ইমদাদুল হক মিলন
-

নিভে গেল বাতিঘরের আলো
খুব কাছের সবাই সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে ‘মনজুরভাই’ বলতেন। আমি ‘র’টা বাদ দিয়েছিলাম। বলতাম ‘মনজুভাই’। কেন বলতাম তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। ব্যাখ্যা আবার একটু আছেও। বলতে ভালো লাগত। ওই নিয়ে তিনি কখনো কোনো কথা বলেননি। ফোন তুলে ‘মনজুভাই’ বললেই তিনি হাসিমুখে বলতেন, ‘বলো, মিলন।’ সত্তরতম জন্মদিন উপলক্ষে আমাকে নিয়ে একটি লেখা লিখেছেন। এত ভালোবেসে লেখা, ওরকম…
-

কাল
পনেরো দোলন পর্ব এক মনোরম গোধূলিবেলায় দেবু ঠাকুরের মনে পড়বে দোলনের কথা। ফাল্গুন মাস। দেবু ঠাকুর একাকী বেড়াতে গিয়েছিলেন পশ্চিমের মাঠের দিকটায়। গোধূলিবেলার আকাশ সেদিন কমলা রঙের। মাঠের দিকটা নির্জনে পড়ে ছিল। পায়েচলা পথে ছিল না মানুষের চলাচল। বিলের দিকটায় আমন-আউশের চারা বড় হচ্ছিল। পাট তিল কাউনের চারা বড় হচ্ছিল। বাঙ্গি তরমুজের জমিগুলো ফাঁকা হয়ে…
-

কাল
চৌদ্দ শ্রাবণ মাসের শুরুর দিককার এক রাতে তুমুল বৃষ্টি নামল। রাত তেমন হয়নি। বদরু খেয়ে এসে শুয়ে পড়েছে রান্নাঘরে। সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগী দেখেছেন দেবু ঠাকুর। দুপুরের দিকেও এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। উঠোনের মাটি ভেজা। সেই কারণে ঠাকুর আর ঘর থেকে বেরোননি। হারিকেনের আলোয় পড়ার টেবিলে বসেছিলেন। একবার ভাবলেন, কলের গানে গান শুনবেন। তারপর ভাবলেন, না…
-

কাল
তেরো রাতের খাওয়া শেষ করেছেন দেবু ঠাকুর। বড়ঘরে হারিকেন জ্বলছে। রান্নাঘরে জ্বলছে পিতলের একটা কুপি। উঠোনের জমাট অন্ধকারের ওপর দু’ঘরের আলো এসে পড়েছে। একদিকে হারিকেনের আলো, আরেকদিকে কুপির। সেই আলোয় পুরো উঠোন আলোকিত হয়নি। কিছুটা হয়েছে। রাতের খাওয়ার পর উঠোনে পায়চারি করার অভ্যাস ঠাকুরের। বৃষ্টি না থাকলে পায়চারিটা তিনি নিয়মিত করেন। রাতের খাবারের পর আধঘণ্টার…
-

কাল
বারো ‘‘আবদুল মোত্তালিব যখন জমজম কূপ খনন করতে গেলেন তখন কুরায়েশদের প্রবল বিরোধিতার মুখোমুখি হলেন। তখন তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন যে, তাঁর যদি দশটি সন্তান হয় তাহলে তাঁদের একজনকে তিনি কাবাঘরের চত্বরে মহান আল্লাহপাকের নামে কুরবানি করবেন। আবদুল মোত্তালিবের দশটি সন্তান হলো। এক সময় তিনি তাঁদের ডেকে তাঁর অঙ্গীকারের কথা জানালেন। আল্লাহপাকের সঙ্গে তাঁর অঙ্গীকার রক্ষা…
-

কাল
এগারো চৈত্রসংক্রান্তির দিন বিশাল মেলা বসে কালীর মাঠে। কত আনন্দের উপকরণ সেই মেলায়। শিশুদের জন্য নাগরদোলা, বায়োস্কোপের বাক্স আর মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভালুক সাজিয়ে মাঠে বসে থাকত বিক্রেতারা। গ্রাম এলাকার কুমোরেরা নিয়ে আসত হাঁড়িকুড়ি আর নিত্যদিনের গৃহস্থ 888sport promo codeর প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। কামাররা আনতো দা-কাস্তে, কোদাল-কুড়াল, গরু কোরবানি দেওয়ার ছুরি এসব। ময়রারা আনত নানা রকমের…
-

কাল
দশ দরবেশ খাঁ সোনাদিঘি গ্রামের মোস্তফা খাঁর জীবনে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল। তাঁর বয়স তখন চার-পাঁচ বছর। দুপুরের দিকে শিশু মোস্তফা ঘরের পালঙ্কে ঘুমাচ্ছে। উঠোনের অন্যদিকে রান্নাঘরে বসে রান্না করছেন মা। ছেলে তাঁর প্রাণের অধিক। রান্না করতে বসেও বারবারই তাকাচ্ছিলেন বড় ঘরের দিকে। সেইসব দিনে শিয়ালের উৎপাত ছিল খুব। ক্ষুধার্ত শিয়ালেরা নিরিবিলি বাড়িঘর পেলে দলবেঁধে…
-

কাল
নয় কাঞ্চনকন্যা এই আখ্যান এখন একটু পিছন ফিরবে। বাসন্তীর ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরের বছর বর্ষাকালের কথা। পুব কুমারভোগের মীর্জা বাড়িকে লোকে বলে ‘বড়বাড়ি’। বাড়িটি ছিল জমিদার অশ্বিনীকুমার চক্রবর্তীর। বিক্রমপুর ছিল পরগনা। ছোট-বড় জমিদার ছিল অনেক। অশ্বিনীবাবু তেমন বড় জমিদার ছিলেন না। আবার খুব ছোটও ছিলেন না। দু-আড়াই হাজার কানি জমির মালিক ছিলেন। বাড়িটা ছিল তিরিশ-পঁয়ত্রিশ…
-

কাল
আট ভুতো ও নিমাইয়ের কাহিনি কোনো বাপ যে ছেলেকে এত ভালোবাসতে পারে, এত আদরযত্ন মায়া-মমতায় ভরিয়ে রাখতে পারে; তাও নিজের ঔরসজাত সন্তান নয়, স্ত্রীর অপকর্মের ফসল, নিমাই এক্ষেত্রে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। মানুষ প্রকৃত অর্থে নিজেকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসে। নিমাইয়ের ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম। নিজের চেয়ে হাজার লক্ষগুণ বেশি ভালো সে ভুতোকে বাসে। ভুতোর জন্মের পর যে…
-

কাল
সাত বাসন্তীর কাহিনি ঠাকুরের সঙ্গে ওই কাণ্ডটি ঘটাবার পর বাসন্তী খুবই মর্মবেদনায় ভুগছিল। তার মনে হচ্ছিল, কাণ্ডটা আসলে সে ঘটায়নি। তেঁতুলতলা বা বাঁশঝাড়তলায় তিনাদের যিনি বসবাস করেন, তাদের সত্যি সত্যিই কেউ না কেউ বাসন্তীর ওপর ভর করেছিল। বাসন্তীকে দিয়ে কাজটা সে করিয়েছে। ঠাকুরকে বাসন্তী কামনা করেছে ঠিকই কিন্তু এই পদ্ধতিতে সেই কামনার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে, বাসন্তী…
-

কাল
পাঁচ তখন রতনপুর বাজারটা ছিল পদ্মার কোলঘেঁষে। রিশিপাড়া ছাড়িয়ে দক্ষিণে দশ-পনেরো কানি আবাদি জমি। তার পশ্চিমে বাজার। নদীতীর থেকে একটা রাস্তা বেরিয়ে সোজা চলে গেছে উত্তরে। রিশিপাড়ার মুখে এসে দুদিকে দু-হাত ছড়িয়েছে। ওদিক থেকে হেঁটে এলে বাঁ-হাতের রাস্তা চলে গেছে কুসুমপুরের দিকে, ডান হাত গেছে রতনপুর পোস্ট অফিসের দিকে। পদ্মাপারে গিয়ে শেষ হয়েছে এই রাস্তা।…
-

মুখোশ পরা মানুষ
রিসেপশন থেকে ফোন এলো। ‘স্যার, এক ভদ্রমহিলা আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।’ চায়ে চুমুক দিতে দিতে আসিফ সেদিনকার খবরের কাগজ দেখছিল। এখন খবরের কাগজ আর পড়া হয় না। শুধু চোখ বোলানো। হেডলাইনগুলি দেখা। ওসব হেডলাইন দেখতে দেখতে বলল, ‘কী নাম?’ ‘নাম বলেননি।’ আসিফ তেমন অবাক হলো না। সে যেখানেই যায় এরকম অনেক মহিলাই তার সঙ্গে…
