ছোট গল্প
-

গুহা
হারামজাদীকে পেলে হয় …। অন্ধকার ঠাণ্ডা-ক্যান্টিনের এক কোণে রাখা পাতলা কাঠের টেবিলটা যেন আর্তনাদ করে উঠল। চায়ের জন্যে বাড়তি চিনি রাখার সবুজ প্ল্যাস্টিকের বাটিটা উল্টে পড়ল মেঝের উপর … হারামজাদীকে একবার পেলে হয় … আমি ভাঙ্গা ফ্যাঁস-ফেঁসে কর্কশ গলায় প্রায় হুঙ্কার ছেড়ে চেয়ারে বসলাম। সারাটা ক্যান্টিন থৈ থৈ করছে ভীড়ে, কিন্তু একটি বেয়ারা চোখের পলকে…
-

ষাটের শেষ : সত্তরের শুরু ‘বাঙলাদেশ’-এর ছোটগল্প
ষাট-দশকের শুরুতে যে তরুণ স্কুলের শেষ ক্লাসের ছাত্র, দশকের শেষে সেই তরুণটিই একজন উৎসাহী গল্প-লেখক। এমন ঘটনা আজকের বাঙলাদেশে বিরল নয়। পঞ্চাশের দশকে যারা বাঙলাদেশে সবচেয়ে প্রতিভাবান গল্পকার ছিলেন – পরের দশকে তাঁদের অনেকেই গল্প আর লিখলেন না, কিংবা এমন গল্প লিখলেন যা নতুন পাঠকের কাছে সাড়া তুলতে অক্ষম হলো। প্রতি দশকেই নতুন একদল গল্পকার…
-

সুখমণি
সাগরের উত্তাল জলরাশির ভয় জয় করে যখন নৌকা ঢেউয়ের মাথায় দুলছিল তখন যাত্রীরা চিৎকার করছিল কি না তার মনে নেই, শুধু মনে ছিল, আজকের দিনটাই বুঝি শেষদিন, এরপর এ-পৃথিবীতে তার কোনো চিহ্ন থাকবে না। নৌকা কূলে ভেড়ার পর যখন দেখলো, দিব্যি বেঁচে আছে, তখন নিজের কাছেই সব অবিশ্বাস্য লাগছিল। তারপর শরণার্থীর মতো ভাসতে ভাসতে এই…
-

কিনু পুরুষ
পু কুরে ঘাট হয়, ঘর হয় – এই কথা বোধহয় নতুন। বাপের ভিটায় জায়গা হয়নি কিনুর। তাই শাহজাহানদের পুকুরপাড়ে ঘর বেঁধেছে। রাস্তার পাশ দিয়ে লোকজন যাওয়ার সময় তাদের আর ঘাটের কথা মনে হয় না। কারণ ওই ঘর। চাঁচের বেড়া, কুটোর ছাউনি। পুকুরের চওড়া পাড় সবুজ ঘাসে এতটা মজবুত, কেউ কোনোদিন মাটি ভেঙে পড়তে দেখেনি। পুকুরটা…
-

বিসর্জনের রং
ভোঁতা এবড়োখেবড়ো একটা রাস্তা হাজীগঞ্জের কাপড়িয়াপট্টি ধরে চলে গেছে ব্যাংকপাড়ার দিকে। যাওয়ার সময় ঝাপসা 888sport sign up bonusর মতো কুমোরবাড়ি ছুঁয়ে যায়। ব্যাংকপাড়ার পাশেই একটা খাল। বিকেল হলে স্বপ্না আন্টি খালপাড়ে বসে থাকে। জলে নিবদ্ধ চোখ স্থির হয়ে কী যেন দেখে। সুপ্রাচীন অন্ধকার ঠেলে ওই চোখে ভাঙা রোদ হরিয়ালের মতো দৌড়াতে থাকে। কাকে যেন খোঁজে আন্টি। পেছনে কুমোরদের…
-

সেই লোকটা আর মিঠুনের গল্প
মায়ের সঙ্গে হাঁটছি। মায়ের এক হাতে শক্ত করে আমার হাতটা ধরা। এভাবে হাঁটতে ভালোই লাগে, ঘুরে বেড়াতে। কত নতুন পথ। কত নতুন ঠিকানায় ঘোরাফেরা। অথচ হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই। আবার যদি হারাইও – মা তো সঙ্গেই আছে। মাকে নিয়ে হারিয়ে যেতে বেশ লাগে। কত অজানা গন্তব্য। এ-সময় মনে হয়, কোথায় আছি, কোথায় যেতে হবে –…
-

সার্ভিসিং কোম্পানি
‘আহা, এ-জায়গাটা একদম ক্ষয়ে গেছে আপনার। শুকিয়ে চিমসে গেছে, ভেতরে রসটস নেই তেমন।’ খুবই মোলায়েম কণ্ঠে বলছিলেন ডাক্তার সাহেব, কিন্তু আয়েশা বেগমের চোখমুখ শুকিয়ে যেতে শুরু করল; আর যেটুকু রস অবশিষ্ট ছিল, তাও উবে গিয়ে ফ্যাকাসে দেখাতে লাগল। কিন্তু সেদিকে তাকানোর ফুরসত ছিল না ডাক্তার সাহেবের, নিবিষ্ট মনে তিনি পরীক্ষা করে যাচ্ছিলেন দেহের জোড়াগুলি, অপুষ্ট…
-

গল্প নয়, জীবনকাহিনি
পুরনো দিনের একটা গানের কথা মনে আছে আপনাদের? সেই যে – ‘গান নয় জীবনকাহিনি, সুর নয় ব্যথার রাগিনী’, রুনা লায়লা গেয়েছিলেন তাঁর অপূর্ব দরদি কণ্ঠে, সেটির কথা বলছি। গানটা বন্দিনী সিনেমার, লিপসিং করেছিলেন ববিতা, অনিন্দ্যসুন্দর তরুণী ববিতা। জানেনই তো, তিনি এমন এক নায়িকা, জীবনানন্দের ভাষায় যাকে বলা যায় – ‘এ পৃথিবী একবার পায় তারে পায়…
-

শূন্যের ছায়াতলে
এক আপনার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। সিগারেটটা বন্ধ করুন, অসহ্য গন্ধ! ক্যানভাসের ওপর আশিস মগ্ন হয়ে ছবি আঁকছে একমনে স্রোতের প্রতিক‚লে পাল তুলে একটা নৌকার তীব্র গতিবেগ। এক মুহূর্ত ফিরে তাকানোর সময় নেই। চারদিন ধরে ছবিটার পেছনে সময় দিয়ে প্রায় শেষ করে এনেছে। শরীরের মধ্যে নৃত্যের প্রস্তুতি চলছে ক্যানভাসের ওপর রংতুলির শেষ টাচ দেওয়ার মুহূর্তে।…
-

মাংসবৃত্তান্ত
সিদ্ধান্তটা নিতে বারেকের কয়েক মাস দেরি হয়ে গেল। হোমসিকনেস। অভাব-অনটনের ঘানি টানতে টানতে মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে গেলেও বাড়ি ছেড়ে দূরে কোথাও কাজের জন্য যেতে ওর মন সায় দেয় না। বিয়ের আগে যুবক বয়সে, গ্রামের অনেক দরিদ্র যারা নিজ গ্রাম ছেড়ে দূরদূরান্তে কাজের সন্ধানে বের হয়েছে, তাদের অনুরোধেও সে বাড়ি ছেড়ে কাজে যায়নি। সারা দিনে এক…
-

আলোকিত অন্ধকার
সন্ধেয় যখন জানতে পারে সাঈদুল, ভালো এক খবর, যাব কি যাব না ভাবনায় আরো একবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে শেষমেশ পুরনো মাফলার দিয়ে মুখ-নাক ঢেকে বের হয়ে যায়। তখন আলিয়া পেছন থেকে ডাক দেয় – ‘বাবা এই সন্ধ্যার সময় কোথায় বের হলে? যা শীত পড়েছে, তোমার তো কোট-জ্যাকেটও নেই, আদ্যিকালের এক সোয়েটার, শীত কাটে না; কিছু লাগলে…
-

হোসাইনি কাহিনি
হোসাইনি পরিবার। জামাল হোসাইনি বাবা, তার দুই ছেলে – সায়েফ হোসাইনি ডাক্তার, আর ছোট ছেলে অমিত হোসাইনি অর্থনীতিতে পিএইচ.ডি। সায়েফ ইএনটি বিশেষজ্ঞ, প্র্যাকটিস ভালো। অমিত অস্ট্রেলিয়ায় থাকে, ভালো চাকরি করে। জামাল সাহেবের স্ত্রী মারা গেছেন অনেক আগে, ছেলেরা যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ে, আর বিয়ে করেননি। দারুণ গর্বিত পিতা জামাল সাহেব, অবশ্যই গর্ব করার বিষয়, একজন…
