্দকে দেখেছেন নিকট থেকে। বিখ্যাত কবি-লেখকরা ওঁর বন্ধু। তিনি কি কাটোয়ার মতো মফস্সলে আসবেন? যখন ওঁরা জানলেন যে, ভূমেনবাবু রাজি হয়েছেন এবং ওঁরা ভূমেনবাবুর সঙ্গে কথা বলতে পারেন, কী যে খুশি, ফোনে রাত ১২টায়ও উচ্ছ্বাস স্পন্দিত হতে থাকে।

সেই উচ্ছ্বাস অনুভব করা গেল কাটোয়া স্টেশনের পস্নাটফর্মে পা দিয়েই। মাইক্রোফোনে ঘোষিত হচ্ছে ‘প্রখ্যাত জীবনানন্দ-গবেষক ও কবি ভূমেন্দ্র গুহ’র আগমন সংবাদ। বলা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আয়োজকদের উপস্থিত থাকার খবর। রেলের মাইক। স্টেশনমাস্টারের ঘরে বসে ঘোষণা। রেলের খবরের বদলে ভূমেন্দ্র গুহ! ভূমেনদা চরম অস্বস্তিতে। এ কোথায় এনে ফেললেন, মশাই? আমি কি ফিল্মস্টার, না সার্কাসের জিনিস! লোকজন ভিড় করে দেখবে! আশ্চর্য! ওঁদের বারণ করুন। কী করে বারণ করব? তখন মোবাইল ফোন চালু হয়েছে কিনা মনে নেই। তবে আমাদের কাছে ওই যন্ত্র ছিল না। ওঁদের কাছে যেতে পারলে তবে বারণ করা সম্ভব। আমার চেহারা আয়োজকদের কারো-কারো চেনা ছিল। তাঁরা দ্রম্নতপায়ে এগিয়ে এলেন। বেলাশেষের ছায়া-আলোয় তাঁদের মুখে খুশির ভোর। পরিচয় করিয়ে দিতেই ভূমেনদা ওঁদের বললেন, দয়া করে আর ওই ঘোষণা করবেন না। কাউকে অপমান করার অধিকার কারো নেই। আপনারা তো বলেননি যে, আমাকে সার্কাস করতে হবে। ইত্যাদি। ওঁরা কিছু বলার চেষ্টা করেন। পারেননি।

স্টেশন থেকে নেমে সাইকেল-রিকশা। আমরা উঠলাম। আমাদের নিতে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা সাইকেলে।

সামনে-পেছনে। আবার মাইকিং, রিকশা ঘুরছে। আগামীকাল বিকেল ৪টেয় রবীন্দ্র ভবনের দোতলায় 888sport live footballসভা। জীবনানন্দ দাশের জীবন ও 888sport app download apk সম্পর্কে বলবেন প্রখ্যাত…। ভূমেনদা এবার হেসে ফেললেন, সত্যি আর পারা গেল না। পাগলের পালস্নায় পড়া গেছে। রিকশা থামল ‘শ্রাবণী’র সামনে। পুরসভার অতিথিশালা। আগে এসেছি। গঙ্গা, অজয় আর বাবলা নদীর সঙ্গমে। অপূর্ব জায়গা। ভূমেনদা বারান্দায় খানিকক্ষণ দাঁড়ালেন। কথা নেই। জলের

এপার-ওপার আর শূন্য চরাচরের সামনে একা। বললাম, চেয়ার দেব? তিনি  বললেন, না। আলো কমে গেছে। কাল সকালে বেরোব। চলুন, ঘরে গিয়ে বসি। তুষার, রাজকুমার, চন্দ্রনাথরা ঘিরে ধরলেন। কতকিছু জানার আছে তাঁদের। ভূমেনদা নিজের মতো করে বলে যান। একসময় ওঁদের প্রশ্ন থেমে যায়। ভূমেনদাই বলে যান। একক

কথকতা। শ্রোতাদের জড়িয়ে। এক প্রসঙ্গ থেকে আরেক। রাত বাড়ে। আহত জীবনানন্দের বেডের সামনে বন্ধুদের রাত জাগার বিবরণ প্রত্যক্ষতায় শুনতে-শুনতে সেই স্থানে-কালে পৌঁছে গিয়েছিলেন যেন তুষার-রাজকুমাররা। হঠাৎ ভূমেনদার কিছু একটা মনে পড়ে। বলেন, বাইরে যেতে হবে। বুঝতে পারি। ওঁরাও বোঝেন। রিকশা করে বেরোনো হলো সুখদায়ক-সন্ধানে। ওঁদের একজন দূরে থেকে দোকান চিনিয়ে দিলেন। পাড়ার ব্যাপার তো! কাছে যাওয়া যাবে না। কেউ দেখে ফেললে বদনামের একশেষ। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ওঁরা চলে গেলেন। জানিয়ে গেলেন

খাবার রেডি। আমরা যেন সময়মতো খাওয়ার জায়গায় চলে যাই। কিন্তু সেই সময় আর হয় না। দুটো খাটে মুখোমুখি বসে দুজনে। দেয়ালে হেলান দিয়ে, বালিশে ভর দিয়ে ভূমেনদা বলে যান নিজের ছাত্রবেলা, মেসের জীবন, বন্ধুদের কথা, পড়ার বইয়ের বাইরে পড়া এবং অবিন্যস্ত অযত্নদষ্ট পান্ডুলিপিতে জীবনানন্দ পাঠের দুরূহতার কথা। ক্যান্টিনের দায়িত্বে থাকা ভদ্রলোক দরজার কড়া নাড়েন। বলেন, খাবারটা ঘরে দিয়ে যাব? দিয়ে গেলেন। রাত সাড়ে বারোটা কি তারও পরে আমরা খেতে বসি। অতিথিশালা নিঃশব্দ। ডাল দিয়ে ভাত মেখে এক গ্রাস মুখে দিতেই চিৎকার করে ওঠেন ভূমেনদা। মরে গেলাম, মরে গেলাম! কী ঝাল! ও মা গো! যন্ত্রণায় লাফাতে-লাফাতে বাথরুমে ঢুকলেন। সমানে কুলকুচো আর চিৎকার, মরে গেলাম! ও মা গো! মহাবিপদে পড়া গেল। তিনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। নিরাময়ের কোনো উপায় নেই। ছুটে যাই ক্যান্টিনে। যদি মিষ্টি কিছু পাওয়া যায়, অন্ততপক্ষে চিনি। দরজা বন্ধ। ফিরে আসি। বলি, সাদা ভাত খাবেন? ঝালের যন্ত্রণাটা কমতে পারে। আমার থালায় সাদা ভাত ছিল। ওঁর ভাত প্রায় পুরোটাই ডালে মাখা। বললেন, একদম ঝাল খেতে পারি না। ভেবেছিলাম ডাল দিয়ে মেখে ভাতটা খেয়ে নেব। ডালেও এত ঝাল! তত ঝাল ছিল না কিন্তু, যা এত কষ্টের কারণ হতে পারে। শেষ পর্যন্ত, ডালের বাটি ঘষে-ঘষে ধুয়ে দুমুঠো সাদা ভাত জল ঢেলে কচলে চুমুক দিয়ে খেলেন। সারা রাতের খাবার। পরের দিন, আগেভাগে ক্যান্টিনে বলে দেওয়া হলো, ভূমেনদার জন্য শুধু ভাত আর মাছভাজা।

সে-রাতের ঘটনা নিয়ে পরে ভেবেছি। ভূমেনদা ঝাল খেতে পারেন না এমন নয়, বিস্তর নজির আছে। তবে কী হলো? অনেক পরে জেনেছি, পানপরাগ খেয়ে-খেয়ে তাঁর জিভের ছাল উঠে গিয়েছিল একটা সময়। নুন-ঝাল পড়লেই জ্বলে যেত। অত বড়ো একজন ডাক্তারের এই নেশা অবাক করে বইকি। যেমন করে, তাঁর সারাদিনের সব ওষুধ মুঠোয় ভরে একবারে খেয়ে নেওয়া। তাঁর ব্যাখ্যা, ভুলে যাই। তাই একবারে খেয়ে নিই।

পরের দিন গঙ্গায় ভাসা হবে। চন্দ্রনাথের ওপর ভার পড়ল নৌকো জোগাড়ের। ভুটভুটি নয়। দাঁড়-বাওয়া নৌকো। যন্ত্র নয়, যান্ত্রিক শব্দ নয়, জলের শব্দে দাঁড়ের শব্দে ভেসে যাওয়া। অনেক খুঁজেও চন্দ্রনাথ সেই নৌকো পেলেন না। সবই ভুটভুটি। দু-একটা যা আছে, মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়েছে ভোরে। অগত্যা যন্ত্রের যন্ত্রণা সয়েই ভাসতে হলো। ভাসতে-ভাসতে উদ্ধারণপুরের ঘাট। তখন দুপুরের প্রথম ভাগ। ঘাট শান্ত। সেখানে পাওয়া গেল একটা চায়ের দোকান, নদীর ওপর। একদিকের খুঁটি নদীগর্ভে। কাঠের পাটাতনের জোড়ের ফাঁক দিয়ে দেখা যায় জলস্রোত। একটা বেঞ্চে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লেন ভূমেনদা। বলে উঠলেন, দিস ইজ দ্য বেস্ট পেস্নস ইন দা ওয়ার্ল্ড। আর যদি কোথাও যেতে না হয়। কোনোদিন, কোথাও। তিনি শুয়ে রইলেন। বাতাসে জলের শব্দ। দরমার গায়ে চেরাবাঁশের জানালা দিয়ে অপার আকাশ। নীল, এত নীল শহর পায় না।

ফেরার পথে সাম্প্রতিক কয়েকজন কবির লেখা নিয়ে, আচরণ নিয়ে কথা হলো। তর্ক হলো। তর্ক ততটা 888sport live footballিক নয়। ভূমেনদার মন্তব্য কোথাও-কোথাও কঠোর হতে থাকল। জল-আকাশের নির্জন শান্তি মাঝে-মাঝে কেঁপে উঠল। একটা শুশুক লাফ দিয়ে ভেঙে দিলো তর্কাতর্কি।

সেই বিকেলে রবীন্দ্রভবনের দোতলায় বেশ ভিড়। অনেক তরুণ এসেছেন। কেন, জানি না, ভূমেনদা প্রথমদিকে একটু বিরক্ত ছিলেন। গঙ্গাবক্ষি তর্কাতর্কির জোর হতে পারে। ঠিক হলো, তিনি কোনো ভাষণ দেবেন না। শ্রোতারা প্রশ্ন করবেন। তিনি উত্তরে বলবেন। প্রশ্ন যা এলো, সবই আলেখ্য জীবনানন্দ পাঠ থেকে। এর বাইরে তেমন কিছু জানা ছিল না হয়তো। ভূমেনদা নিজের ভঙ্গিতে উত্তরগুলো ছবির মতো স্পষ্ট করে তুলতে থাকলেন। জীবনানন্দের রেডিয়োতে 888sport app download apk পড়তে যাওয়ার প্রসঙ্গ এলো। কবির কোথাও যাওয়ার মতো একজোড়া জুতো নেই। কাপড়ের জুতো যেটা পরেন, তার এক পাটির কড়ের আঙুলের জায়গাটি ছিঁড়ে গিয়েছিল। পায়ে দিলেই আঙুল বেরিয়ে পড়ত। বোন সুচরিতা বাটা কোম্পানির ৭ নম্বর পাম্প-শু কিনে আনলেন। সেই জুতো পরে 888sport app download apk পড়তে গেলেন জীবনানন্দ। বাংলার আর কোনো কবিকে এই দারিদ্রে্যর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে কি?

চুপ করে গেলেন। ভূমেনদা কাঁদছেন।

 

৩. অপরের মুখ মস্নান করে দেওয়া ছাড়া…

আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবেন। কয়েকবার বলেছেন। কী এমন দূর? রোজ যাতায়াত করছেন আপনি। আমি কি একদিন যেতে পারি না?

আসলে আমাদের বাড়িতে ভূমেনদার আসা একটা অর্থ পেতে পারে এমন কিছুই আমার নেই। তেমন চেনাজানাও নেই তাঁদের ডেকে ঘরোয়া আড্ডা হতে পারে, যা ভূমেনদা পছন্দ করেন। চুঁচুড়ানিবাসী এক কবিকে বলি। বড়ো ভালোমানুষ তিনি। খুবই উৎসাহিত হন। বলেন, দিনক্ষণ ঠিক করে আমাকে জানিও। আমি কয়েকজনকে বলব। ভূমেন্দ্র গুহর সঙ্গে একটা বিকেল-সন্ধে কাটাতে পারা তো বিরাট ব্যাপার।

ব্যাপারটা সত্যি বড়ো হয়ে যায় ক্রমে। অনেকেই থাকতে চান বলে জানান। তাঁদের 888sport free betর পক্ষে আমাদের বাড়ি ছোট। সুতরাং আড্ডাটা অন্য কোথাও করার কথা ভাবা হতে থাকে। একটা জায়গা ঠিক হয়। বীণাপাণি লাইব্রেরি। পরিবেশ ভালো।

মাঝে-মাঝে গল্প-888sport app download apkর আসর হয়। কলকাতাসহ বাইরে থেকে অনেক বিশিষ্ট লেখক-কবি এসেছেন এখানে। লাইব্রেরির সদস্যরাও যথেষ্ট আগ্রহী। সহযোগিতা পাওয়া যাবে। আমি দুটো কথা বলি, এক. আয়োজন চূড়ান্ত করার আগে ভূমেন্দ্র গুহর সম্মতি নিতে হবে; দুই. কোনোরকম প্রচার না হওয়াই ভালো, ঘরোয়া চেহারাটা যেন থাকে।

ভূমেনদা রাজি হলেন। লোকাল ট্রেনে এলেন ভদ্রেশ্বরে। সারা দুপুর গল্পপ্রবাহ। একটি কথার পিঠে কথামালা। ময়ূখের দিনগুলির কথা, এই সময়ের বন্ধুদের কথা, কিছু পারিবারিক। বিকেলে ট্রেনপথে চুঁচুড়া। লাইব্রেরিতে তখন নানা বয়সের কবি, ছোট পত্রিকার সম্পাদক, 888sport live footballসভার সংগঠকসহ বহু মানুষ হাজির। তাঁদের কেউ-কেউ আগে থেকে ভূমেনবাবুকে চেনেন। সেটা বোঝাতে চাইলেন তাঁরা। বিশেষ আগ্রহীরা কাছে এসে পরিচয় করলেন। এমনও দেখা গেল, কেউ তাঁকে ছুঁয়ে থাকলেন। ভনিতা ছাড়াই আড্ডা শুরু। ঠিক হলো, শ্রোতারা প্রশ্ন করবেন। প্রথমদিকে কয়েকটা ভালো প্রশ্ন এলো। আড্ডা জমে উঠতে থাকল। কিন্তু হঠাৎই বিরক্তিকর প্রশ্ন করা হতে থাকে। তার জবাবে প্রশ্নকর্তারাই প্রতিষ্ঠান ও

প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা, অমুকে কী বলছেন, তমুকদা কী বলছেন ইত্যাদি বলে গেলেন গলা চড়িয়ে। আড্ডা প- হওয়ার উপক্রম। একটা আশঙ্কা উঁকি দেয়। ভূমেনদাকে রাগিয়ে দিয়ে হেনস্থা করার ছক আছে কি শ্রোতাদের কোনো অংশে? তাঁকে রাগিয়ে দেওয়া সহজ। এ-ছক নতুন নয়। তাঁর নিকটজনেরাই এই খেলাটা খেলেন। ফাঁদে পা দেন তিনি। কাউকে অপমান করার চেয়ে উপভোগ্য মশকরা এঁরা জানেন না। ভূমেনদার কাছেই শুনেছি, একটি বাড়ির আড্ডায় অবান্তর প্রশ্ন তুলে তাঁকে হেনস্থা করে বিস্তর হাসাহাসি হয়েছে, গৃহকর্তা মিটিমিটি হেসেছেন। ভূমেনদা কেঁদে ফেলেন। সেরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দু-একজনের শরণ নিতে হলো। 888sport live footballের প্রশ্নে ফিরল আড্ডা। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে দেখি, আমাদের দিকে পিঠ ফিরিয়ে কয়েকজন গালগল্প-হাসিঠাট্টায় মেতেছেন। এঁরাই উলটোপালটা প্রশ্ন করছিলেন। এঁদের উচ্চকিত হাসি আড্ডার মন ভেঙে দিতে থাকে।

ভূমেনদাকে নিয়ে উঠে পড়ি। পেছন থেকে ভেসে আসে, জীবনানন্দ চর্চার মেইন লাইন আর ভূমেন লাইন। খ্যা-খ্যা উলস্নাস।

 

দিনলিপির দীর্ঘশ্বাসে, ডিটিপির অভ্যাসে

জীবনানন্দের দিনলিপি নিয়ে কাজ করছিলেন তখন। ফোন করলে এ-কথা সে-কথার মধ্যে দিনলিপির প্রসঙ্গ এসে যেত, যেন অনিবার্য ছিল। জীবিকাহীন জীবনানন্দের বিপন্ন দিনগুলি রাতগুলি,

অর্ধাহারে-অনাহারে ক্লিষ্ট প্রহরগুলি এবং তারই মধ্যে বিশ্বজোড়া কারুচেতনার প্রজ্ঞাপূর্ণ কথামালার মধ্যে অহোরাত্র বসবাস করছেন তিনি। অনুক্ষণ অনুভব করছেন কবির কষ্টকর দিনযাপনের দীর্ঘশ্বাস আর স্বপ্নউড়ানের সুবাতাস। সেই অনুভব ছড়িয়ে দিতে চাইছেন  ঘনিষ্ঠদের মধ্যে। বলতে চাইছেন, 888sport app download apk এমনি-এমনি হয় না, 888sport live football

এমনি-এমনি হয় না। নিজস্ব ভঙ্গিতে, কিছুটা আক্রমণাত্মকভাবে, অন্যতর লেখক-কবিদের প্রতিতুলনায় জীবনানন্দের শুদ্ধতার অখ- মূর্তিটি তুলে ধরছেন। সাল, তারিখ, সময়ের পরিপ্রেক্ষিত ধরে অবিরাম অক্লান্ত বলে চলেন ভূমেনদা। আমি তখন একটি খবরের কাগজের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কর্মী। বাসনা হয় জীবনানন্দের দিনলিপি নিয়ে ফিচার লেখার। ভূমেনদাকে বলি। ভূমেনদা বললেন, কাজটা শেষ হোক। তারপর ভাবা যাবে। একটু পীড়াপীড়ি করি। মনে হয়েছিল, কবির দিনলিপির ধূসরতর পৃষ্ঠায় জেগে থাকা কবির অবিশ্বাস্য কষ্টযাপনের কথাগুলো এখনই জানানো দরকার। জীবনানন্দ-অনুরাগী বন্ধুদের কাছে দিনলিপির সংবাদ বলি। তাঁরা তাতিয়ে তোলেন। ভূমেনদাকে রাজি করানো কঠিন হয়েছিল। তাঁর যুক্তি, বই হয়ে কবে বেরোবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। এত আগে খবর হলে একটা অন্যরকম ব্যাখ্যার সুযোগ থাকে। কেউ বলতে পারেন, ভূমেন্দ্র গুহ নিজের নাম ফাটাতে সাংবাদিক-বন্ধুদের কাজে লাগাচ্ছে। যুক্তি ফেলনা নয়। এরকম বলার লোকের অভাব নেই। আর, ভূমেনদাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করার লোক তো কিছু ছিলই। আমার গোঁয়ার্তুমি বেড়ে গেল।

মনে পড়ে, এক দুপুরে, আমি তখন দূর দক্ষিণ কলকাতার বাঘা যতীনের কুসুম কানন নামের পাড়ায় ভাড়া থাকি, ফোন ধরলাম ভূমেনদাকে। তিনি পড়ে গেলেন জীবনানন্দের একটি চিঠির খসড়া। চিঠিটি লেখা হচ্ছে তৎকালীন এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে, যিনি নিজে লেখক ও 888sport live footballের পৃষ্ঠপোষক। সপরিবার

অর্ধাহারে-অনাহারে থাকার খবর জানিয়ে জীবনানন্দ তাঁর জন্য

কোনো কাজের ব্যবস্থা করার আবেদন জানাচ্ছেন। অসহায়তা, কাতরতা ছড়ানো বাক্যে-বাক্যে। সেই মন্ত্রী যে ইচ্ছা করলেই একটা সুরাহা করতে পারেন এবং সুরাহা হলে তিনি গভীরভাবে 888sport live footballচর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন, তারও বিবরণ দিচ্ছেন জীবনানন্দ। ভূমেনদা

পড়তে-পড়তে এক জায়গায় থেমে যান। তাঁর গলায় কান্না জমছিল। তিনি কাঁদেন। একটু বাদেই, আমি যা লিখেছি বা নোট নিয়েছি, তা শুনতে চান। শোনাই। তিনি প্রশ্ন করেন, আপনি কি শুনতে-শুনতেই কম্পিউটারে টাইপ করে ফেললেন? জবাব দিই, হ্যাঁ। এতে আহামরি কিছু নেই। পেশাগত কারণেই এটা আমাকে শিখতে হয়েছে, অভ্যাস করতে হয়েছে।

আমার এই মামুলি শিক্ষা যে ভূমেনদাকে এতটা উদ্যমী করে তুলবে, কে জানত। তিনি তখন সত্তরোর্ধ্ব। এক বন্ধু বলেন যে, তোমার ডেস্কটপে চটপট টাইপ করার কথা শুনে ভূমেনদা খেপে উঠেছেন। কম্পিউটার কিনেছেন। জীবনানন্দের লেখা কপি করার কাজ এবার ডিটিপিতেই করবেন।

বিস্মিত হইনি। তিনি পারেন। তাঁর মতো মেধাবী ও নিবেদিত মানুষ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে কেন পিছিয়ে থাকবেন? তিনি শিখলেন। আমার চেয়ে তো বটেই, অনেকের চেয়ে ভালো শিখলেন। শুধু কম্পোজ নয়, স্কিনে কারেকশন, পেজ মেকআপও আয়ত্ত করেন অল্প সময়েই। 888sport apps থেকে প্রকাশিত জীবনানন্দের মূলানুগ পাঠের অনেকটা কাজই তো কম্পিউটারে করেছেন নিজে। আমাদের অনুজ-বন্ধু গণেশ অধিকারী ভূমেনদার কম্পিউটারের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। গণেশ ডিটিপি কম্পিউটার সম্পর্কে বিশেষ ওয়াকিবহাল। ওঁর কাছে শুনেছি, ডাক্তারবাবু নতুন কোনো সফ্টওয়্যারের খবর পেলে প্রায় সঙ্গে-সঙ্গে তাঁর মেশিনে ইনস্টল করার জন্য মাথা খারাপ করে দিতেন। তার ব্যবহার দ্রম্নত শিখে নিতেন। গণেশের অভিজ্ঞতা, এই বয়সে এত উৎসাহ আমি কোথাও দেখিনি। মানুষ যখন অবসর নিয়ে হালকা মেজাজে, ঘুরে বেড়িয়ে, গান শুনে বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে সময় কাটায়, ডাক্তারবাবু সেই সময় নতুন-নতুন কাজে মেতে উঠছেন। সারাদিন হয় পড়ছেন, না হয় কাজ করছেন। প্রায় প্রতিদিন বই কিনছেন। কত বড়ো মানুষ! অথচ কী সাধারণ। শুধু রেগে গেলে অন্যরকম হয়ে যান কিছুক্ষণের জন্য। বকাঝকা করেন। আবার বকার জন্য দুঃখ প্রকাশও করেন। ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞেস করি, দুপুরে একটু বিশ্রাম নেন না কেন? উনি বলেন, আমার হাতে সময় নেই আর। কিছু কাজ বাকি আছে। করে যেতে চাই। আমি চলে গেলে সে-কাজ কেউ করবে না। দুপুরে জিরিয়ে নেওয়ার মতো সময়ও নেই। গণেশ আবেগ ধরে রাখতে না পেরে বলেছিল, আমার ছেলে আপনার গুণের এক আনা যেন পায়, আশীর্বাদ করুন।

আদর্শ ব্যক্তিত্বশূন্য এই কর্কশ-কদর্য সময়ে গণেশের পাশে আমিও দাঁড়াই।

 

একটি মিস্ড কল হারিয়ে গেল শূন্যে

১৮ নভেম্বর ২০১৫। সন্ধে ৬টা ৩৫। ঘরে বসে আছি। মোবাইল বাজল। অচেনা নম্বর। ধরলাম।

ডক্টর বি.এন. গুহরায় বলছি।

আরে ভূমেনদা! বলুন। আপনার নম্বর তো অন্য। মানে আমার কাছে যেটা আছে।

ভদ্রেশ্বরে আমার একজন বন্ধু থাকতেন। তিনি কি আগের মতোই আছেন। ইত্যাদি…

তিন বছর বাদে ভূমেনদার সঙ্গে কথা হচ্ছে। ২০১২-এর ফেব্রম্নয়ারিতে একটা অসুখে আক্রান্ত হয়ে ফোন করেছিলাম বার তিনেক। অপারেশনের আগে দুবার, পরে একবার। তাঁর সব খবরই পাই নানা সূত্রে। তিনি বরিশালে বেড়াতে গেছেন। ছোটবেলায় যেখানে পড়তে বসে স্টিমারের ভোঁ শুনতেন, বুড়োবেলায় সেখানেই বসে আবার শুনে এলেন। 888sport appsের বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জীবনানন্দ বিষয়ে বড়ো একটা কাজ করছেন। ভীষণরকম ব্যস্ত। তিনি শান্তিনিকেতনে আছেন। তিনি বেনারস গেছেন। তিনি নতুন সফ্টওয়্যার ইনস্টল করছেন। আরো কিছু। তিনি ফোন করেন না। আমিও করি না।

বলুন, ভূমেনদা!

আপনি তো জীবনানন্দের জন্য, সঞ্জয় ভট্টাচার্যের জন্য…

ভূমেনদা, সোজা করে বলুন।

আমাকে বলতে দেবেন না?

বলুন, ভূমিকা ছাড়া।

আপনি জানেন, আমার একটা বই ছিল। জীবনানন্দ ও সঞ্জয় ভট্টাচার্য।

বইয়ের দ্বিতীয় লেখা ‘জীবনানন্দ 888sport sign up bonus ময়ূখ-এর গল্প’। লেখাটি যাঁদের উৎসাহে হতে পেরেছিল বলে উচ্ছ্বাসবশত লিখিত মন্তব্য করেছিলেন, বই করার সময় তাঁদের কথা আপনার মনে ছিল না। বরং ভূমিকা গোছের লেখায় যাঁদের নাম করেছেন, স্যরি, আপনি বলুন। ওপারে ভূমেনদা চুপ।

অভিযোগ করছি না। এরকমই হয় এখানে। আপনার কাছে আশা করিনি। তাই বললাম। বলুন। অনেকদিন পর ফোন করলেন। নিশ্চয় জরুরি কিছু বলার আছে।

বইটা যাঁরা প্রকাশ করেছিলেন, এতদিন তাঁরা বলেছেন, ওটা বিক্রি হয় না। গুদামে পড়ে আছে। আমি বললাম, তাহলে বাঁধাই করে আমার বাড়ি পাঠিয়ে দিন, কিনে নেব। ডেলিভারি চার্জও দিয়ে

দেব। এক বছর পর ওঁরা বলছেন, বইটি আর নেই। মানে সব বিক্রি বা নষ্ট হয়ে গেছে। বইটা পুনর্মুদ্রণের ব্যবস্থা করা যায়?

ভূমেন্দ্র গুহ, যতদূর জানি, গ্রন্থস্বত্ব বাবদ টাকা নেন না, সম্পাদনা বাবদ টাকা নেন না, লেখা বেচেন না, তাঁর বই ছাপার খরচ প্রকাশককে দিয়ে দেন, নিজের টাকায় ছাপা বই দুহাতে বিলোন, কোনো প্রকাশনা থেকে বেরোনো তাঁর বই কিনে বন্ধুদের উপহার দেন। পরে শুনেছি, নিজের বইয়ের ট্রেসিং পর্যন্ত কাজ তিনি করে দেন। এরকম একজন মানুষের সঙ্গে তঞ্চকতা করার কী দরকার? বলি, যাবে। আপনি পান্ডুলিপি তৈরি করুন।

ভূমেনদা বলেন, সময় হয়ে গেছে, যে-কোনোদিন চলে যাব। আমার ইচ্ছে, বইটা প্রকাশিত থাক। আর, জীবনানন্দ ও সঞ্জয় ভট্টাচার্য সম্পর্কে আমার কয়েকটা ছোট লেখা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে আছে, সেসব জুড়ে নতুন সংস্করণ কী হতে পারে?

হতে পারে।

সেই লেখাগুলো বেশিরভাগ বেরিয়েছিল আজকাল শারদ 888sport free betয় বিভিন্ন বছরে। অনেক চেষ্টা করেও কপি জোগাড় করতে পারিনি। আমাকে কেউ গুরুত্ব দেয় না। কেনই বা দেবে! আপনি যদি একটু চেষ্টা করেন।

বললাম, ঠিক আছে।

২০ নভেম্বর ২০১৫, আবার ফোন করলেন, রাত ১০টা ৩১-এ। বললাম, এক সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া যাবে। ১৪০৬ থেকে ১৪১৫ পর্যন্ত ভূমেন্দ্র গুহর সাতটি লেখা বেরিয়েছিল শারদীয় আজকালে।    জীবনানন্দ দাশ ও সঞ্জয় ভট্টাচার্যের অপ্রকাশিত 888sport app download apk, গল্প, 888sport alternative linkের ভূমিকা বা প্রাক্কথন হিসেবে। জোগাড় করে দিলেন অনুজ-বন্ধু অভীক চট্টোপাধ্যায়। ২৩ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১০টার পর দুবার ফোন। বললাম, আপনার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। ৩ ডিসেম্বর ২০১৫, রাত ১০টা ৩৫, বললেন, পেয়েছি। কেঁদে ফেললেন। এবার অনুরোধ, মূলানুগ পাঠে জীবনানন্দ সমগ্র প্রকাশ করা যায় যদি। বাজারে জীবনানন্দের যে-বই আছে তা একেবারেই নির্ভরযোগ্য নয়। পান্ডুলিপির সঙ্গে বিস্তর তফাৎ। কোথাও শব্দ, কোথাও লাইন, কোথাও পৃষ্ঠা, কোথাও চ্যাপ্টার বাদ গেছে। হঠাৎ করে 888sport app download apk এসে গেছে 888sport alternative linkে। যদি বলেন তো কাজটা চালিয়ে যাই। অর্ধেক কাজ হয়েছে। অর্ধেক বাকি। আমি চলে গেলে এ-কাজ আর কেউ করবে না। ভূমেনদাকে কিছুই বলতে পারিনি। কোনোদিনই বলার জায়গায় ছিলাম না, নেই। পরের ফোন ১০ ডিসেম্বর ২০১৫, রাত ১০টা ৪১-এ। দূরে ছিলাম। বেজে গেছে, শুনতে পাইনি। ১১টা নাগাদ ফোন করি। বেজে যায়। ভাবলাম, বাথরুমে গেছেন কিংবা শুয়ে পড়েছেন। পরদিন সকালে আবার ফোন করলাম। বেজে গেল। দুদিন পর। সুইচ্ড অফ। ল্যান্ড লাইনে করলাম। ধরলেন মেয়ে ইন্দ্রাণী। বললেন, বাবার শরীর ভালো নেই। ফোন দেওয়া হচ্ছে না। পরের দিন শুনলাম, উনি কথা বলতে পারছেন না। আর ফোন করিনি। খবর পেলাম, তিনি হাসপাতালে। অবস্থা খুব খারাপ। ২০ ডিসেম্বর ভোরে পার্থশংকর বসু খবর দিলেন, ভূমেনদা আর নেই।

১০ ডিসেম্বর ২০১৫, ভূমেনদার যে-ফোন ধরতে পারিনি, সেখানে কি বলতে চাওয়া না-বলা থেকে গেল? ইন্দ্রাণীর কাছে শুনেছি, সে-সময় থেকেই তিনি বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন, শারীরিক বিপত্তি দেখা দিচ্ছিল, কাজ করতে পারছিলেন না। অথচ সাতদিন আগের ফোনে তিনি মূলানুগ সমগ্র জীবনানন্দের পান্ডুলিপি সম্পূর্ণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। অর্ধেক কাজ বাকি, বলেছেন। আরেকটু আয়ু ভিক্ষা করেছেন। অত বড়োমাপের ডাক্তার তিনি, হয়তো সবই বুঝতে পারছিলেন। তবু বাঁচতে চেয়েছেন জীবনানন্দের পান্ডুলিপির প্রেক্ষাপটে, প্রশ্রয়ে, প্রেরণায়। জীবনানন্দের ‘ট্রাঙ্কগুলির কার্যনির্বাহী অভিভাবক’ ছিলেন একদিন। সেখান থেকে, কলেস্নালিত বানপ্রস্থ জুড়ে জীবনানন্দের পান্ডুলিপির অক্ষর ও অভিপ্রায় উদ্ধার করেন পূর্ণাঙ্গ জীবনানন্দের নির্মাতা। বাকি অর্ধেক কাজ শেষ করার অনুরোধে সাড়া পেলে হয়তো আরো কিছুদিন থাকতেন আমাদের সঙ্গে।