June
-

সেগুনবাগিচার কাঁচাবাজার ও ভাণ্ডারী
পশ্চিম গগনে সূর্য। মা’কে সঙ্গে নিয়ে নিজের আবাস বিক্রি করে সেগুনবাগিচায় ফ্ল্যাটে উঠতে হলো ফজলকে। ফার্নিচার খুব সামান্য। ভাণ্ডার বই-পুস্তকের। একটা কামরায় সব বই ঢেলে রাখল। পরে র্যাক তৈরি করে সাজাবে। রান্নাঘরে কোনো তাক নেই। ফলে মিস্ত্রিকে ডাক দিতে হবে অচিরে। রাস্তার পাশে পশ্চিমদিকের কামরা, তার শয়নকক্ষ, অথচ সকালটা কি নীরব। পাখ-পাখালির ডাক নেই। নেই…
-

একটি সোনার দুল
এরকম হবার কথা ছিল না, কিন্তু কখন যে মানুষের কী হবে, তা কি কেউ বলতে পারে? নইলে আজ যখন হানুফা বেগম বাজারে যাচ্ছিল তার ছোট ছেলেটির হাত ধরে, তখনো সে ভাবেনি তার কপালে এই নতিজা লেখা আছে। হানুফা বেগমের বাজার খুব সংক্ষিপ্ত ছিল। শাশুড়ির বায়না অনুযায়ী কিছু চুঁইঝাল আর ছোট মাছ। চুঁইঝাল এই এলাকায় বেশ…
-

কাপুরুষ
চন্দন ট্রেন থেকে নেমেছে ভোর পাঁচটায়। শীতের ভোর পাঁচটা মানে ঘরের বিছানায় গভীর রাত। স্টেশনটাকে দেখে তাই মনে হচ্ছে। যাত্রী নামিয়ে ট্রেন চলে যাওয়া মাত্র স্টেশনে নেমে এলো নীরবতা। এতো কুয়াশা নেমেছে যে, স্টেশনের লাইটগুলি যেন ঘোলাটে চোখে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। অস্বচ্ছ ঘোলাটে একটা পরিত্যক্ত ভৌতিক স্টেশনের মতো লাগছে। এতো শীত করছে যে কান-মাথা…
-

মর্জিনার শূন্য যাত্রা
লা ল গেঞ্জি পরা ছেলেটির দিকে আমি তাকিয়েছিলাম। আমার মতো আরো দু-একজন দেখছিল ছেলেটিকে। ছেলেটি রাস্তার পাশের ছোট্ট চায়ের দোকানটির সামনে দাঁড়িয়ে – চা-ওয়ালার সঙ্গে কী নিয়ে যেন তর্কে জড়িয়ে গিয়েছে। কিছুটা দূর থেকে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না আসলে তর্কটা কী নিয়ে হচ্ছে! অমল আমার পাশে পাশে হাঁটছিল। আমার দিকে একবার তাকিয়ে, একটু থেমে হাত…
-

কুসুম বাগান
নিমতার মানুষ একটা ভয়কে চাদরের মতো গায়ে জড়িয়ে ঘুমায়। ভয়টা হারিয়ে যাওয়ার। পদ্মা এখনো তিন মাঠ দূরে, হয়তো পাড় ভাঙতে ভাঙতে ক্লান্ত, কিছুকাল জিরিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু তারা জানে, যে-কোনো রাতে পদ্মা ছোবল মারতে পারে, যখন মানুষজন ঘুমায়, পশুপাখিও। পদ্মা, কেন জানি, রাতটাকেই বেশি পছন্দ করে, কিছু মানুষের মতোই। মুরুব্বিরা বলেন, পদ্মার দশটা ভাঙনের গল্পের সাতটাই…
-

মেয়াদকাল
এক সকালে বাহাত্তর বছর বয়স পার করে ফৈয়াজ খান হঠাৎ করে রাস্তায় মরে পড়ে থাকেন। উত্তরা মডেল টাউনের প্রশস্ত রাজপথ পেরোচ্ছিলেন। ব্যস্ত রাস্তা – সকাল, বিকাল, রাত্রি বলে কথা নেই – শা-শা করে নানা পদের দ্রুতগতির যানবাহন সব সময় ছুটছে। অত্যাধুনিক জীবনের ফরমেট বদলাচ্ছে। কেবল বদলাচ্ছে না, গতি বাড়ছে। এটা ঠিক, ফৈয়াজ তাল মেলাতে পারছিলেন…
-

মুখোশ পরা মানুষ
রিসেপশন থেকে ফোন এলো। ‘স্যার, এক ভদ্রমহিলা আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।’ চায়ে চুমুক দিতে দিতে আসিফ সেদিনকার খবরের কাগজ দেখছিল। এখন খবরের কাগজ আর পড়া হয় না। শুধু চোখ বোলানো। হেডলাইনগুলি দেখা। ওসব হেডলাইন দেখতে দেখতে বলল, ‘কী নাম?’ ‘নাম বলেননি।’ আসিফ তেমন অবাক হলো না। সে যেখানেই যায় এরকম অনেক মহিলাই তার সঙ্গে…
-

অনাহূত স্বপ্নের চিৎসাঁতার
ঘরে ঢোকার মুহূর্তে ভেবেছিল ভেতরটা অন্যরকম হবে। হওয়ারই কথা। বেলা দুপুর, শেষ ফেব্রুয়ারির আলো-হাওয়ায় রমরমা আকাশ-মাটি। কিন্তু তার মন বলছিলদরজা-জানালা আটকানো ঘরে পা দিয়ে দেখবে অল্প ওয়াটের বাল্বে ঝিমঝিমেআলো-আঁধারি। বাস্তবে মোটেও সেরকম হলো না। মাঝারি আয়তনের ছিমছাম ঘর – করপোরেট অফিসে যেমন অভ্যাগতদের জন্য বসার বা অপেক্ষা করার সুব্যবস্থা থাকে। পর্যাপ্ত আলো ঘরের ছাদে-দেয়ালে-মেঝেতে, এসি…
-

কাঁঠালের মরসুম
দুপুর বেলা এক ধামা রুটি আর ঝুড়িতে দুখানা বিশাল কাঁঠাল যায় মাঠে কাজ করা মুনিষদের জন্য। মাঠের একপাশে দুখানা বাবলা আর শিরিষের আধো ছায়ায় তাদের পেটচুক্তি খাওয়া চলে, জমিদারদের লাগানো দুধে কাঁঠাল আর নতুন গমের রুটি, অমৃত! সন্ধেয় প্রত্যেকে পাবে দশটা করে টাকা – আক্রার বাজারে এই টাকায় কিবা পাওয়া যায়! সকলেরই বাড়িতে বিশাল সংসার…
-

ইছামতী
ভবেশরঞ্জন মিত্র মহাশয় আজ ভোর সাড়ে ছয়টায় হাসপাতালে মারা গেলেন। আমরি হাসপাতালের কলকাতায় আরো কয়েকটা শাখা থাকলেও সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের হাসপাতালটা দেশপ্রিয় পার্কের ওদের বাড়ির কাছে বলে এ-হাসপাতালটাতেই ভর্তি করা হয়েছিল ভবেশবাবুকে। তাছাড়া এ-হাসপাতালে মিত্র পরিবারের মেজ ছেলে সুমিত মিত্রের বিশেষ বন্ধু ডা. রঞ্জন হালদার রয়েছেন। ফলে হাসপাতালের ছোটখাটো নানা বিষয়ে অনেক সহায়তা ও রোগীর চিকিৎসার…
-

মিনু মাসির বাসাবদল
এক ‘আমার নাম মিনু। মিনুরানি নাথ। আপনার ঘরটি আমাদের ভাড়া দিলে প্রাণে বেঁচে যাই কর্তাবাবু।’ দুই হাত জড়ো করে বলল মিনুরানি। যাঁকে উদ্দেশ করে বলল, তিনি উদয়ন মিত্র। ‘মিত্রমশাই’ নামে এলাকায় তাঁর পরিচিতি। আরাম কেদারায় আধশোয়া হয়ে একটা বই পড়ছিলেন তিনি। শিশির সমতটীর লেখা 888sport appর বাঈজীদের ইতিবৃত্ত। জমিদার, বাঈজি, সামন্তযুগ, কৈবর্তবিদ্রোহ, সেন-পাল আমল – এসব…
-

কেয়ারার
সেদিন খবর পেলাম আসমা নেই। ওর মেয়ে ফোনে বলেছে। চমকে গেলাম। এমন প্রাণবন্ত মেয়েটার কী হলো? মেয়ে না বলে ওকে 888sport promo code বলা ভালো। আমার সঙ্গে বেশ কিছুদিন আগে আলাপ হয়েছিল। আমরা একদিন পার্কে বসে কথা বলেছিলাম। ও বাড়িতে কখনো কাউকে ডাকেনি। কেন? আসমা বলেছিল – কারো সঙ্গে হাসি, গল্প, কথা বলা ও পছন্দ করে না।…
